Daffodil International University
Health Tips => Protect your Health/ your Doctor => Topic started by: Sahadat Hossain on January 07, 2021, 10:25:18 AM
-
২০২০ সালের প্রথম থেকেই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডিম রাখার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে বহুগুণ। মূলত করোনা প্রতিরোধ, করোনা মোকাবিলা ও চিকিৎসা এবং করোনা-পরবর্তী যত্নের নিরিখেই ডিমের চাহিদা সারা বিশ্বে বর্তমান প্রেক্ষাপটে জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। পোলট্রি শিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের এ ক্ষেত্রে সাধুবাদ দেওয়া উচিত। কারণ, সব প্রতিকূলতা, সংক্রমণ ও লকডাউনের মধ্যে তাঁরা দুনিয়াজুড়ে এই ডিমের চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। মূলত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য ডিমের চাহিদা ও ব্যবহার এ রকম আশাতীতভাবে বাড়ার কারণগুলোর দিকে এবার একটু চোখ বোলানো যাক।
প্রোটিনের সবচেয়ে সুলভ ও সহজলভ্য উৎস ডিম
পুষ্টিগুণের দিক থেকে অত্যন্ত উন্নতমানের প্রোটিন সরবরাহ করে ডিম
লকডাউন এবং উৎপাদন বা পরিবহন-সংকটের সময় কাঁচা মাছ-মাংসের তুলনায় ডিম সহজে পাওয়া যায়। কম পচনশীল বলে এর পরিবহন অপেক্ষাকৃত সহজ। পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। অন্য যেকোনো প্রাণিজ প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের চেয়ে ডিম দামে সস্তা। অথচ পুষ্টিগুণের দিক থেকে অত্যন্ত উন্নতমানের প্রোটিন সরবরাহ করে আমাদের দৈনিক চাহিদার পুরোটাই ডিম পূরণ করতে পারে। প্রোটিনের রাসায়নিক রূপ, অ্যামাইনো অ্যাসিডের প্রায় সব কটিই এই এক ডিমের ভেতরেই আছে। ডিমের সাদা অংশে বেশির ভাগ প্রোটিন থাকলেও হৃদরোগ বা খুব উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা না থাকলে সব সময় সেলেনিয়ামসমৃদ্ধ কুসুম বাদ দেওয়া উচিত নয়।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানের জন্য ডিম
প্রোটিন ছাড়াও অন্যান্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানের ভালো উৎস ডিম। এতে আছে মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, বি ফাইভ, বি টুয়েলভ, ফসফরাস, সেলেনিয়ামসহ আরও অনেক খাদ্য উপাদান। এ জন্যই আমাদের ছোটবেলার বইতে ডিমকে আদর্শ খাদ্য বলা হতো। ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে যে গুটিকয়েক খাদ্যের মধ্যে উপস্থিত, ডিম তাদের মধ্যে অন্যতম। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, রক্তের ভালো কোলেস্টেরল এই ডিমে উপস্থিত থাকে। ডিমের উপকারী চর্বি মস্তিষ্কের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে সাহায্য করে, ফ্যাট সলিউবল ভিটামিনকে মানবদেহে শোষিত হতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি—দুই-ই থাকায় ডিম হাড় ও দাঁতের বৃদ্ধি এবং গঠনের জন্য খুবই উপকারী।
সর্বজনীন পুষ্টির উৎস
ছেলে-বুড়ো সবার জন্যই ডিম জরুরি প্রোটিন উৎস হিসেবে বিবেচিত। তাই করোনার এই দিনে পরিবারের সবার প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে ডিমের জুড়ি মেলা ভার। খেতে সুবিধাজনক ও সুস্বাদু বলে শিশুদের কাছে ডিম খুব পছন্দের। জন্মের পর শিশু যখন প্রথম শক্ত খাবার খেতে শুরু করে, তখন প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাছ বা মাংসের আগে তাকে ডিমই দেওয়া হয়। করোনার এই কঠিন সময়ে পরিবারের শক্তি আর ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে ডিম। ডিম দিয়ে তৈরি করা যায় অসংখ্য উপাদেয়, বৈচিত্র্যময় খাবার। মিষ্টি, ঝাল অথবা নোনতা, চুলায় অথবা ওভেনে ডিম দিয়ে বানানো যায় হাজারো মজাদার খাবার। তাই সব দেশেই করোনাকালে ডিমের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
সব বয়সের মানুষের জন্য ডিম জরুরি প্রোটিন উৎস হিসেবে বিবেচিত
করোনা চিকিৎসায় ডিম
বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎসকেরা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার সময় তাঁদের দিনে একাধিক ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দেহের ক্ষয়পূরণ, নতুন কোষগঠন, দুর্বল শরীরে শক্তির সঞ্চার প্রভৃতি সব ধরনের ক্ষতিপূরণ করতে ডিম খাওয়া খুবই প্রয়োজন। সাধারণভাবে করোনাভাইরাসসহ যেকোনো সংক্রমণ বা অসুস্থতায় ডিম খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করে ডিম
আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো রাখার কোনো বিকল্প নেই এই মহামারির সময়ে। ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ভালো থাকলে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা কম হয় শরীরে। প্রমাণ মিলেছে, ইমিউন সিস্টেমের প্রধান উপাদান দেহের অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডির প্রধান উপাদান প্রোটিন। এ জন্য প্রতিদিন ডিম খেলে করোনা প্রতিরোধব্যবস্থা ভালো থাকে শরীরে। বিশেষ করে পরিবারের ছোট ও বয়স্ক সদস্যদের পারলে রোজই ডিম দেওয়া উচিত।
দেহের অ্যান্টিবডির প্রধান উপাদান প্রোটিন। এ জন্য প্রতিদিন ডিম খেলে করোনা প্রতিরোধব্যবস্থা ভালো থাকে শরীরে
দেহের অ্যান্টিবডির প্রধান উপাদান প্রোটিন। এ জন্য প্রতিদিন ডিম খেলে করোনা প্রতিরোধব্যবস্থা ভালো থাকে শরীরেছবি: জিও ইয়ঙ্ক, পেকজেলস ডট কম
পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্টই দেখা যায়, বিশ্বের সব দেশেই ডিমের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার গত বছর হু হু করে বেড়েছে আকাশচুম্বী হারে। করোনাকালে নিশ্চিত পুষ্টি আর বাজেটে স্বস্তি দিয়েছে প্রোটিন প্যাকস্বরূপ ডিম। লকডাউনের দুর্দিনে বাড়িতে অন্য কিছু না থাকলেও খিচুড়ি বা ভাত-ডালের সঙ্গে ডিম-আলু হলেই চলে গেছে। এখন লকডাউনের কড়াকড়ি না থাকলেও করোনা মোকাবিলা ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে আমাদের জীবনে ডিমের গুরুত্ব এতটুকুও কমেনি।
সূত্র:
‘ফুড ফর থট: সেভেন টিপস টু কিপ আ হেলদি ডায়েট ইন দ্য ফেইস অব করোনাভাইরাস’, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, মার্চ ২০২০
‘নিউট্রিশন অ্যাডভাইস ফর দ্য অ্যাডাল্টস ডিউরিং দ্য কোভিড-১৯ আউট ব্রেক’, নিউট্রিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশনা, ২০২১
‘ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন টিপস ডিউরিং সেলফ কোয়ারেন্টিন’, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশনা, ইউরোপ, ২০২১
‘এগ সেলস হ্যাভ স্কাই রকেটেড ডিউরিং কোভিড প্যান্ডেমিক অ্যান্ড আদার এগি ফ্যাক্টস’, হ্যাজেল ফ্লাইট, দ্য প্রিন্ট, ডিসেম্বর ২০২০
‘ওয়ার্ল্ড এগ ডে ২০২০: অল দ্য রিজনস হোয়াই ইউ শুড ইট এগস ডেইলি ফ্রম আ নিউট্রিশনিস্ট’, গরিমা আরোরা, এনডিটিভি, অক্টোবর ২০২০
‘ইজি, অ্যাফোর্ডেবল অ্যান্ড হেলদি ইটিং টিপস ডিউরিং কোভিড-১৯’, ইউনিসেফ পাবলিকেশন্স, ২০২০
Ref: https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%AE