Daffodil International University

Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Prophet Muhammad SAW => Topic started by: Mrs.Anjuara Khanom on March 18, 2024, 02:48:04 PM

Title: রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মু‘জিযা
Post by: Mrs.Anjuara Khanom on March 18, 2024, 02:48:04 PM
মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রা:) বলতেন, আল্লাহ্‌র কসম, যিনি ছাড়া কোন (হক) ইলাহ নেই। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম।আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদা আমি তাঁদের (রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং ছাহাবীদের) রাস্তায় বসেছিলাম, যেখান দিয়ে তারা বের হ’তেন। আবূ বকর (রা:) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম।আমি এ উদ্দেশ্যেই তা করলাম, যেন তিনি আমাকে কিছু খেতে দিয়ে পরিতৃপ্ত করেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ওমর (রা:) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকেও সেই একই উদ্দেশ্যে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু তিনিও চলে গেলেন, কিছুই করলেন না।

অতঃপর আবুল কাসেম [অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)] আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি আমার চেহারা দেখে মনের কথা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা (রা:)! আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র  রাসূল (সাঃ)! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে চল’! অতঃপর তিনি চললেন, আমি তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি বাড়ীতে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি ভিতরে  প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুধ কোথা থেকে এসেছে’?বাড়ির লোকজন উত্তর দিল, ‘অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা আপনার জন্য হাদিয়াস্বরূপ দিয়েছে’। তিনি বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা (রা:)’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র  রাসূল’! তিনি বললেন, ‘আহলে ছুফ্ফার লোকদেরকে গিয়ে এখানে ডেকে আন’।

(রাবী বলেন) ‘আহলে ছুফফা’ ছিল ইসলামের মেহমান। তাদের পরিবার- পরিজন, ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। আর এমন কেউ ছিল না, যার উপর ভরসা করা যায়। যখন কোন ছাদাকার মাল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আসত, তখন তিনি তাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। নিজে সেখান থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যদি কোন হাদিয়া (উপঢৌকন) আসত, তিনি সেখান থেকেও এক অংশ  তাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে এতে তাদেরকে শরীক করতেন এবং নিজে এক অংশ  গ্রহণ করতেন। (আবু হুরায়রা বলেন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদেশ শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, এতটুকু দুধ দ্বারা ‘আহলে ছুফফা’র কি হবে? আমিই এ দুধ পানের বেশী হকদার। আমি তা পান করলে আমার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাদেরকে দুধ পান করতে দেই। আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব।

কিন্তু আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল (সাঃ)-এর আদেশ মান্য করা ছাড়া আমার কোন গত্যন্তর ছিল না।সুতরাং আমি ‘আহলে ছুফ্ফার নিকট গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম’। তারা এসে (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা ঘরে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল! রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, এটি তাদেরকে দাও। আমি (দুধের) পেয়ালা হাতে নিয়ে দিতে শুরু করলাম। এক ব্যক্তির হাতে দিলাম, সে পান করে পরিতপ্তৃ হ’ল এবং আমাকে পেয়ালা ফেরত দিল।

অতঃপর আমি অন্য একজনকে দিলাম, সেও তৃপ্তি সহকারে পান করে পেয়ালা ফেরত দিল। তৃতীয় জনকে দিলে সেও তাই করল। এভাবে আমি (সর্বশেষে) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট পৌছলাম। সবাই পরিতৃপ্ত হ’ল। তিনি পেয়ালা নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল’! তিনি বললেন, ‘এখন আমি আর তুমি বাকী’। আমি বললাম, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহ্‌র রাসূল’। তিনি বললেন, ‘বসে পড় এবং পান কর’। আমি বসে পান করলাম। তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘পান কর’। আমি পান করলাম। তিনি একথা বলতেই থাকলেন, অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হ’লাম যে, ‘আল্লাহ্‌র শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই’। তিনি বললেন, ‘তাহলে আমাকে দাও’। আমি তাঁকে দিলে তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকী দুধ পান করলেন (ছহীহ বুখারী হা/৬৪৫২, ‘রিকাক’অধ্যায়, অনুচেছদ-১৭, মিশকাত হা/৪৬৭০ ‘শিষ্টাচার’অধ্যায়, ‘অনুমতি’অনুচেছদ)।
শিক্ষা:

    রাসূল (সাঃ) ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ। তিনি তাঁর ছাহাবীদের মুখ দেখেই তাদের অন্তরের অবস্থা বুঝতে পারতেন।
    বসে পান করা সুন্নত।
    বিসমিল্লাহ বলে পান করতে হবে।
    আমন্ত্রিত ব্যক্তি অনুমতি না নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করবে না।
    পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির জন্য হাদিয়া বা উপঢৌকন প্রদান করা সুন্নত।
    বিপদগ্রস্ত বা অভাবগ্রস্তে ক সাহায্য করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।

Source:https://quraneralo.net/stories-from-hadith-6/