Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Ramadan and Fasting => Topic started by: Khan Ehsanul Hoque on March 29, 2023, 09:32:27 AM

Title: মাটির মানুষকে সোনার মানুষ বানায় রোজা
Post by: Khan Ehsanul Hoque on March 29, 2023, 09:32:27 AM
মাটির মানুষকে সোনার মানুষ বানায় রোজা

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাবতীয় পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম। এ সময় ক্ষুধা-পিপাসার অসহ্য যন্ত্রণা সত্ত্বেও রোজাদার আল্লাহর ভয়ে পানাহার থেকে বিরত থাকেন। প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন শুধু আল্লাহর ভয়ে। এভাবে কাম, ক্রোধ, লোভ ও নানা রকম দূষণীয় স্বভাব যেগুলো মানুষকে নিয়ে যায় পশুর স্তরে। যেগুলো জন্ম দেয় সমাজে নানা অশান্তি ও অনাচার। তার সঙ্গে রোজাদারের সংগ্রাম চলে মাসব্যাপী। এক মাসের এ কৃচ্ছ্রসাধন ও নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের মাধ্যমে মানুষ নিজের নফস বা প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

দেহ পরিচালিত হয় নৈতিক চরিত্র ও বিবেকের নির্দেশ মতো। এভাবেই মানবদেহের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বিবেকের শাসন ও আল্লাহর রাজত্ব। ফলে মাটির মানুষ পরিণত হয় সোনার মানুষে।

সারা দিন উপবাসে কাতর হয়ে রোজাদার যখন ইফতারের সময় খাবার সামনে নিয়ে বসেন তা একাকী নিজে খেয়ে উদরপূর্তি করতে পারেন না। রাসুল (সা.)-এর পবিত্র বাণী বেজে উঠে তার হৃদয় বীণায়, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা সে ব্যক্তির গোনাহের ক্ষমা ও দোজখ থেকে মুক্তি লাভের সম্বল হবে এবং তাকে ওই রোজাদারের রোজার সমতুল্য অতিরিক্ত সওয়াব দেওয়া হবে।’ (বায়হাকির বরাতে মিশকাত।)

যারা সমাজের ওপরতলার বাসিন্দা তারাও রমজানে উপোস থেকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হন অনাহার-উপবাসের কি করুণ যন্ত্রণা। তাই তারা নিজের সঞ্চিত অর্থের একটি অংশ জাকাত হিসাবে বিতরণ করেন গরিবদের মাঝে। রমজান শেষ হতেই তারা ফিতরা দিয়ে দেন অভাবী লোকদের হাতে। আর সে জাকাত-ফিতরায় গরিবদের সংসারে ফিরে আসে সচ্ছলতা।

ধনীর ধনের প্রতি হিংসা আক্রোশের পরিবর্তে গরিবদের মনে জাগ্রত হয় শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ভাবধারা। আল্লাহর জন্য দান করে ধনীরাও পান অনাবিল তৃপ্তি। এমনি করে মাহে রমজানে ধনী ও গরিবের মাঝে মমত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার অনুশীলন হয়। বিকশিত হয় অশরাফুল মাখলুকাতের অনন্য রূপসৌন্দর্য।

দুনিয়ার সর্বত্র আজ ধনী-গরিবে শ্রেণি সংগ্রাম, হানাহানি, রক্তপাত। সমাজের একদিকে পুঁজিপতিদের স্বর্গসৌধ, অন্যদিকে সেই সৌধের প্রাচীর ঘেঁষে অনাহার-ক্লিষ্ট দরিদ্র মানুষের নিরন্ন মিছিল। এক্ষেত্রে রমজানুল মোবারকের আদর্শই এ শ্রেণি সংগ্রাম, সর্বহারা আর পুঁজিপতির আকাশ-পাতাল ব্যবধান দূর করে সমাজে সাম্য ও শান্তিধারা নামাতে পারে।

রমজানের পর ঈদের দিনে আমরা সাম্য মৈত্রীর সেই শান্তিময় সমাজ ব্যবস্থারই প্রদর্শনী দেখতে পাই প্রতিটি মুমিনের ঘরে ঘরে আর ঈদের ময়দানে।

সন্ধ্যায় ইফতারের পর ক্ষুধা-তেষ্টার যন্ত্রণায় ক্লান্ত-অবসন্ন শরীর যখন বিছানায় মিশে যেতে চায় তখনই তাগাদা আসে তারাবি নামাজের। যুবক, বৃদ্ধ, কিশোর মিলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তারাবি নামাজ আদায় করেন মসজিদগুলোতে। তারাবির পর একটু বিশ্রামের জন্য যেই না নিদ্রামগ্ন হন আবার শেষ রাতে সেহরি খাওয়ার সাড়া পড়ে।

রমজানে এহেন কর্মব্যস্ততা আর তৎপরতা মানুষের যাবতীয় অলসতা-বিলাসিতা দূর করে দেয়। নিত্য-নতুন কর্মচাঞ্চল্য ও কর্ম ব্যস্ততায় উজ্জীবিত করে রোজাদারকে। প্রত্যেকের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয় সুষ্ঠু নিয়মশৃঙ্খলা ও গতিশীলতা। ফলে সমাজ থেকে দূরীভূত হয় সব অন্যায়-অবিচার, জুলুম, দুর্নীতি ও দুঃশাসন।

বস্তুত মাহে রমজান হচ্ছে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, আত্মগঠন ও সামাজিক উন্নতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মাসব্যাপী এক কর্মশালা। এ কর্মশালা রোজাদারের মনে জাগ্রত করে দেয় আল্লাহর ভয় ও আখেরাতে আল্লাহর অফুরান প্রতিদান লাভের বাসনা। এজন্য রোজার প্রধান শর্ত হচ্ছে, পানাহার ও স্ত্রী সংশ্রব ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত ও সওয়াবের নিয়ত করা।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবিজি (সা.) বলেন, ‘আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল’ (বুখারি শরিফ)। বিশুদ্ধ নিয়তের রোজা মুমিন বান্দার অন্তরে সঞ্চার করে এক দুর্জয় শক্তি। যে শক্তি বান্দাকে আল্লাহর দাসত্ব ও প্রতিনিধিত্বের যথার্থ উপলব্ধি দানের পাশাপাশি বানিয়ে দেয় ইনসানে কামিল।

দুনিয়ার সব অশান্তির মূল একমাত্র আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস ও আখেরাতের প্রতি উদাসীনতারই ফসল। রমজান জাগ্রত করে দেয় আল্লাহর ভয়, আত্মোপলব্ধি ও পরকালে জবাবদিহি তীব্র অনুভূতি। আল্লাহ আমাদের একনিষ্টভাবে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার তাওফিক দিন। আমিন!

Source: https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/659603/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A6%BE