Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Coronavirus - করোনা ভাইরাস => Topic started by: shaiful on April 09, 2020, 06:24:30 PM

Title: গরম পানি খেলে কি করোনোভাইরাস মারা যায়?
Post by: shaiful on April 09, 2020, 06:24:30 PM
করোনা ভাইরাস থেকে কীভাবে নিরাপদে থাকা যায়, তা নিয়ে অনেক ধরনের পরামর্শ ভেসে বেড়াচ্ছে অনলাইন দুনিয়ায়। এসব পরামর্শের পেছনে আসলে কোনো বাস্তবতা রয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখেছে বিবিসি ফিউচার বিভাগ। এক কাপ গরম পানীয়তে যে কেউ হয়তো কিছুটা আরামবোধ করতে পারেন, কিন্তু করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর মতো কঠিন সময়ে কি এটি কোনো সহায়তা করতে পারে? অনেকেই দাবি করছেন, গরম পানি পান করলে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে। কিন্তু ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তারা এ রকম কোনো ঘোষণা দেয়নি।

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ রন একেলিস বলেছেন, গরম পানীয় ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে, এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। ঠান্ডা ও ফ্লুতে ভোগার সময় ঠান্ডা পানি খেলে কী ঘটে, তা নিয়ে অতীতে গবেষণা করেছেন একেলিস। সেখানে তিনি দেখতে পেয়েছেন, ঠান্ডা লাগলে গরম পানীয় হয়তো খানিকটা স্বস্তি দিতে পারে। এর কারণ হয়তো গরম পানীয় মুখ ও নাকের লালা ও শ্লেষ্মার নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

সার্স-কোভ-২, যে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগের জন্ম দিয়েছে, সেটির ক্ষেত্রে বিবিসি ফিউচার পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছে যে নতুন ধরনের এই করোনা ভাইরাসের বিপক্ষে কোনো ধরনের প্রতিরক্ষাই দিতে পারে না গরম পানি।

গরম পানি খেলে বা গরম পানি দিয়ে গার্গল করলে এই ভাইরাস ধুয়ে যায় কি না, তা নিয়েও মানুষের মধ্যে রয়েছে প্রশ্ন। অন্য ব্যক্তিদের কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে এসে ক্ষুদ্র আকারে এটি নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করার পর মানুষকে সংক্রমিত করে থাকে। আসল ঘটনা হলো, এটি মানুষের ফুসফুসের কোষগুলোকে আক্রমণ করে। সেখানকার কোষগুলো এমন একটি এনজাইম ব্যবহার করে, যা ব্যবহার করে ভাইরাস ফুসফুসের ভেতরে প্রবেশ করে। শ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এসব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোঁটা ফুসফুসের গভীরে পৌঁছে যায়, যেখানে মুখ থেকে যাওয়া যে কোনো তরল পৌঁছানো সম্ভব।

গরম পানির গার্গলে গলার ভেতরের ভাইরাস মেরে ফেলা যায় কি না? উত্তর হচ্ছে—যায় না। কারণ একবার শরীরে প্রবেশ করার পর ভাইরাস খুব দ্রুত মানব শরীরের কোষের ভেতরে চলে গিয়ে নিজের অনেকগুলো কপি তৈরি করে। প্রথম দিকের কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রথম কোষটি সংক্রমিত করার পরে অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়তে ভাইরাসটির প্রায় ৩০ ঘণ্টা সময় লাগে। একইভাবে আমাদের শরীরের কোষে প্রবেশ করার পর বাইরের যেকোনো রকম তাপমাত্রা থেকে ভাইরাসটি নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

মানবশরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি ও বিস্তারের জন্য আদর্শ। ফলে গলার মধ্যে গরম পানির গার্গল করে কোষের ভেতরে থাকা ভাইরাস হত্যা করা যায় না। এর জন্য ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অথবা তার বেশি তাপমাত্রা দরকার, যা সার্সের মতো করোনা ভাইরাস হত্যা করতে পারে। অবশ্য কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, এই ভাইরাস মারার জন্য অন্তত ৬০-৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন।

তবে যে ভাইরাসের কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়েছে, সেই ভাইরাস কত ডিগ্রি তাপমাত্রা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে, তা নিয়ে কোনো গবেষণা প্রকাশিত হয়নি। ধারণা করা হয়, এটি অন্য করোনা ভাইরাসগুলোর মতোই হতে পারে। ভাইরাস হত্যা করতে ৭০ ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় রান্না করা যেতে পারে।

অনেক পরামর্শে আবার গরম পানিতে গোসল করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের তাপে মানব ত্বক পুড়ে যাবে বা ক্ষতের সৃষ্টি করবে। আর কেউ যদি সে রকম পানিতে টিকে থাকতেও পারেন, সেটা তার শরীরের ভেতরে থাকা ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে না। এর কারণ হলো, আপনি বাইরে যত তাপমাত্রায় থাকুন না কেন, আপনার শরীর তার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই সীমাবদ্ধ রাখবে। শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ানোর কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাকও। কোভিড-১৯ থেকে নিজেকে রক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সর্বশেষ নির্দেশাবলী অনুসরণ করা।

সূত্র: বিবিসি