আপনার উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন কত, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত, তা জানতে আগ্রহী অনেকেই। কিন্তু কোথায়, কীভাবে জানবেন, তা জানতেই জেরবার হয়ে যাই আমরা। আবার অনেকেই বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) বা দেহ–ভর সূচক নামের পরিমাপ–পদ্ধতির কথা জানেন, তবে তা উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজনের কতটা সঠিক ধারণা দেয়?
(https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-09-10%2Fs4bfhat3%2Fpexels-photo-7991911.jpg?rect=0%2C0%2C5040%2C3360&w=622&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত, তা জানতে আগ্রহী অনেকেইছবি: পেক্সেলস
স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএমআই ওজনের ধারণা দেয় বটে, তবে তা শরীর ও স্বাস্থ্যের পুরো ছবিটা পরিষ্কার করে না। এটি বিশেষ করে পেশি ও চর্বির ওজনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।
একই সঙ্গে শরীরে চর্বির বণ্টন সঠিক আছে কি না, তা–ও বোঝাতে পারে না। ফলে তা হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালি–সম্পর্কিত কার্ডিওভাসকুলার ও বিপাকক্রিয়া–সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকির বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে না।
চলতি বছর বিশ্বখ্যাত স্বাস্থ্য সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু বিএমআই কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা দিতে পারে।
এর বদলে তাঁরা বিএমআইয়ের সঙ্গে কোমরের পরিধি ও চর্বির শতকরা হার মাপার মতো কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন।
গবেষকেরা বলছেন, ওজন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে ওসব পরিমাপের সঙ্গে জীবনযাপনের বিভিন্ন বিষয়–আশয়, যেমন খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যক্রম ও বংশগতির মতো বিষয়ও বিবেচনা করা উচিত।
বিএমআই ও এর সীমাবদ্ধতাগুলো কী
বিএমআই হিসাব করার জন্য প্রথমে কোনো ব্যক্তির ওজনকে কিলোগ্রাম এককে নিতে হবে। উচ্চতা পরিমাপ করতে হবে মিটারে। এরপর সেই ওজনকে মিটারের বর্গ দিয়ে ভাগ করলেই পাওয়া যাবে বিএমআই।
অর্থাৎ বিএমআই = ওজন (কিলোগ্রাম) ÷ উচ্চতা (মিটার)২
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে—
বিএমআই ১৮.৫–এর নিচে হলে ওজন কম ধরা হয়।
১৮.৫ থেকে ২৪.৯ পর্যন্ত থাকলে, তা আদর্শ।
এই সূচক ২৫ থেকে ২৯.৯ হলে তা অতিরিক্ত ওজন এবং ৩০–এর বেশি পাওয়া গেলে তাকে স্থূল ধরা হয়।
কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হিসাব শরীরের চর্বিহীন পেশি ও চর্বিযুক্ত পেশির ওজনের পার্থক্য করতে পারে না। ফলে একজন খেলোয়াড় বা পেশিবহুল ব্যক্তির বিএমআই বেশি দেখালেও তাঁর শরীরে চর্বি প্রকৃতপক্ষে কম থাকতে পারে। আবার কারও ওজন ‘আদর্শ’ দেখালেও তাঁর শরীরে অতিরিক্ত চর্বি থাকতে পারে।
গবেষকদের পরামর্শ, ওজন ও স্বাস্থ্যের সঠিক ধারণা পেতে এককভাবে বিএমআইয়ের ওপর নির্ভর করা যাবে না। এর পাশাপাশি আরও কিছুর পরিমাপ করতে হবে।
বিএমআইয়ের বিকল্প কী
বিএমআইয়ের বিকল্প আদতে নেই, তবে পরিপূরক আছে। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণ ও পরিষ্কার ছবি পেতে রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা মাপার পাশাপাশি নিচের বিষয়গুলো পরিমাপ করতে বলছেন।
১. কোমরের মাপ
এর মাধ্যমে পেটে জমা হওয়া চর্বির পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়। এটি জানার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগ বিষয়ে সতর্ক থাকা সম্ভব। এটি সাধারণত নাভির ঠিক ওপরে টেপ দিয়ে মাপা হয়।
২. কোমর–হিপ অনুপাত
স্কিনফোল্ড ক্যালিপার, ডেক্সা স্ক্যান ও বায়োইলেকট্রিক্যাল ইম্পিডেন্স (বিআই)–এর মতো পরিমাপক দিয়ে শরীরের আদর্শ গঠন সম্পর্কে মোটামুটি সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।
স্কিনফোল্ড ক্যালিপার এমন একটি বিশেষ যন্ত্র, যা দিয়ে শরীরের চামড়া ও এর নিচের চর্বির পুরুত্ব মাপা হয়। এটি সাধারণত বাহু, ঊরু, পেট, পিঠ ইত্যাদি জায়গার চামড়া চেপে ধরে চর্বির স্তর মাপতে ব্যবহার করা হয়।
ডেক্সার পূর্ণরূপ হলো ডুয়েল এনার্জি এক্স–রে অ্যাবজর্পশোমেট্রি। এ পরীক্ষার মাধ্যমে ছবি তুলে শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়, পেশি ও চর্বি আলাদা করে মাপা যায়।
বায়োইলেকট্রিক্যাল ইম্পিডেন্স হলো শরীরের চর্বি, পেশি, পানি ইত্যাদির পরিমাণ নির্ণয়ের পদ্ধতি।
৩. শরীর–আকৃতি সূচক (বিএসআই)
স্থূলতাসংক্রান্ত উচ্চঝুঁকি এড়াতে এই পরিমাপ করা হয়। এটি বিএমআই ও কোমরের মাপের সমন্বয়ে একটি পরিমাপের পদ্ধতি।
তবু মিলিয়ে নিন আপনার উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন
যদিও উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজনের ক্ষেত্রে জীবনযাপনের পদ্ধতি, বংশগতিসহ নানা বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। তবুও নিচের হিসাবটি ওজন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপনাকে প্রাথমিক ধারণা দিতে পারে।
উচ্চতা যখন ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, ওজন হতে হবে ৪৭–৬১ কেজি
উচ্চতা যখন ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি, ওজন হতে হবে ৫৩–৬৮ কেজি
উচ্চতা যখন ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, ওজন হতে হবে ৬০–৭৯ কেজি
এই হিসাব বিএমআই অনুযায়ী করা হয়েছে। কাজেই ওজন ও স্বাস্থ্যের সঠিক ধারণা পেতে এর সঙ্গে অন্যান্য পরিমাপকের সুসমন্বয় করতে হবে।
(https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-09-10%2Ftypw643f%2Fpexels_photo_6975474.jpg?w=622&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজনের ক্ষেত্রে জীবনযাপনের পদ্ধতি, বংশগতিসহ নানা বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছেছবি: পেক্সেলস
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন কখন
মনে রাখতে হবে, এই লেখা শুধু সাধারণ তথ্য দেওয়ার জন্যই তৈরি। এটি কোনোভাবেই আপনার চিকিৎসকের পরিপূরক নয়। কাজেই কেউ তাঁর ওজন ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক তাঁর জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, বংশগতিসহ যাবতীয় বিষয় জেনে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
সূত্র: দ্য ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজি
Source: https://www.prothomalo.com/lifestyle/health/1ku5s0yn3p