Daffodil International University

Help & Support => Common Forum/Request/Suggestions => Topic started by: Farhana Haque on November 23, 2020, 05:04:14 PM

Title: মাদক বাণিজ্যের থাবায় পথশিশু
Post by: Farhana Haque on November 23, 2020, 05:04:14 PM
মাদক বাণিজ্যের থাবায় পথশিশু

(https://samakal.com/uploads/2014/09/print/photos/untitled-1_83095.jpg)

বয়স কত? ঝটপট উত্তর দেয়, জানি না। তয় মায় কয় ১৩। নাম কী? আবু । পড়? না, কাম করি। কী কাম? কওন যাইব না। মানা আছে। আলম থাকে বেগুনবাড়ির আশেপাশে। ওর মা কাজ করে কয়েকটি বাসায়। মা বিয়ে করেছে তিনটি। এখন একজন স্বামীও নেই, কিন্তু পাঁচ সন্তানই তার ঘাড়ে। আবুর মা জানায়, উপায়হীন হইয়া ওরে কাজে দিছিলাম এক গ্যারেজে, পেডে-ভাতে। কামডা শিখুক। কাম ভালই শিখছিল। কিন্তু একদিন ৫০০ টেহা আমার হাতে দিয়া কইলো, রোজগার কইরা আনছি মা। আর অবাব থাকবো না। আমি কইলাম, কেমনে? কথা কইলো না। খোঁজ কইরা জানলাম ইয়াবা নামের টেবলেটের প্যাকেট এক জায়গা থেইকা আরেক জায়গায় লইয়া যাওনের কাম করে। আমি বুঝি নাই। একবার যহন পুলিশ আইলো বস্তিতে তহন বুঝলাম, হে নেশার জিনিস আনা-নেওয়া করে। কিছুদিন আটকাইয়া রাখছিলাম ঘরে। তয় টেকার নেশায় মাঝেমধ্যে এইকাম করে। বিচ্ছিন্নভাবে এমন একটি দুইটি ঘটনা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আসল চিত্র কতটা ভয়াবহ, একটি প্রতিবেদন তা স্পষ্ট করে দেয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের 'মাদক প্রতিবেদন ২০১৩'-এর তথ্যানুযায়ী মাদক চোরাচালান, পরিবহন এবং বিক্রিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু; যাদের বয়স ১৬ বছরের নিচে। এরা ছিন্নমুল পথশিশু। সারা দেশে প্রায় ৪ লাখ পথশিশু আছে। এদের একটি বড় অংশ পথে-পথে জীবনযাপনে অভ্যস্ত। পথশিশুদের ৮০ শতাংশই ঢাকায় বাস করে। পথশিশুরা এখন গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। । এই শিশুদের ৬০ শতাংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এক বছর বা তারও কম বয়সী শিশুরা নারী মাদক পাচারকারীদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পথশিশুদের পারিবারিক বন্ধন বলে কিছু নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো চলে এবং নিজেদের জীবন নিজেই চালায়।
ব্যবহারের সুবিধা
শিশুদের সাধারণত কেউ সন্দেহ করে না। অল্প টাকায় তাদের দিয়ে যে কোনো কাজ করানো যায়। কাজের ভালো-মন্দ তারা বোঝে না। ফলে অপরাধমূলক অনেক কাজে তাদের ব্যবহার করা সহজ হয়। তাদের যারা ব্যবহার করে তারা অনেকটা নিরাপদে থাকে। কারণ মূল অপরাধীদের শিশুরা চিনতেই পারে না। মাদক চোরাচালান ও বিক্রির কাজে জড়িত নারীরা শিশুদের নিয়ে চলাচল করে। ধরা পড়লে ছোট শিশু সঙ্গে থাকায় অনেক সময় পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের আনুকুল্য পায় । আরেকটি বড় দিক হচ্ছে , যেসব শিশু অপরাধমূলক কাজে ব্যবহ্যত হয় তারা ছিন্নমূল বা টোকাই। তাদের পারিবারিক কোনো জীবন থাকে না। তাদের পারিবারিক বন্ধন নেই। তাদের নিয়ে সমাজও ভাবে না। পুলিশ তাদের ধরলে তাদের নিয়ে সমাজে আলোচনাও হয় না। তাদের আসলে সমাজে মানুষ বলেই মনে করে না কেউ। তাদের ভালো-মন্দ, ভবিষ্যৎ সব কিছুই ঘিরে থাকে কেবল অন্ধকার।
আইন কী বলে?

২০১৩ সালের শিশু আইনের ৭৩ নম্বর ধারায় শিশুকে নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য কিংবা বিপজ্জনক ওষুধ প্রদানের বিষয়টি দণ্ডের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতা বা অন্য কোনো জরুরি কারণে উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তারের আদেশ ব্যতীত কোনো শিশুকে নেশাগ্রস্তকারী মাদকদ্রব্য বা ওষুধ প্রদান করে বা করায়, তাহা হইলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। এ ছাড়াও আইনটির ৭৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো শিশুকে মাদক বা বিপজ্জনক ওষুধ বিক্রয়ের স্থানে লইয়া যায় অথবা এইরূপ স্থানের স্বত্বাধিকারী, মালিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি কোনো শিশুকে অনুরূপ স্থানে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করে অথবা কোনো ব্যক্তি যদি অনুরূপ স্থানে কোনো শিশুর গমনের কারণ সৃষ্টি করেন, তাহা হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদ অথবা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। আইনের ভাষায় শাস্তি-জরিমানা ঠিক থাকলেও কোনো অংশেই থেমে থাকছে না শিশুদের দিয়ে মাদক আদান-প্রদানের বিষয়টি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর বিরূপ প্রভাব আমাদের সমাজকে আরও অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছে।

সূত্রঃ সমকাল