Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Mrs.Anjuara Khanom

Pages: [1] 2 3 ... 33
1
ডায়াবেটিস রোগীদের মুখে বা দাঁতে সাধারণত কী কী সমস্যা হয়?
বর্তমান সময়ের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। অনেকে মনে করতে পারে, ডায়াবেটিস হয়েছে, এখানে দাঁতের আবার কী বিষয় রয়েছে। দাঁতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। দাঁত ক্ষয় থেকে শুরু করে শরীরে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গেও সমস্যা ছড়িয়ে দেয়।

আমরা আগে মনে করতাম আমাদের পূর্ব পুরুষের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাই আমারও ডায়াবেটিস রয়েছে। তবে আসলে তা নয়।
রক্তে সুগার রয়ে গেলে সেটিই হলো ডায়াবেটিস। কারণ, ওই চিনিটা হলো এক ধরনের এনার্জি। সেটা যদি পোড়ে, তাহলে তো গাড়িটা চলবে। সেটা তো হচ্ছে না। পোড়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশটা নেই, ব্যায়াম নেই। তার জন্য ডায়াবেটিসটা হচ্ছে।

ডায়াবেটিস হলে রোগীদের মুখে কী কী সমস্যা হচ্ছে, এটি প্রত্যেকটা রোগীর জানা উচিত। এটা থেকে তার আরো মারাত্মক কিছু হতে পারে। প্রথমত, রোগীদের এসে বলে আমার মুখে রক্তপাত হচ্ছে, আমার মুখে দুর্গন্ধ হয়, আমি কী করব? এর উৎস কী? যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের দেখা যায় স্যালাইভা বা লালার অভাব। লালার নিঃসরণ কমে যায়। যদি লালা কমে যায়, তাহলে হয় কি সেগুলো সব দাঁতের গোঁড়ায় গোঁড়ায় লেগে থাকে। মুখটা শুষ্ক থাকে। যখন এই প্লাকগুলো লেগে থাকে, তাতে হয় কি তার মাড়িতে সমস্যা হয়। মাড়িতে কী সমস্যা হয়? দেখা যায়, মাড়ি লাল হয়ে গেছে, ফুলে গেছে, স্পর্শ করলে রক্তপাত হয়। এসব সমস্যা প্রথমে হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে গিয়ে তার পেরিওডেন্টাল সমস্যা হচ্ছে। পেরিওডেন্টাল সমস্যায় মাড়িগুলো যখন ফুলে যায়, যখন খাদ্যকণাগুলো প্রত্যেকটি দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে থাকে, তখন ব্যাক্টেরিয়াগুলোর বৃদ্ধি বেড়ে যায়। ব্যাক্টেরিয়াগুলো তখন বিষাক্ত পদার্থ বের করে। মাড়ির সঙ্গে দাঁতের যেই সংযোগ সেটি কিন্তু নষ্ট করে দেয়। সেই হাড়গুলো খেতে থাকে। সেই হাড়গুলো যখন খেতে থাকে, তখন তার দেখা যায় হাড় নষ্ট হয়ে গেল, তখন আস্তে আস্তে দেখা যায় সেই দাঁতগুলো নড়ছে। দেখা যায় যখন তার দাঁত নড়ার কথা নয়, তখনই তার দাঁত নড়ছে। মাড়ির সমস্যা যখন হয় এটি নিরাময়যোগ্য। যখন সে চিকিৎসা না নেয় দাঁতটা নড়তে থাকে। এতে চিবাতে পারবে না। এতে লিভারে ডিসফাংশন শুরু হয়ে গেল। এখন লিভার যদি কাজ না করতে পারে, তাহলে আমার শক্তি আসবে কোথা থেকে।

ফাংশনাল সমস্যা হলে সে চিবিয়ে খেতে পারবে না। সামনের দাঁতগুলোতে যদি তার পেরিওডেন্টাল সমস্যা হয়, দাঁতগুলো যদি নড়তে থাকে, তাহলে তার এসথেটিক সমস্যা হচ্ছে। আস্তে আস্তে দেখা যায় তার দাঁতগুলো নড়ে যাচ্ছে। যদি সচেতন থাকা যায়, এটি কোনো রোগই নয়। এই জন্য তাকে বছরে অন্তত দুই বার ডেন্টিস্টের কাছে যেতে হবে।


   
Source: https://www.ntvbd.com/health/212771

2
হিজরি সনের সফর মাসের শেষ বুধবারকে আখেরি চাহার শম্বা বলে।  আরবিতে আখেরি অর্থ শেষ এবং ফার্সিতে চাহার শম্বা অর্থ বুধবার; অর্থাৎ আখেরি চাহার শম্বা অর্থ শেষ বুধবার। সফর মাসের শেষ বুধবারকে ফার্সি ভাষায় আখেরি চাহার শম্বা বলা হয়।

সফর মাসের শেষ বুধবারে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচণ্ড অসুস্থতা থেকে সুস্থতা অনুভব করলে সাহাবিরা খুশি হয়ে দান সদকা করেন ও শুকরিয়া আদায় করেন বলে মত পাওয়া যায়। এ জন্য কিছু দেশে এদিনে দান সদকাসহ বিভিন্ন নফল ইবাদত করেন ধর্ম প্রাণ মুসলমানগণ।
 
বাংলাদেশে এ দিবস উপলক্ষ্যে বার্ষিক সরকারি ছুটির তালিকায় একটি ছুটি ঐচ্ছিক ছুটি হিসেবে উল্লেখ আছে। বাংলাদেশে এ দিবস পালন নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্যও দেখা যায়।

কারও মতে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন দিনে সুস্থ হয়েছিলেন, কোন অসুস্থতার পর সুস্থ হয়েছিলেন ইত্যাদি স্পষ্ট করে ইতিহাসে বর্ণিত নেই। আবার নবীজি (স.)-এর মৃত্যুর পর কোনো সাহাবি এই দিবস পালন করতেন না। তাই এই দিবস পালনে তারা নিরুৎসাহিত করেন।
 
যারা এই দিবস পালন করে থাকেন তারা দুই সময়ের অসুস্থতার কথা বলে থাকেন। কেউ বলেন সপ্তম হিজরিতে নবীজি (স.)-এর জাদুতে আক্রান্ত হওয়ায় অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর সফর মাসের শেষ বুধবারে সুস্থ হয়ে যান।
 
আবার কেউ কেউ বলেন নবীজি (স.) মৃত্যুর আগে যে অসুস্থ হয়েছিলেন সে সময় মৃত্যুর আগে সফর মাসের শেষ বুধবারে সুস্থতা অনুভব করেন এবং মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। এ সময় হজরত আবু বকর (রা.)-কে ইমামতির দায়িত্ব দেন তিনি। সে বুধবারের পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
 
অসুস্থতার সময় যেটাই হোক নবীজি (স.) সুস্থ হওয়ার পর যখন মসজিদে আসেন তখন সাহাবায়ে কেরাম অনেক আনন্দিত হন এবং শুকরিয়া স্বরূপ দান সদকা করেছিলেন।
 
বর্ণিত আছে, আবু বকর (রা.) খুশিতে ৭ হাজার দিনার এবং ওমর ইবনে খাত্তাব ৫ হাজার দিনার, ওসমান ১০ হাজার দিনার, আলী ৩ হাজার দিনার, আবদুর রহমান ইবনে আওফ ১০০ উট ও ১০০ ঘোড়া আল্লাহর পথে দান করেছিলেন। এরপর থেকে মুসলমানরা সাহাবিদের নীতি অনুকরণ ও অনুসরণ করে আসছে।
 
এসব বর্ণনা ‘বারো চান্দের ফজিলত’ ও ‘রাহাতুল কুলুব’ ইত্যাদি বইয়ে বলা আছে। তবে উল্লিখিত কিতাব দুটিতে বর্ণিত ও বহুল প্রচলিত সফর মাসের শেষ বুধবারের বিষয়টিকে ইসলামি পণ্ডিত ও গবেষকগণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
 
তাদের বক্তব্য হলো, রসুলুল্লাহ (সা.) অসুস্থ হওয়ার দিনক্ষণ নিয়ে যথেষ্ট ইখতিলাফ থাকায় নির্দিষ্ট কোনো দিনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অথচ রসুল (সা.)-এর অসুস্থতাজনিত বর্ণনা অসংখ্য হাদিসে রয়েছে, তবে কোথাও দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। তা ছাড়া প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবনে ইসহাক বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) যে অসুস্থতায় ইন্তিকাল করেন, সেই অসুস্থতার শুরু হয়েছিল সফর মাসের শেষ কয়েক রাত থাকতে অথবা রবিউল আউয়াল মাসের শুরু থেকে।’ (ইবনে হিশাম, সিরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ: ৪/ ২৮৯)
 
এ ছাড়া, ইবনে হিশাম বিভিন্ন বর্ণনার আলোকে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসুস্থতার দিন ঠিক করেছেন ১৮ সফর থেকে একনাগাড়ে ১৩ দিন পর্যন্ত। (ইবনে হিশাম ৯৯৯) এই মতের মতোই হুবহু পাওয়া যায় ইসলামি বিশ্বকোষের ১৩ নং পৃষ্ঠায়।
 
শুধু তা-ই নয়, রসুলুল্লাহ (সা.) কোন দিন থেকে অসুস্থ হয়েছিলেন, সে বিষয়েও বিস্তর মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন শনিবার, কেউ বলেছেন বুধবার এবং কেউ বলেছেন সোমবার। এমনকি কত দিনের অসুস্থতার পর তিনি ইন্তিকাল করেন, সে বিষয়েও রয়েছে মতভেদ। কেউ বলেছেন ১০ দিন, কেউ বলেছেন ১২ দিন, কেউ বলেছেন ১৩ দিন, কেউ বলেছেন ১৪ দিন। এরপর তিনি ইন্তিকাল করেন। (জারকানি/শারহুল মাওয়াহিব-১২/ ৮৩; কাসতালানি, আহমদ ইবনে মুহাম্মদ, আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া: ৩/ ৩৭৩)
 
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, রসুল (সা.)-এর ওপর জনৈক ইহুদির জাদুর প্রভাব ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে সপ্তম হিজরির মহররম মাসের প্রথম দিকে। এই জাদুর প্রভাব কোনো বর্ণনায় ছয় মাসের কথা এসেছে, আর কোনো বর্ণনায় এসেছে ৪০ দিনের কথা। সুতরাং সুস্থতার তারিখ কোনোভাবেই ১১ হিজরির সফর মাসের ‘আখেরি চাহার শম্বা’ বা ‘শেষ বুধবার’ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত অনেক গবেষক আলেম। (ফাতহুল বারি: ৭/ ৭৪৮, কিতাবুল মাগাজি: ৪৪৪২, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ৪/ ১৯৩, সিরাতুন নবী, শিবলী নোমানী: ২/ ১১৩)

এ কথাও ঠিক নয় যে, বুধবারের পর সুস্থতায় কোনোরূপ উন্নতি হয়নি। বরং এরপর আরেক দিন সুস্থতা বোধ করেছিলেন এবং জোহরের নামাজ আদায় করেছিলেন। (বুখারি ৬৬৪, ৬৮০, ৬৮১; মুসলিম ৪১৮) এমনকি সোমবার সকালেও সুস্থতা অনুভব করেছিলেন, যার কারণে আবু বকর (রা.) অনুমতি নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। (সিরাতে ইবনে ইসহাক ৭১১-৭১২, আর রাওজাতুল উলুফ ৭/৫৪৭-৫৪৮)।
 
দিনটি যদি আমলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতো তাহলে এ দিনটি সম্পর্কে হাদিসে বা সাহাবিদের বর্ণনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতো। আর ধর্মীয় সব রীতিনীতি নির্ভরযোগ্য সনদে পাওয়া না গেলে সেটার অনুকরণ-অনুসরণ উম্মতের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
 
কেউ যদি নিজের থেকে ভালো মনে করে ইবাদতের পদ্ধতি তৈরি করে সওয়াবের আশায় পালন করে তাহলে সেটা বিদআত হিসেবে পরিগণিত হয়। কেননা, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি এমন কোনো আমল করে, যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।’ (বুখারি ২৬৯৭; মুসলিম ১৭১৮)

Source: https://www.somoynews.tv/news/2024-08-31/ID04zu1D

3
শারীরবৃত্তীয় নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন খনিজের। গুরুত্বপূর্ণ খনিজের তালিকায় সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়ামের মতো খনিজ থাকলেও ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা কম নয়।
শরীরের ভেতর ঘটে চলা নানা ধরনের রাসায়নিক কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতেও প্রয়োজন হয় এই খনিজের।

চিকিৎসকরা বলছেন, রক্তে পর্যাপ্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি থাকার পরেও যদি হাড়ের সমস্যা হয়, তা হলে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াই ভালো। আবার কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ মন খারাপ হওয়ার পেছনেও কিন্তু এই খনিজের হাত থাকতে পারে। হঠাৎ ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে আর কী কী সমস্যা হতে পারে?

পেশিতে টান

এই ধরনের সমস্যাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চান না অনেকেই। সারা দিন পানি পান করা কম হলে, পায়ের পেশিতে হঠাৎ করে টান লাগতে পারে। সেই সমস্যা কিন্তু সাময়িক। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন পেশিতে টান লাগার সমস্যা যদি নিয়মিত হয়, তাহলে তা ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। 

অনিয়ন্ত্রিত হৃদ্স্পন্দন

ঘড়ির কাঁটার মতো হৃদ্স্পন্দেরও একটি ছন্দ আছে। সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের হৃদ্যন্ত্র সেই ছন্দ মেনেই চলে। তবে রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে কারও হৃদ্স্পন্দনের হার হঠাৎ কমে বা বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রোগ ‘অ্যারিদ্মিয়া’ নামে পরিচিত।

উদ্বেগ, অবসাদ

তেমন কিছুই ঘটেনি। মনখারাপ হওয়ার কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছেন না। তবু মন খারাপ হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই সমস্যার নেপথ্যেও রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। স্নায়ুর কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিপোর্টেও একই কথা বলা হয়েছে।

ভঙ্গুর হাড়

অনেকেই মনে করেন, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি দুটি উপাদান হলো ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি। তবে বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে, এই দুটি উপাদানের পাশাপাশি হাড়ের যত্নে ম্যাগনেসিয়াম কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম না থাকলে অস্টিয়োপোরোসিসের সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে।

অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি

পরিশ্রম করলে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠার পরও যদি ঘুম পায়, ক্লান্ত লাগে, তা সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে খুব একটা স্বাভাবিক নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এই ক্লান্তির কারণও হতে পারে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি।

যেসব খাবারে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়

গাঢ় রঙের পাতাযুক্ত শাক

গাঢ় রঙের পাতাযুক্ত শাক ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিনের ভালো উৎস। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সিদ্ধ করে বা সালাদ হিসেবে শাক রাখতে পারেন। পালং শাকে সবচেয়ে বেশি ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া বাঁধাকপি, পাতাকপিও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস।

অ্যাভোকাডো

অ্যাভোকাডো ম্যাগনেসিয়ামের আরেকটি উৎস। একটি মাঝারি আকৃতির অ্যাভোকাডোতে ৫৮ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। স্মুদি বানিয়ে কিংবা ফলের সালাদ তৈরি করে এ ফলটি খেতে পারেন।

বাদাম ও বীজ

দিনে এক কাপ পরিমাণে কুমড়ার বীজ খেলে তা দিনের ম্যাগসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। কুমড়ার বীজ ছাড়াও সূর্যমুখীর বীজে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া কাজুবাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড, পেস্তা বাদাম ও প্রায় ধরনের বাদামেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে।

সামুদ্রিক মাছ

ম্যাগসেয়িামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছ যেমন- টুনা, সার্ডিন, ম্যাকেরেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সপ্তাহে এক দিন এই মাছগুলো খেলে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে।

ডার্ক চকোলেট

ডার্ক চকোলেটও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। এক টুকরা বর্গাকৃতির ডার্ক চকোলেট খেলে ৯৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। তবে খুব বেশি পরিমাণে এই চকলেট একবারে খাওয়া ঠিক নয়।

কলা

কলা ম্যাগনেসিয়ামসহ অনেক পুষ্টির একটি বড় উৎস। একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রায় ৩২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে। আপনি যদি ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে চান তবে আপনার ডায়েটে কলা রাখুন।


Source:https://www.banglanews24.com/lifestyle/news/bd/1367218.details

4
ভিটামিন ডি’কে সানশাইন ভিটামিন বলা হয়। কারণ ত্বক সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসলে শরীর এটি কোলেস্টেরল থেকে তৈরি করে। আমাদের শরীরের জন্য ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ। শরীর স্বাভাবিক হাড়ের বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে ভূমিকা রাখে ভিটামিন ডি। এমনকি ভিটামিন ডি স্নায়ুতন্ত্র ও পেশি ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দেয় আমাদের শরীরে সে সময়ে নানা জটিলতা দেখা যায়। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি কিছু লক্ষণ থেকে বুঝতে পারবেন। মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েব সাইট হেলথলাইনের প্রতিবেদনে সেই লক্ষণগুলো তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভিটামিন ডি’র গুরুত্ব
ভিটামিন ডি রক্ত ও হাড়ের ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং হাড় গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের ভিটামিন ডি দরকার যাতে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস ব্যবহার করে শরীর হাড় তৈরি করতে পারে এবং টিস্যুগুলোকে সুস্থ রাখতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অথবা গুরুতর ভিটামিন ডি এর অভাবের কারণে অন্ত্র দ্বারা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ বাঁধাগ্রস্ত হয়। এতে হাইপোক্যালসেমিয়া বাড়ে। রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রার ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করার জন্য শরীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে, যা হাড়ের ক্ষতির কারণ। এর ফলে প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাসিয়া বা নরম হাড় এবং শিশুদের রিকেট এর অন্যতম কারণ।

যেসব লক্ষণে বুঝবেন ভিটামিন ডি কমে গেছে

১. ভিটামিন ডি যৌগগুলোর উৎপাদন বাড়ায় যা ক্ষত নিরাময় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন ত্বক গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অপর্যাপ্ত ভিটামিন ডি এর কারণে দেরিতে ক্ষত নিরাময় হতে পারে।

২. ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণ এবং বিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ একই সময়ে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম গ্রহণ শরীরকে সর্বাধিক শোষণ করতে সহায়তা করে। হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পাওয়ার মানে হচ্ছে হাড় ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ হারিয়েছে। এটি বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের, বিশেষ করে নারীদের ফ্র্যাকচারের ঝুঁকিতে রাখে।
পেশি ব্যথার কারণ হতে পারে ভিটামিন ডির অভাব। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় আক্রান্ত ৭১ শতাংশ লোকের ভিটামিন ডি প্রয়োজনের তুলনায় কম।

৩. ভিটামিন ডি সরাসরি কোষের সাথে যোগাযোগ করে যেগুলো সংক্রমণ মোকাবেলার জন্য কাজ করে। এই ভিটামিনের অভাব হলে তাই ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

৪. শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সহায়তা করে ভিটামিন ডি। ভিটামিনটির অভাবে তাই হাড় এবং পিঠের নিচের ব্যথা হতে পারে।

৫. বিভিন্ন কারণে ক্লান্ত লাগতে পারে, যার মধ্যে একটি হতে পারে ভিটামিন ডি এর অভাব।

৬. বিষণ্নতার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি হতে পারে ভিটামিন ডি এর অপর্যাপ্ত মাত্রা।


Source:https://khulnagazette.com/%

5
Islam / সালাম শান্তির প্রতীক
« on: July 02, 2024, 01:01:49 PM »
সালাম শান্তির প্রতীক। মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহ রাসুলকে (সা.) যেসব বস্তু বা বিষয় উপহার দিয়েছেন, এর মধ্যে সালাম অন্যতম।

সালামের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিয়ে অপর ভাইকে অভিবাদন জানানো জান্নাতিদের কাজ। ইসলাম ধর্মে এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিয় নবী (সা.) এই কাজটিকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুসলিমরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা বলবে, “তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা সুখী হও। ” (সুরা  জুমার  ৭৩)

এরপর জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। “সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’। ” (সুরা  ইউনুস  ১০) এরপর জান্নাতে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন জান্নাতিদের সালাম দেবেন। ‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ। ’ (সুরা  ইয়াসিন, আয়াত  ৫৮)

পরিচিত কিংবা অপরিচিত সবাইকেই সালাম করতে হয়। (বুখারি, হাদিস  ১২) শুধু তা-ই নয়, সালাম এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের সদ্ব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের ছয়টি সদ্ব্যবহারের বিষয় রয়েছে  তার মধ্যে অন্যতম হলো, কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবে। (তিরমিজি, হাদিস  ২৭৩৬)

সালামের মাধ্যমে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব সুদৃঢ় হয়। হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভূত হয়। এ ছাড়া এতে আল্লাহর জিকির পাওয়া যায়। আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। সালাম মুসলিম ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা ও সম্প্রীতি প্রকাশ করে। সালাম মুসলিম ভাইয়ের জন্য সর্বোত্তম দোয়া। সালাম মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে এ চুক্তি যে আমার হাত ও মুখ দ্বারা আপনি কোনো কষ্ট পাবেন না। হাদিস শরিফে এসেছে, প্রথম সালামদাতা অহংকার থেকে মুক্ত। এতে বোঝা যায়, আল্লাহর পছন্দনীয় বান্দারাই সালামের মতো মহৎ গুণে অভ্যস্ত হতে পারে। এর উপকারিতা উপলব্ধি করতে পারে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করতে পারে।

হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক উত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। (আবু দাউদ  ৫১৯৭)

অর্থাৎ যে আগে সালাম দেবে সে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে। সে হিসেবে আমাদের সবারই উচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা। তদুপরি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কার আগে সালাম দেওয়া উচিত। সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন প্রিয় নবী (সা.)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বয়ঃকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্পসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস  ৬২৩১)

উপরোক্ত হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) তিন শ্রেণির মানুষের সালামের আদব শিক্ষা দিয়েছেন। বয়ঃকনিষ্ঠরা বয়োজ্যেষ্ঠদের, অর্থাৎ ছোটরা বড়দের। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বোঝা যায়, বয়সে ছোটদের উচিত বয়সে বড়দের আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু বড়রাও চাইলে ছোটদের আগে সালাম করতে পারেন। কেননা সালাম আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। সুতরাং যে আগে সালাম দেবে, সে-ই আল্লাহর বেশি নিকটবর্তী হবে। তাই হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! দুজন লোকের মধ্যে সাক্ষাৎ হলে কে প্রথম সালাম দেবে তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার বেশি নিকটবর্তী। (তিরমিজি, হাদিস   ২৬৯৪)

অনেকে ভাবেন পদবিতে ছোটরাই পদবিতে বড়দের সালাম দিতে হয়। তাই পদবিতে ছোট ব্যক্তি বয়সে বড় হলেও তাকে সালাম দেন না। এটা ঠিক নয়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি সালামের প্রচার-প্রসার করার তাওফিক দান করুন। 

Source:https://www.banglanews24.com/islam/news/bd/1356298.details

6
তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল ইবাদত। তবে এটি নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত।
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগতে হয়, এজন্য তাহাজ্জুদ নামাজের সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি।

তাহাজ্জুদের নামাজ নবী (সা.)-এর জন্য অতিরিক্ত ফরজ হিসেবে নির্দিষ্ট ছিল। আমাদের তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ নয়, বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

অবশ্য এই নামাজ নেককার ও আল্লাহভীরুদের বৈশিষ্ট্য।
তাহাজ্জুদ নামাজ কুপ্রবৃত্তি দমনে অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। হৃদয় ও মননকে নির্মল করে। 

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য অধিক কার্যকর। ওই সময়ে পাঠ করা (কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির) একেবারে যথার্থ। ’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত  ৬)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়। ’ (সুরা ফুরকান, আয়াত  ৬৪)...
...

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয় অর্ধ রাতের পর। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম। তবে ঘুম থেকে জাগার সম্ভাবনা না থাকলে ইশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নতের পর ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েয আছে। তবে পূর্ণাঙ্গ তাহাজ্জুদের সওয়াব ও মর্যাদা পেতে হলে, রাত ২টা বা ৩টার দিকে উঠে নামাজ আদায় করা জরুরি।

শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে, তখন তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা আল্লাহর ভালোবাসায় নিদ্রা ত্যাগ করে জেগে ওঠে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। ’ (সুরা সাজদা, আয়াত  ১৬)

শুধু নামাজ আদায় নয়, রাতের শেষ ভাগে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা খাঁটি ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত ব্যয়কারী ও রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থী। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত  ১৭)

তাহাজ্জুদ নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ। ’ (মুসলিম, হাদিস নং  ১১৬৩)

তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব! আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব!’ (বুখারি ও মুসলিম)

তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি, ক্ষমা, অনুকম্পা ও দয়া লাভ করার তাওফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন। 

Source:https://www.banglanews24.com/islam/news/bd/1356649.details

7
রোজার প্রতিটি মুহূর্তই দামি। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তেই রহমত বর্ষিত হয়। এর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি রহমত থাকে রমজানের শেষ ১০ দিনে। কারণ, ওই সময়ে রয়েছে শবে কদর। এই সময়ে বহু কিছু আমল করার আছে।

১. অল্প আমলেও এ সময় হাজার মাসের সওয়াবের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আল্লাহ। এটা শবে কদরের মাধ্যমে সম্ভব। শেষ ১০ দিন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আত্মার পরিচর্যার দিকে জোর দিতে হবে।

২. সহিহ্ বুখারিতে আছে যে আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘শেষ ১০ দিন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবীজি (সা.) ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন এবং পরিবারের সদস্যদের ও সারা রাত জেগে ইবাদত করতে বলতেন।’

৩. পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইতিকাফ করা যায়।

৪. একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) রমজানে শেষ ১০ দিন এমনভাবে ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন, যা বছরের অন্য কোনো সময় থাকতেন না। শেষ ১০ দিন তিনি রাত জেগে নামাজ আদায় করতেন, জিকিরে ব্যস্ত থাকতেন, কোরআন তিলাওয়াত করতেন।

এই সুন্নত মনে রেখে ইবাদতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। শরিয়তসম্মত যেকোনো আমল বেছে নেওয়া যায়। কেউ নামাজ, কেউ জিকির, কেউ কোরআন তিলাওয়াত পছন্দ করেন। নিজের পছন্দের ইবাদতগুলো বেছে নিয়ে সেসব বারবার আমল করা যায়।

৫. যাঁকে যত বেশি ভালোবাসেন, তাঁর সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে ততই পছন্দ করেন। তেমনি বান্দা যত বেশি তাঁর রবকে জানেন, তাঁর সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে ততই প্রশান্তি অনুভব করে, আনন্দিত হয়। ইতিকাফই সেই ইবাদত। এটি সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়।

ইতিকাফে ব্যক্তি তাঁর পরিবার, ব্যবসা-বাণিজ্য—দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আসে। তওবা, ইস্তিগফার, কিয়াম, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মশগুল থাকেন সর্বক্ষণ।

রোজার শেষ ১০ দিন প্রথম ২০ দিনের মতো নয়। আগামী রোজা আদৌ পাওয়া যাবে কি যাবে না, তা কারও জানা নেই। সে অনিশ্চয়তার কথা ভেবেই মনে করতে হবে, রমজানের শেষ ১০ দিন ইবাদতের জন্য জীবনের সেরা সময়।

নাজাতের ১০ দিনে করণীয়

রমজান মাসের শেষ ১০ দিন নাজাত বা মুক্তির। এ সময়ে করণীয় হলো দুনিয়ার সবকিছুর আকর্ষণ ও মোহ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রেমে বিভোর হওয়া।

আল্লাহর স্বনির্ভরতা, মুক্ততা ও নিরপেক্ষতা-সংক্রান্ত নামগুলো জেনে মুখস্থ করা। নামের বৈশিষ্ট্য জেনে আত্মস্থ করার চেষ্টা করতে হবে।

আল্লাহর স্বনির্ভরতা ও মুক্ততাসুলভ নামগুলো হলো:

আল আহাদু (একক), আল ওয়াহিদু (এক), আস সামাদু (স্বনির্ভর, অমুখাপেক্ষী), আল আদলু (ন্যায়ানুগ), আল হাক্কু (সত্য), আল কাবিউ (সুদৃঢ়), আল মাতিনু (শক্তিমান), আল কাদিরু (ক্ষমতাবান), আন নুরু (জ্যোতির অধিকারী, আলোক দানকারী), আর রশিদু (দিব্যজ্ঞানী), আল জামিলু (সুন্দর), আল বাররু (সৎকর্মশীল), আল মুহসিনু (সুকর্তা) ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার আকর্ষণ সব পাপের মূল।’ (বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)

Source:https://www.prothomalo.com/religion/islam/ja88ezlmwa

8
ইস্তিগফার মানে হলো ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ হলেন ‘গাফির’ ক্ষমাকারী, ‘গফুর’ ক্ষমাশীল, ‘গফফার’ সর্বাধিক ক্ষমাকারী।

ইস্তিগফার একটি স্বতন্ত্র ইবাদত; কোনো গুনাহ বা পাপ মাফ করার জন্য এই ইবাদত করা হয় না। যেমন নামাজ, রোজা, হজ ইত্যাদি ইবাদত দ্বারা গুনাহ মাফ হয়; কিন্তু এসব ইবাদত করার জন্য গুনাহ করা শর্ত নয়। তওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহ তাআলার অতি পছন্দের একটি ইবাদত। তাই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তওবা ও ইস্তিগফার করতেন। অনুরূপ ইমানের পর নামাজ প্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও এই নামাজ আদায়ের পর তিনবার ইস্তিগফার পড়া সুন্নত। অর্থাৎ ইস্তিগফার শুধু পাপের পরে নয়, ইবাদতের পরেও করা হয়। যেমন হজের পর ইস্তিগফার করা বিষয়ে কোরআনে উল্লেখ আছে, ‘(হজ শেষে) তারপর তোমরা বেরিয়ে পড়ো, যেভাবে মানুষ চলে যাচ্ছে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৯৯)।

ইস্তিগফার সম্বন্ধে কোরআনে আছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০)। ‘অতঃপর তোমার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।’ (সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ৩)। ‘আর আল্লাহ তাআলা আজাব দেবেন না তাদের, আপনি তাদের মধ্যে থাকা অবস্থায়; আর আল্লাহ তাদের আজাব দেবেন না, যখন তারা ইস্তিগফার করে।’ (সুরা আনফাল, আয়াত: ৩৩)। ইস্তিগফার সম্পর্কে হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে যত মুমিন বান্দার জন্য ইস্তিগফার করবে, সে তাদের সবার সমপরিমাণ নেকি লাভ করবে।’ (সিয়ারে কাবির, তাবরানি)।

তওবা ও ইস্তিগফার করার দোয়া

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, এই দোয়া ইখলাছের সঙ্গে পাঠ করলে সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গুনাহ থাকলেও তা মাফ হয়ে যাবে। ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু, ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নাই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরন্তন; এবং আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। (তিরমিজি, আবু দাউদ)। অথবা ‘আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিও ওয়া আতুবু ইলাইহি; লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই আমার সব পাপের, আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বাঁচার ও নেক কাজ করার কোনোই শক্তি নেই। (মুসলিম ও তিরমিজি)।

পৃথিবীতেই 'বেহেশতের বাগান'

১. ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’ অর্থাৎ, ‘আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ইস্তিগফারটি তিনবার পড়তেন। (মিশকাত)

২. ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া তুবু ইলাইহি।’ অর্থাৎ, আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর কাছ থেকে ফিরে আসছি। এ ইস্তিগফার প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার পড়ার নিয়ম। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তওবা ও ইস্তিগফার করতেন। (বুখারি)

৩. ‘রাব্বিগফিরলি, ওয়া তুব আলাইয়্যা; ইন্নাকা আংতাত তাউয়্যাবুর রাহিম।’ অর্থাৎ, হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তওবা কবুলকারী করুণাময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এ দোয়া ১০০ পড়েছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

৪. ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া তুবু ইলাইহি।’ অর্থাৎ, আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তওবা করে) ফিরে আসি।

দিনের যেকোনো ইবাদত-বন্দেগি তথা ক্ষমা প্রার্থনার সময় এভাবে তওবা-ইস্তিগফার করা যেতে পারে। হাদিসে আছে, এভাবে তওবা-ইস্তিগফার করলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়। (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

৫. সাইয়েদুল ইস্তিগফার পড়া:

‘আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা।’

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারেই আবদ্ধ। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ, তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ, তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

সকালে ও সন্ধ্যায় এ ইস্তিগফার করার নিয়ম। ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর এ ইস্তিগফার পড়তে যেন ভুল না হয়। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি এ ইস্তিগফার সকালে পড়ে আর সন্ধ্যার আগে মারা যায় কিংবা সন্ধ্যায় পড়ে সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, সে জান্নাতে যাবে। (বুখারি)

সাইয়েদুল ইস্তিগফার কীভাবে করবেন

৬. ‘রাব্বিগফির, ওয়ারহাম ওয়া আন্তা খাইরুর রাহিমিন।’

৭. অন্য হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ৭০ বারের বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তওবা করি: ‘আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া তুবু ইলাইহি’।

৮. বিশেষ করে ক্ষমা, রিজিকের সন্ধান ও বরকত পেতে হলে বেশি বেশি করে পড়া যায়, ‘রাব্বিগফিরলি জুনুবি, ওয়াফতাহলি আবওয়াবা ফাদলিকা’। অর্থাৎ, হে আমার রব, আমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও; আর আমার জন্য তোমার অনুগ্রহের দরজা খুলে দাও। (তিরমিজি)

৯. ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

১০. ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম, ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।’ অর্থাৎ, মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

বিশ্বাসী মুসলমানদের কর্তব্য হলো আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইস্তিগফার করা। রিজিকে বরকতসহ কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদাগুলো পাওয়ার চেষ্টা করা।
তওবা করলে আল্লাহ খুশি হনl


Source:https://www.prothomalo.com/religion/islam/g4ebq0rzw9

9
ডায়াবেটিস এখন শুধু উন্নত দেশের একটি রোগ নয়। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শহরের মতো গ্রামীণ এলাকাতেও ডায়াবেটিসের সংখ্যা বাড়ছে। ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, বংশগত ধারা ইত্যাদি কারণে বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ডায়াবেটিসের সঙ্গে বসবাস মানে হলো জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সঠিক সময়ে সঠিক খাদ্য পরিমাণ মতো গ্রহণ করা।

সবারই জানা, ফল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে ডায়বেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ফল মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে! এমন কিছু ফল আছে যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের কোন কোন ফল এড়িয়ে চলা উচিত? লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাইয়ের প্রতিবেদনে রসালো এমন ৬টি ফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে।

আম
চোখের সামনে আম দেখলে লোভ সামলানো মুশকিল। তবে মনে রাখতে হবে, আমেও কিন্তু চিনির পরিমাণ উচ্চ থাকে। ১০০ গ্রাম আমে প্রায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার ভারসাম্যকে আরও খারাপ করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই ফল এড়িয়ে চলাই ভালো।

আঙুর
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে আঙুর। সুস্বাদু ফলটিতে ফাইবার, ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকে। তবে এতে শর্করার পরিমাণও বেশ ভালোই থাকে। ৮৫ গ্রাম আঙুরে প্রায় ১৫ গ্রাম পর্যন্ত কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।

আনারস
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল আনারস। মিষ্টি-রসালো ফলটি দেখলে, কার না জিভে পানি আসে! তবে জেনে রাখা ভালো, আনারসে চিনির পরিমাণ উচ্চ থাকে! ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত আনারস খেলে তা ব্লাড সুগার লেভেলের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আনারস বেশি না খাওয়াই ভালো।

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকায় যে কারণে ড্রাগন ফল রাখা উচিত

তরমুজ
পুষ্টি গুণে ভরা একটি ফল তরমুজ। এতে ফাইবার এবং ক্যালোরি কম থাকে। হাফ কাপ তরমুজে প্রায় পাঁচ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে। তাই তরমুজ ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি না খাওয়াই ভালো।

কলা
এই ফলটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। কলায় থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কিডনির সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে কলাতে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। আর কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফলটি খুব একটা উপকারী না। তবে মাঝেমধ্যে এক-আধটা কলা খাওয়া যেতেই পারে। কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তবে কলায় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে।

সবেদা
বাদামী রঙের ফল এবং দানাদার স্বাদ যুক্ত সবেদা প্রাকৃতিক মিষ্টিতে ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম সবেদায় প্রায় ৭ গ্রাম শর্করা থাকতে পারে। এতে কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করাও উচ্চ পরিমাণে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকারক হতে পারে।


Source:https://www.somoynews.tv/news/2021-11-14/

10
ডায়াবেটিক রোগীদের কঠোর নিয়মকানুন মেনে খাবার ও ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু রোজা থাকার কারণে এ কঠোর নিয়মকানুনে পরিবর্তন হয়। রোজা রাখার কারণে খাবারের দীর্ঘ বিরতিতে এ সময় নিজেকে কীভাবে সুস্থ রাখবেন এবং কোন কোন প্রয়োজনীয় বিষয় মেনে চলবেন তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

রোজায় সবারই লাইফস্টাইলে একটি বড় পরিবর্তন আসে। এ পরিবর্তন কারও সমস্যা না হলেও রোগীরা বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা অসুবিধায় পড়েন।
 
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এ সময় খাবার ও ওষুধের সমন্বয় করার বিকল্প উপায় নেই বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। কারণ খাবার আর ওষুধ গ্রহণের সময় পরিবর্তন হওয়ায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমা বা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ সমস্যা মোকাবিলা করতে রমজানের সময় ডায়াবেটিস রোগীদের যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে তা হলো:
 
আরও পড়ুন: সেহরিতে যে খাবারগুলো আপনাকে সারাদিন এনার্জি দেবে
 
১। যাদের সকালে নাস্তার আগে বা পরে ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হয়, সেটি তারা ইফতারের সময় খাবেন। আর রাতের ওষুধ খাবেন সেহরির সময়। দুপুরের ওষুধ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় করে নিতে হবে।
 
২। ডায়াবেটিস রোগীদের কিছুক্ষণ পর পর অল্প খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু রোজার সময় তাদের প্রায় ১৪/১৫ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। ফলে ভোরে ওষুধের মাত্রা একই রকম থাকলে বিকেলের দিকে রক্তে চিনির মাত্রা অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, বিশেষ করে যারা ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাদের জন্য। এজন্য ভোরে ইনসুলিনের পরিমাণ অর্ধেকের কাছাকাছি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
 
৩। ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তবে রোজার সময় তাদের এই অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন যাদের শারীরিক শ্রমের দরকার আছে কিন্তু ওজন কমানোর দরকার নেই, তারা তারাবিহ নামাজ পুরোটা পড়লে শারীরিক শ্রম হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু যাদের ওজন কমানোর দরকার আছে, তাদের তারাবিহ নামাজের পর ২০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটতে হবে। তবে বিকেলে কোনোভাবেই শারীরিক পরিশ্রম করা যাবে না।
 
৪।  ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ করবেন না। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।  যেমন রঙিন ফলমূল, শাকসবজি, ডাল, টক দই ইত্যাদি। খেজুর খেলে মাত্র একটা বা দুইটি খেতে পারেন। এর বেশি নয়। এ সময় ভাজাপোড়া খাবার না খাওয়াই ভালো।
 
আরও পড়ুন: অ্যাপল ওয়াচে বাঁচল ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর প্রাণ!
 
৫। রোজা রাখা অবস্থায় সুগার বেশি কমলে বা বেড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে রোজা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ধর্মের বিধিবিধানে উল্লেখ রয়েছে, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রোজা না রাখতে পারলে তা পরবর্তী কোনো সময়ে রাখা যাবে।
 
সূত্র: বিবিসি



11
Ramadan and Fasting / চোখের সিয়াম
« on: March 21, 2024, 01:15:01 PM »
চোখের সিয়াম হচ্ছে কু-দৃষ্টি ও যত্রতত্র দৃষ্টিপাত থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন—

“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।” [1]

“আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।” [2]

আয়াতদ্বয় থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, চক্ষু মানুষের অন্তর পরিচালনা করে এবং এই চক্ষু-ই হচ্ছে আত্মার প্রবেশদ্বার।

একবার নবীজি (সাঃ) আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেন—

‘হে আলী, কোনাে নারীকে একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না। কেননা, প্রথমবার অনিচ্ছায় দৃষ্টি পড়ে গেছে বিধায় সমস্যা নেই; কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখা জায়িয হবে না।‘ [3]
দৃষ্টির হিফাযত না করার দশটি ক্ষতি রয়েছে—

এক. কোনাে কাজে মন বসে না। সব সময় একপ্রকার অস্বস্তি অনুভব হয়। অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লােকও স্থিরতা ও কাজের মনােবল হারায়।

দুই. কাউকে দেখার পর তাকে না পাওয়ার বেদনা হৃদয়কে অনবরত দংশন করতে থাকে। এই হতাশা ও অতৃপ্তি তখন দু-চোখের ঘুম কেড়ে নেয়।

তিন. সালাত, সিয়াম কিংবা কুরআন তিলাওয়াত—কোনাে কিছুতেই আত্মতৃপ্তি আসে না। যিকিরে আত্মপ্রশান্তি অনুভব হয় না। এক কথায়, ইবাদাতের মাঝে যে ঈমানী স্বাদ, তা সম্পূর্ণ মাটি হয়ে যায়।

চার. এর দ্বারা বড় বড় গুনাহের সূত্রপাত হয়। অশ্লীলতা ও ব্যভিচারসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অনেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিও নেশা ও মাদকের অন্ধকার জগতে হারিয়ে যায়। ধর্ষণ, হত্যা ও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

সালাফদের কেউ একজন বলেন, আমি পবিত্র কুরআনের হাফিয ছিলাম। একবার কোনাে এক নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করি। ফলে চল্লিশ বৎসরে উপনীত হওয়ার পর আমি কুরআন ভুলে যাই। (আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন)

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করার প্রাথমিক উপকারিতা হচ্ছে, অন্তরে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভূত হতে থাকে।

সালাফগণ বলেন, দৃষ্টি হচ্ছে একজন কমান্ডারের মতাে; যখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, মুহূর্তে শিকার করে আনবে; কিন্তু যখন তাকে আটকে রাখা হবে, সে আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য হবে। দৃষ্টিকে উন্মুক্তভাবে ছেড়ে দিলে অন্তরের দূষণ অনিবার্য। সালাফগণ আরও বলেন, যদি তুমি দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করাে, তবে সে তােমাকে লাঞ্ছিত করবে। যখনই তাকে বন্ধনমুক্ত করবে, সে তােমাকে ভােগান্তিতে ফেলবে ইহকালে কিংবা পরকালে।

শাহ কিরমানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে-ব্যক্তি চক্ষুকে অবনত রাখবে, অন্তরকে তাকওয়ায় সুসজ্জিত করবে, চাল-চলন ও বেশভূষায় সুন্নাহর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করবে—সে অবশ্যই আল্লাহপ্রদত্ত ‘অন্তর্দৃষ্টি’লাভে ধন্য হবে। অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন—

“নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলী।” [4]
দৃষ্টির হিফাযত করার পাঁচটি সুফল রয়েছে—

এক.মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর আনুগত্যের গুণ অর্জিত হয়। আর এটাই দুনিয়া। ও আখিরাতে সফলতার একমাত্র পুঁজি।

দুই. অন্তর গুনাহমুক্ত থাকে, চিত্ত প্রফুল্ল থাকে এবং সর্বক্ষণ অন্তরে একপ্রকার তৃপ্তি ও আত্মপ্রশান্তি বিরাজ করে।

তিন. যাবতীয় ফিতনা ও জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

চার. আল্লাহর পক্ষ হতে ইলম, মারিফাত ও তাকওয়া লাভের পাশাপাশি সৎকাজের তাওফীক নসীব হয়।

পাঁচ. সত্যবাদী ও সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য ও অনুগ্রহলাভের উপায় এটি। এর মাধ্যমে তাদের অন্তরজগত আরও আলােকিত হয়।

যখন রামাদান মাস আমাদের দুআরে কড়া নাড়ে তখন আমাদের উচিত আপন আপন চক্ষুর হিফাযত করা। তাকে গুনাহমুক্ত রাখা। আর এটিই হচ্ছে ‘চোখের সিয়াম’। সিয়াম পালনার্থে ক্ষুধার্ত থাকার ফলে চোখের অনেক উপকার হয়। যেমন—এক. চোখের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুই. অসৎ মনােবাসনা ও অপাত্রে দৃষ্টির কু-চাহিদা লােপ পায়।

নির্বোধ লােকেরা রাস্তায় চলার সময় এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করে। ফলে তারা শয়তানের খেলার বস্তু ও ক্রীড়নকে পরিণত হয়। শয়তান তাদের নানান গুনাহ ও অপরাধকর্মে লিপ্ত করে।

অনেকেই আছে যারা বাহ্যিকভাবে সিয়াম পালন করে, কিন্তু চক্ষু নিয়ন্ত্রণ না করার ফলে তাদের কল্প-জগতে হরদম অপকর্মের চিত্র ভাসতে থাকে।

প্রিয় ভাইয়েরা, আসুন আমরা সিয়াম পালনের পাশাপাশি নিজের আত্মা ও চক্ষুকেও গুনাহমুক্ত রাখি।

মহান আল্লাহ বলেন—

“এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদের দেবেন জান্নাত ও রেশমী পােশাক। তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। তারা সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না।” [5]

শান্তি বর্ষিত হােক তার প্রতি—যে সিয়াম অবস্থায় একমাত্র রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের দৃষ্টির হিফাযত করে।

Source:https://quraneralo.net/coker-siam/

12
আরবী মু‘জিযা শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘মিরাকেল‘। একে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেমন : তা এমন একটি কাজ যাকে প্রকৃতির নিয়মে সংজ্ঞায়িত বা ব্যাখ্যা করা যায় না। কিংবা তা এমন একটি বিষয় যা মানুষের ক্ষমতা ও সাধ্যের ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ তা এমন একটি ঘটনা যা মানবিক কার্যকারণ ও যুক্তির মাধ্যমে ব্যাখ্যাত নয়। সুতরাং মু‘জিযা যেহেতু মানুষের ক্ষমতা ও যোগ্যতার আয়ত্বাধীন নয়, তাই তা অবশ্যই সরাসরি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা‘আলার কর্ম বলেই বিবেচ্য।

একটি মু‘জিযা – আল্লাহ তা‘আলার প্রত্যক্ষ কাজ হিসেবে- আল্লাহ তা‘আলার সার্বভৌম ক্ষমতা ও নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের প্রতিফলন ঘটায়। মু‘জিযা মানবীয় বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি একটি উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ। এটি প্রমাণিত ও অনস্বীকার্য সত্য যে, আল্লাহ তা‘আলা বিশ্ব-জাহানের একমাত্র প্রভু। তাই তিনি তাঁর সকল সৃষ্টিকে তাঁরই আনুগত্যের নির্দেশ দেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সাফল্য ও মুক্তির পথ দেখানোর জন্যে অনেক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। যখন কোনো সম্প্রদায়ের কাছে কোনো নবী প্রেরিত হতেন তখন তারা তাঁর কাছে এই দাবি করত, যেন তিনি তাদেরকে মু‘জিযা দেখান। তারা নবী কিংবা রাসূলের আখলাক ও আচরণের প্রতি আগ্রহী ছিল না; সেই বাণীর প্রতিও নয় যা তিনি তাদের জন্য নিয়ে এসেছেন। বিপরীতে তারা অধিক উদগ্রীব ছিল, যাতে তিনি পারলে তাদেরকে কোনো অতি প্রাকৃতিক ব্যাপার দেখিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেন। আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক নবী-রাসূলই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন।

উম্মতের প্রতি সকল নবী-রাসূলের জবাব ছিল একটিই, “বল, আমি আমার নিজের কোনো উপকার বা ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোনো ক্ষতি স্পর্শ করত না। আমিতো একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা এমন কওমের জন্য, যারা বিশ্বাস করে।” [সূরা আল-আ’রাফ: ১৮৮]

অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন, “সে বলল, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। আর যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন।” [সূরা মারইয়াম: ৩০] আরেক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, “বল, ‘আমি নিজের ক্ষতি বা উপকারের অধিকার রাখি না, তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন।” [সূরা ইউনুস: ৪৯]

যা হোক, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অপরিসীম দয়ায় প্রত্যেক নবী-রাসূলকে বহু মু‘জিযা দান করেন। এভাবে তিনি সব ধরনের সন্দেহ-সংশয়ের উর্ধ্বে তাঁর নবী-রাসূলগণের বিশ্বাসযোগ্যতা সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। একদল লোক এসব মু‘জিযাকে জাদু ও ভেলকিবাজি বলে একেবারে উড়িয়ে দিত, আরেকদল লোক যারা তাদের বিচার-বুদ্ধি, যুক্তি ও সাধারণ বোধের যোগ্যতা কাজে লাগাতেন, তারা নবী-রাসূলের এই অতিপ্রাকৃতিক কর্মসমূহকে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মু‘জিযা হিসেবে গ্রহণ করতেন। তারা অনুসরণ করতেন নিজেদের সম্মানিত নবী-রাসূলের বাণীর।

ইতিহাসও আমাদের এ কথা বলে, প্রত্যেক নবী-রাসূল যে সম্প্রদায় বা যে স্থানে প্রেরিত হয়েছিলেন সে সম্প্রদায় ও স্থানের জন্যে তাদেরকে বহু মু‘জিযা প্রদান করা হয়েছিল। একইভাবে এ কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রেও সত্য। তিনি অগণিত মু‘জিযা দেখান, যা তার সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রত্যক্ষ করেছিল এবং ইতিহাস ও সীরাত গ্রন্থে তা যথাযথভাবে লিখিত রয়েছে। তাছাড়া তিনি বহু ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যার সবকটিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত নবী-রাসূলদের মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্যান্য নবী-রাসূল প্রেরিত হয়েছিলেন কোনো বিশেষ স্থান ও সময়ের জন্য। আর আল্লাহ তা‘আলা এসব নবী-রাসূলকে কিছু বিশেষ মু‘জিযা দান করেছিলেন একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত স্বজাতিকে তা দেখানোর জন্য। এসব মু‘জিযা সময় ও স্থানের সঙ্গে সীমাবদ্ধ ছিল। মানব ইতিহাসের অংশ হিসেবে আজ কেবল এসব মু‘জিযার গল্প বিদ্যমান। পক্ষান্তরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন সর্বশেষ রাসূল হিসেবে। পুরো মানব জাতির জন্যে এবং আগত পুরো সময়ের জন্যে। যার দাবি, তাঁর থাকবে এমন একটি সার্বজনীন মু‘জিযা যা স্থান-কাল নির্বিশেষে সকল মানুষ প্রত্যক্ষ করতে পারে। মানব ইতিহাসের প্রতিটি যুগের প্রত্যেক ব্যক্তি চাই সে পৃথিবীর যে অংশেই বসবাস করুক না কেন যথার্থই বলতে পারে, যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমানে আমার নবী হন, তাহলে আমি একথা পছন্দ করি যে, আমার জন্য বর্তমানে একটি মু‘জিযা থাকবে।

আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতির সর্বশেষ রাসূল হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে তাকে যে সার্বজনীন মু‘জিযা দান করেছেন তা-ই আল-কুরআন। পণ্ডিত, ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা আল-কুরআনের বিস্ময়কর প্রকৃতির বিবরণ দিয়ে অসংখ্য পৃষ্ঠা রচনা করেছেন। বস্তুত বিগত চৌদ্দশ বছর ধরে প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক প্রজন্মই আল-কুরআনের নতুন নতুন বিস্ময় ও মু‘জিযা আবিষ্কার করেছে। এই অশেষ মু‘জিযা এ কথার শাশ্বত ও স্থায়ী প্রমাণ যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার রাসূল এবং আল-কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরো মানবজাতির জন্যে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ।

আল-কুরআনের বিস্ময়কর প্রকৃতিকে আরও ভালোভাবে হৃদয়াঙ্গম করতে হলে আমাদেরকে সে স্থান ও কালের দিকে ফিরে দেখতে হবে যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৫৭১ ঈসায়ী সনে। তৎকালে মানবিক জ্ঞানের স্তর এতই অধপতিত ছিল যে, ঐতিহাসিকরা একে মানবেতিহাসের ‘আইয়ামে জাহিলিয়া বা বর্বরতার যুগ‘বলে আখ্যায়িত করেন। সেসময় মানুষের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ন্যূনতম জ্ঞানও ছিল না। সাধারণ মানুষ জানত না লেখা-পড়া। না আবিষ্কৃত হয়েছিল মুদ্রণের কলা-কৌশল। ফলে যদি কোনো ব্যক্তি একটি নিশ্চিত মানের জ্ঞান অর্জন করত তবে সে একটি মনোনীত দলের লোক বলে গণ্য হত। সেই জ্ঞান প্রচারের কোনো উপায় বা মাধ্যম ছিল না তৎকালে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরবের মক্কা নামক একটি ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের সময় আরব উপদ্বীপের জীবন ব্যবস্থা ছিল খুব সেকেলে। দেশটি ছিল কান্তার মরু আর অথৈ বালিয়াড়িময়। ছিল না কোনো রাস্তা-ঘাট। না ছিল কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ কিংবা কৃষিব্যবস্থা। আরব উপদ্বীপের আবহাওয়া এমনকি বর্তমানেও এত উষ্ণ যে, ছায়ার মধ্যেও তাপমাত্রা প্রায়ই ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে। এমন রূঢ় আবহাওয়া এবং দারিদ্রের কারণে আরব উপদ্বীপ বিদেশি বণিক কিংবা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে নি। দেশটি ছিল গোটা বিশ্ব থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন। ফলে প্রতিবেশি দেশ সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও রোমে যে সামান্য জ্ঞানের চর্চা ছিল তাও আরব উপদ্বীপ অবধি পৌঁছাতে পারে নি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমাজে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাতে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, লোকেরা সেখানে যাযাবরের মত বসবাস করত। তারা তাদের গবাদিপশু ও পরিবারের জন্য বৃষ্টি ও চারণভূমির তালাশে নিয়মিত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তরিত হত। সেখানে ছিল না কোনো সরকার কাঠামো। না ছিল কোনো নাগরিক সুবিধা। কোনো সুসংহত নগর-আইনও ছিল না। লোকেরা গোত্রে গোত্রে বসবাস করত। গোত্রের শক্তি ও প্রতিপত্তিই একজন ব্যক্তির ক্ষমতা ও অধিকার হিসেবে বিবেচিত হত। ‘জোর যার মুল্লুক তার‘কেবল এ নীতিই সে ভূখণ্ডে কার্যকর ছিল। অপেক্ষাকৃত শক্তিধর গোত্রগুলি দুর্বল গোত্রদের ওপর প্রায় লুটতরাজ ও লুণ্ঠন চালাত। এটিই ছিল তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। পরন্তু গোত্রের শক্তি-সামর্থ্য নির্ভর করত পুরুষদের সংখ্যার ওপর। আপদ ও বোঝা জ্ঞান করা হত নারীদের। প্রায় অভিভাবই চাইত না এ বোঝা বহন করতে। সেহেতু তারা আত্মজ কন্যাকে হত্যা করত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মকালীন পরিবেশ-প্রতিবেশ ও তৎকালীন অবস্থার উল্লেখ করার পর তাঁর শৈশবকালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও উল্লেখ করা সমীচীন ভাবছি। জন্মের পূর্বেই তাঁর পিতা মারা যান। মাকেও হারান ছয় বছর বয়সে। তারপর তাঁর দেখাশুনার ভার নেন দাদা। কিন্তু তিনিও পরপারে পাড়ি জমান যখন তাঁর বয়স আট হয়। তিনি তখন আপন চাচার ঘরে স্থানান্তরিত হন। এই চাচা কেবল তাঁকে আশ্রয় দান করেছিলেন। তিনি তাঁর জ্ঞান অর্জনে সাহায্য কিংবা জীবন ধারণের মৌলিক প্রয়োজনসমূহ পূরণে সক্ষম ছিলেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাই গবাদি পশু চরিয়ে চাচাকে সহযোগিতা করতেন। যে কেউ দেখতে পাবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাল্য-জীবন আর দশ জনের মতো ছিল না। পিতা, মাতা কিংবা পিতৃব্যের ভালোবাসা ও আদর-যত্ন বলতে যা বুঝায়, তিনি তা পান নি। ছিল না তাঁর কোনো স্থায়ী কোনো নিবাস। এক অভিভাবক থেকে আরেক অভিভাবকের কাছে হাত বদল হন। এই বিরূপ ও রূঢ় পরিস্থিতির কারণে ন্যূনতম জ্ঞান কিংবা শিক্ষা যা তখন মক্কায় প্রচলিত ছিল- তাও অর্জন করার সুযোগ তাঁর ছিল না।

ঐতিহাসিকরা লিখেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না লিখতে জানতেন, না পড়তে। এমন কি তিনি নিজের নামটি পর্যন্ত স্বাক্ষর করতে জানতেন না। পরন্তু তাঁর জীবনের এমনতরো রূঢ় ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তাঁকে সেসব হাতে গোনা গুটিকয়েক শিক্ষিত লোকদের সাহচর্যে বসারও সুযোগ দেয় নি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে মাত্র দু‘বার দীর্ঘ সফর করেছেন। প্রথম সফর ছিল তাঁর আট বছর বয়সে। দ্বিতীয়বার সফর করেন যখন তাঁর বয়স পঁচিশ বছর। উভয়টি ছিল সিরিয়ায় এবং খুব সংক্ষিপ্ত। তাও বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। কখনো কোনো ঐতিহাসিক একথা লিখেন নি যে, এই সফরগুলি তাঁকে এমন কিছু জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করেছিল যা তিনি পরবর্তীতে আল-কুরআনে সন্নিবেশিত করেছেন। তিনি একজন সাধারণ আরব বেদুঈনের মত খুব সহজ সরল ও সাধাসিধে জীবন যাপন করতেন। একজন জনসমাবেশের বক্তা হিসেবে তিনি না পরিচিত ছিলেন, না একজন কাব্য রচয়িতা হিসেবে। আর না অন্য এমন কোনো কাজ করেছিলেন যা তাঁর প্রতি অন্যান্যদের দৃষ্টি কাড়ে।

তিনি কোনো ধরনের বিতর্ক, ঝগড়া-বিবাদ কিংবা যুদ্ধে জড়াতেন না। বলাবাহুল্য, মক্কার লোকেরা মূর্তিপূজা করত এবং যখন তারা কা‘বায় প্রবেশ করত, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই বস্ত্র ত্যাগ করত। এ ছিল তাদের প্রার্থনা-রীতির অংশ। এ রকম পরিস্থিতিতে তিনি বেড়ে উঠেন। একটি মাত্র বিষয় যা ঐতিহাসিকরা তার বাল্য জীবন সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন তা হল, তিনি তাঁর সততা এবং সদাচারের জন্য সুপরিচিত এবং সবার শ্রদ্ধা-ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। এ জন্যই মক্কার লোকেরা তাঁকে ‘আল-আমীন‘ বা বিশ্বাসী এবং ‘আস-সাদিক‘ বা সত্যবাদী উপাধিতে ভূষিত করে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। অতঃপর তিনি ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাঁকে পুরো মানব জাতির জন্য সর্বশেষ রাসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব তখন সহসাই পাল্টে যায়। অচিরেই তাঁকে দেখা যায় নানা সফল ভূমিকায়। ধর্মপ্রচারক, রাষ্ট্রনায়ক, বক্তা, সৈনিক, সেনানায়ক, নেতা, আইন প্রণেতা, বিচারক, চুক্তিসম্পাদনকারী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, স্বামী, পিতা- হেন কোনো ভূমিকা নেই যাতে তিনি ব্যর্থ। সফলতার এমন বহুমুখিতা দেখেই একজন ইয়াহূদী ঐতিহাসিক মাইকেল এইচ হার্ট তার বিখ্যাত ‘দি হান্ড্রেড’ নামক মানবজাতির একশ মহান ব্যক্তিত্বের জীবনীতে তাঁকে সবার শীর্ষে উল্লেখ করেন।

এই আল-কুরআনই মানবতার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। মানব জাতির ইতিহাসে যার কোনো তুলনা নেই। অন্যান্য নবী-রাসূলের মু‘জিযা তাদের জীবনকাল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কুরআন মাজিদ কিয়ামত পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন্ত মু‘জিযা হিসেবে অক্ষত থাকবে। আল-কুরআন এমন অসংখ্য তথ্যধারণ করে যা তা অবতীর্ণ হওয়ার সময় মানুষের জানা ছিল না। এসব তথ্যসূত্রের অনেকগুলি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বর্তমানে নিশ্চিত সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

বস্তুত প্রত্যেক যুগে মানুষ আল-কুরআনে নতুন নতুন ‘মিরাকল‘বা মু‘জিযা আবিষ্কার করেছে। মানুষের জ্ঞানের পরিধি যতই প্রসারিত হচ্ছে, ততই তা আল-কুরআনের মু‘জিযার তালিকাকে দীর্ঘ করছে। “আর তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব তিলাওয়াত করনি এবং তোমার নিজের হাতে তা লিখনি যে, বাতিলপন্থীরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে।” [সূরা আল-আনকাবুত: ৪৮]

“এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। নাকি তারা বলে, ‘সে তা বানিয়েছে’? বল, ‘তবে তোমরা তার মত একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” [সূরা ইউনুস: ৩৭-৩৮]


Source:https://quraneralo.net/alquran-thelivingmiracle/

13
দারিদ্র ও প্রাচুর্য দু’টি বিপরীতধর্মী শব্দ কিন্তু মানব জীবনে দু’টিই জড়িয়ে আছে অন্ধকার এবং আলোর মত। এইতো প্রাচুর্যের ছন্দময় উপস্থিতি আবার কিছু সময় পরই দারিদ্রের সেই অনাকাংখিত ভয়াল থাবা। কারো কারো জন্য প্রাসাদোপম আলীশান বাড়ী। বিলাম বহুল গাড়ীসহ সুখের সব রকম সরঞ্জামাদির বিপুল সমাহার। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে  হাড় ভাঙ্গা খাটুনি পরিশ্রমের পরও দু’মুঠু ভাতের নিশ্চয়তা নেই, নেই মাথা গোজার একটু ঠাঁই। দু’টিু অবস্থাই প্রজ্ঞাময় মহামহীমের রহতমতায় সৃষ্টি। সম্ভবত ইবাদতের দু’টি অনুপত ধারা সৃষ্টিই এর মুল রহস্য। একটি সবর অন্যটি শুকর। দু’টিই আল্লাহ তাআালার বিশেষ ইবাদাত। দু’টির মাধ্যমেই রয়েছে মহামহীম রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জনের সুনিপুন ব্যবস্থা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মুমিনের বিষয়টি অতিশয় বিস্ময়কর। তার প্রত্যেকটি বিষয়ই তার জন্যে কল্যাণকর আর এটি একমাত্র মু’মিনের জন্যেই। যদি তার সুদিন আসে, সমৃদ্ধি অর্জিত হয়, তা হলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এটি তার জন্যে কল্যাণকর। আবার যদি দুর্দিন আসে দারিদ্রে আক্রান্ত হয়, ধৈর্য ধারণ করে এটিও তার জন্যে কল্যাণকর।” [মুসলিম: ৭৪২৫]

হাদীস থেকে সু-স্পষ্ট রূপে বুঝা যায় যে, দারিদ্র ও প্রাচুর্য দু’টিই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের দু’টি সহজ পন্থা। দরিদ্র ধৈর্য ধারণ করবে আর ধনবান শুকরিয়া আদায় করবে। মানব জীবনে দু’টি সুযোগই কারো কারো ক্ষেত্রে  আসতে পারে, আবার কেউ এর যে কোন একটি সুযোগ প্রাপ্ত হতে পারে। তবে  বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হল যখন যার যে সুযোগ আসে তখন তাকে কাজে লাগিয়ে সুযোগের সৎ ব্যবহার করা। আমরা আলোচনা করব, যিনি শুকরিয়া আদায়ের সুযোগ পেলেন, তিনি কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন।
প্রথমত:

যে বিষয়টি অনুধাবন করা প্রয়োজন তা হচ্ছে, এই যে ধন-সম্পদ এটি তার নিজের কৃতিত্বের ফসল নয় বরং তা মহামহীমের দয়া ও ইচ্ছার ফসল। তাই প্রথমতঃ সর্বান্তকরণে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই তাকে ভুলে যাওয়া চলবে না। তাঁর বিধি নিষেধের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন চলবে না। নিজের ইচ্ছার উপর তাঁর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাঁর দাবীর কাছে নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করে দিতে হবে। ইরশাদ হচ্ছে: “মুমিনগণ তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো তিগ্রস্ত।” [মুনাফিকুন- ৯]

আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সম্পদ মানুষকে আল্লাহ বিমুখ করে দেবে এমন আশংকা আছে তাই মু’মিনদেরকে সদা সর্তক থাকতে হবে। এ সম্পদ যেন কোনক্রমেই তাকে তার সৃষ্টিকর্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পারে। সম্পদের মোহ যেন আল্লাহর দাবীকে গৌণ করতে না পারে। আর সেটি তখনই সম্ভব যখন সম্পদপ্রাপ্ত ব্যক্তি এ সম্পদকে আল্লাহর অনুগ্রহ বলে জ্ঞান করবে।
দ্বিতীয়:

সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহর যে নির্দেশ তা অরে অরে পালন করার প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখে খেয়াল রাখতে হবে প্রাচুর্যের কারণে গতি যেন পাল্টে না যায়। সম্পদ যেন হারাম ও অনৈতিক কাজে ব্যয় না হয়। বরং এ ব্যাপারে আল্লাহর যে নির্দেশ তা যেন ঠিক ঠিক পালন হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তাদের সম্পদে অধিকার রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের।” [যারিয়াত- ১৯]

উক্ত আয়াত সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশ করছে যে অসহায়, বঞ্চিত ও প্রার্থীদের জন্যে সম্পদ ব্যয় করা আল্লাহর দাবী ও নির্দেশ।
তৃতীয়ত:

এ পর্যায়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে  যে সব বিষয় সহায়ক হবে তা গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করা। আর তা হচ্ছে সম্পদ ব্যয়ের যে ফযীলত কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত হয়েছে তা স্মরণে আনা এবং ব্যয় না করে কুগিত করার মন্দ পরিণতির কথা বিবেচনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়- নম্র, যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত, যারা যাকাত দান করে থাকে।” [মু’মিনুন: ১-৪]

আল্লাহ বলেছেন: “এরাই প্রকৃত উত্তরাধিকারী। যারা উত্তরাধিকার লাভ করবে। শীতল ছায়াময় উদ্যানের। তাতে তারা চিরকাল থাকবে।” [মু’মিনুন: ১০-১১]

তা হলে আল্লাহর নির্দেশ মত সম্পদ ব্যয় করলে পরকালে চিরন্তন জীবনের জন্যে চিরসুখময় জান্নাত প্রাপ্তি নিশ্চিত। অল্প সম্পদ ব্যয় করলে পরপারে তা অনেক বড় করে পাওয়া যাবে। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসালাম ইরাশদ করেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সদাকা (দান) কবুল করেন এবং তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করে থাকেন। এরপর তাকে লালন পালন করতে থাকেন যেমনি ভাবে তোমাদের কেউ স্বীয় জন্তু শাবক লালন পালন করে থাকে। এমনকি এক লোকমা খাবার (তার লালন পালনের কারণে) পাহাড়ের মত বিশাল হয়ে দেখা দিবে। অতএব তোমরা সাদকা কর।” [আহমদ: ৭৩১৪]

পান্তরে ব্যয় না করে জমা করে রাখরে সে সম্পদ পরকালের জন্যে বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, যে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে।  (এবং বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং এণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।” [তাওবা: ৩৫]

সম্পদ ব্যয় না করে জমা করে রাখার  ভয়াবহতা কত মারাত্মক? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আল্লাহ যাকে সম্পদ দিলেন, কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করল না তার সম্পদ কিয়ামতের দিন বিষধর  সাপে রূপান্তরিত করা হবে যে, সাপের দু’পার্শ্বে তিলক থাকবে। ঐ সাপ তার দু’চোয়ালে ধরে দংশন করবে আর বলবে আমিই তোমার সম্পদ আমিই তোমার সঞ্চিত ধন-ভান্ডার।” [বুখারী, মুসলিম: ২৪৬]
চতুর্থত:

ধনবান ব্যক্তি তার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের সুযোগ সন্ধান করবে এতে নিজেরই লাভ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যারা দয়াশীল, দয়াময় প্রভু তাদের প্রতি দয়া করেন। যারা যমীনে বিচরণ করে তাদের প্রতি দয়া কর। যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” [তিরমিজি: ১৯৪৭]

সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমেঃ-

একজন সাধারণ চিন্তাশীল ব্যক্তি বর্তমান বাস্তব অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে যে দৃশ্য দেখতে পাবে।

    দারিদ্রের কারণে প্রায়ই দেখা যায় জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশকে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।

    বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মৃত্যু বরণ করছে একটি উল্লেখ যোগ্য অংশ।

    যে শিশু শিানিকেতনের আলোকময় পরিবেশে থেকে নিজকে আলোকিত মানুষ রূপে গড়ে তোলার কথা ছিল দারিদ্রের কারণে আজ তাকে দেখা যাচ্ছে হাটে, রাস্তায়, ষ্টেশনে,, শ্রমবিক্রি করতে ব্যস্ত এদের কেউ কেউ ভিা করছে আবার অনেককে নর্দমা, ডাস্টবিন থেকে ফেলে দেয়া খাবার ও তুলে খেতে দেখা যাচ্ছে।

    দারিদ্রের কারণে অশিতি রয়ে যাচ্ছে সমাজের একটি বিশাল অংশ যার কারণে বেকারত্ব বাড়ছে আলোর গতিতে। দারিদ্র ও বেকারত্বের অমানিশায় পতিত হয়ে হতাশা কাটানোর জন্যে মাদকাসক্তিতে লিপ্ত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি খুনসহ মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে ল ল সম্ভামনাময় নবপ্রজন্ম। এসব অপরাধ বাড়ার কারণে জনমনে সৃষ্টি হচ্ছে আতংক, কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে নাগরিক জীবন যাপন, আইন শৃঙ্খলার অবনতিসহ যাবতীয় উন্নয়ন। অগ্রগতি হচ্ছে বাধা গ্রস্থ, পিছিয়ে যাচ্ছে দেশ। আন্তর্জাতিক ভাবে নিন্দিত  হচ্ছে দেশ ও জনগন।

    এ দারিদ্রের কারণে পরম মর্যাদাবান মাতৃ সমাজকে সতীত্ব বিক্রি করে বেচে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে। পতিতা বৃত্তির মত চরম ঘৃনিত কাজ পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। ফলে মনুষ্যত্ব বোধের চরম অধপতনের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে সিফিলিস, গনরিয়া এইডসসহ মারাত্মক মারাত্মক মরণ ব্যধি।

    সুদ ভিত্তিক দেশীও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার দ্বারস্থ হয়ে সর্বস্বাস্থ হতে দেখা যাচ্ছে ল ল জনগণকে। সুদের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে ভিটে মাটি বিক্রি করে বাস্তুহারার কাতারে শামিল হতেও দেখা যাচ্ছে অনেককে।

    আবার কেউ কেউ ঈমানের বিনিময়ে দায়মুক্তি নিচ্ছে বলেও পত্রিকাতে খবর প্রকাশ পেয়েছে।

    এ সুযোগে দারিদ্রে বিমোচনের নাম করে অনেক আন্তর্জাতিক ফোরাম দেশে বিভিন্ন নামে সংস্থা খুলে সাহায্যের নামে  অপসংস্কৃতির বিকাশ ঘটাচ্ছে মহা সমারোহে। ফলে সাংস্কৃতির নামে চর্চা হচ্ছে নগ্নতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার। মুক্ত সাংস্কৃতির নামে যৌনতা নির্ভর চলচিত্র নির্মাণ, ফ্যাশন শো, কনসার্ট ইত্যাদির মাধ্যমে কেড়ে নিচ্ছে শত বছর থেকে চর্চিত সভ্য সাংস্কৃতির ধারা, শালীনতা, ভদ্রতা, ভব্যতা, ও লজ্জাসহ পর্দা প্রথা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

দারিদ্র বিমোচ শ্লোগানকে পুঁজি করে ঋণ দেয়ার নাম করে সুদী ব্যবসা বর্তমানে জমজমাট। কিস্তি পরিশোধ করতে করতে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতার পর্যায়ক্রমে সর্ব শান্ত হচ্ছে গরীব জনগন আর এ সুযোগে প্রাচুর্যের পাহাড় গড়ছে সুবিধা লোভী ফোরাম। দারিদ্রকে পুঁজি করে শিা সম্প্রসারণের নাম করে তাদের ধর্মীয় মতে দীতি করছে হাজার হাজার মুসলিম শিশুকে। তাই যে শিশু হওয়ার কথা ছিল মানবতা বোধে উদ্বুদ্ধ আল্লাহ প্রেমী ঈমান দ্বীপ্ত খাঁটি মুসলিম, সে শিশু হচ্ছে আধুনিকতার নামে উগ্র ও মুক্তমনার নামে দিকভ্রান্ত নাস্তিক। ফলে ধর্মীয় দিক থেকে আমাদের দেশে স্থায়ী নিবাস গড়ার একটি বিশাল সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে আধিপত্যবাদী একটি বিরাট শক্তি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাবে আমরা মুসলমানরা নিজ দেশে পরবাসী। এক কথায় দারিদ্রের কারণে আজ আমাদের ঈমান ও স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন। আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে একটু দৃষ্টি দেয়া যাক।  দারিদ্রের কারণে দাতা গোষ্ঠীর বিভিন্ন  অন্যায় ও অন্যায্য দাবী মেনে সরকারকে সাহায্য ও ঋণ গ্রহণ করতে হয় ফলে সরকার জনগনের চাহিদা মোতাবেক স্বাধীন ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে না। একদিকে দাতাদের চাপ অন্য দিকে জনগনের দাবী, দো-টানায় পড়ে সরকারকে বিব্রত হতে দেখা যায় প্রায়ই। দাতাদের দাবী মেটাতে গিয়ে জনগনের বিপে পদপে নেয় ফলে জন অসন্তোষ বাড়ে, সরকার জনরায়ের বিপে সিদ্ধান্ত নেয়, জনগন প্রতিরোধের সংকল্প করে ফলে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়ে পড়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়। আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। ফলাফল দাড়ায় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি আন্তর্জঅতিক সমীায় ব্যর্থ রাষ্ট্র।

সম্প্রতিঃ বাংলাদেশ সরকারকে জনমত উপো করে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার প্রেেিত ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্বের  বিরুদ্ধে কঠোর পদপে গ্রহণ করতে হয়। ফলে মিত্রদের মাঝে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। সম্পর্কে ফাটল ধরে ফলে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস  পায়।

স সুযোগে বিভিন্ন নাশকতা মূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়। সরকারকে চাপের মুখে পড়তে হয়। আবারা মতা যেতে হলে বিদেশী সম্প্রদায়ের সমর্থনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ফলে ইসলাম বিরোধী ভূমিকা আরো জোরদার ভাবে নিতে হবে মর্মে দাসখত দেয়ার যুক্তি ও দাবী মজবুত হয়। বাধ্য হয়েই সরকারকে এমন দাসখত দিতে হবে। ফলে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশের রাস্তা আরো সংকুচিত হবে। বরং নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা প্রদীপ সম্পূর্ণ রূপে নিভিয়ে দেয়ার আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। এমন উদাহরণ বিশ্বের সবগুলো মুসলিম দরিদ্র রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে  প্রযোজ্য। আর এসবেরই মূলে রয়েছে দারিদ্রের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। মোট কথা দারিদ্রের কারণে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে আমাদের স্বাধীন মূল্যবোধ। দারিদ্রের কারণেই  আজ আমাদের দেশীয় ও ধর্মীয় পরিচয় হুমকির সম্মুখীন। তাই মানবিক ও ঈমানী মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে কার্যকরী পদপে নিতে বিলম্ব করলে অচিরেই এর চরম মূল্য দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে এ অবয় রোধে একটি বিরাট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গ। তাদের সাহায্য সহানুভূতি পেয়ে অন্নহীন অন্ন পাবে।

    শিার সু-ব্যবস্থা  প্রতিষ্ঠা হলে দরিদ্র জনগন শিার সুযোগ পাবে, ফলে খুন, রাহাজানী, ধর্যন, চুরি, ডাকাতিসহ সকল নেতিবাচক কর্মকান্ড পরিহার করে সুস্থ্য স্বাভাবিক পথে ফিরে আসার রাস্তা খুজে পাবে যুব সমাজ। দেশ পাবে শক্তিশালী নীতিবান আলোকিত জনশক্তি। সে নিজে পাবে ঈমানদীপ্ত সম্ভাবনাময় সুন্দর জীবন।

    ভিা বৃত্তি, পতিতাবৃত্তি এবং ঘৃণ্য পেশা থেকে ফিরে এসে সুস্থ ধারার জীবন গড়ার দিশা পাবে আক্রান্ত নারী ও দরিদ্র জনশক্তি।

    সুদ ভিত্তিক সাহায্য প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা গুটাতে বাধ্য হবে। ফলে তাদের থেকে নিস্কৃতি পাবে অসহায় জনগন এবং সুদের মত মারাত্মক পাপ থেকে বের হওয়ার  রাস্তা পাবে নিরুপায় মুসলিম সমাজ।

    অপসংস্কৃতির চর্চা বন্ধ হবে ফলে চারিত্রিক অবয় থেকে মুুক্তি পাবে যুব সমাজ ইসলামী মুল্যবোধে বিশ্বাসী জন সাধারণ।

    আধিপত্যবাদী সম্প্রদায়ের আধিপত্য বিস্তারের রাস্তা সংকুচিত হয়ে যাবে। ফলে স্বাধীনতা হুমকি মুক্ত থাকবে।

    সরকার স্বাধীনভাবে দেশ পরিচালনার নিশ্চয়তা পাবে জনগনের মতের প্রতিফলন ঘটবে। স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকবে। অন্যায় অসন্তোষ বিলুপ্ত হবে। সুখ সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হবে। দেশ এগিয়ে যাবে। নন্দিত হবে বিশ্বময়। স্বাধীন সমৃদ্ধশালী জাতী হিসাবে আমরা পরিচিতি পাবো বিশ্ব ব্যাপী।

    ধর্মীয় মূল্যবোধ, ঈমানী চেতনা নিয়ে মুসলমান মুক্ত স্বাধীন জীবন যাপ করতে পারবে। এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্বিঘেœ কাজ চালিয়ে যেতে সম হবে। ফলে জাতি দিন দিন উপহার পেতে থাকবে ন্যায় নীতি, সৎ, চরিত্রবান, সৃজনশীল উন্নত, আলোকিত প্রেমময় হৃদয়বান কাংখিত প্রজন্ম। ধরাতে চর্চা  হবে মহামহীমের চাহিদা মোতাবেক শান্তিময় বিধান। সর্বোপরি সৃষ্টিশ্রেষ্ঠ বনী আদম কুফুরী থেকে মুক্ত থাকার পরিবেশ খুজে পাবে। কারণ দারিদ্র মানুষকে কুফুরীর নিকটবর্তী করে দেয়। এমনি ভাবে চেষ্টা করলে সহানুভূতি প্রকাশের হাজারটি দ্বার খুলে যাবে।

    এক্ষেত্রে  যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম

নিয়মিত যাকাত আদায় করে সুষ্ঠভাবে বন্টন করলে উপরোক্ত সবগুলো ক্ষেত্রে  অবদান রাখা যায়। সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ প্রকৃতিতগত। সম্পদ উপার্জনে মানুষ আগ্রহ বোধ করে কিন্তু ব্যয়ের ব্যাপারে অনুরূপ সাচ্ছন্দ অনুভব করে না। আর সাহায্য সহানুভূতি ও দান খয়রাত রীতিমত মনের বিরুদ্ধে একটি সংগ্রাম। এক্ষেত্রে  যাকাত আদায়চ্ছু ব্যক্তি যদি যাকাত আদায়ে শরীয়তের বিধান স্মরণে আনে তাহলে তার জন্য উক্ত কাজে সফল হওয়া সহজ হবে। অর্থাৎ

    যাকাত আদায় ইসলামের  মুলভিত্তি  এটি ব্যতীত ইসলাম পরিপূর্ণ হয় না।

    যাকাত মূলত তার সম্পদ নয় বরং দারিদ্রকিষ্ট বঞ্চিত ও প্রার্থীদের সম্পদ যা তার সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে  আছে। আল্লাহ বলেন: “তাদের সম্পদের রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার।” [সূরা: যারিয়াত-১৯]

তাহলে যাকাত আদায় না করা প্রকারন্তরে আল্লাহর বিধান লংঘন করার পাশাপাশি অন্যের  অধিকার নষ্ট করা।

*  যাকাত আদায়ে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, কলুষমুক্ত হয়।

*  যাকাত আদায়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত নিশ্চিত হয়।

    যাকাত আদায়ে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। পরকালে জাহান্নামে যেতে হবে। সম্পদ বিষধর সাপে রূপান্তরিত করে গালদেশে ঝুলিয়ে দেয়া হবে। উক্ত সর্পরূপী সম্পদ তিরস্কার সহ দংশন করে চলবে।

    যাকাত আদায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে অংশ গ্রহণ করে একটি অধঃপতিত জাতিকে সনির্ভর ও স্বাধীন জাতিতে উন্নত করা যায়।

    দারিদ্রকিষ্ট হয়ে ঈমান হারাতে বসা চরম বিপর্যস্ত একটি গোষ্ঠীকে যাকাত আদায়ের মাধ্যমে এমন বিপদ থেকে রা করা যায়।

বরং উপরোল্লেখিত সকল বিপদ মোকাবেলায় যাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। যাকাতের মাধ্যমেই উক্ত সকল ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দেয়া যায়। আজ যদি যাকাত আদায়ের সুষ্ঠু নীতিমালা থাকত। বন্টনের ইনসাফ ভিত্তিক ব্যবস্থা থাকত তাহলে অবস্থা হয়ত এত করুন হত না। যদি দেশের ধনবান ব্যক্তিবর্গ হৃদয় দিয়ে সহানভূতির সাথে একটু চিন্তা করেন তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায় দেশী বিদেশী সুবিধালোভী সুদ ব্যবসায়ী আধিপত্যবাদীরা লেজ গুটাতে বাধ্য হবে। আমাদের এ আশা কল্পনা নির্ভর নয় বরং যুক্তির নিরিখে একটু হিসাব করি।

ধরে নেই বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০০ কোটি মূল্যবান যাকাতযোগ্য সম্পদের মালিকের সংখ্যা এক হাজার, তাহলে তাদের সম্পদের যাকাতের পরিমাণ হবে প্রতি বছর ১২৫০০ কোটি টাকা। (১২৫০০০০০০০০) উক্ত টাকা যদি জনপ্রতি ৫০ হাজার করে বন্টন করা হয় তাহলে ২৫ ল লোকের মধ্যে বন্টন করা যাবে। প্রতি বছর যদি ২৫ ল লোক দারিদ্র মুক্তির সুযোগ পায় তাহলে গোটা বাংলাদেশকে দারিদ্র মুক্ত করে সনির্ভর করতে কয়দিন  লাগবে? এতো শুধুমাত্র ৫০০ জনের হিসাব। প্রকৃত হিসাব আরো অনেক বেশী।

সম্মানিত পাঠক! যাকাত আদায় ও বন্টনের সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে মুক্তি পেত দেশ। সরকার জনগন, শংকামুক্ত থাকত ঈমান, আক্বীদা, আমল। বৈষম্যদূর হয়ে সম্প্রীতি ও ভালবাসা থাকত সকলের মাঝে বিরাজমান। গোটা সমাজই হতে যেত জান্নাতের একটি বাগিচা। তাহলে আমরা বলতে পারি যাকাত আদায় যেমনি করে দয়াময় পালনকর্তার শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম, বিনিময়ে সুখময় জান্নাত প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। অনুরূপ ভাবে দারিদ্র বিমোচনের মাধ্যমে ভাইয়ের পতি ভাইয়ের মতত্ববোধ প্রকাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পন্থা। পরিশেষে যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি কি? এ মর্মে একটি হাদীস উল্লেখ করে আলোচনার ইতি টানব।

ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর “আওসাত ও সাগীর” গ্রন্থে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন। আল্লাহ তাআলা ধনী মুসলমানদের সম্পদে এ পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন যা তাদের দরিদ্রদের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট। দরিদ্র মুসলিম বৃন্দ অভুক্ত ও বিবস্ত্র থাকার যে কষ্ট করে যাচ্ছে। এটি তাদের ধনীদের সৃষ্ট। শুনে রাখ আল্লাহ  তাআলা তাদের হিসাব কঠিন করে নিবেন এবং যন্ত্রনাদায়ক কঠিন শাস্তি দিবেন।

হাদীস দ্বারা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে সুষ্ঠভাবে যাকাত আদায় হলে মুসলমানদের মাঝে দারিদ্র থাকবে না।  দারিদ্র বিমোচনে যাকাতের  ভূমিকা কত অপরিসীম এ হাদীস তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আল্লাহ আমাদের সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব আদায় করার তাওফীক দিন। আমীন!!

Source:https://quraneralo.net/daridro-bimochon-a-jakat/

14
Diabetics / রমজান ও ডায়াবেটিস
« on: March 20, 2024, 12:48:14 PM »
সুপরিকল্পিত ও সঠিক নির্দেশিত উপায় অবলম্বন করলে রমজান মাসে একজন ডায়াবেটিসের রোগীর কোনো রকমের সমস্যা বা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়, কিন্তু এর বিপরীতটি ঘটলে অনেক সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। চলছে রমজান মাস। যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের স্বাস্থ রক্ষা ও রোজা রাখা না-রাখা নিয়ে যে প্রশ্নগুলো রয়েছে, তার জবাব নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন।

বিশ্বের প্রায় ১৫৭ কোটি মুসলিমের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি ডায়াবেটিসের রোগী রমজান মাসে রোজা পালন করেন। ১৩টি মুসলিমপ্রধান দেশে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগী নিয়মিত রোজা পালন করে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে একজন সুস্থ ও সুনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীর রোজা পালন করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু রমজান মাসে পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের ধরন ও ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিনের পরিবর্তিত মাত্রা ও সময় সঠিকভাবে জেনে নিয়ে একজন ডায়াবেটিস রোগী রোজা পালনের জন্য সঠিকভাবে তৈরি হয়ে নেবেন। সুপরিকল্পিত ও সঠিক নির্দেশিত উপায় অবলম্বন করলে রমজান মাসে একজন ডায়াবেটিসের রোগীর কোনো রকমের সমস্যা বা অসুস্থ হওয়ার কথা নয়, কিন্তু এর বিপরীতটি ঘটলে অনেক সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
রোজা পালনে ঝুঁকি আছে কাদের?

রমজান মাস শুরু হওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন মাস আগেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন এবং আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে দিন। প্রথমেই জেনে নিন আপনার রোজা পালনে কোনো বাধা আছে কি না। গত তিন মাসের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়া) এবং ডায়াবেটিস কোমায় আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের ঝুঁকি থেকেই যায়। যাঁদের বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ইতিহাস আছে, যাঁরা হাইপোগ্লাইসেমিয়া-অসচেতন রোগী, যাঁদের রক্তে সুগার একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত, যাঁরা যকৃত, কিডনি, হূদ্যন্ত্র ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত, ডায়ালাইসিস করছেন, এমন রোগী, অত্যধিক বয়স্ক রোগী এবং গর্ভবতী ডায়াবেটিসের রোগীরা রোজা থেকে বিরত থাকলেই ভালো। নিজের সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে রমজানের দুই থেকে তিন মাস আগে একটি সম্পূর্ণ চেকআপ করিয়ে নিন। এ সময় রক্তের সুগার, সুগারের গড় মাত্রা বা এইচবিএওয়ানসি, কিডনি ও লিভার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এসব পরীক্ষার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আসন্ন রোজা পালনের পরিকল্পনা নিন।
কী কী বিপদ হতে পারে?

রমজানের আগে ও সময় সঠিকভাবে প্রস্তুতি ও শিক্ষা না নিলে অন্ততপক্ষে চার রকমের বিপদ ঘটতে পারে এ সময়।

[এক] হঠাৎ করে রক্তে সুগার অনেক কমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন অর্থাৎ হাইপোগ্লাইসেমিকে আক্রান্ত হতে পারেন।

[দুই] রক্তে সুগার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে।

[তিন] ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস বা কোমা হয়ে যেতে পারেন।

[চার] পানিশূন্যতা ও থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
রমজানের খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়াম

একজন ডায়াবেটিসের রোগী রমজানের আগে যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতেন, রমজান মাসেও তার হেরফের হবে না, কেবল এর সময়সূচি ও উপাদান পরিবর্তিত হতে পারে। ইফতারির সময় ও পরে হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ না করা, চিনি, মিষ্টি ও ভাজাপোড়া খাবার থেকে বিরত থাকা এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাসের মাধ্যমে এ সময় অনেকটাই সুস্থ থাকা যায়। রক্তে দ্রুত সুগার বাড়ায় না, এমন খাবারকে লো গ্লাইসেমিক ফুড বলা হয়ে থাকে। এর মধ্যে পড়ে লাল আটা, লাল চালের ভাত, গোটা শস্য, শস্যবীজ ইত্যাদি। রোজার মাসে এসব খাবারের পরিমিত গ্রহণ রক্তে সুগারের মাত্রা দীর্ঘক্ষণ ধরে সুষম রাখতে সাহায্য করবে। হাই ক্যালরি ও হাই গ্লাইসেমিক ফুড যত সুস্বাদু ও মুখরোচকই হোক না কেন, যেমন জিলাপি, লাড্ডু, শরবত, হালুয়া, কেক, আলুনি, সফট ড্রিংক ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন। বেশি পরিমাণে তেল আছে এমন খাবার, যেমন—কাবাব, বেগুনি, পেঁয়াজু বা ভাজাপোড়ায় কেবল ওজনই বাড়াবে না, রক্তে চর্বি বাড়িয়ে দেবে, পেটে বদহজম ও গ্যাস সৃষ্টি করবে। রোজা রাখলে সূর্যাস্তের পর অন্তত তিনবার খাদ্য গ্রহণ করুন। ইফতারির সময় সুষম ও পুষ্টিকর পরিমিত আহার, রাত ১০টার দিকে রুটি বা হালকা ডিনার এবং অবশ্যই শেষ রাতে ভাত বা রুটিসহযোগে যথেষ্ট পরিমাণে আমিষ ও তরল খাদ্য গ্রহণ করুন। সেহির না খেয়ে কোনো অবস্থাতেই রোজা রাখা উচিত নয়। রোজা রেখে দিনের বেলা অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ব্যায়াম না করাই ভালো। এতে রক্তে সুগার হঠাৎ কমে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। সন্ধ্যার পর হালকা ব্যায়াম বা আধা ঘণ্টা হাঁটা যেতে পারে। যাঁরা নিয়মিত দীর্ঘ ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটিই ব্যায়ামের বিকল্প, আলাদা করে ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই।
নিয়মিত সুগার মাপুন

বিশ্বের বড় বড় ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমগণ আগেই রায় দিয়েছেন যে রোজা রেখে রক্তে সুগার পরীক্ষা করালে তাতে রোজা ভেঙে যায় না। রমজান মাসে বাড়িতে গ্লুকোমিটারে মাঝেমধ্যে নিজের রক্তের সুগার নিজে মেপে দেখুন। অন্তত সপ্তাহে এক বা দুই দিন সেহিরর দুই ঘণ্টা পর এবং ইফতারির অন্তত আধা ঘণ্টা আগে সুগার মাপুন। সেহিরর পর সুগার আট মিলিমোল বা এর কম এবং ইফতারির আগে ছয় মিলিমোল বা এর কম থাকা বাঞ্ছনীয়। এর মধ্যে দিনের যেকোনো সময় খারাপ লাগলে বা শরীর কাঁঁপলে, ঘেমে উঠলে, মাথা ফাঁকা লাগলে অবশ্যই সুগার মাপুন। দিনের যেকোনো সময়ে সুগার ৩ দশমিক ৩ মিলিমোল বা তার কম এবং দিনের পূর্বাহ্নেই ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল বা তার কম হয়ে গেলে সেদিন রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। দিনের যেকোনো সময় রক্তে সুগার ১৬ মিলিমোলের বেশি হয়ে গেলেও রোজা ভাঙতে হবে।
ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা ও সময় জেনে নিন

রমজান মাসে ডায়াবেটিসের ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা ও সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়। সোজা নিয়মে সকালের ডোজটি দেওয়া হয় ইফতারির সময় এবং রাতের ডোজটি অর্ধেক করে শেষ রাতে দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের পরিবর্তন করা উচিত নয়। কোন ওষুধ এবং কোন ধরনের ইনসুলিনের জন্য কোন ধরনের পরিবর্তন ঠিক কোন রোগীর জন্য প্রযোজ্য হবে, তা চিকিৎসকই বলতে পারবেন। কাজেই রমজানে নিজের ওষুধের মাত্রা ও সময় জেনে নেওয়ার জন্য আগে থেকেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ইফতারি হওয়া চাই সুষম ও পুষ্টিকর। [সূত্র: তানজিনা হোসেন, দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৮, ২০১২]

উল্লেখ্য যে, অসুস্থতা জনিত কারণে রামাযানের রোযা ভাঙ্গার প্রয়োজন দেখা দিলে সে রোযাগুলো রামাযানের পর বাকি ১১ মাসের মধ্যে যে কোন সময় সাধারণ নিয়মে কাজা করে নিতে হবে। [সূরা বাকারা: ১৮৩ নং আয়াত]

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুস্থতা সহকারে সঠিক পদ্ধতিতে রামাযানের সম্পূর্ণ রোযা পালনের তাওফীক দান করুন।

আমীন!!

Source:https://quraneralo.net/ramadan-and-diabetes/

15
আলহামদু লিল্লাহ.
উসুলুল ফিকহ এর পরিভাষায় শর্ত হলো: “যার শূন্যতা শূন্যতাকে আবশ্যক করে; কিন্তু যার অস্তিত্ব অস্তিত্বকে আবশ্যক করে না।” তাই নামায শুদ্ধ হওয়ার শর্তগুলো হলো: যেগুলোর ওপর নামায শুদ্ধ হওয়া নির্ভর করে। অর্থাৎ যদি এই শর্তগুলোর কোন একটি বাদ পড়ে তাহলে নামায সহিহ নয়। সেগুলো হচ্ছে:

প্রথম শর্ত: নামাযের ওয়াক্ত বা সময় হওয়া। এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে ওয়াক্ত প্রবেশের পূর্বে নামায আদায় করা সহিহ নয়। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মুমিনদের উপর অবশ্য কর্তব্য।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১০৩]

কুরআনে কারীমে নামাযের সময়সূচী এজমালিভাবে আল্লাহ্‌ তাআলা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন এবং (কায়েম করুন) ফজরের কুরআন (সালাত)। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (সালাত) উপস্থিতির সময়।” [সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৭৮]

আয়াতে কারীমাতে لِدُلُوكِ الشَّمْسِ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- সূর্য মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়া। আর إِلَى غَسَقِ اللَّيْلِ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- মধ্যরাত হওয়া। মধ্যাহ্ণ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সময়টুকু যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা-এ চার ওয়াক্ত নামাযের সময়কে অন্তর্ভুক্ত করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সুন্নাহতে বিস্তারিতভাবে এ সময়সূচী বর্ণনা করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সূচী প্রশ্নোত্তরে সে ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় শর্ত: সতর ঢাকা। যে ব্যক্তি নামায পড়লেন; অথচ তার সতর উন্মুক্ত তার নামায সহিহ নয়। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক গ্রহণ কর।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৩১]

ইবনে আব্দুল বার্‌র (রহঃ) বলেন: যে ব্যক্তি নিজেকে আচ্ছাদিত করার মত পোশাক সংগ্রহের সাধ্য থাকা সত্ত্বেও পোশাক ত্যাগ করে উলঙ্গ হয়ে নামায পড়েছে; তার নামায বাতিল মর্মে আলেমদের ইজমা সংঘটিত হয়েছে।[সমাপ্ত]

নামাযীর সতরের স্তরভেদ রয়েছে:

১. লঘু সতর: এটি হচ্ছে সাত বছর থেকে দশ বছর বয়সী পুরুষের সতর। তার সতর হচ্ছে লজ্জাস্থানদ্বয়: সামনের লজ্ঞাস্থান ও পেছনের লজ্জাস্থান।

২. মধ্যম সতর: দশ বছর ও তদূর্ধ্ব বছর বয়সীর সতর: নাভী ও হাঁটুর মধ্যবর্তী স্থানটুকু।

৩. গুরু সতর: প্রাপ্ত বয়স্ক স্বাধীন নারীর নামাযের সতর: কেবল চেহারা ও হাতের কব্জিদ্বয় ছাড়া নারীর গোটা দেহ। আর পাদ্বয় প্রকাশ হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ রয়েছে।

তৃতীয় ও চতুর্থ শর্ত: পবিত্রতা। পবিত্রতা দুই প্রকার: হাদাছ (নাপাক অবস্থা) থেকে পবিত্রতা এবং নাজাস (নাপাক বস্তু) থেকে পবিত্রতা।

১. গুরু হাদাছ ও লঘু হাদাছ থেকে পবিত্রতা। যে ব্যক্তি হাদাছগ্রস্ত (যে ব্যক্তির ওযু নেই) অবস্থায় নামায পড়ে আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে তার নামায সঠিক নয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: ‘তোমাদের কারো ওযু ভঙ্গ হলে; ওযু না-করা অবধি আল্লাহ্‌ তার নামায কবুল করেন না।‘ [সহহি বুখারী (৬৯৫৪)]

২. নাজাস থেকে পবিত্রতা। যে ব্যক্তি জেনেশুনে, স্মরণ থাকা অবস্থায় কোন নাপাকি নিয়ে নামায পড়ে তার নামায সহিহ নয়। নামাযীর জন্য তিনটি স্থানের নাপাকি দূর করা আবশ্যক:

প্রথম স্থান: নিজ দেহ। তাই নামাযীর দেহে কোন নাপাকি থাকতে পারবে না। এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর হাদিসে তিনি বলেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন নিশ্চয় এ দু’জনকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে কোন কবিরা গুনাহর কারণে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন চোখলখুরী করে বেড়াত। অপরজন পেশাব থেকে নিজেকে পবিত্র রাখত না…।’ [সহিহ মুসলিম (২৯২)]

দ্বিতীয় স্থান: পোশাক। এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) এর হাদিসে তিনি বলেন: “একবার এক নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল: ‘আমাদের কেউ যখন তার পোশাকে হায়েযগ্রস্ত হয় তখন সে কি করবে; সে ব্যাপারে অবহিত করুন। তিনি বললেন: খসে ফেলে দিবে। এরপর পানি দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলবে এবং তাতে নামায পড়বে।’ [সহিহ বুখারী (২২৭)]

তৃতীয় স্থান: নামায পড়ার স্থান। এর সপক্ষে প্রমাণ রয়েছে আনাস বিন মালিক (রাঃ) এর হাদিসে তিনি বলেন: ‘একবার এক বেদুঈন এসে মসজিদের এক প্রান্তে পেশাব করে দিল। লোকেরা তাকে ধমকালো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে নিষেধ করলেন। যখন সে পেশাব শেষ করল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড় এক বালতি পানি আনার ও পেশাবের উপর ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।‘ [সহিহ বুখারী]

পঞ্চম শর্ত: ক্বিবলা অভিমুখী হওয়া। তাই যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোন ফরয নামায ক্বিবলার দিক ব্যতীত অন্যদিকে ফিরে পড়বে তার নামায আলেমদের ইজমার ভিত্তিতে বাতিল। যেহেতু আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “সুতরাং আপনি আপনার চেহারাকে মসজিদে হারামের দিকে ফেরান। তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের চেহারাগুলোকে মসজিদে হারামের দিকে ফেরাও।” [সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৪৪]

এবং নামায অসঠিকভাবে আদায়কারী ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘এরপর তুমি কিবলামুখী হবে এবং তাকবীর দিবে।‘ [সহিহ বুখারী (৬৬৬৭)]

আরও জানতে দেখুন: যে অবস্থাগুলোতে কিবলামুখী হওয়ার শর্ত মওকুফ হয় প্রশ্নোত্তর।

ষষ্ঠ শর্ত: নিয়ত করা। যে ব্যক্তি নিয়ত ছাড়া নামায পড়ল; তার নামায বাতিল। দলিল হচ্ছে উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিস: “সকল আমল নিয়ত দ্বারা মূল্যায়িত হয়। প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই তার পাপ্য।” আল্লাহ্‌ তাআলা নিয়তহীন কোন আমল কবুল করেন না।

উপরোল্লেখিত শর্তগুলো নামাযের সাথে খাস। এগুলোর সাথে প্রত্যেক ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য সাধারণ শর্তগুলোও যোগ করতে হবে। সেগুলো হল: ইসলাম, বুদ্ধিমত্তা ও বুঝবান হওয়া।

সুতরাং পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত নয়টি। এজমালিভাবে সেগুলো হচ্ছে: ইসলাম, আকল, বুঝবান হওয়া, অপবিত্রতা দূর করা, নাপাকি দূর করা, সতর ঢাকা, ওয়াক্ত প্রবেশ করা, কিবলামুখী হওয়া এবং নিয়ত করা।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।


Source:https://quraneralo.net/what-are-the-conditions-for-prayer-to-be-purified/

Pages: [1] 2 3 ... 33