Daffodil International University

Educational => Higher Education => Topic started by: roman on April 10, 2021, 02:17:51 PM

Title: মতামত : বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষকদের নিয়োগ প্রমোশন/আপগ্রেডেশনের নীতিমালা
Post by: roman on April 10, 2021, 02:17:51 PM
ইউজিসি কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কলেজ বানাতে চায়


বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষকদের নিয়োগ প্রমোশন/আপগ্রেডেশনের জন্য যে অভিন্ন নীতিমালা করা হয়েছে, তাতে নতুনত্ব নেই। বরং এই অভিন্ন নীতিমালা মেধাবীদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হতে নিরুৎসাহিত করবে এ কথা বলা যায়।

নতুন অভিন্ন নীতিমালায় শিক্ষকদের প্রমোশন বা আপগ্রেডেশনে এক গ্রেড থেকে আরেক গ্রেডে যেতে শুধু সময়কাল বাড়ানো হয়েছে। এই অভিন্ন নীতিমালা দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষকেরা যাতে কম সময়ের মধ্যে অধ্যাপক না হতে পারেন, সেটির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটি কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলনীতির সঙ্গে যায় না।

জাপানে আমার পিএইচডি সুপারভাইজার খুব দ্রুত অধ্যাপক হয়েছিলেন। তিনি সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হয়েছেন। তাঁকে বলা হয়নি তোমার সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ন্যূনতম কয়েক বছর থাকতে হবে। তিনি অধ্যাপক হয়েছিলেন ‘নেচার’ নামক বিশ্বখ্যাত জার্নালে পরপর দুটি আর্টিকেল প্রকাশ করার জন্য। তিনি এই কাজগুলো করেছিলেন আমেরিকায় বসে এবং তাঁর দেশ তাঁর কাজের সম্মান দিয়েছে।
 আমাদের দেশের এই অভিন্ন নীতিমালায় কোথাও গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে একটি ন্যূনতম সংখ্যার আর্টিকেল থাকে। কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দুটি আর্টিক্যাল ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর সম্পন্ন জার্নালে থাকতে হবে। টোটাল ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৩০ আর ২–কে সমানভাবে দেখা হয়েছে।

আমার কাছে আগেও মনে হয়েছে ভালো গবেষণা করার জন্য আমাদের তরুণদের কখনোই চাপ বা উৎসাহিত করা হয় না। ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের ওপর কোনো জোর দেওয়া হয় না। ভালো ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর অর্থ হলো গবেষণার মান ভালো এটি বোঝার চেষ্টা করা হয় না। এখানে ‘নেচারে’ প্রকাশ আর দেশীয় জার্নালে প্রকাশ সমানভাবে দেখা হয়। যার কারণে কোনোভাবে আর্টিকেল প্রকাশ করলেই হয়। আমি মনে করি, এটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দোষ নয়। নিয়ম আমাদের এ রকম করতে বাধ্য করে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কলেজ নয় যে এখানে বিরাট লম্বা সময় শিক্ষক হিসেবে সার্ভিস দেওয়ার ওপর প্রমোশন বা আপগ্রেডেশন নির্ভর করবে। শুধু সময় দ্বারা নির্ধারিত হওয়া প্রমোশন বা আপগ্রেডেশনের জন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার জন্য আসে না। এখানে সবাই স্বাধীনভাবে ওপরে উঠতে চায়। নিজস্ব যোগ্যতাবলে ওপরে উঠতে চায়। বাইরের দেশে এই প্রতিভার মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রয়োজন অনুসারে এবং স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে শিক্ষক নিয়োগ প্রমোশন বা আপগ্রেডেশনের ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে।

আমাদের এখানেও বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আবার প্রতিটির মর্যাদাও সমান নও। এখানেও বাইরের দেশের মতো হওয়ার কথা ছিল। তাদের মতোই গবেষণাকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে সবকিছু নির্ধারণ করার কথা ছিল। বাইরের দেশের মতোই সময় নয়, গবেষণা দিয়ে প্রমোশন বা আপগ্রেডেশনের নির্ধারণ হওয়ার কথা ছিল আমাদের এখানেও।

একজন বিশ্ববিদ্যালয়োর কাজ শুধু ছাত্র পড়ানো নয়। এই নিয়মে শুধু ছাত্র পড়ানোর কথাই বলা হয়েছে। মনে হচ্ছে যত বেশি সময় ছাত্র পড়াবেন ততই তিনি ভালো। এর মাধ্যমে কখনোই বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা পরিবর্তন হবে না। আন্তর্জাতিকভাবে কখনোই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে যাবে না। বিখ্যাত গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা তরুণেরা কখনোই আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাইবে না।

আমরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের না এর জন্য সব সময় বলি। কিন্তু এর পেছনের কারণ চিহ্নিত করি না। গবেষণা ছাড়া যে বহির্বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্ভব না, তা নিয়ে ভাবি না। আর এ জন্য যে গবেষকদের উৎসাহিত করতে হবে, তা আমরা জেনেও বুঝি না।

অভিন্ন নীতিমালার এই অদ্ভুত নিয়মে একজন শিক্ষকের সেল বা নেচারের মতো পাবলিকেশন থাকলেও তাকে বিরাট লম্বা সময় শুধু ক্লাসে পড়ায়নি এই অজুহাতে প্রমোশন বা আপগ্রেডেশন ছাড়া বসে থাকতে হবে। আবার বিদেশে যাঁরা খুব ভালো গবেষণা করছেন, তাঁরাও আর আসার উৎসাহ পাবেন না। কারণ, ভালো গবেষণাকে এখানে একদম গণনার মধ্যেই নেওয়া হয়নি।

আমি পুরো হতাশ। আমার ধারণা, আমার মতো বিশ্ববিদ্যালয়র প্রতিটি শিক্ষক হতাশ। এ রকম নিয়মের দোহাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্টকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এ দেশ কখনোই সামনের দিকে যাবে না। বরং বাংলাদেশ থেকে মেধাবীরা চলে যাবেন আরও দ্বিগুণ বেগে।

লেখক: ড. মো. ফজলুল করিম, সহযোগী অধ্যাপক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল, বাংলাদেশ। ভূতপূর্ব: ফ্যাকাল্টি, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান এবং পোস্টডক্টরাল ফেলো, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র।

Collected
Source- https://www.prothomalo.com/education/higher-education/%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%9C-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A7%9F