মা-বাবার অধিকার ও মর্যাদা
ইসলামে মা-বাবার অধিকার ও মর্যাদা কতটুকু তা বোঝানোর জন্য আল্লাহ বলেন, তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক কর না। আর বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণ কর। (সূরা নিসা- আয়াত : ৩৬)
আল্লাহ আরও বলেন, আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং বাবা-মার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বল। আর তাদের উভয়ের জন্য দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের ডানা নত করে দাও এবং বল, ‘হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন’। (সূরা বনি ইসরাইল-আয়াত : ২৩, ২৪)।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, ‘যথাসময়ে নামাজ আদায় করা।’ আমি বললাম, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা।’ আমি বললাম, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ (সহিহুল বুখারি ৫২৭)।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একটি লোক রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা।’ (সহিহুল বুখারি ৫৯৭১)।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘কবিরাহ গুনাহগুলোর একটি হলো আপন পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপন পিতা-মাতাকে কি কোনো ব্যক্তি গালি দেয়?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, সে লোকের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে এবং সে অন্যের মা’কে গালি দেয়, সুতরাং সেও তার মা’কে গালি দেয়।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘কবিরাহ গুনাহগুলোর একটি হলো নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ করা।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ নিজের পিতা-মাতাকে কীভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ‘সে অপরের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে। আর সে অন্যের মাকে গালি দেয়, বিনিময়ে সেও তার মাকে গালি দেয়।’(সহিহুল বুখারি ৫৯৭৩)।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের অনেক জায়গায় পিতা-মাতার মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেমন : পিতা-মাতাকে কষ্ট না দেওয়া, বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখাশোনা করা, এমন ব্যবহার করা যাতে পিতা-মাতা ‘উফ’ শব্দটিও না করে, সর্বোপরি তাদের জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করা ইত্যাদি।
সন্তানদের উচিত পিতা-মাতার ভূমিকা ও তাদের অবদানগুলোকে সব সময় স্মরণ করা, পিতা-মাতা এমন একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যেখানে আশ্রয় নিলে কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকে না। বরং মনের মধ্যে প্রশান্তি লাভ করে এবং মনে নিরাপদ অনুভূতির সৃষ্টি হয়। পিতা-মাতা এমন একটি স্বার্থহীন ভালোবাসার কেন্দ্রস্থল, যে ভালোবাসা সব গ্লানি, দুঃখ, কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
একদিন আল্লাহর দেওয়া দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় নেয়ামত পিতা-মাতা থাকবে না। তখন সন্তানরা বুঝতে পারবে, তারা কত বড় মাথার ওপরে ছায়াযুক্ত বটগাছ হারিয়েছে। তখন আর কিছু করার থাকবে না। তাই সব সন্তানদের উচিত পিতা-মাতার যত্ন নেওয়া এবং বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখাশোনা করা। এর মধ্যেই আল্লাহতায়ালা শান্তির মহাসমাবেশ ঘটাবেন আশা করি। সন্তানদের যে রকম পিতা-মাতা শত বিপদে ফেলে দিতে পারে না ঠিক সে রকম সন্তানদের উচিত পিতা-মাতাকে শত বিপদে ফেলে না দিয়ে তাদের সেবার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন, আমিন।
Source: https://www.jugantor.com/todays-paper/features/islam-and-life/607648/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BE