Daffodil International University
Religion & Belief (Alor Pothay) => Islam => Allah: My belief => Topic started by: arefin on June 06, 2012, 07:17:46 PM
-
আহনাফ বিন কায়েস নামক একজন আরব সর্দার ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। তার সাহস ও শৌর্য ছিল অপরিসীম। তাঁর তীর তলোয়ার ছিলো লক্ষ যোদ্ধার জোর। ইসলাম গ্রহণ করার পর আল্লাহর নবী(সাঃ) কে দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি,তবে নবীর বহু সাথীকেই দেখেছেন।এদের মধ্যে হযরত আলী (রাঃ) এর তার শ্রদ্ধা ছিলো অপরিসীম। একদিন তার সামনে এক ব্যক্তি কোরআনের এই আয়াতটি পড়লেন-" আমি তোমাদের কাছে এমন একটি কিতাব নাযিল করেছি যাতে তোমাদের কথা আছে অথচ তোমরা চিন্তা-ভাবনা করোনা।" (সূরা আম্বিয়া- ১০)
আহনাফ ছিলেন আরবী সাহিত্যে গভীর পারদর্শী। তিনি ভাল করেই বুঝতেন,'যাতে শুধু তোমাদের কথাই আছে'-এই কথার অর্থ কি?তিনি অভিভূত হয়ে গেলেন। কেউ বুঝি আজ তাকে নতুন কিছু শোনাল! মনে মনে বললেন,"আমাদের কথা আছে, আছে কই, কোরআন নিয়ে আসো তো? দেখি এতে আমার কথা কি আছে? তার সামনে কোরআন শরীফ আনা হলো, একে একে বিভিন্ন দল-উপদলের পরিচিতি এতে পেশ করা হয়েছেঃ একদল সম্পর্কে বলা হয়েছে ,এরা রাতের বেলায় খুব কম ঘুমায়, শেষ রাতে তারা আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ-খাতার জন্য মাগফিরাত কামনা করে।(সূরা আয-যারিয়াত-১৭-১৯) আরেক দল লোক এলো,যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাদের পিঠ রাতের বেলায় বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা নিজেদের প্রতিপালককে ডাকে ভয় ও প্রত্যাশা নিয়ে, তারা অকাতরে আমার দেওয়া রিজিক থেকে খরচ করে।(সূরা হা-মীম সেজদাহ-১৫) কিছু দূর এগিয়ে যেতেই তার পরিচয় হলো আরেকদলের লোকের সাথে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,রাতগুলো তারা নিজেদের মালিকের সেজদাহ ও দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে কাটিয়ে দেয়।"(সূরা আল ফোরকান- ৬৪)। অতঃপর এলো আরেক দল মানুষ, এদের সম্পর্কে বলা হলো'এরা দারিদ্র্য ও স্বাচ্ছন্দ্য উভয় অবস্থায়(আল্লাহর নামে) অর্থ ব্যয় করে, এরা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে,এরা মানুষদের ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ তায়ালা এসব নেককারদের ভালোবাসেন।(সূরা আল ইমরান-১৩৪) এলো আরেকটি দল, তাদের পরিচয় এভাবে পেশ করা হল যে, 'এরা বৈষয়িক প্রয়োজনের সময় অন্যদেরকে নিজেদের ওপর প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের রয়েছে প্রচুর অভাব ও ক্ষুধার তাড়না। যারা নিজেদেরকে কার্পণ্য থেকে দূরে রাখতে পারে তারাই বড়ই সফলকাম।(সূরা আল হাসর-৯)
একে একে সবার কথা ভাবছেন আহনাফ। এবার কোরআন তার সামনে আরেকদল লোকের কথা পেশ করলো, এরা বড় বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, যখন এরা রাগান্বিত হয় তখন (প্রতিপক্ষকে) মাফ করে দেয়, এরা আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলে, এরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, এরা নিজেদের মধ্যকার কাজকর্মগুলোকে পরামর্শের ভিত্তিতে আঞ্জাম দেয়। আমি তাদের যা দান করেছি তা থেকে তারা অকাতরে ব্যয় করে।(সূরা আশ শুরা ৩৭-৩৮)
হযরত আহনাফ নিজেকে ভাল করেই জানতেন। আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত এ লোকদের কথাবার্তা দেখে তিনি বললেন, হে আল্লাহ তায়ালা! আমি তো এই কিতাবের কোথাও আমাকে খুঁজে পেলাম না। আমার কথা কই?আমার ছবি তো এর কোথাও দেখলাম না। অথচ এই কিতাবে নাকি তুমি সবার কথাই বলেছো। আবার তিনি ভিন্ন পথ ধরে কোরআনে নিজের ছবি খুঁজতে শুরু করলেন। এ পথেও তার সাথে বিভিন্ন দল উপদলের সাক্ষাৎ হলো। প্রথমত, তিনি পেলেন এমন একটি দল, যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মা'বুদ নেই, তখন তারা গর্ব ও অহংকার করে এবং বলে, আমরা একটি পাগল ও কবিয়ালের জন্যে আমাদের মাবুদদের পরিত্যাগ করবো?(সূরা আছ ছাফফাত ৩৫-৩৬) তিনি আরো সামনে এগুলেন, দেখলেন আরেকদল লোক। তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,যখন এদের সামনে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় তখন এদের অন্তরে অত্যন্ত নাখোশ হয়ে পড়ে, অথচ যখন এদের সামনে আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্যদের কথা বলা হয় তখন এদের মন আনন্দে নেচে উঠে।(সূরা আয যুমার-৪৫) তিনি আরো দেখলেন, কতিপয় হতভাগ্য লোককে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তোমাদের কিসে জাহান্নামের এই আগুনে নিক্ষেপ করলো? তারা বলবে,আমার নামাজ প্রতিষ্ঠা করতাম না, আমরা গরীব মিসকিনদের খাবার দিতাম না, কথা বানানো যাদের কাজ আমরা তাদের সাথে মিশে সে কাজে লেগে যেতাম। আমরা শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করতাম, এভাবেই মৃত্যু আমাদের সামনে এসে হাযির হয়ে গেলো।(সূরা আল মুদাসসিরঃ৪২-৪৬) হযরত আহনাফ কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ধরণের মানুষের বিভিন্ন চেহারা ছবি ও তাদের কথা দেখলেন। বিশেষ করে এই শেষোক্ত লোকদের অবস্থা দেখে মনে মনে বললেন, হে আল্লাহ! এ ধরণের লোকদের ওপর আমি তো খুব অসন্তুষ্ট। আমি এদের ব্যাপারে তোমার আশ্রয় চাই। এ ধরণের লোকদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
তিনি নিজেকে নিজে ভালো করেই চিনতেন। তিনি কোন অবস্থায়ই নিজেকে এই শেষের লোকদের দলে শামিল বলে ধরে নিতে পারলেন না। কিন্তু তাই বলে তিনি নিজেকে প্রথম শ্রেণীর লোকদের কাতারেও শামিল করতে পারছেন না। তিনি জানতেন, আল্লাহ তায়ালা তাকে ঈমানের দৌলত দান করেছেন। তার স্থান যদিও প্রথম দিকের সম্মানিত লোকদের মধ্যে নয়। কিন্তু তাই বলে তার স্থান মুসলমানদের বাইরেও তো নয়। তার মনে নিজের ঈমানের যেমন দৃঢ় বিশ্বাস ছিল,তেমনি নিজের গুনাহখাতার স্বীকৃতিও সেখানে সমানভাবে মওজুদ ছিল। কোরআনের পাতায় তাই এমন একটি ছবির সন্ধান তিনি করছিলেন যাকে তিনি একান্ত নিজের বলতে পারেন। তার সাথে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা ও দয়ার প্রতিও তিনি ছিলেন গভীর আস্থাশীল। তিনি নিজের নেককাজগুলোর ব্যাপারে এমন খুব বেশী অহংকারী ও আশাবাদী ছিলেন না। তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকেও নিরাশ ছিলেন না। কোরআনের পাতায় তিনি এমন একটি ভালো-মন্দ মেশানো মানুষের ছবি খুঁজছিলেন এবং তার একান্ত বিশ্ব্বাস ছিলো, এমনি একটি মানুষের ছবি অবশ্যই তিনি এই জীবন্ত কিতাবের কোথাও না কোথাও পেয়ে যাবেন। কেন, তারা কি আল্লাহর বান্দা নয় যারা ঈমানের দৌলত পাওয়া সত্ত্বেও নিজেদের গুনাহর ব্যাপারে থাকে একান্ত অনুতপ্ত। কেন, আল্লাহ তায়ালা কি এদের সত্যিই নিজের অপরিসীম রহমত থেকে মাহরুম রাখবেন? এই কিতাবে যদি সবার কথা থাকতে পারে তাহলে এ ধরণের লোকের কথা থাকবেনা কেন? এই কিতাব যেহেতু সবার, তাই এখানে তার ছবি কোথাও থাকবে না এমন তো হতেই পারে না!
তিনি হাল ছাড়লেন না। এ কিতাবে নিজের ছবি খুঁজতে লাগলেন। আবার তিনি কিতাব খুললেন। কোরআনের পাতা উল্টাতে উল্টাতে এক জায়গায় সত্যিই হযরত আহনাফ নিজেকে আবিষ্কার করলেন। খুশীতে তার মন ভরে উঠলো, আজ তিনি কোরআনে নিজের ছবি খুঁজে পেয়েছেন; সাথে সাথে তিনি বলে উঠলেন,হ্যাঁ, এই তো আমি!হ্যাঁ,"এমন ধরণের কিছু লোকও আছে যারা নিজেদের গুনাহ স্বীকার করে। এরা ভালো মন্দ মিশিয়ে কাজকর্ম করে। কিছু ভাল কিছু মন্দ। আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা এদের ক্ষমা করে দেবেন। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা বড় দয়ালু, বড় ক্ষমাশীল।' (সূরা আত তাওবা-১০২)
হযরত আহনাফ আল্লাহ তায়ালার কিতাবে নিজের ছবি খুঁজে পেয়ে গেলেন, বললেন, হ্যাঁ, এতক্ষণ পর আমি আমাকে উদ্ধার করেছি। আমি আমার গুনাহের কথা অকপটে স্বীকার করি। আমি যা কিছু ভালো কাজ করি তাও অস্বীকার করি না। এটা যে আল্লাহর একান্ত দয়া তাও আমি জানি। আমি আল্লাহর দয়া ও তার রহমত থকে নিরাশ নই। কেননা, এই কিতাবই অন্যত্র বলেছে আল্লাহর দয়া থেকে তারাই নিরাশ হয় যারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। (সূরা আল হিজর-৫৬)
হযরত আহনাফ দেখলেন, এসব কিছুকে একত্রে রাখলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে তার ছবি! কোরআনের মালিক আল্লাহ তায়ালা নিজের এ গুনাহগার বান্দার কথা তার কিতাবে বর্ণনা করতে ভুলেননি! হযরত আহনাফ কোরআনের পাঠকের কথার সত্যতা অনুধাবন করে নীরবে বলে উঠলেন- হে মালিক,তুমি মহান,তোমার কিতাব মহান, সত্যিই তোমার এই কিতাবে দুনিয়ার গুণী-জ্ঞানী,পাপী-তাপী, ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন, সবার কথাই আছে। তোমার কিতাব সত্যিই অতুলনীয় অনুপম!!