Daffodil International University
Health Tips => Health Tips => Coronavirus - করোনা ভাইরাস => Topic started by: shaiful on April 08, 2020, 12:34:37 PM
-
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেছেন, করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসের বায়ুথলির কোষের ভেতর ঢুকে যায়। এরপর বায়ুথলির কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে। তখন আক্রান্তের দেহে অক্সিজেনের স্বল্পতা হয়। দেখা দেয় তীব্র শ্বাসকষ্ট। এভাবে করোনাভাইরাস মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাইফ উল্লাহ এসব কথা বলেন।
মানবদেহে ঢুকে কীভাবে করোনাভাইরাস ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে, সে ব্যাপারে সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, যখন এই ভাইরাস (করোনাভাইরাস) মানুষের ফুসফুসে আসে, তখন বায়ুথলির অ্যালভিউলা কোষের রিসেপ্টরের সঙ্গে ভাইরাসটা সংযুক্ত হয়। খুব সহজে করোনাভাইরাস বায়ুথলির কোষের ভেতর ঢুকে যায়। একপর্যায়ে বায়ুথলির কোষগুলো মরে যায়। বায়ুথলির যে কার্যকারিতা, যে ফাংশন, বায়ু সংবহন করার যে ক্ষমতা, সেই কাজটা সে করতে পারে না। ফলে আমাদের অক্সিজেনের অভাব হয়। একপর্যায়ে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা—এসব লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিউমোনিয়ার যে কমপ্লিকেশন অর্থাৎ অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যায়।
যেসব দেশে তাপমাত্রা বেশি, সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কেমন, সে ব্যাপারে অধ্যাপক সাইফ উল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের তাপমাত্রা কোনো ফ্যাক্টর কি না, সে ব্যাপারে যে স্টাডি হয়েছে, তা মূলত পরিসংখ্যানগত। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কয়েকটা স্টাডি এসেছে। বলা হচ্ছে, ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশ থেকে ৫০ ডিগ্রি অক্ষাংশের যে বেল্ট, সেখানে এখন শীতকাল চলছে। ভাইরাস মূলত ঠান্ডাতে যেভাবে সংরক্ষিত হয়, উষ্ণ মণ্ডলে সেভাবে সংরক্ষিত হয় না। ফলে পরিসংখ্যানগত স্টাডিতে দেখানো হচ্ছে, যেসব দেশে উষ্ণতা অনেক কম, আর্দ্রতা অনেক কম, ফলে ভাইরাসের সার্ভাইবেলিটি অনেক বেশি। একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হচ্ছে বেশি। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখা গেছে, যেখানে ৩০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা অর্থাৎ সাড়ে ২৩ ডিগ্রি অক্ষাংশের দেশগুলোতে (যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর) অত বেশি সংক্রমিত হচ্ছে না। আসলে এই স্টাডি একটা হাইপোথিসিস। এই হাইপোথিসিস কতখানি সত্য, তা সময় বলে দেবে।
এই চিকিৎসক বলেন, এ নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো অবকাশ নেই; বরং আমাদের উচিত হবে, আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, সেই প্রক্রিয়া দৃঢ়ভাবে সফল করা। এটাতে আমরা যদি সফল না হতে পারি, তাহলে কিন্তু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা লোকাল ট্রান্সমিশন হয়ে যাবে। বহু মানুষ আক্রান্ত হবেন এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বিশাল চাপ প্রয়োগ করবে। সুতরাং আবহাওয়াজনিত উপাত্ত দিয়ে যে মডেলিং করা হচ্ছে, এটার ওপর আমরা মোটেও আস্থা রাখব না। আমরা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মতো পরিবেশে ঘুরে বেড়াব না।
বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান সাইফ উল্লাহ মুন্সি মনে করেন, এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হবে। বর্তমানে যেভাবে করছি, সেটা একটা পদ্ধতি। মাস্ক পরা, গ্লাভস পরা কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এটা কিন্তু ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচাবে না। কেউ না কেউ আক্রান্ত হবেই। আমাদের ফোকাস করতে হবে ওষুধের দিকে। এই ভাইরাসকে আমরা যাতে ধ্বংস করতে পারি, এমন ওষুধ তৈরি করতে হবে আমাদের। আর দরকার ভ্যাকসিন, আমরা যাতে প্রতিকার করতে পারি। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাজারে স্বীকৃত কোনো ওষুধ পাওয়া যায়নি। কিছু ওষুধের নাম বলা হচ্ছে। যেমন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, যেটা ম্যালেরিয়া রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান কিন্তু এই ওষুধের স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে আমাদের হাতে কোনো ওষুধ নেই। অন্যদিকে ভ্যাকসিনের কথা যদি বলি, এখন পর্যন্ত কোনো ল্যাবরেটরিতে প্রমাণিত হয়নি, কোন ভ্যাকসিন আমাদের শরীরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে।
সাইফ উল্লাহ বলেন, এ মুহূর্তে কোনো ভ্যাকসিন ল্যাবরেটরিতে যদি আবিষ্কৃতও হয়, তাহলেও তা বাজারে আসতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগবে। কারণ, একটা ভ্যাকসিন তৈরি করতে হলে তার কতগুলো ফেইস ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চারটি ট্রায়াল দিতে হয়। ফেইস-ওয়ান, ফেইস-টু, ফেইস-থ্রি, ফেইস-ফোর। ট্রায়ালটা শেষ করতে দেড় থেকে দুই বছর লেগে যায়। তারপর আমরা একটা ভ্যাকসিন পাব। অর্থাৎ এখন যদি ভ্যাকসিন তৈরি হয়, তবু তা বাজারে আসতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লেগে যাবে। এর মধ্যে কিন্তু অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। এ মুহূর্তে আমরা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি এই ভাইরাসকে নিয়ে।
সাইফ উল্লাহ মুন্সি বলেন, মনে করছিলাম, আমরা সব সংক্রামক রোগকে দমন করে ফেলেছি। এইচআইভি আর হেপাটাইটিস ছাড়া আর কোনো অসুখ ওইভাবে সংক্রমিত হচ্ছিল না। আমাদের নজর চলে গিয়েছিল, নন–কমিউনিকেবল ডিজিজের দিকে। যেমন হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস ডিজিজের দিকে। কিন্তু করোনাভাইরাস রোগটা আসার ফলে আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে, ভাইরাস আমাদের জন্য বড় হুমকি, মানবসভ্যতার জন্য বড় হুমকি। নিকট অতীতে অনেক ভাইরাস এসেছে, আমরা সাফল্যজনকভাবে সেগুলো নির্মূল করতে পেরেছি বিধায় মানবজাতি এখনো টিকে আছে। অদূর ভবিষ্যতেও কিন্তু আমাদের জন্য আরও অনেক হুমকি আসবে।
ভাইরোলজিস্ট সাইফ উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রটা একেবার স্বল্প। এটাকে অবশ্যই আমাদের দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রটা বৃদ্ধি করা উচিত। কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করা উচিত। যারা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণা করবে। অবশ্যই আমাদের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থাকা উচিত। অনেকে দেশে এ ধরনের ইনস্টিটিউট রয়েছে। যারা শুধু সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণা করে। যখন ৮০ শতাংশ লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাবে, তখন কিন্তু আর এই ভাইরাস ট্রান্সমিটেড হবে না। এটা স্বাস্থ্যের অতীত ইতিহাস আমাদের বলে। যখন ৮০ শতাংশ লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাবে, তখন এই ভাইরাসটা দ্বিতীয়, তৃতীয় ব্যক্তিতে ছড়াতে পারবে না। কিন্তু এরপর যে আফটার ম্যাথ, তা হলো অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে পুরো বিশ্ব।
Source: Prothom Alo