Daffodil International University
Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 08:16:04 AM
-
সাধারণত সন্তান জন্মদানের পরে মায়েদের প্রচুর চুল পড়ে।
কেন এ সময় চুল ওঠে?
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের মাত্রা থাকে অনেক বেশি। ডিম্বাশয় প্লাসেন্টা এগুলো থেকে অনেক হরমোন বের হয়। সন্তানের জন্মের পর এ হরমোনের মাত্রা একেবারে হঠাৎ করে কমে যায়, তার ফলস্বরূপ চুল ওঠে।
ব্রেস্টফিডিংয়ের সাথে চুল ওঠার সম্পর্ক আছে কি?
ব্রেস্টফিডিংয়ের সাথে চুল ওঠার কোনো সম্পর্ক নেই। ব্রেস্টফিডিং মা ও শিশুর মধ্যে এক সুন্দর মেলবন্ধন ঘটায়, ফলে মায়ের মনে থাকে এক প্রশান্তি, তাতে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হওয়ারই কথা।
নরমাল ডেলিভারি ও সিজারিয়ান কোনটিতে বেশি চুল পড়ার আশঙ্কা থাকে?
নরমাল ডেলিভারি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, তাই হরমোনের মাত্রা কমে স্বাভাবিকভাবে আর সিজারিয়ান সেকশন অপারেশনের পর হরমোনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে যায়। তাই সিজারের পর চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি।
মায়ের অনিদ্রা কি চুল পড়ার কারণ?
অবশ্যই। শিশুকে ফিডিং করাতে রাতে বারবার মাকে উঠতে হয়, সারা দিনেও শিশু সামলাতে মা হিমশিম খায়, নিজের দিকে খেয়ালই নেই, আমাদের দেশের বেশিরভাগ পরিবারেই সদ্যপ্রসূতির তেমন যত্ন ও খাওয়াদাওয়া হয় না।
এ চুল গজাবার কোনো ওষুধ আছে কি?
ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসক মাথায় স্টেরয়েড ড্রপ ম্যাসাজ করতে বলেন। তাতে খানিকটা কাজ হয়। তা ছাড়া মাথায় ভালোভাবে ম্যাসাজের জন্য রক্তসঞ্চালন বাড়েÂ তাতে চুল হয়।
সন্তান হওয়ার কত দিন পর পর্যন্ত চুল পড়ে?
সাধারণত দুই থেকে তিন মাস। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া যত্ন পেলে এই চুল আবার স্বাভাবিকভাবে গজিয়ে যায়।
চুলের জন্য এ সময় কী কী বিশেষ যত্নের দরকার?
সন্তান পেটে থাকাকালীন এই যত্ন শুরু হওয়া দরকার। গর্ভাবস্থা ও বুকের দুধ খাওয়ানোÂ এ দুই অবস্থাতেই মেয়েদের স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির ওপরে আরো ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালরি অতিরিক্ত প্রয়োজন হয়। তাই প্রোটিন, কার্বনাইড্রেট, ফ্যাট সবই ঠিকমতো খেতে হবে। একবারে না পারলে বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়া দরকার। ফল, দুধ খেতে হবে পর্যাপ্ত। আমাদের দেশে সন্তান হওয়ার পর দুধসাবু খাওয়ার যে প্রথা প্রচলিত আছে তা ক্যালরির জোগান দেয়।
খুব বেশি তেলমসলা দেয়া খাবার বা অতিরিক্ত ভাজাভুজিও না খাওয়াই যুক্তিযুক্ত।
অ্যানিমিয়া একটি বড় সমস্যা। আমাদের দেশের ৮০ শতাংশ মায়ের হিমোগ্লোবিন ১০ গ্রাম শতাংশের নিচে। এর চিকিৎসা অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী করতে হবে। চিকিৎসা মানে ইচ্ছেমতো আয়রন বড়ি বা ক্যাপসুল খাওয়া নয়। কোন ওষুধ কার ক্ষেত্রে কার্যকর তা একমাত্র চিকিৎসই বলতে পারবেন।
এ ছাড়া দেয়া হয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
দুপুরের দিকে শিশুকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে যদি বাড়ির অন্য কোনো আত্মীয়া বা পরিচারিকার কাছে রেখে মা নিজে অন্তত দু-তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়। দরকার হলে এই সময় শিশুকে খাওয়ানোর জন্য ব্রেস্টমিল্ক বার করে সঞ্চয় করে রেখে দেয়া যেতে পারে।
সপ্তাহে দু’দিন ননমেডিকেটেড শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ঘষে ফেলুন। রাতে শোয়ার আগে মাথায় লাইট হেয়ার অয়েল তুলোয় ভিজিয়ে নিয়ে ম্যাসাজ করুন অন্তত পাঁচ মিনিট।
সন্তান জন্মদানের পরে মায়ের শরীর-স্বাস্থ্যের সাথে চুল ও ত্বকের পূর্ণাঙ্গ পরিচর্যা খুবই দরকার। অনেক সময় সন্তান জন্মদানের পরে মা তার স্বাভাবিক জৌলুশ হারিয়ে ফেলেন। চুলের প্রকৃত যত্ন না নেয়ার ফলে মায়ের মাথায় টাক পর্যন্ত দেখা যেতে পারে। তাই চুল পড়াকে অবহেলা না করে চিকিৎকের শরণাপন্ন হোন ও চিকিৎসা নিন।
——————–
ডা. ওয়ানাইজা
যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৩০ মার্চ ২০০৮