Daffodil International University

Educational => You need to know => Topic started by: Sultan Mahmud Sujon on January 04, 2012, 08:17:10 AM

Title: রাগ বনাম হার্ট অ্যাটাক
Post by: Sultan Mahmud Sujon on January 04, 2012, 08:17:10 AM
খবির সাহেব (ছদ্মনাম) সরকারি কর্মকর্তা। ভীষণ উগ্র মেজাজের মানুষ। সারাক্ষণ অস্থিরতায় ভোগেন। মাঝেমধ্যে কর্মচারীদের সঙ্গে কারণে-অকারণে রাগারাগি, বকাবকি করেন। যে-কারও কাজে ভুল ধরেন অযথা। তারপর ভর্ত্সনা। এভাবে হেয় করা তাঁর স্বভাব। কখনো জোরে জোরে কথা ছাড়া থাকতে পারেন না। সেদিন এক কর্মচারীকে উগ্র মেজাজ দেখাতে গিয়েই বুকটা চিনচিন করে ওঠে। দম ফেলতে কষ্ট হয়। অনতিবিলম্বে চিকিত্সকের কাছে সবাই ধরাধরি করে নিয়ে যায়। চিকিত্সকের কথা হলো—খবির সাহেবের উচ্চ রক্তচাপ নেই। রক্তে মন্দ চর্বি বেশি নেই, ধূমপানের অভ্যাসও নেই। তবু বুকে ব্যথা, যাকে বলে ‘এনজাইনা’। কারণ তাঁর উগ্র মেজাজ, রাগ, অস্থিরতা, বকাবকি, অর্থাত্ তিনি ‘টাইপ-এ’ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। এসব লোক মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারাও যেতে পারেন। টাইপ-এ ব্যক্তিরাও হূদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান, মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক শ্রমবিমুখতা, দুশ্চিন্তা, অঘুম ইত্যাদিতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির চেয়ে যাঁরা উগ্র মেজাজি বা রাগী তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় কয়েক গুণ বেশি। তাই রাগী পুরুষ হোক বা নারী, বার্ধক্যে খুব কমই পৌঁছান। অর্থাত্ আগেই তাঁদের মৃত্যু ঘটতে পারে। টাইপ-এ মধ্যবয়সী নারীর পুরুষের চেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুঝুঁকি বেশি।
অনেক গবেষকের মতে, টাইপ-এ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন যুবকেরাই এ সমস্যার শিকার মেয়েদের চেয়ে বেশি। মেয়েদের সমস্যা প্রকট হতে পারে অন্যান্য সমস্যা যোগ হলে; যেমন—কারও চাকরি, সন্তান লালন-পালন, সংসারে হেয়প্রতিপন্ন হওয়া, অর্থনৈতিক দুর্বলতা ইত্যাদি। কিন্তু ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি কাঁদতে পারে বলেই কখনো কখনো তারা অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পায়। পুরুষেরা কান্নার মাধ্যমে তা পারে না। মেয়েদের হরমোন ইস্ট্রোজেন নিঃসৃত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু পুরুষদের টেসটোসটেরন হরমোন যেন আরও ত্বরান্বিত করে।
যারা টাইপ-এ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, তাদের রাগ ও হিংসা বেশি থাকে। তারা প্রতিশোধপ্রবণ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী। অন্যকে ধ্বংস করে হলেও নিজে ওপরে উঠতে চায়। সে সময় তাদের শরীরে হরমোন নরএড্রিনালিনের কাজ বেড়ে যায়। হূত্স্পন্দন বাড়ে, হূদ্যন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণ বাড়ে। শ্বাস-প্রশ্বাস বাড়ে। প্রচুর রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে মাংসপেশি সচল রাখে। কিন্তু অন্যান্য রক্তনালি সংকুচিত হয়। এতে রক্তচাপ বাড়ে। এভাবেই বারবার রাগের ফলে রক্তচাপ বেড়ে রক্তনালি আক্রান্ত হয়। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতাও বাড়ে। হূদ্যন্ত্রের অক্সিজেন বেশি প্রয়োজন হয়। না পেলে হার্ট অ্যাটাক, মৃত্যুও ঘটতে পারে। সুতরাং টাইপ-এ ব্যক্তিরা সব সময় মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকে। কিন্তু যারা শান্ত-সরল মানুষ, মানিয়ে চলার মতো, আয়েশি, অর্থাত্ ‘টাইপ-বি’ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, তারা হূদরোগের ঝুঁকি থেকে অনেকটা মুক্ত।
‘টাইপ-এ’ ব্যক্তিরা স্বভাব পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিমুক্ত জীবন যাপন করার চেষ্টা করতে পারে।
ধীরে ধীরে উগ্র মেজাজ কমিয়ে আনতে হবে। এক সপ্তাহ ধরে কী কী কারণে খুব রেগেছেন তা ভাবুন। দেখবেন, কোনো কারণ ছাড়াই রাগ করেছেন অনেক ক্ষেত্রে। সিদ্ধান্ত নিন, আর রাগ করবেন না। নিজেকে নিজেই ঠিক করার চেষ্টা করুন। কখনো রাগে দাঁত কিড়মিড় করছেন, এতে বেড়ে যায় হূত্স্পন্দন। চোয়াল শক্ত, হাত-পা খিঁচন কিংবা কাঁধ ঝাঁকানো শুরু হয় রাগে, তা আগে বুঝেই নিজেকে শান্ত করুন। গভীর শ্বাস নিন। হূদ্যন্ত্রের গতি কমবে। নিজেই নিজেকে নিবৃত্ত হওয়ার হুকুম দিন। রাগ একটু করতে পারেন, কিন্তু তা সীমা অতিক্রম করে নয়। সুন্দর চিন্তা করুন। সুখপ্রদ কিছু ভাবুন। আরাম করুন। চিন্তাশক্তি বাড়বে। চিন্তাভাবনা নিজের মধ্যে না রেখে সহজে, সততার সঙ্গে বন্ধুকে বলুন, জীবনসঙ্গীকে বলুন। কখনো উত্তেজিত হওয়া ঠিক নয়, এমনকি কারও উসকানিতেও।
হোক না নিজের ভুল, স্বীকার করে ফেলবেন। এতে আনন্দই পাবেন। কখনো নিজের যৌক্তিক অবস্থান নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না।
প্রয়োজনে অন্য ঘরে চলে যান, দেখবেন রাগ কমে আসছে। ভাবুন নিজের জগত্ নিয়ে। অনেক সময় ভুল হয়। ভুল হলে ঘরে বসে নিজে নিজেই হাসুন। অন্য কোনো বিষয়ে ভাবুন। অফিসে সহজে রাগ করবেন না। হাসিখুশি ও উচ্ছল থাকুন। বাসায় আনন্দে ফিরে আসুন। মনে সুখ অবশ্যই আসবে। নিজেকে নিয়ে যত বেশি ভেবে ভুলগুলো ধরার চেষ্টা করবেন, তত আনন্দ। তেমনি কমে যাবে হূদরোগের ঝুঁকি।

এস কে অপু
হূদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিত্সা মহাবিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১৮, ২০০৯