Daffodil International University
Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 03, 2012, 08:34:53 AM
-
অনেক মা-বাবাকেই বলতে শোনা যায়, আমার ছেলে বা মেয়েটা পড়াশোনায় একদম মনোযোগী নয়। বই নিয়ে বসতেই চায় না। কিন্তু কেন এমন হয়? সাম্প্রতিককালের গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বেশিক্ষণ টিভি দেখা, কম্পিউটারে বা টিভিতে গেমস খেলা।
কিছুদিন আগেও শিশুদের মুটিয়ে যাওয়া বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে অতিরিক্ত টিভি দেখা বা ভিডিও গেমস খেলাকে দায়ী করা হলেও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও একটি নতুন গবেষণার ফলাফল। ১৯৭১ থেকে ২০০১-এই দীর্ঘ সময় নিউজিল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানী গবেষণা করেছেন শিশুদের অতিরিক্ত টিভি দেখা বা ভিডিও গেমস খেলার ক্ষতিকারক প্রভাবের ওপর। ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া এ রকম শতাধিক শিশুর ওপর ২০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণার ফলাফল থেকে তাঁরা দেখেছেন, যেসব শিশু প্রতিদিন দুই ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে টিভি দেখেছে বা ভিডিও গেমস খেলেছে, তারা অন্যান্য শিশু, যারা তেমন একটা টিভি দেখেনি বা ভিডিও গেমস খেলেনি, তাদের তুলনায় শ্রেণীকক্ষে উল্লেখযোগ্য হারে কম মনোযোগী।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, টিভি বা ভিডিও গেমসের ছবিগুলো খুব দ্রুতগতিতে ও অতিমাত্রায় পরিবর্তিত হয়। ফলে তা বাড়ন্ত শিশুদের মস্তিষ্কে এক ধরনের প্রভাব ফেলে। এতে শিশুরা চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে যায় এবং পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। এ ধরনের শিশুদের কেউ কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে বললে তারা সেটা অতটা গুরুত্বসহকারে নেয় না, পরমুহূর্তেই ভুলে যায়। ফলে তারা শুধু পড়াশোনা নয়, সব ক্ষেত্রেই অমনোযোগী হয়ে ওঠে। আর এই অমনোযোগিতা তাদের ঠেলে দেয় ক্লাসের পেছনের সারিতে।
আগের গবেষণা পর্যালোচনা করলে আরও দেখা যায়, শিশুরা বেশি মাত্রায় টিভি দেখলে বা ভিডিও গেমস খেললে বেশির ভাগ সময়ই শুয়ে-বসে কাটায়। ফলে তাদের শরীরে ধীরে ধীরে মেদ জমতে থাকে এবং একপর্যায়ে তারা মুটিয়ে যায়। শরীরে মেদ বাড়লে রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায় এবং শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের (চোখ, মস্তিষ্ক) সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তনালিতে খাদ্যকণা পৌঁছাতে পারে না। ফলে সেসব অঙ্গ অপুষ্টির শিকার হয়। এতে দেখা যায়, স্বাভাবিক ওজনের শিশুর তুলনায় মুটিয়ে যাওয়া শিশুরা কম বুদ্ধিমান হয় এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বা কোনো কিছু মনে করতে তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সময় নেয়। এভাবেই তারা সবকিছুতে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়তে থাকে। চালচলনেও তারা অপেক্ষাকৃত ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই উপরিউক্ত বিষয়গুলো থেকে দেখা যাচ্ছে, শিশুদের অতিমাত্রায় টিভি দেখা বা ভিডিও গেমস খেলার ফলাফল মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।
সাম্প্রতিককালের একটি গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শিশুদের এই অতিরিক্ত টিভি দেখা ও ভিডিও গেমস খেলার পেছনে মা-বাবারাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত (জার্নাল অব পেডিয়াট্রিকস, ২০০৭, খণ্ডঃ ১৫১, সংখ্যাঃ ৪, পৃষ্ঠাঃ ৩৬৯-৩৭৩)। বিজ্ঞানীদের মতে, মা-বাবা বেশি মাত্রায় টিভি দেখলে এর প্রভাবও বাচ্চাদের ওপর পড়ে থাকে। যেমন অনেক সময় মা-বাবা যখন টিভি দেখেন, দেখা যায় শিশুরাও তাঁদের সঙ্গে বসে যায় টিভি দেখতে। মা-বাবার টিভি দেখার শব্দও অনেক সময় শিশুর পড়াশোনায় মনোযোগী হতে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই মা-বাবা যদি তাদের টিভি দেখা কমিয়ে দেন তাহলে সেটা শিশুদের মঙ্গলজনকই বটে। শিশুদের টিভি দেখা বা ভিডিও গেমস খেলার ক্ষেত্রে মা-বাবা একটা নিয়মও করে দিতে পারেন, যাতে তাঁরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টার বেশি এগুলোতে সময় ব্যয় না করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত টিভি দেখা ও ভিডিও গেমস খেলার ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়েও শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন এবং তাদের বুঝিয়ে বলতে পারেন। এতে অনেক শিশুই টিভি দেখা ও ভিডিও গেমস খেলা কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া যে সময় শিশুরা বেশি মাত্রায় টিভি দেখে ও ভিডিও গেমস খেলে থাকে, ওই সময় তাদের অন্যান্য খেলাধুলার প্রতি উৎসাহিত করা যেতে পারে। যেমন-দিন হলে বাইরের কোনো খেলা আর রাত হলে ঘরে কোনো খেলা (ইনডোর গেমস) ইত্যাদিতে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। এতে যেমন তারা অমনোযোগী হওয়া থেকে মুক্ত থাকবে, তেমনি মুটিয়ে যাওয়া বা বুদ্ধির বিকাশ কমে যাওয়া থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারবে সহজেই। এ ব্যাপারে সব মা-বাবারই সচেতন হওয়া দরকার।
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ০৫ ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ড· এম সহিদুল ইসলাম
ডিপার্টমেন্ট অব নিউট্রিশন
নর্থ-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ আফ্রিকা।