Daffodil International University

Career Development Centre (CDC) => Parents Guidance => Topic started by: ashraful.diss on September 12, 2025, 10:29:42 AM

Title: কখন শিশুরা মিথ্যা বলা শুরু করে?
Post by: ashraful.diss on September 12, 2025, 10:29:42 AM
কখন শিশুরা মিথ্যা বলা শুরু করে?

সাধারণত শিশুদের আট বছর বয়সের আগে পূর্ণ অর্থে মিথ্যা বলার মতো মানসিক বিকাশ ঘটে না।
যেমন, যদি ৩ বছরের শিশুকে জিজ্ঞেস করা হয়, “তুমি কি দুধ খেয়েছো?”—সে দুধ না খেয়েও বলে, “হ্যাঁ, খেয়েছি।”
এক্ষেত্রে শিশুটি আপনাকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য দেয়নি; বরং আপনাকে খুশি করার জন্য বা শাস্তি এড়ানোর জন্য এমনটি বলেছে। তাই এটিকে প্রকৃত মিথ্যা বলা যায় না।

কেন শিশুরা মিথ্যা বলে?

১. শাস্তির ভয়: পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিশু বুঝে যায়—সত্য বললে শাস্তি পেতে হবে। তাই শাস্তি এড়াতে মিথ্যা বলে।
২. লজ্জা ও অস্বস্তি: ভুল করলে শিশু লজ্জায় পড়ে। পূর্বে যদি লজ্জা দেওয়া হয়ে থাকে, তবে শিশুরা লজ্জা এড়াতেও মিথ্যা বলে।
৩. বাস্তবতা ও কল্পনার গুলিয়ে ফেলা: ৮ বছর বয়সের আগে শিশুরা বাস্তব আর কল্পনার পার্থক্য ঠিকভাবে বুঝতে পারে না।
৪. পরিবার থেকে শেখা: শিশুরা বড়দের দেখে মিথ্যা বলতে শেখে। যদি পরিবারের কেউ শিশুর সামনে মিথ্যা বলে এবং বলে “প্রয়োজনে মিথ্যা বলা যায়”, তবে শিশুও একই আচরণে উৎসাহিত হয়।
৫. কিছু পাওয়ার জন্য: যেমন—“রুটি খেলে আইসক্রিম পাবে।” শিশু রুটি না খেয়েই বলে দেয় সে খেয়েছে।
৬. স্কুলের পরিবেশ: গবেষণায় দেখা গেছে—যেসব স্কুলে বেশি শাস্তি দেওয়া হয়, সেসব স্কুলের শিশুরা বেশি মিথ্যা বলে। কারণ শাস্তি এড়াতে তারা গুছিয়ে মিথ্যা বলতে শেখে।

ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজির ব্যাখ্যা

১। ছোট শিশুরা মনে করে, সব পরিস্থিতিতে মিথ্যা বলা ভুল।
২। ১০ বছর বয়সের পর থেকে তাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসে।
৩। ১০–১৮ বছরের মধ্যে শিশু মিথ্যা বলার সঠিকতা বা ভুল হওয়া নির্ধারণ করে ঘটনার ফলাফলের উপর।
৪। যদি মিথ্যা বলে কিছু পাওয়া যায়, তবে তা তাদের কাছে সঠিক মনে হয়।
৫। অন্যকে খুশি করার জন্য মিথ্যা বলাও তখন গ্রহণযোগ্য মনে হয়।

শিশুকে সত্য বলায় উৎসাহিত করার উপায়

গল্প শুনানো: সত্য বলার সুবিধা বা পুরস্কারের গল্প বলুন। ধর্মীয় গল্প বা বয়স অনুযায়ী ছোট-বড় গল্প তৈরি করতে পারেন।
প্রশংসা করা: শিশু সত্য বললে তার সততা প্রশংসা করুন।
নিজে উদাহরণ হওয়া: শিশুর সামনে সবসময় সত্য বলুন এবং কথা দিয়ে কথা রাখুন।
ভিন্ন সমাধান খোঁজা: শিশু মিথ্যা বললে শাস্তি না দিয়ে বিকল্প উপায়ে সমস্যার সমাধান করুন। যেমন—হোমওয়ার্ক না করে বললে করেছে, তখন তাকে হোমওয়ার্ক শেষ করতে বলুন এবং পরে চেক করুন।
কাউন্সেলিং: যদি মিথ্যা বলা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং পরিবারের জন্য সমস্যার কারণ হয়, তবে ফ্যামিলি ও ইন্ডিভিজুয়াল কাউন্সেলিং করা যেতে পারে। এতে শিশুর উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা কমে, আত্মমর্যাদা বাড়ে এবং ট্রমা থাকলে তা নিয়েও কাজ হয়।

যা করবেন না

❌ শিশুকে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা দেবেন না—একবার সত্য বলতে বলে আবার বলবেন, প্রয়োজনে মিথ্যা বলা যায়।
❌ মিথ্যা বললে শাস্তির গল্প শুনাবেন না।
❌ কথা দিলে তা রাখুন। রাখতে না পারলে কারণ ব্যাখ্যা করুন।
❌ শিশুকে “মিথ্যুক” বলে ডাকবেন না বা অন্যদের সামনে হেয় করবেন না।
❌ সত্য বলার জন্য উপহার দিতে শুরু করে আবার বন্ধ করবেন না। উপহারের ওপর নির্ভরশীল হলে উপহার না পেলে শিশু সত্য বলা বন্ধ করে দিতে পারে।

👉 এইভাবে শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল, ধারাবাহিক এবং ইতিবাচক আচরণই তাকে সত্য বলার অভ্যাসে গড়ে তুলবে।