Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Coronavirus - করোনা ভাইরাস => Topic started by: Shamim Ansary on March 30, 2020, 11:35:06 AM

Title: করোনার দিনে দেশি খাবার খান
Post by: Shamim Ansary on March 30, 2020, 11:35:06 AM
এ সময় পাবেন প্রচুর শাক। বেশি করে শাক খেতে হবে রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে। ছবি: লেখকখাবার নিয়ে যে জিনিসটি বলে রাখা দরকার প্রথমেই, সেটা হলো, যে অঞ্চলে যে খাদ্য উপকরণ উৎপন্ন হয় সেটাই আপনার জন্য সঠিক খাবার। এটাও বলা হয়ে থাকে, যেসব খাবারের স্থানীয় নাম নেই, সেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়। মোট কথা, স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন খাবার খেতে হবে, সেটা সহজলভ্য তো বটেই, আমাদের শরীরের উপযোগীও। কাজেই অনেক দামি খাবার কিনে খেয়ে শরীর সুস্থ রাখতে চাওয়ার কোনো মানে নেই।

চলছে বসন্তকাল, চলছে করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। প্রাকৃতিকভাবে সর্দি-কাশি, জ্বর এগুলো হওয়ার সময় এটি। এ সময়ে যেসব খাবার পাওয়া যায়, সেগুলোতে এসব রোগের প্রতিষেধকও থাকে প্রাকৃতিকভাবেই। সাধারণভাবে বসন্তকালে প্রচুর শাক পাওয়া যায়। এখন হাতের কাছে যেসব শাক পাবেন, সেগুলোই খাবেন। রেসিপি কী হবে, সেটা নিজেরাই ঠিক করে নিন। এ শাকগুলো শরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে বাড়তি রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরকে যুদ্ধ করতে শক্তি জোগাবে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে এখন প্রয়োজন শরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ানো। এ ক্ষমতা যার যত বেশি, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে টিকে থাকার সম্ভাবনা তার তত বেশি। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যুর ঝুঁকি নয়। রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা ঠিক থাকলে এটি আপনার শরীরে অন্যান্য সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতোই একটি রোগ।

মিষ্টিকুমড়ায় আছে ভিটামিন এ, বিটাক্যারটিন, ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ আরও অনেক কিছু, যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে। ছবি: লেখকঐতিহ্যবাহী একটি খাবারের কথা বলে রাখি এবার। সেটা হলো চৌদ্দ শাক। যুগ যুগ ধরে মানুষ চৌদ্দ শাক খেয়ে আসছে এর গুণের কারণে। আশ্বিন-কার্তিক মাসে সব শাক একত্রে পাওয়া যায়। তবে এখনো খুঁজলে কিছু শাক পেয়ে যাবেন। শুষনি, বথুয়া, কালকাসুন্দে, শর্ষে, গুলঞ্চ, পটোল বা পলতা, শেলুকা, নিম, জয়ন্তী, শালিঞ্চে বা শিঞ্চে, হিলমোচিকা বা হেলেঞ্চা, ভাঁট বা ঘেঁটু, ওল, কেঁউ—এই ১৪ পদের শাক একত্রে চৌদ্দশাক নামে পরিচিত। খেয়াল করলে দেখবেন, এই শাকগুলোর বেশ কটি এখন আর পাওয়া যাবে না। কারণ সিজন শেষ।

এ ১৪ পদের শাকের প্রতিটির আলাদা ভেষজ গুণ আছে। এখন পাবেন বথুয়া শাক। এতে প্রচুর পরিমাণে জৈব অ্যাসিড আছে। পাবেন তিতা নিম পাতা। খুঁজলে পাবেন শালুক শাক। এটি দেখতে কিছুটা ধনে পাতার মতো। এতে আছে টাবপিনয়েড নামের রাসায়নিক উপাদান। হেলেঞ্চা শাক পাবেন। এগুলো রান্নার নির্দিষ্ট কোনো রেসিপি নেই। ইচ্ছেমতো রান্না করলেই হলো। সুপারশপে এই শাকগুলো পাওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। যেকোনো বড় কাঁচা বাজারের পাশে দেখবেন একটি ছোট বাজার থাকে। সেসব জায়গায় খুঁজলে অনেক শাকসবজি পাওয়া যায় প্রতি ঋতুর।

এ সময় বাজারে খুব সহজে পাবেন মিষ্টিকুমড়া আর পুঁইশাক। মিষ্টিকুমড়ায় আছে ভিটামিন এ, বিটাক্যারটিন, ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ আরও অনেক কিছু, যেগুলো শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে। অন্যদিকে পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, সি ও এ। পাশাপাশি রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও প্রচুর ফাইবার বা আঁশ। পুষ্টিবিদেরা আপনাকে এসব ভিটামিনযুক্ত খাবারই খেতে বলবেন এখন। আমরাও আপনাকে এসব খাবার খেতে বলছি। সঙ্গে বাড়তি হিসেবে দিচ্ছি রেসিপি।

মিষ্টিকুমড়া আর পুঁইশাকের ঘণ্ট। মজাদার খাবারটি খেতে পারেন এই সময়ে। ছবি: লেখকমিষ্টিকুমড়া আর পুঁইশাকের ঘণ্ট

ঘণ্ট ব্যাপারটা আমাদের দেশে বেশ চলে। শহরে খান বা না খান, গ্রামে গেলেই খাওয়া হয়। মূলত অনেক সবজি একসঙ্গে করে রান্না করাই ঘণ্ট। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোন উপকরণের সঙ্গে কোন উপকরণের ‘মিলমিশ’ ভালো হয়। যেমন ধরুন, মিষ্টিকুমড়ার সঙ্গে আপনি চালকুমড়া মিশিয়ে দিয়ে ঘণ্ট রান্না করলেন। সেটা যে খুব সুস্বাদু কিছু হবে না, সেটা বলাই বাহুল্য।

প্রবাদ আছে, ‘শাকের মধ্যে পুঁই, মাছের মধ্যে রুই’। আজ সেই পুঁইশাক আর মিষ্টি কুমড়ার ঘণ্ট রেসিপি দিয়ে রাখি আপনাদের।

প্রথমে মিষ্টিকুমড়া কিউব করে কেটে নিন। সম্ভব হলে একদম কচি পুঁই ডগা ব্যবহার করুন। অথবা কচি পাতা ও অপেক্ষাকৃত কচি ডাল ছোট ছোট করে কেটে নিন। এবার কড়াইতে তেল গরম করে তাতে কালোজিরা, কাঁচা মরিচ দিয়ে একটু ভেজে নিন। ইচ্ছে হলে এতে ২/১ কোয়া রসুনও থেঁতলে দিতে পারেন। এরপর মিষ্টিকুমড়া কড়াইতে দিয়ে নাড়তে থাকুন। নাড়ার সময় দিয়ে দিন পুঁইশাকগুলো। এবার লবণ ও সামান্য হলুদ দিয়ে আবার নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ নাড়ার পর ঢেকে দিন সেদ্ধ হতে। মাঝেমধ্যেই ঢাকনা তুলে একটু একটু করে নেড়ে দিন।

তাতে কড়াইয়ের নিচে লেগে যাবে না। সেদ্ধ হয়ে গেলে আরও কিছুক্ষণ নেড়ে নিন যাতে মিষ্টিকুমড়া পেস্টের মতো হয়ে যায়। এ সময় ধনেগুঁড়া বা গোটা ধনেও দিতে পারেন। মনে রাখবেন, ধনেগুঁড়া ছাড়া মিষ্টিকুমড়ার স্বাদ খোলে না। মিষ্টিকুমড়া পেস্টের মতো হয়ে এলে এবং পুঁইশাক সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।

এই ঘণ্টতে মাছের মাথাও দিতে পারেন স্বাদ বাড়াতে। সে ক্ষেত্রে মাছের মাথা আগে ভেজে নিয়ে গুঁড়া করে নিন। মাথা বেশি বড় হলে শিলপাটায় থেঁতলে ভেঙে নিতে পারেন। মাছের মাথা না পেলে কুঁচো বা ছোট চিংড়ি হালকা করে ভেজে দিয়ে দিতে পারেন। তারপর একই প্রক্রিয়ায় রান্না করুন।

পুঁই-কুমড়ার ঘণ্ট আর ঝরঝরে সাদা ভাত, সঙ্গে যেকোনো ঘন ডাল আর পারলে এক ফালি লেবু দিয়ে এক বেলা খেয়েই দেখুন। দেশি খাবারের স্বাদ ভুলতে পারবেন না। করোনার এই সময় বেশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার না খেয়ে দেশি খাবার খান। বাড়িতে থাকুন, সুস্থ থাকুন।


Source: https://www.prothomalo.com/life-style/article/1647724/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%BF-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A8