Daffodil International University
Health Tips => Protect your Health/ your Doctor => Women => Topic started by: Mrs.Anjuara Khanom on January 03, 2022, 10:21:48 AM
-
বর্তমানে বিশ্বজুড়েই স্তন ক্যানসারের মতোই জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। এই ক্যানসারের সঠিক চিকিৎসা করা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আর যারা প্রথম থেকেই চিকিৎসা করান, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা ৯৫ শতাংশ।
দেশে প্রতিবছর ৮ হাজারের বেশি নারী জরায়ুমুখে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ রোগে মৃত্যু হয় ৫ হাজারেরও বেশি নারীর। এ প্রাণহানি কমাতে প্রয়োজন এ রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায় ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে রাখা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোকলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারহানা খাতুন এ বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য ও পরামর্শ জানিয়েছেন।
জরায়ুমুখ ক্যানসার বলতে কী বোঝায়, কত ধরনের?
নারীদের প্রজননতন্ত্র জরায়ুর দুটি অংশ। একটি হলো বডি, আরেকটি হচ্ছে জরায়ুমুখ, যেটাকে সার্ভিক্স বলা হয়। এই সার্ভিক্সে যখন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) দিয়ে কিছু পরিবর্তন হয়ে অনেকগুলো ধাপের মাধ্যমে জরায়ুমুখে ঘা হয় সেটাই হচ্ছে জরায়ুর ক্যানসার। জরায়ুর বডির ক্যানসার আর জরায়ুর ক্যানসার দুটোর কারণও একদম ভিন্ন।
জরায়ুমুখের ক্যানসারের সাধারণত যে রিসপেক্টরগুলো আছে, সেগুলো হলো- খুব অল্প বয়সে যাদের বিয়ে হয়, খুব কম বয়সেই বেশ কয়েকটি সন্তান জন্মদান করা, কম বয়সেই প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়া ইত্যাদি কারণে জরায়ুমুখের ক্যানসার হয়ে থাকে।
জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ বা উপসর্গ
জরায়ুমুখ ক্যানসারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ৭০ ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ অ্যাডভান্সড স্টেজে ধরা পড়ে। প্রথমদিকে এই রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না। এরপর যখন লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন সেটা অ্যাডভান্সড হয়ে যায়। এ কারণেই জরায়ু ক্যানসারকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলা হয়ে থাকে।
jagonews24
>> নিন্মাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা কিংবা ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা।
>> গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য। হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা, পেটে অস্বস্তি লাগা, ইত্যাদি পেটের কোন সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
>> পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা, সঙ্গে বমি বমি ভাব কিংবা বার বার বমি হওয়া। এর ফলে খিদে কমে যায়।
>> অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা হঠাৎ করে ওজন অনেক কমে যাওয়া।
>> প্রথম দিকে রোগীর সাদাস্রাব হয়। অনেক সময় গন্ধযুক্ত বা রক্তমিশ্রিত সাদাস্রাব হয়।
>> যৌন সম্পর্কে রক্ত যাওয়া জরায়ু ক্যানসারের এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এজন্য সহবাসে কারও রক্ত গেলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
>> মাসিক অনিয়মিত হওয়া। দুই মাসিকের মাঝে অনিয়মিত রক্তস্রাব অথবা মাসিক এতবেশি অনিয়মিত হচ্ছে যে মাসিকের তারিখ শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
>> মেপোজ হওয়ার পরও যদি কোনো নারী রক্তক্ষরণ দেখা যায়, তাহলে সেটিও জরায়ু ক্যানসারের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। সেক্ষেত্রে দ্রুত তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
>> এ ছাড়া তলপেটে ব্যথা, ব্যাকপেইন বা পা ফুলে যাওয়া ও পায়ে পানি আসা জরায়ু ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজের লক্ষণ।
জরায়ু ক্যানসার হওয়ার কারণ কী?
>> কম বয়সে অর্থাৎ ১৩-১৪ বছর বয়সে কোনো মেয়ের বিয়ে হলে তার যোনিপথের কোষ কলাগুলো পরিণত হওয়ার আগেই সে যৌন সংস্পর্শে আসছে। এটি জরায়ু ক্যানসারের জন্য বড় এক ঝুঁকির কারণ।
>> যারা কম বয়সে বাচ্চা নেয়, যারা অনিরাপদ সঙ্গম চর্চা করে, শারীরিক সম্পর্কের জন্য যাদের একাধিক সঙ্গী থাকে, শারীরিক সম্পর্কের সময় যারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন নারীদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ক্যানসারে রূপান্তরিত করে।
এসব কারণেই জরায়ু ক্যানসারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উচ্চ ঝুঁকিতে। কারণ, এই ক্যানসারের যতগুলো রিস্ক ফ্যাক্টর আছে তা সবই বাংলাদেশে আছে।
জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ করতে ১৩-১৫ বছরের কিশোরীদের টিকা দিতে হবে। এই ভ্যাকসিনের ১০০ ভাগ সুফল পাওয়া যায়। তবে তাদেরকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এর পাশাপাশি জরায়ু ক্যানসার প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
দ্বিতীয় প্রতিরোধ হলো- স্ক্রিনিং সেন্টারে গিয়ে সুস্থ মায়েদের স্ক্রিনিং করতে হবে। স্ক্রিনিংয়ে ৩টি পদ্ধতি আছে। এগুলো হলো- পেপস স্মেয়ার টেস্ট, ভায়া টেস্ট ও এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট। এই টেস্টগুলোর মাধ্যমে জরায়ু মুখের ক্যানসারের পূর্ব লক্ষণ শনাক্ত করা যায় এবং চিকিৎসা দেওয়া যায়।
সূত্র: ডক্টরটিভি