Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Allah: My belief => Topic started by: Khan Ehsanul Hoque on December 10, 2022, 03:05:43 PM

Title: মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম
Post by: Khan Ehsanul Hoque on December 10, 2022, 03:05:43 PM
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

ইসলামে মানবাধিকার একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিষয়। আর বর্তমানে মানবাধিকার শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু প্রত্যেক মুসলিমের উচিত তার দ্বীন নিয়ে গর্ববোধ করা এবং এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যে, মানুষকে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে তা অনেক বড়। কারণ কিসে মানুষের কল্যাণ রয়েছে সে বিষয়ে এবং সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহর চেয়ে বেশি কেউই জানে না। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেছেন : যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কী করে জানবেন না? তিনি সূক্ষ্ম জ্ঞানী, সম্যক জ্ঞাত (মূলক : ১৪)।

তাই অনেকেই মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা করে এ কথা প্রমাণ করেছেন-ইসলামি শরিয়ত, রাসূলের জীবনচরিত, কুরআনের বিধানাবলি, চার খলিফা ও তৎপরবর্তী খলিফাদের কর্ম পদ্ধতিই মানবাধিকারের পূর্বতন সনদ। ইসলামের এ মানবাধিকারগুলো একদিক দিয়ে অভূতপূর্ব এবং অতি উঁচুমানের আবার অন্যদিকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও মানসম্পন্ন। রাসূল (সা.) এবং খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। মানবাধিকারের বিষয়টি ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বত্র সমান। মানবজাতিকে ইসলাম গৌরব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইসলাম মানুষকে সমান অধিকার, একতা, ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। ইসলামে বংশ মর্যাদা, শ্রেণিবিভেদ, জাতিগত বিভেদ ও বর্ণবিভেদ থেকে সতর্ক করেছে। দাস-দাসী ও অধীনস্তদের প্রতি সুন্দর ও ন্যায়ানুগ ব্যবহার করতে শিক্ষা দিয়েছে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ হিসাবে সবাই সমান মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। মৌলিক অধিকার সবার সমান। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার অধিকারও সবার ক্ষেত্রে সমান। ব্যক্তি স্বাধীনতাও সবার ক্ষেত্রে সমান। মর্যাদার দিক দিয়ে ইসলামে ধনী গরিব সবাই সমান। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারও সবার ক্ষেত্রে এক। জানমালের নিরাপত্তার অধিকার একই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অর্থাৎ বাকস্বাধীনতা সবার ক্ষেত্রে এক।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ ইসলামে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

যুগে যুগে মানবতার মুক্তি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার আশাবাদ শুনিয়েছেন বিভিন্ন মহামানব। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহাম্মাদ (সা.) সপ্তম শতকে হাজির হয়েছিলেন মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে নতুন ধারণা নিয়ে। তিনি প্রচার করেছেন মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি ও মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইসলাম বর্ণ, গোত্র, ভাষা, সম্পত্তি বা অন্য কোনো মর্যাদার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে না। এটি একটি সমন্বিত ধারণা। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামই প্রথম স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে।

মৌলিক অধিকারকেই মানবাধিকার বলে। ইসলামে মানবাধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বোঝানো হয়, যেগুলো স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তার বান্দাকে প্রদান করেছেন। পৃথিবীর কেউ তা রহিত করার অধিকার রাখে না।

এ অধিকার কখনো রহিত হওয়ার নয় ইসলামের প্রথম যুগে মদিনাভিত্তিক সমাজে মুসলিম নাগরিকরা সামাজিক, আধ্যাত্মিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সব অধিকার ভোগ করতেন। ইসলামে ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে রয়েছে জীবনের নিরাপত্তা, নারীর অধিকার, হত্যা না করা, গিবত না করা, ক্ষমা প্রদর্শন, সদাচরণ, রাজনৈতিক অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকারসহ অনেক কিছু। সামাজিক অধিকারের মধ্যে রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, মালিকানার অধিকার, সাম্যের অধিকার, চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অধিকার, লেখা, বলা ও প্রচার কার্যের অধিকার। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : আমি মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও চমৎকার অবয়বে সৃষ্টি করেছি। (সূরা-আত তিন-০৩)। আরও বলা হয়েছে : তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে বাছাই করা হয়েছে, মানবের কল্যাণের জন্য। (সূরা-আল-ইমরান-১১০)।

মানুষে মানুষে সাম্যের ধারণাটি পাওয়া যায় অন্য আয়াতে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক নর ও নারী হতে। (সূরা হুজরাত-১৩)। ইসলামের শান্তির বাণী শুধু নিজ ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং পরমত ও পরধর্মের প্রতি সহনশীলতা ও সহানুভূতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্যে গুরুত্ব দেন রাসূল (সা.)। উম্মার ধারণার মধ্যে অন্যান্য ধর্মের স্বাধীনতা ও অধিকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রাসূল (সা.)-এর সময়কালে করা চুক্তিগুলো দেখলে সেটি বোঝা যায়। ‘মদিনা সনদ’ মানবাধিকারের স্বীকৃতির জন্য বিখ্যাত। এ সনদে ৪৭টি ধারা ছিল। ধারাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-

১. মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায়গুলো সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি জাতি গঠন করবে।

২. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৩. রক্তপাত, হত্যা, ব্যভিচার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো।

৪. দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

৫. ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।

৬. নবুয়তপ্রাপ্তির আগে হজরত আব্বাস (রা.)-সহ অন্যদের নিয়ে গঠিত হিলফুল ফুজুল ছিল বর্ণবাদে আক্রান্ত অন্ধকার আরবে মানুষের স্বাধীনতা ও বেঁচে থাকার অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি।

৭. রাসূল (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণে অন্যান্য অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে দাস-দাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। সেখানে বলা হয়েছে-মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই সমান। তিনি বলেন, কোনো আরবের ওপরে অনারবের প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য নেই কোনো অনারবের আরবের ওপর।

৮. সাদা মানুষের প্রাধান্য নেই কালো মানুষের ওপর। রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর এ ধারা অব্যাহত ছিল।

যেমন হজরত আবু বকর (রা.) তার প্রথম ভাষণে বলেন, ‘আমি সৎপথে থাকলে আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন এবং সমর্থন জোগাবেন, আর বিপথগামী হলে উপদেশ দিয়ে পথে আনবেন।

৯. হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতকালেও প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলার পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত ছিল। শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে তারা তাদের নিজস্ব অভিমত, অভিযোগ, বিকল্প প্রস্তাব ইত্যাদি পেশ করতে পারতেন।

১০. মানুষের সম্মান কোনো বর্ণ-গ্রোত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে না। বরং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা বা তাকওয়া নির্ধারণ করবে ব্যক্তির মর্যাদা। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে-‘আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান হলো যারা তাকে ভয় করে।’ (সূরা-আল হুজরাত)।

১১. সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বাস এবং জানমালের হেফাজতের হচ্ছে একজন মানুষের সামাজিক অধিকার। ইসলাম কাউকে কারও মর্যাদা হরণ ও অন্যায়ভাবে হত্যার অনুমোদন দেয় না। আল্লাহ বলেন : ‘অন্যায়ভাবে কেউ যদি কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল।’ হাদিসে বলা হয়েছে-‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ এমনকি যুদ্ধের সময়বিরোধী পক্ষের নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে ভালো আচরণের কথা বলা হয়েছে।

শেষ কথা হলো-সমাজে যখন ইসলামের শান্তিপূর্ণ বিধান ও ধর্মীয় অনুশাসন পরিপূর্ণরূপে পালিত হবে এবং সামগ্রিকভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, তখন মানুষ আর অধিকার বঞ্চিত থাকবে না। একটি সুখময় শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলতে ইসলাম প্রদত্ত মানবাধিকারের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

Source: https://www.jugantor.com/todays-paper/features/islam-and-life/623378/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%A0%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE
Title: Re: মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম
Post by: Afroza Akter on December 10, 2022, 03:55:04 PM
Thanks for sharing
Nice post