Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Islam & Science => Topic started by: wahid on May 25, 2012, 11:28:50 AM
-
মানুষ পৃথিবীতে আসে আবার পৃথিবী থেকে চলে যায়। ইচ্ছা করলেও অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারে না সে। আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে তাকে সাড়া দিতেই হয়। জীবন ও মৃত্যু উভয়ই আল্লাহর সৃষ্ট। আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই বয়ঃবৃদ্ধির নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের জন্য মৃত্যুর একটি সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন। ওই সময়কে অতিক্রম করার ক্ষমতা কোনো মানুষেরই নেই। তবে কথা হচ্ছে, ওই নির্ধারিত সময়ের আগেও মানুষের মৃত্যু হতে পারে। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ে মরণের আগেও মানুষ মরে যেতে পারে। বয়ঃবৃদ্ধির নিয়ম অনুসারে সুনির্দিষ্ট সময়ের তথা মৃত্যুর শেষ সীমানা পর্যন্ত সাধারণত মানুষ যেতে পারে না। বিভিন্ন কারণের ওপর ভিত্তি করে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পেতে পারে বা কমে যেতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে দেখা যায়, অনেক সময় মানুষ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসে। বেঁচে থাকে অনেক দিন। আর যদি যথোপযুক্ত চিকিৎসা না পায় তাহলে তো সে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়। দুর্ঘটনাকবলিত রোগীর যখন প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, তখন সময়মতো যদি সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রক্ত দেওয়া যায় তাহলে সে রোগী অনেক সময় বেঁচে ওঠে। আবার কেউ যদি জেনেশুনে বিষ পান করে আর সময়মতো যদি তার সঠিক চিকিৎসা করানো না যায়, তাহলে আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী বিষক্রিয়ায় সে মৃত্যুর শীতল পরশকে আলিঙ্গন করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। জাতসাপে দংশন করলে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে, আবার সঠিক চিকিৎসায় অনেক সময় রোগী বেঁচেও যায়। পবিত্র কোরআন শরিফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, 'নারীদের মধ্য থেকে কেউ গর্ভবতী হয় না এবং সন্তান প্রসব করে না, তাঁর জানা ব্যতীত। আয়ুঃপ্রাপ্তদের কেউ আয়ু পায় না এবং কারো হতে কমে না, কিতাবের লেখা ব্যতীত। নিশ্চয়ই এটি আল্লাহর জন্য সহজ' (সুরা ফাতির : ১১)।
সব মানুষের আয়ুর একটি শেষ সীমা আছে। ওই সীমা থেকে তার আয়ু কমেও যেতে পারে। অর্থাৎ মরণের আগেও সে মরে যেতে পারে। মরণের শেষ সীমা পর্যন্ত সে পেঁৗছতে নাও পারে। আল্লাহর তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী দুরারোগ্য ব্যাধি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে তার হতে পারে মৃত্যু।
মানুষের মধ্যে আবার কেউ কেউ তার আয়ুর শেষ সীমার দিকে ধাবিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দিই, তাকে তো আকৃতি-প্রকৃতিতে উল্টে দিই। তবু কি তারা বোঝে না' (সুরা ইয়াসিন : ৬৮)। অন্যত্র বলেছেন, 'আর তোমাদের মধ্যে কাউকে পূর্বাহ্নেই ডেকে পাঠানো হয়। আবার কাউকে এমন খারাপ বয়স পর্যন্ত পেঁৗছানো হয় যে সে জানার পরও সব ভুলে যায়' (সুরা হজ : ৫)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো ইরশাদ করেছেন, 'তোমাদের মধ্যে কারো কারো পূর্বেও মৃত্যু ঘটে, আর এ জন্য যে তোমরা যাতে নির্ধারিত কালপ্রাপ্ত হও এবং অনুধাবন করতে পারো, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান' (সুরা মুমিন : ৬৭-৬৮)।
জীবনে চলার পথে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি, দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ রকম পরিস্থতিতে হাত-পা গুটিয়ে বসে না থেকে বেঁচে থাকার জন্য, নির্ধারিত কালপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই চিকিৎসার আশ্রয় নিতে হবে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, 'আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার ওষুধ সৃষ্টি করেননি।' তিনি আরো বলেছেন, 'সব রোগের জন্য চিকিৎসা (ওষুধ) আছে। যখন সঠিক ওষুধ রোগের জন্য প্রয়োগ করা হয়, তখন রোগী আল্লাহর ইচ্ছায় সেরে ওঠে।' শুধু একটি রোগের চিকিৎসা নেই, তা হচ্ছে বার্ধক্য। কাজেই রোগব্যাধিতে বিচলিত না হয়ে এক আল্লাহর ওপর নির্ভর করে ওষুধ সেবনই সঠিক ও শ্রেয় পন্থা। আল্লাহ্র প্রাকৃতিক আইনে যে প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে, তার সঠিক ও সময়োচিত বাস্তবায়নে জীবন ফিরে আসতে পারে। কোরআন শরিফে মানুষের জীবন-মৃত্যুর পাশাপাশি বিভিন্ন জাতির উত্থান-পতনের কথাও বলা হয়েছে। জ্ঞানী-বোধসম্পন্ন মানুষকে সেদিকে তাকানোর জন্য বলা হয়েছে বারবার। মানুষের যেমন আয়ুর শেষ সীমা আছে, তেমনি জাতিরও রয়েছে সুনির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল। কোরআনে বিধৃত আছে, 'প্রতিটি জাতির জন্য এক নির্দিষ্ট কাল আছে। যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্তকালও দেরি বা তাড়াতাড়ি করতে পারবে না' (সুরা ইউনুস : ৪৯)। কোরআনে আরো বর্ণিত হয়েছে, 'কোনো জাতিই তার নির্ধারিত কালকে তাড়াতাড়ি এগিয়ে আনতে পারে না, দেরিও করতে পারে না' (সুরা হিজর : ৫, সুরা মুমিনুন : ৪৩)। সে জন্য দুনিয়াতে প্রাচুর্যের মোহে অন্ধ না হয়ে ওপারের কড়ি সংগ্রহে যত্নবান হতে হবে। 'সময় থাকতে মনা হুঁশিয়ার'। সব কিছুরই সীমানা বেঁধে দেওয়া আছে। সে সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার সাধ্য কারো নেই। জাতিরও নেই, মানুষেরও নেই। তাঁর দিকে মুখ করে দাঁড়াতেই হয়। আর মানুষের আয়ু তো পদ্মপাতায় শিশিরবিন্দুর মতো। এই ক্ষুদ্র জীবনে তাই প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। জীবন ক্ষুদ্র হলেও, পার্থিব জীবন তুচ্ছ হলেও এখানে থেকেই সংগ্রহ করতে হবে ফিরদাউসের অমিয় ধারা। রোগ-শোক, জরা-ব্যাধি, দুর্ঘটনায় বিচলিত না হয়ে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করে শরণাপন্ন হতে হবে চিকিৎসকের। নির্ধারিত সময়ের আগেই যেন আমাদের চলে যেতে না হয়। আমরা যেন পূর্ণ আয়ুঃপ্রাপ্ত হয়ে বেশি পুণ্য অর্জন করে বেহেশতের সওদা লয়ে পরকালে পাড়ি জমাতে পারি। দিদার যেন পেতে পারি পরম প্রভু মহান আল্লাহর। আমরা যেন কোনোভাবেই ভুলে না যাই কোরআনের এই মহান বাণী- 'প্রত্যেক প্রাণকেই মরণের স্বাদ নিতে হবে। তারপর আমারই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে' (সুরা আনকাবুত : ৫৭)।
-
This is absolutely correct.