Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - ashraful.diss

Pages: 1 ... 9 10 [11] 12 13
151
মুআবিয়া (রাঃ) এর তাহাজ্জুদ নামায ।

হযরত মুআবিয়া (রা.)-এর অভ্যাস ছিল, তিনি দৈনন্দিন নিয়মিত ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। এক রাতে গভীর ঘুমে চোখ খােলেনি এমন কি তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেল। ইতিপূর্বে কখনও তাহাজ্জুদ ছুটেনি। প্রথমবারের মত তাহাজ্জুদ নামায ছুটে যাওয়ায় সাংঘাতিক ব্যথিত ও লজ্জিত হলেন। দুশ্চিন্তা ও পেরেশানীতে সারাদিন কাঁদলেন। শুধু আফসােস করে বলতে লাগলেন হে আল্লাহ! আজ আমার তাহাজ্জুদ ছুটে গেছে।

পরের রাত তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে এক ব্যক্তি এসে তাঁকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগাতে আরম্ভ করল। হযরত মুআবিয়া (রা.) ঝটপট উঠে আগন্তুক ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে? এখানে কিভাবে এসেছেন? উত্তরে সে বলল আমি ইবলিস শয়তান। হযরত মুআবিয়া বলেন, তােমার কাজ মানুষকে গাফেল রাখা, নামাযের জন্য উঠিয়ে তােমার লাভ কি? শয়তান বলল প্রসঙ্গ বাদ দিন জলদি গিয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করে আপনার কাজে লেগে যান।

মুআবিয়া (রা.) বললেন, আগে তােমাকে বলতে হবে কারণটা কি? কেন আমাকে জাগিয়ে তুললে? যতক্ষণ পর্যন্ত বলবে না ততক্ষণ আমি তােমাকে ছাড়বাে না। বারবার পীড়াপীড়ি করার পর শয়তান বললাে, আমার কাজ তাে মূলত আপনি যা বলেছন তাই। গত রাতে আমি আপনাকে এমন অলসতা দিয়েছি যে আপনার তাহাজ্জুদ ছুটে গেছে। আপনি তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন নি। কিন্তু তাহাজ্জুদ ছুটে যাওয়ার পরিণতিতে আপনি সারাদিন আফসােস আর কান্নাকাটি করছেন।

এই রােনাজারিতে আপনার মর্তবা এমন বৃদ্ধি পেয়েছে যদি আপনি তাহাজ্জুদ পড়তেন তবে সে স্তরে উন্নীত হতে পারতেন না। এটা তাে আমার জন্য বড়ই লােকসানের কাজ। এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগিয়ে দেব যাতে মর্তবা বুলন্দির রাস্তা পয়দা না হয়।

152
কবর ভয়াবহ এক ঘাঁটি

কবরকে আমরা ওয়েটিং রুম হিসেবে বুঝে নিতে পারি। ওয়েটিং রুমে যেমন মানুষ তার পরবর্তী অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে, আরামের হবে কিংবা কষ্টের হবে। আরামের হলে হেসে খেলে সময় পার করে। কষ্টের হলে এক ঘণ্টা এক বছরের মতো মনে হয় তারপরও সময় যেতে চায় না। অনুরূপ প্রত্যেকের কবরে কবরবাসীকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে সে জান্নাতি না জাহান্নামি। জান্নাতি হলে সে বড় আরামে সময় পার করবে। আর জাহান্নামি হলে বড় কষ্টে সময় অতিবাহিত করবে। এ কবর এমন এক ঘাঁটি যেখানে সাহায্যের বা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন বলতে কেউই থাকবে না। শুধুই নেক আমল হবে তার সাথী। দুনিয়ার হায়াতে নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত, কোরআন তেলাওয়াতসহ ইত্যাদি নেক আমল তাকে আজাব থেকে রক্ষা করবে। মুনকির-নকির ফেরেস্তাদ্বয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে কবর উত্তম ঘাঁটি।

আর উত্তর দিতে না পারলে ভয়াবহ ঘাঁটি। হজরত উসমান (রা.) যখন কোনো কবরের পাশে দাঁড়াতেন তখন এমনভাবে কাঁদতেন যে, নিজের দাড়ি মোবারক ভিজে যেত একবার হজরতকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি জান্নাত ও জাহান্নাম স্মরণ করে এত কাঁদেন না, যতটুকু কাঁদেন কবর দেখে, এর কারণ কী? তিনি বললেন, রসুল (সা.) বলেছেন, কবর হচ্ছে আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। এখানে যদি কেউ রক্ষা পেয়ে যায় তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর এখানে কেউ যদি রক্ষা না পায় তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়। তিনি আরও বললেন, রসুল (সা.) বলেছেন, মেরাজের রজনীতে আমি যত ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি তার মধ্যে কবরের আজাবই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং-২৩০৮)।

প্রিয় পাঠক! বেনামাজির কবরে কী ধরনের আজাব হবে এ সম্পর্কে হাদিসে আছে, বেনামাজির কবরে তিন ধরনের শাস্তি হবে : ১. কবর তার জন্য এমন সংকীর্ণ হবে যে, এক পাশের বুকের হাড় আরেক পাশে ঢুকে যাবে। ২. তার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। ৩. তার কবরে এমন একটি সাপ নিযুক্ত করা হবে যার চক্ষু হবে আগুনের। আর নখগুলো হবে লোহার। তার প্রত্যেকটি নখ লম্বা হবে একদিনের দূরত্বের পথ। সাপের আওয়াজ হবে বজ্রের ন্যায় বিকট। সাপ ওই বেনামাজিকে বলতে থাকবে ‘আমাকে আমার রব তোর ওপর নিযুক্ত করেছেন যাতে ফজরের নামাজ নষ্ট করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত তোকে দংশন করতে থাকি। জোহরের নামাজ নষ্ট করার কারণে আসর পর্যন্ত দংশন করতে থাকি। আসর নামাজ নষ্ট করার কারণে মাগরিব পর্যন্ত। আর মাগরিব নামাজ নষ্ট করার কারণে এশা পর্যন্ত।

আর এশার নামাজ নষ্ট করার কারণে ফজর পর্যন্ত তোকে দংশন করতে থাকি। এ সাপ যখনই তাকে একবার দংশন করবে তখনই সে ৭০ হাত মাটির নিচে ঢুকে যাবে (উঠিয়ে আবার দংশন করবে) এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত আজাব হতে থাকবে। নেক্কার ও বদকারের কবরের অবস্থা একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন ব্যক্তির কবরে দুজন ফেরেশতা আসে ও তাঁকে বসায়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার রব কে? সে উত্তর দেবে, আমার রব আল্লাহ। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার দীন কী? সে উত্তরে বলবে, আমার দীন হচ্ছে ইসলাম। তারা এবার তাকে জিজ্ঞাসা করে, ওই ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? সে উত্তর দেবে ইনি হচ্ছেন আমাদের রসুল (সা.)। তারা এবার তাকে জিজ্ঞাসা করবে (এ উত্তরগুলো) তুমি কীভাবে জানলে? সে বলবে আমি আল্লাহর কিতাব থেকে জেনেছি এবং তাঁর ওপর ইমান এনেছি।

তখন রসুল (সা.) বলেন, এটাই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার ওই বাণীর মর্ম, যেখানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্যের ওপর দৃঢ় রাখেন পার্থিব জীবনে ও আখেরাতে’ রসুল (সা.) বলেন, তখনই আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ডাক দিয়ে বলবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তাকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার দিকে জান্নাতের দরজা খুলে দাও। তখন তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তার কাছে জান্নাতের শান্তি ও সুঘ্রাণ আসতে থাকে। কবরকে তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হয়।

প্রিয় পাঠক! চলুন, আমরা সবাই কবরের আজাব থেকে বাঁচার উপায় কী? তা জেনে আমলে বাস্তবায়িত করি। হাদিসে কবরের আজাব থেকে বাঁচার কয়েকটা আমলের কথা উল্লেখ আছে, সেখান থেকে এখানে আমি মাত্র দুটি উল্লেখ করছি। (১) রসুল (সা.) বলেছেন, সূরা মূলক কবরের আজাব থেকে রক্ষাকারী। যে ব্যক্তি এ সূরা পাঠ করবে, এ সূরা তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে। (কুরতুবি) রসুল (সা.) নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে সূরা মূলক তেলাওয়াত করতেন। (২) কবরে আলো পাওয়ার আমল হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। হাদিসে আছে ‘নামাজ নূর বা আলো’ কবরে ও হাশরের ময়দানের আলো হবে নামাজ। আল্লাহতায়ালা আমাদের কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন!


153
হৃদয়ের ব্যাকুলতার মহা পুরস্কার

বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের (রহ.) ইন্তেকালের পর জনৈক ব্যক্তি স্বপ্নে জিজ্ঞেস করলেন হযরত কেমন আছেন? উত্তরে বললেন, আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ পূর্বক মাগফিরাত দান করেছেন। অনুপযােগী এ বান্দাকে মর্যাদার আসনে স্থান দিয়েছেন; কিন্তু আমার প্রতিবেশী সাধারণ কামারের মর্তবা অনেক উন্নত।

স্বপ্নদ্রষ্টা লােকটি অবাক ভাবনায় হাবুডুবু খেতে লাগল। কামার লােকটি কেমন ছিলেন? বিশেষ কী আমল তিনি করতেন? যার ওছিলায় মহান প্রভু তাকে এত উঁচু মাকাম দান করলেন, যা খ্যাতিমানবুযুর্গ মুহাদ্দিস যামানার সেরা ওয়ারিসুন্নবী আবদুল্লাহ বিন মুবারক ঈর্ষান্বিত হয়ে ব্যক্ত করলেন।

সুতরাং অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। জানা দরকার কোন আমলে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন শ্রেষ্ঠ বুযুর্গ আবদুল্লাহ ইবনে মুবারককে এবং কেমন ছিলেন ভাগ্যবান সেই কামার? হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের মহল্লায় পৌঁছে জিজ্ঞেস করলেন স্বাপ্নিক, এখানে কোন কামার ছিলেন যার ইন্তেকাল হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সামনের বাড়িটি দেখিয়ে বললেন এই বাড়িটি তাঁর। কিছুদিন পূর্বে তিনি ইন্তেকাল করেছেন।

অতঃপর সেখানে গিয়ে জীবিত স্ত্রীর কাছে লোকটি তার স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করে জানতে চাইলেন আপনার স্বামী কী আমল করতেন! যদ্দরুন তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের মর্তবাকে অতিক্রম করলেন? কামারের স্ত্রী উত্তর দিলেন, আমার স্বামী বিশেষ কোন আমল করেন নি, সারাদিন লোহা-লক্কর কাটা ও নির্মাণে হাড়ভাঙ্গা মেহনত করতেন। তবে তার মধ্যে দুটি জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি,

এক. কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আযানের আল্লাহু আকবার ধ্বনি শুনতেই কাজ বন্ধ করে দিতেন।এমনকি হাতুড়ী উঁচু করে লোহায় আঘাত হানবেন এমতাবস্থায় আযানের আওয়ায কানে আসতেই উদ্দত হাতুড়ী পিছনে ছুড়ে নামাযের প্রস্তুতি নিতেন।
এটা তার পছন্দ ছিল না যে আযান শুনে একটি আঘাত লোহায় করবেন।

দুই. আর একটি জিনিস দেখেছি যখন বাড়ীর ছাদে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুবারক কে সারারাত নামাযে মশগুল দেখতেন তখন আফসোসের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফরিয়াদ করতেন আমার স্বামী। হায়! যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে সুযোগ দান করতেন তবে আমিও ইবাদতে মগ্ন হতাম। নেক বখত কামারের বিবির বিবরণ শুনে লোকটির বুঝতে বাকি রইলো না যে, এই আফসোস আল্লাহ পাক এমনভাবে কবুল করেছেন যে, তাতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের চেয়ে উচু মাকাম দান করেছেন।

মুফতি তাকী উসমানীর আব্বা মুফতী মুহাম্মাদ শফী সাহেব (রহ.) প্রায়ই বলতেন বিরল আফসোস’ যা কখনও মানুষকে পৌছে দেয় বহুদূর। এ জন্য যখন কারও সম্পর্কে শোন যে, অমুক ব্যক্তি নেক আমল করে তবে ঐ নেক আমলের ব্যাপারে মনের মধ্যে লোভ ও ব্যাকুলতা সৃষ্টি হওয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমলের জিন্দেগী দান করুন। আমীন!

154
খুব সুন্দর একটি ইসলামিক শিক্ষণীয় গল্প

ফোরাত নদীর তীরে একদা এক বৃদ্ধ লোক খুব দ্রুত অযু করলেন। এত দ্রুত অযু করলেন যে, তার অযুই হল না। অতঃপর পূর্বের মত তাড়াহুড়া করেই নামায আদায় করলেন। যার দরুণ তার নামাযে ‘খুসু’, ‘খুযু’ কিছুই উপস্থিত ছিলনা। বৃদ্ধের এ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন নবী দুলাল হযরত হাসান ও হোসাইন রা. কিন্তু তারা উভয়েই অস্থির হয়ে ভাবছিলেন যে, এ বৃদ্ধ লোকের ভুলগুলো কিভাবে শুধরে দেয়া যায়! কোন বেয়াদবি হয়ে যায় কিনা! তখন তারা খুব চমৎকার বিনয়ীর পন্থা অবলম্বন করলেন। যখন বৃদ্ধ লোকটির নামাজ শেষ হল তখন তারা বিনয়ের শুরে তাকে বললেন জনাব! আপনি আমাদেরকে একটু সময় দিবেন। বৃদ্ধ সম্মতি প্রকাশ করলে তারা বলল যে- আমরা ওযু করব এবং নামায আদায় করব। আপনি দয়া করে আমাদের ভুলগুলো শুধরিয়ে দেবেন।

অতপর ইমাম হাসান ও  হোসাইন রা. উভয়েই সুন্নত তরিকায় এতমিনানের সাথে অজু করলেন এবং দু’রাকাত নামায আদায় করলেন। তাদের নামাযটি ছিল স্বয়ং রাসুলুল্লাহর নামাযের মত ‘খুসু’, ‘খুযুু’ সম্পন্ন। বৃদ্ধ লোকটি তখন নিজের ভুল গুলো বুঝতে পারলেন এবং তাদেরকে ধন্যবাদ জানালেন। বড়দের ভুল ধরার কত সুন্দর, চমৎকার বিনয়ি পদ্ধতি। সুবহান আল্লাহ, এ জন্যই তাদের এত মর্যাদা।

কারণ রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহর রাযি খুশির উদ্দেশ্যে যে বিনয়ী হয়, আল্লহ তায়ালা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। দেওবন্দের অদূরে এক তফসিলদার বসবাস করত। তিনি শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান রহ. এর সুনাম অনেক দিন যাবৎ শুনছিলেন এবং মনে তীব্র ইচ্ছা পোষন করছিলেন যে তার সাথে দেখা করবেন এবং উপদেশ নছীহত গ্রহন করবেন। সে উদ্দেশ্যে তিনি দেওবন্দে আসলেন। দুপুরে দেওবন্দ মাদ্রাসার নিকটবর্তী একটি মসজিদে অবস্থান করলেন। সারা দিন সফরের কারণে শরীর খুব ক্লান্ত ছিল। তাই তিনি মসজিদের গোসলখানায় গোসল করার ইচ্ছা করলেন।

কিন্তু সমস্যা হল সে গোসলখানায় পানি ছিল না, তাই তিনি পানি আনার জন্য লোক খোজছিলেন। এমন সময় তিনি মসজিদের ভিতরে অবস্থানরত এক বৃদ্ধ (শাইখুল হিন্দ) খুব কষ্টে তাকে ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করে দিলেন। গোসল শেষে তফসিলদার তাকে বললেন আমাকে মাহমুদুল হাসান সাহেবের কছে নিয়ে চল যিনি শাইখুল হিন্দ নামে পরিচিত। তখন বৃদ্ধ তাকে নিয়ে চলা শুরু করলেন। কিছু দূর গিয়ে বৃদ্ধ বললেন আপনি যেন কার নিকট যাবেন? প্রশ্ন শুনে তফসিলদার রেগে গেলেন যে আমি শাইখুল হিন্দ মুচকি হেসে বললেন ভাই শান্ত হোন।

আমাকে অনেকে“শাইখুল হিন্দ” বলে ডাকে! তখন তো তফসিলদার অবাক বনে গেলেন! এবং সাথে সাথে তার পায়ে পড়ে ক্ষমা চাওয়া শুরু করলেন। তখন তিনি বললেন কোনো সমস্যা নেই, আমিতো আপনার সেবা করেছি মাত্র। আপনি মেহমান, আর আমি মেজবান হিসেবে আপনার সেবা করেছি মাত্র।

এছাড়াও আপনি যদি মনে করেন যে, আমি জাতীর নেতা তাহলে আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। কারন “সাইয়্যেদুল কওমি খদিমুহা”। এ সব বলার পরে তফসিলদার শান্ত হলেন। এত বড় আলেম, বুযুর্গ হয়েও এরুপ বিনয়ী ছিলেন তিনি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাদের মত বিনয়ী হওয়ার তকওফীক দান করুণ। আমীন……!


155
সত্যিই কি মৃত্যুর ৪০দিন আগে মানুষ বুঝতে পারে যে তার মৃত্যু হবে?

সত্যিই কি মৃত্যুর ৪০দিন আগে মানুষ বুঝতে পারে যে তার মৃত্যু হবে? পবিত্র কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে, প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। {সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫,}
 
আমরা আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জিব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আমরাও একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। কেউ আগে যাবো কেউ পরে যাবো। কিন্তু সত্যিই কি মৃত্যুর ৪০ দিন আগে মানুষ বুঝতে পারে যে তার মৃত্যু হবে? এক ব্যক্তি হযরত আলী রাঃ এর নিকট উপস্থিত হয়ে আদবের সহিত বললেন, হে হযরত আলী (রাঃ) আমার এক বন্ধু ছিল যে গতকাল ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু কিছুদিন যাবত আমার সে বন্ধু আমাদের কাছে এসে এমন সব কথা বার্তা বলতেছিল যাতে করে তার কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল সে মারা যাবে। তাহলে কি মৃত্যুর আগে মানুষ কি বুঝতে পারে তার মৃত্যু সন্নিকটে। ব্যাস একথা বলার পর, হযরত আলী (রাঃ) লোকটিকে বললেন, হে আল্লাহর বান্দা, মনে রেখ আল্লাহ তায়ালা আলেমে মালাকুত, আলমে বেয়া, আলমে আরোয়াহ এর মাঝামাঝি স্থানে সমস্ত সৃষ্টি মানব জাতির জন্য মালাকুল রয়া রেখেছেন। যেটা মানুষের জন্য আগত সমস্ত বিপদ আপদ, বালা মসিবত ইত্যাদি সম্পর্কে আগে থেকেই মানুষকে সতর্ক করে জানিয়ে দেয়।

এই ইহকালিন জীবন শেষ হয়ে যাওয়াটা মানুষ মৃত্যু মনে করে। আসলে মৃত্যু এমন একটা জিনিস যেটা মানুষকে এক জীবন থেকে অন্য জীবনের দিকে নিয়ে যায়। আর একেই বলে মৃত্যু। জীবন শেষ হয়ে যাওয়াটাকে মৃত্যু বলে না। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে অনেক অনেক ভালোবাসেন। তাই আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে মৃত্যুর ভয়কে দূর করার জন্য, এলহামি স্বপ্ন দেখায়। যাতে করে মানুষ বুঝতে পারে যে মৃত্যু অন্য একটি নতুন জীবন, এবং মৃত্যুর ভয় যেন তার মন থেকে কমে যায়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এই সুযোগ দেন, যাতে করে মানুষ নিজেদেরকে শুধরাতে পারে। নিজের কৃত পাপ কর্মের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করতে পারে এবং মৃত্যুর আগে নিজের আত্নার মুক্তির জন্য ব্যবস্থা করতে পারে। যেমনি ভাবে কোন মানুষ যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে সফরে যায় এবং সফরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এবং মাল-সামান,সাজসরাঞ্জাম সব কিছুর ব্যাবস্থা করে রাখে, ঠিক তেমনি আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সুযোগ করে দেয় যাতে করে মানুষ বারজাখের জীবনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে।

এই কথা বলার পর লোকটি হযরত আলী রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন, হে হযরত আলী (রাঃ) সেই স্বপ্নে কি কি দেখা যায়? তখন হযরত আলী রাঃ বললেন, মানুষ ইন্তেকালের আগে স্বপ্ন দেখে সে সফর করতেছে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাচ্ছে। তার পোশাক পরিচ্ছদ সাদা হয়ে থাকে। আর দুনিয়ার জিন্দেগীতে যারা তার সঙ্গী ছিল, সেটা হতে পারে আত্নীয় স্বজন, পিতা মাতা যারা ইন্তেকাল করেছেন সেই স্বপ্ন দেখেন যে তারা তাকে নিতে এসেছেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে। তখন  স্বপ্নে মৃত সেই আত্নীয় স্বজনরা বলে থাকে তোমাদের এই দেশের সফর শেষ হয়ে গিয়েছে, তোমাকে অন্য দেশে নিয়ে যাচ্ছি। মানুষ যখন স্বপ্ন দেখে তার মৃত আত্নীয় স্বজনের মধ্যে কেউ তাকে নিতে এসেছে এবং তারা তার সাথেই আছে। তখন মানুষের মনের দিক থেকে সাহস বেড়ে যায় এবং মানুষের মৃত্যুর ভয় কমে যায়। একথা শুনার পর হযরত আলী (রাঃ) কে বললেন, হে হযরত আলী (রাঃ) যদি কোন ব্যক্তি এধরনের স্বপ্ন দেখে থাকে, তাহলে সে কিভাবে বুঝতে পারবে যে, এই স্বপ্ন এলহামি স্বপ্ন নাকি শয়তানের পক্ষ থেকে ছিল।

তখন হযরত আলী রাঃ জবাবে বললেন, যখন এই ধরনের স্বপ্ন দেখবে,যদি স্বপ্ন দেখার পরে মনের মধ্যে ভয়-ভীতি কাজ করে দুশ্চিন্তা কাজ করে,তাহলে মনে করতে হবে সেই স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে ছিল। আর যদি স্বপ্ন দ্রষ্টা স্বপ্ন দেখার পর মনের মধ্যে শান্তি অনুভব করে এবং শান্তি আসে এবং মৃত্যুর জন্য তার ভয় নয়, মহব্বত পয়দা হয়,তাহলে মনে করবে সেই স্বপ্ন রহমানি স্বপ্ন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার হাবিবের উছিলায় অর্থাৎ নবী করিম (সাঃ) এর উছিলায় আমাদের সকলের মৃত্যুকে সহজ করে দিন।আর মৃত্যুর পরের জীবনকে আল্লাহর রহমতে যেন ভরপুর করে দেন। সম্মানিত ভাই ও বোনেরা আমাদের সকলের পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজন কেউ না কেউ এই দুনিয়া থেকে ইন্তেকাল করেছেন| আসুন আমরা তাদের জন্য প্রতিদিন নেক আমল করি এবং তাদের রুহের উপর বেশি বেশি দোয়া আমল করি। আর তাদের জন্য মাগফেরাত এবং নাজাতের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখেন, ভাল রাখেন, আর সব সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায়  করবেন।

সম্ভব হলে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর আল্লাহ তায়ালার নিকট শুকরানা হিসেবে একটি লম্বা সেজদা অবশ্যই দেবেন। সমস্ত শয়তানের ধোঁকা থেকে নিজেকে হেফাজত করতে হবে। এবং জীবনকে শুধরে নিতে হবে, সমস্ত পাপ কাজ থেকে নিজেকে শুধরে নিতে হবে। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ মানুষ তাই পায় যা সে করে। তাই আল্লাহর ছায়া তলে থাকতে হলে মানুষকে অবশ্যই সৎকর্ম করে যেতে হবে। আমীন!


156
বন্ধু কখনও আক্ষরিক অর্থে দুঃখের ভাগিদার হতে পারে না

বন্ধু কখনও আক্ষরিক অর্থে দুঃখের ভাগিদার হতে পারে না। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ থামিয়ে দেবার ক্ষমতা ভালোবাসার মানুষগুলোরোও নেই। নির্ঘুম রাতগুলো কেউ কারো হয়ে জেগে থাকে না। নিজেকে নিজেরই দেখে রাখতে হয়। সামলে রাখতে হয়। জীবনের ঘটনাগুলো যতখানি গুরুত্ব পাবার দাবি রাখে, ততটাই দেওয়া চাই, না বেশি, না কম। এটুকু জেনে রেখো, যদি তুমি ভেঙে পড়ো উঠে দাঁড়াতে হবে তোমাকেই--তোমাকে টেনে তোলার কেউ নেই। যদি তুমি হেরে যাও, তোমাকে জেতাতে পারে শুধুই তোমার জিদ। হোঁচট খেয়ে উঠে দাঁড়ানো, আবার চলতে শেখা--তোমারই কাজ। নিজের কদর লোকের চোখে খুঁজতে যেও না; তুমি নিজেই জানবে তোমার মর্যাদা আসলে কতখানি।

তুমি ওপরে উঠবে তখনই, যখন তুমি বিবেকের সাথে সৎ হতে পারবে। আর নিজেকে যদি সত্যিই চিনে থাকো, তবে কে কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না । জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তার বোঝা বয়ে বেড়িয়ো না, সে বোঝা আল্লাহই নিয়ে নিয়েছেন। আয়-রোজগার নিয়ে ভেবো না, সেটাও আল্লাহ আগে থেকেই লিখে রেখেছেন। ভবিষ্যতের জন্যেও উদ্বিগ্ন হোয়ো না, ওটাও আল্লাহ তা'আলা নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তোমার চিন্তা-করা বা না-করাতে কিছুই বদলাবে না।

একটা চিন্তাই মাথায় গেঁথে নাও:

কীভাবে আল্লাহকে খুশি করা যায়। যদি তুমি তাকে খুশি করতে পারো, তিনি তোমাকে খুশি রাখবেন, তোমার ইচ্ছাপূরণ করবেন,তোমাকে দেবেন প্রয়োজনের চাইতেও অধিক যে জীবন তোমায় কাঁদিয়েছে, তার জন্য কেঁদো না, শুধু বলো, ''হে আমার রব, আমাকে এই জীবন ও আখিরাতের জীবনে উত্তম বিনিময় দান করো। বান্দা যখন রবের কাছে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে, সেই একটি সিজদাহ এক পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ বেদনাকে বিদায় জানায়। আনন্দ ফিরে আসে অন্তর-চিঁড়ে-বেরোনো একটি দু'আয়। আল্লাহ তোমার কাজের কথা ভোলেন না। তিনি সে অন্তরের কথা জানেন, যার ব্যথা তুমি দূর করেছো; সে চোখের কথাও জানেন, যে চোখ কাঁদতে গিয়ে তোমার কথায় হেসে উঠেছে।

জীবনে চলার পথে একটি কথাই মাথায় রেখো:

ভালো কাজ করে যাও, কারও কাছে বিনিময়ের আশা রেখো না। কারণ তুমি কোনো মানুষের জন্য ভালো কাজ করছো না, তুমি ভালো কাজ করছো আল্লাহর জন্য। কেননা আল্লাহ ভালো কাজকারীদের ভালোবাসেন।


157
সালাতুল হাজতের নিয়ম ও ফজিলত

সামাজিক জীবনে কোনো না কোনো প্রয়োজনে একে অপরের পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। অনেক সময় কঠিন বিপদাপদে অসহায় হয়ে পড়ে মানুষ। যখন কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারে না। সেই কঠিন বিপদের সময় মানুষের করণীয় কী? তখন কীভাবে সাহায্য চাইবে মানুষ? সালাতুল হাজত কী?সালাতুল হাজত বলতেই প্রয়োজনে নামাজ পড়া বুঝায়। তাই বৈধ যে কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে। (ইবনে মাজাহ)

হ্যাঁ, যখন কেউ সাহায্য করতে পারে না, তখন মানুষের একমাত্র সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ। তিনিই পারেন মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। মানুষের বিপদ যত সহজ আর কঠিনই হোক না কেন, তিনি পারে মানুষকে তা থেকে রক্ষা করতে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হলো বিপদ থেকে মুক্তি পেতে নামাজ পড়া। এ নামাজ ‘সালাতুল হাজত’ হিসেবে পরিচিত। এ নামাজের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন-‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৩)
 
এ আয়াতে বিপদে ধৈর্যধারণ করে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা বলেছেন আল্লাহ তাআলা। সালাতুল হাজতের ফজিলত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো প্রয়োজন পূরণে নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব ওঠে এসেছে। হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো; তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। (আবু দাউদ)

বিশ্বনবি যেভাবে সালাতুল হাজত পড়তেন সালাতুল হাজত পড়ার জন্য নির্ধারিত কোনো নিয়ম, দিনক্ষণ বা সময় নেই। অন্যান্য নামাজের মতোই এটি পড়তে হয়। তবে নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত, দ্বিপ্রহর) ও মাকরুহ সময় ব্যতিত অন্য যেকোনো সময় তা পড়া যাবে। হাদিসে এসেছে-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে বা মানুষের কাছে কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে।’ (তিরমিজি)

মনে রাখতে হবে,কারণ নামাজ ও দরূদ পাঠের বরকত ও ফজিলতে মহান আল্লাহ মানুষের যে কোনো বিপদ দূর করে দেবেন। সে কারণেই বিপদের সময় উত্তমভাবে অজু করে হাজত পূরণের নিয়তে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা। আর নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে আল্লাহর কাছে নিজ ভাষায় বৈধ প্রয়োজনের জন্য এ দোয়া করা-

 ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম। সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আসআলুকা মুঝিবাতি রাহমাতিকা ও আযায়িমা মাগফিরাতিকা ওল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররি ওয়াস-সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদা’ লি জাম্বান ইল্লা গাফারাতহু ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাঝতাহু ওয়া লা হাঝাতান হিয়া লাকা রিদান ইল্লা ক্বাদাইতাহা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শারীরিক-মানসিক, পারিবারিক-সামাজিকসহ যে কোনো বিপদ-আপদ ও দুঃশ্চিন্তায় মহান আল্লাহর কাছে নামাজ ও দরূদ পড়ে এ দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া। সালাতুল হাজত কিংবা বিপদে নামাজ ও দরূদ পড়ার বিকল্প নেই। বৈধ পন্থায় বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সালাতুল হাজতের ভূমিকাই অনন্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কঠিন বিপদে সালাতুল হাজাত ও দরূদ পড়ে এ দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন !


158
ফজরের পর ঘুম আর নয়!

যান্ত্রিকতা, কথিত সভ্যতা আমাদের একে একে সুন্নাহ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জাহেল শ্রেণির কথা তো বাদই, যারা এই দ্বীনকে আকড়ে ধরে চলতে চান । যারা ফজরের সালাত আদায় করেন, তাদেরও ফজরের পর একটু চোখ না বুজলেই নয়। অথচ সুন্নাহ হচ্ছে ফজরের পর না ঘুমানো। রাসুল (সা.) দুয়া করেছেন, اللَّهُمَّ بَارِكْ لأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا  ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’

বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। আর সাখর (রা.) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন।’ [আবু দাউদ : ২৬০৬]

সালফরা ফজরের পর ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করতেন। উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহ.) বলেন, যুবাইর (রা.) তাঁর সন্তানদেরকে ভোরবেলা ঘুমানোর ব্যাপারে নিষেধ করতেন। উরওয়া (রহ.) বলেন, إِنِّي لَأَسْمَعُ بِالرَّجُلِ يَتَصَبَّحُ فَأَزْهَدُ فِيهِ ‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ [মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, ৫/২২২]

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, تنام في الساعة التي تُقسَّم فيها الأرزاق؟ ‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ [যাদুল মাআ’দ : ৪/২৪১]

আমরা প্রায়ই বলে থাকি, আমাদের সময়ে বরকত নেই, এর অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যখন বরকত দেন, সেই সময়টা আমরা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেই। সুতরাং জীবনে প্রাচুর্য আনতে ফজরের পর ঘুম আর নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের এই বরকতময় সময়কে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন !

159
বেতন (টাকা) মাসের শেষ পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখার পরামর্শপত্র

এক আরাবি-যুবক ছিল। সে তার জীবনের প্রতি মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না। তার বেতন ছিল মাত্র চার হাজার রিয়াল। বিবাহিত হওয়ায় তার সাংসারিক খরচ বেতনের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মাস শেষ হওয়ার আগেই তার বেতনের টাকা শেষ হয়ে যেত, তাই প্রয়োজনের তাগিদে তাকে ঋণ নিতে হত। এভাবে সে আস্তে আস্তে ঋণের কাদায় ডুবে যাচ্ছিল। আর তার বেতনে এমন বিশ্বাস জন্ম নিচ্ছিল যে, তার জীবন এই অভাবেই কাটবে। অবশ্য তার স্ত্রী তার এ-অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখত। কিন্তু ঋণের বোঝা এত ভারী হয়েছিল, যেন নিশ্বাস নেওয়াও দুষ্কর।একদিন সে তার বন্ধুদের এক মজলিসে গেল। সেদিন এমন একজন বন্ধু সেখানে উপস্থিত ছিল, যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি। যুবকের বক্তব্য এমন ছিল যে, আমার ওই বন্ধুর সকল পরামর্শকে আমি খুব গুরুত্ব দিতাম।

কথায় কথায় যুবক তার সকল অবস্থা বন্ধুকে বলল। বিশেষত আর্থিক সমস্যাটা তার সামনে তুলে ধরল। তার বন্ধু মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনল এবং বলল, আমার পরামর্শ হল- তুমি তোমার বেতন থেকে কিছু টাকা ছদকার জন্য নির্ধারণ কর। যুবক আশ্চর্য হয়ে বলল, জনাব! সাংসারিক প্রয়োজন পুরনেই ঋণ নিতে হয়; আর আপনি আমাকে ছদকার জন্য টাকা নির্ধারণ করতে বলেছেন? যাইহোক, যুবক বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি স্ত্রীকে জানাল। তার স্ত্রী বলল, পরিক্ষা করতে সমস্যা কী? হতে পারে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার জন্য রিযিকের দরজা খুলে দিবেন। যুবক বেতনের চার হাজার রিয়াল থেকে ত্রিশ রিয়াল ছদকার জন্য নির্ধারণের ইচ্ছা করল এবং মাসশেষে তা আদায় করতে শুরু করল। সুবহানাল্লাহ! কসম করে বললে মোটেও ভুল হবে না, তার (আর্থিক) অবস্থা সম্পূর্ণ বদলে গেল। সে তো সবসময় টাকা-পয়সার চিন্তা টেনশনেই পড়ে থাকত; আর এখন তার জীবন যেন ফুলের মতো হয়ে গেছে। এত ঋণ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে স্বাধীন মনে হত। মনের মধ্যে এমন এক অনাবিল শান্তি হচ্ছিল, যা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।

কয়েক মাস পর থেকে সে নিজের জীবনকে সাজাতে শুরু করল। নিজের আয়কৃত টাকা কয়েক ভাগে ভাগ করল, আর তাতে এমন বরকত হল, যা পূর্বে কখনও হয়নি। সে হিসাব করে একটা আন্দাজ করল, কত দিনে ঋণের বোঝাটা মাথা থেকে নামাতে পারবে ইনশাআল্লাহ। কিছুদিন পর আল্লাহ তা’লা তার সামনে আরও একটি পথ খুলে দিলেন। সে তার এক বন্ধুর সাথে প্রপাটি-ডিলিং এর কাজে অংশ নিতে শুরু করে। সে বন্ধুকে গ্রাহক/ক্রেতা এনে দিত, তাতে ন্যায্য প্রফিট পেত। আলহামদুলিল্লাহ! সে যখনই কোনো গ্রাহকের কাছে যেত, গ্রাহক অবশ্যই তাকে অন্য গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তা দেখিয়ে দিত। এখানেও সে ঐ আমলের পুনরাবৃত্তি করত। অর্থাৎ প্রফিটের টাকা হাতে আসলে (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) অবশ্যই তা থেকে ছদকা নির্ধারণ করত। আল্লাহর কসম! ‘ছদকা কী’ তা কেউ জানে না; ঐ ব্যক্তি ব্যতিত যে তা পরিক্ষা করেছে। ছদকা কর এবং ছবরের সাথে চল- আল্লাহর ফযলে খায়ের বরকত নাযিল হবে, যা নিজ চোখে দেখতে পাবে।

নোট:- যদি আপনি কোনো মুসলমানকে তার উপার্জনের একটি অংশ ছদকার জন্য নির্ধারণ করতে বলেন এবং এর উপর আমল করে, আপনিও ঐ পরিমাণ ছওয়াব পাবেন যে পরিমাণ ছদকাকারী পেয়েছে। আর ছদকাকারীর ছওয়াবে কোনো কমতি আসবে না। আপনি দুনিয়া থেকে চলে যাবেন আর আপনার অবর্তমানে কেউ আপনার কারণে ছদকা করতে থাকবে। আপনি ছওয়াব পেতে থাকবেন। যদি আপনি তালিবে ইলমও হন (অর্থাৎ ছাত্রও হন) এবং আপনার আয় একেবারে সীমিত ও নির্ধারিতও হয়। তবুও কম-বেশি, যতদূর সম্ভব (সামান্য কিছু হলেও) ছদকার জন্য নির্ধারণ করুন। যদি ছদকাকারী জানতে ও বুঝতে পারে যে, তার ছদকা ফকিরের হাতে যাওয়ার আগে আল্লাহর হাতে যায়। তাহলে অবশ্যই ছদকা গ্রহণকারীর তুলনায় ছদকাদানকারী অনেক গুণ বেশি আত্মিক প্রশান্তি লাভ করবে।

ছদকা দানের উপকারিতা:-

ছদকা দানকারী এবং যে তার কারণ হবে সেও এ সকল ফায়েদার অন্তর্ভুক্ত।

১. ছদকা জান্নাতের দরজাসমূহের একটি।
২. সৎ আমলের মধ্যে উত্তম আমল।
৩. ছদকা কেয়ামতের দিন ছাঁয়া হবে এবং ছদকা-আদায়কারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবে।
৪. ছদকা আল্লাহ তা‘লার ক্রোধকে ঠান্ডা করে এবং কবরের উত্তপ্ততায় শীতলতার উপকরণ হবে।
৫. মৃতব্যক্তির জন্য উত্তম বদলা এবং সবচে’ উপকারী বস্তু হল সদকা। আর ছদকার ছওয়াবকে আল্লাহ তা‘আলা ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে থাকেন।
৬. ছদকা পবিত্রতার আসবাব, আত্মশুদ্ধির মাধ্যম ও সৎকাজের প্রবর্ধক।
৭. ছদকা কেয়ামতের দিন ছদকাকারীর চেহারার আনন্দ ও প্রফুল্লতার কারণ হবে।
৮. ছদকা কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় নিরাপত্তা হবে। অতীতের জন্য আফসোস করা থেকে বিরত রাখে।
৯. ছদকা গুনাহের ক্ষমা এবং খারাপ কাজের কাফফারা।
১০. ছদকা উত্তম মৃত্যুর সুসংবাদ এবং ফেরেস্তাদের দোয়ার কারণ।
১১. ছদকা দানকারী সর্বোত্তম বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত এবং ছদকার ছওয়াব প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি পায় যে কোনো না কোনোভাবে অংশীদার হয়।
১২. ছদকা দানকারীর সঙ্গে সীমাহীন কল্যাণ ও বিরাট প্রতিদানের ওয়াদা রয়েছে।
১৩. খরচ করা মানুষকে মুত্তাকীদের কাতারে শামিল করে। ছদকাকারীকে সৃষ্টিকূল মুহাব্বত করে।
১৪. ছদকা দয়া-মায়া ও দানশীলতার আলামত।
১৫. ছদকা দোয়া কবুল এবং জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম।
১৬. ছদকা বালা মসিবত দূর করে দুনিয়াতে সত্তরটা খারাপির দরজা বন্ধ করে। 
১৭. ছদকা হায়াত ও মাল বৃদ্ধির মাধ্যম। সফলতা এবং রিজিকের প্রশস্ততার মাধ্যম।
১৮. ছদকা চিকিৎসা, ঔষধ ও সুস্থতা।
১৯. ছদকা আগুনে পোড়া, পানিতে ডোবা ও অপহরণসহ (সকল) অপমৃত্যুর প্রতিবন্ধক।
২০. ছদকার প্রতিদান পাওয়া যায় চাই তা পশু-পাখিকেই দেওয়া হোক না কেন।

শেষকথা:- এই মুহূর্তে আপনার জন্য সর্বোত্তম ছদকা হল, কথাগুলো ছদকার নিয়তে প্রচার করা।


160
প্রিয়জনদের কবরের কাছে যাবেন, প্রতিদিন বা সপ্তাহে একবার, আর না পারলে অন্তত মাসে একবার হলেও যাওয়া উচিত।

যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়াতে পরিচিত তার কোনো মৃত ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে গমন করে এবং তাকে সালাম দিলে তখন তার সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার রূহকে ফেরত দেন। (আল-ইসতিযকার, ১/১৮৫; আর-রূহ ইবনুল কাইয়্যিম রহ. পৃষ্ঠা ৫)

হাঁটতে চলতে কখনো তাদের কথা মনে পরলে দুয়া করবেন, নামাজের পর মোনাজাতে তাদের নামটা আল্লাহর কাছে বলতে ভুলবেন না। প্রতিদিন না পারলেও যখনই সম্ভব হবে এক্সট্রা দশটা টাকা হলেও কোন অসহায়কে দিবেন, নিয়ত করে নিবেন যেনো আল্লাহ তা'য়ালা সকল মুসলমানদের কবরের আযাব মাফ করে দেন, জান্নাতের সাথে কবরকে সম্পৃক্ত করে দেন। মাইয়্যেতের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ হাদিয়া হলো গোলাম আযাদ, সাদকা, তার জন্য ইস্তিগফার, দো‘আ ও তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায়। (রূহ, পৃষ্ঠা ৩৪৫)

মনে রাখবেন, তারা আপনার দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছেন; যদি কিছু দেন! যদি কিছু দেন!! আপনিও একদিন চলে যাবেন। যদি আপনি আপনার প্রিয়জনদের ভুলে থাকেন, তাহলে আপনার পর আপনার প্রিয়জনরাও আপনাকে ভুলে থাকবে। জান্নাতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। তখন সে বলবে, 'কীভাবে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেলো?' তখন তাকে বলা হবে, 'তোমার সন্তান তোমার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, তাই।' (ইবনু মাজাহ: ২/১২০৭, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/২১০, সিলসিলা সহিহাহ: ৪/১৭২)

অন্ধকার কবরে আপনি অপেক্ষায় থাকবেন শতবছর, কিন্তু আপনার ডাকবাক্সে কখনো কোন চিঠি আসবেনা! কখনো ফিরিশতা মারফত এই ফরমান পৌঁছবেনা যে,"তোমার প্রিয়জনদের দুয়ার উসিলায় আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।"

161
যেভাবে বুঝবেন আপনি অহংকারী"‼️

জীবন ধ্বংসকারী একটি মারাত্মক স্বভাব হলো অহংকার। এই স্বভাবের লোকেরা তাদের উন্নতি ও সফলতা বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না। আত্মীয়-স্বজন ও কাছের মানুষদের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে তারা। তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠান, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র এমনকি নিজ পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাসুল (সা.) তিনটি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে মানুষকে সাবধান করেছেন। সেগুলো হলো, প্রবৃত্তি পূজারি হওয়া, লোভের দাস হওয়া এবং অহংকারী হওয়া। তিনি বলেন, এটিই হলো সবচেয়ে মারাত্মক। (মিশকাত, হাদিস : ৫১২২)

এখানে অহংকারের কিছু নিদর্শন বর্ণনা করা হলো—


❏ শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করা

সবার কাছে নিজেকে শ্রেষ্ঠ করে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা, অন্যকে তুচ্ছ ভাবা ধ্বংসের কারণ। ইবলিস সর্বপ্রথম নিজেকে বড় মনে করেছিল। যার কারণে মহান আল্লাহ তাকে অভিশাপ দিয়েছেন। আদম (আ.)-কে সিজদা দেওয়ার নির্দেশের বিরোধিতায় সে আল্লাহকে যুক্তি দেখিয়েছিল, ‘আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১২)। অতএব, ‘আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন?’ (সুরা : ইসরা, আয়াত : ৬১)

এই অহংকারের শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাকে বলেন, ‘বের হয়ে যাও এখান থেকে। কেননা তুমি অভিশপ্ত।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ৭৬)


❏ সত্য প্রত্যাখ্যান করা

মানুষ কখনো কখনো নিজেকে শ্রেষ্ঠ করে চিত্রিত করার জন্য সত্যকে চাপা দেয়। অন্যের অবদানগুলো নিজের বলে চালিয়ে দেয়। অন্যকে দাবিয়ে রাখতে বিভিন্ন জায়গায় তাকে তুচ্ছ করে চিত্রিত করে। এটাও মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, লোকেরা চায় যে তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা জোড়া সুন্দর হোক। জবাবে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হলো সত্যকে দম্ভের সঙ্গে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯১)


❏ নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবা

দুনিয়ার প্রত্যেক মানুষ আল্লাহর দয়ায় চলে। কাউকেই আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ করেননি। তাই যারা নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে অন্যকে অবজ্ঞা করে তাদের ব্যাপারে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ অবশ্যই সীমা লঙ্ঘন করে। কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ৬-৭)


❏ হাঁটাচলায় বড়ত্ব প্রকাশ করা

একবার উবাই ইবনু কাব (রা.)-এর পেছন পেছন একদল লোককে চলতে দেখে খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাঁকে চাবুক দিয়ে আঘাত করলেন। এতে চমকে উঠে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কী হে আমিরুল মুমিনিন! জবাবে খলিফা বলেন, ‘এটা অনুসরণকারীর জন্য লাঞ্ছনাকর এবং অনুসৃত ব্যক্তিকে ফিতনায় (অহংকারে) নিক্ষেপকারী।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩১২৪৪)


❏ কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা

অর্থ-সম্পদ, পদবী ও সৌন্দর্যের কারণে অন্যের প্রতি অন্তরে কোনো তুচ্ছভাব উদ্রেক হওয়াটা অহংকারের লক্ষণ। একদিন সাহাবি আবু জর গিফারি (রা.) হাবশি বেলাল (রা.)-কে তাঁর কালো মায়ের দিকে ইঙ্গিত করে তাচ্ছিল্য করলে রাসুল (সা.) তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘হে আবু জর! তুমি তাকে তার মায়ের নামে তাচ্ছিল্য করলে? তোমার মধ্যে জাহেলিয়াত রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০) একইভাবে অধীনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করাও মারাত্মক গুনাহ।


❏ প্রভাব খাটিয়ে অন্যের হক নষ্ট করা

এটি অহংকারের একটি বড় নিদর্শন। এর শাস্তি অত্যন্ত লাঞ্ছনাকর। অন্যায়ভাবে কারো সম্মানহানি করলে কিয়ামতের দিন অহংকারী ব্যক্তিকে পিঁপড়াসদৃশ করে লাঞ্ছনাকর অবস্থায় হাঁটানো হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯২)


❏ অহেতুক জেদ করা

অনেকেই আছে নিজের ভুল কখনো স্বীকার করে না। নিজের ভুলগুলো অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। আবদুর রহমান বিন মাহদি (রহ.) বলেন, আমরা এক জানাজায় ছিলাম। সেখানে ওবায়দুল্লাহ বিন হাসান উপস্থিত ছিলেন, যিনি তখন রাজধানী বাগদাদের বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন। আমি তাঁকে একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করলে তিনি ভুল জবাব দেন। তখন আমি বললাম, ‘আল্লাহ আপনাকে সংশোধন হওয়ার তাওফিক দিন! এ মাসআলার সঠিক জবাব হলো এই, এই। তখন তিনি কিছুক্ষণ দৃষ্টি অবনত রাখেন। অতঃপর মাথা উঁচু করে দুইবার বলেন, ‘এখন আমি প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি লজ্জিত।’ অতঃপর বলেন, ‘ভুল স্বীকার করে হকের লেজ হওয়া আমার কাছে অধিক প্রিয় বাতিলের মাথা হওয়ার চেয়ে।’ (তারিখু বাগদাদ : ১০/৩০৮)

আমাদের উচিত আল্লাহর জন্য এগুলো ত্যাগ করা। আল্লাহ আমাদের অহংকার থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।

162
মুহাররম ও আশূরা : করণীয় ও বর্জনীয়

আল্লাহ তা‘আলা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই বারো মাসে বছর নির্ধারণ করে দিয়েছেন (তওবা ৯/৩৬)। এই মাস সমূহের মধ্যে প্রথম মাস হ’ল মুহাররম মাস। মুহাররম মাসের সাথে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িত আছে। এই মাসে রয়েছে কিছু নফল  ইবাদত। আবার এই মাসকে কেন্দ্র করে সমাজে কিছু কুসংস্কার ও সুন্নাহ বিরোধী আমল প্রচলিত আছে। আলোচ্য প্রবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

মুহাররম মাসের ফযীলত : ইসলামী শরী‘আতের আলোকে মুহাররম মাসের অনেক ফযীলত রয়েছে।

১. এটা হারাম মাস : চারটি হারাম তথা সম্মানিত মাসের মধ্যে অন্যতম হ’ল মুহাররম। মহান আল্লাহ বলেন,

 إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ،

নিশ্চয়ই আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাসসমূহের গণনা হ’ল বারোটি। যার মধ্যে চারটি মাস হ’ল ‘হারাম’ (মহাসম্মানিত)। এটিই হ’ল প্রতিষ্ঠিত বিধান’ (তওবা ৯/৩৬)।

আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

الزَّمانُ قَدِ اسْتَدارَ كَهَيْئَتِهِ يَومَ خَلَقَ اللهُ السَّمَواتِ والأرْضَ، السَّنَةُ اثْنا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْها أرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاثَةٌ مُتَوالِياتٌ: ذُو القَعْدَةِ وذُو الحِجَّةِ والمُحَرَّمُ، ورَجَبُ مُضَرَ، الذي بيْنَ جُمادى وشَعْبانَ-

আল্লাহ যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন হ’তে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা‘দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে। আর একটি মাস হ’ল রজব-ই-মুযার, যা জুমাদা ও শা‘বান মাসের মাঝে অবস্থিত’।

২. এই মাসের ছিয়াম রামাযানের পরে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ : আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

 أفضَلُ الصِّيامِ بعدَ شَهرِ رمَضانَ شهرُ اللهِ المُحرَّمُ، وإنَّ أفضَلَ الصَّلاةِ بعد المفروضةِ صلاةٌ مِن اللَّيْلِ

রামাযান মাসের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের ছিয়াম হচ্ছে সর্বোত্তম এবং ফরয ছালাতের পর রাতের ছালাতই সর্বোত্তম’।

৩. এই মাস আল্লাহর মাস : বছরের সব মাস আল্লাহর হ’লেও মুহাররমকে আল্লাহ নিজের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

আশূরা কী?

আরবী ‘আশারা (عشر) শব্দ থেকে এসেছে ‘আশূরা (عاشوراء)। ‘আশারা অর্থ দশ আর ‘আশূরা অর্থ দশম, মাসের দশম দিন। হিজরী সনের প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখকে আশূরা বা আশূরায়ে মুহাররম বলা হয়।

আশূরার করণীয় :

আশূরাকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে বিভিন্ন আমলের প্রচলন দেখা যায়। যার সবগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের আলোকে আশূরায় করণীয় হ’ল-

১. হারাম মাস হিসাবে এ মাসকে সম্মান করা : মুহাররম মাস বছরের চারটি হারাম মাসের অন্যতম। অন্যান্য হারাম মাসের ন্যায় এ মাসে বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থেকে এ মাসকে সম্মান করতে হবে। আবূ জামরাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর সাথে বসতাম। তিনি আমাকে তাঁর আসনে বসাতেন। একবার তিনি বললেন, তুমি আমার কাছে থেকে যাও, আমি তোমাকে আমার ধন-সম্পদ হ’তে কিয়দংশ প্রদান করব। আমি তাঁর সাথে দু’মাস থাকলাম। অতঃপর একদা তিনি বললেন, আব্দুল কায়েস গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আগমন করলে তিনি বললেন, তোমরা কোন গোত্রের? কিংবা বললেন, কোন প্রতিনিধি দলের? তারা বলল, ‘রাবী‘আ গোত্রের’। তিনি বললেন, স্বাগতম সে গোত্র বা সে প্রতিনিধি দলের প্রতি, যারা অপদস্থ ও লজ্জিত না হয়েই আগমন করেছে। তারা বলল,

يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّا لاَ نَسْتَطِيعُ أَنْ نَأْتِيَكَ إِلاَّ فِي شَهْرِ الْحَرَامِ، وَبَيْنَنَا وَبَيْنَكَ هَذَا الْحَىُّ مِنْ كُفَّارِ مُضَرَ، فَمُرْنَا بِأَمْرٍ فَصْلٍ، نُخْبِرْ بِهِ مَنْ وَرَاءَنَا، وَنَدْخُلْ بِهِ الْجَنَّةَ-

‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! হারাম মাস ব্যতীত অন্য কোন সময় আমরা আপনার নিকট আগমন করতে পারি না। আমাদের এবং আপনার মধ্যে মুযার গোত্রীয় কাফেরদের বসবাস। তাই আমাদের কিছু স্পষ্ট নির্দেশ দিন, যাতে করে আমরা যাদের পিছনে ছেড়ে এসেছি তাদের অবগত করতে পারি এবং যাতে করে আমরা জান্নাতে দাখিল হ’তে পারি’।

২. ছিয়াম পালন করা : এ মাসের অন্যতম কাজ হ’ল এ মাসের দশ তারিখে ছিয়াম পালন করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কাতে অবস্থান কালে এ ছিয়াম পালন করতেন। মক্কার কুরায়শরাও এই দিনকে সম্মান করত ও ছিয়াম পালন করত। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَصُومُهُ قُرَيْشٌ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ صَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تَرَكَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَمَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ-

‘জাহেলী যুগে কুরায়শরা আশূরার ছিয়াম পালন করত এবং আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)ও এ ছিয়াম পালন করতেন। যখন তিনি মদীনায় আগমন করেন তখনও এ ছিয়াম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রামাযানের ছিয়াম ফরয করা হ’ল তখন আশূরার ছিয়াম ছেড়ে দেয়া হ’ল। যার ইচ্ছা সে পালন করবে, আর যার ইচ্ছা পালন করবে না’।

মদীনায় হিজরতের পর তিনি এ ছিয়াম পালন করতেন ও ছাহাবায়ে কেরামকে ছিয়াম পালনের নির্দেশ দেন। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ فَرَأَى الْيَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ مَا هَذَا قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى قَالَ فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ-

নবী করীম (ছাঃ) মদীনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইহুদীরা আশূরার দিনে ছিয়াম পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে ছিয়াম পালন কর কেন?) তারা বলল, এটি অতি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হ’তে নাজাত দান করেছেন। ফলে এ দিনে মূসা (আঃ) ছিয়াম পালন করতেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে ছিয়াম পালন করেন এবং (লোকদেরকে) ছিয়াম পালনের নির্দেশ দেন’।
রামাযানের ছিয়াম ফরয হওয়ার আগে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুহাররম মাসের দশ তারিখে ছিয়াম পালনে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। ছাহাবীগণও আশূরার ছিয়াম পালনের ব্যাপারে গুরুত্ব দিতেন।

 রুবাইয়ি‘ বিনতু মু‘আব্বিয (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَرْسَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم غَدَاةَ عَاشُورَاءَ إِلَى قُرَى الأَنْصَارِ مَنْ أَصْبَحَ مُفْطِرًا فَلْيُتِمَّ بَقِيَّةَ يَوْمِهِ وَمَنْ أَصْبَحَ صَائِمًا فَليَصُمْ قَالَتْ فَكُنَّا نَصُومُهُ بَعْدُ وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا وَنَجْعَلُ لَهُمْ اللُّعْبَةَ مِنْ الْعِهْنِ فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهُ ذَاكَ حَتَّى يَكُونَ عِنْدَ الإِفْطَارِ-

আশূরার সকালে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আনছারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি ছিয়াম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকী অংশ না খেয়ে থাকে। আর যার ছিয়াম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন ছিয়াম পূর্ণ করে। তিনি (রুবাইয়ি‘) (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন ছিয়াম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের ছিয়াম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত’।
 
অন্য বর্ণনায় এসেছে,

فَإِذا سَأَلُونا الطَّعامَ، أَعْطَيْناهُمُ اللُّعْبَةَ تُلْهِيهِمْ حتّى يُتِمُّوا صَوْمَهُمْ-

যখন তারা আমাদের কাছে খাবার চাইত, আমরা তাদের খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম যতক্ষণ না তারা তাদের ছিয়াম পূর্ণ করত’। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে ‘আশূরার দিনের ছিয়ামের উপরে অন্য কোন দিনের ছিয়ামকে প্রাধান্য দিতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রামাযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখিনি)।

আল-হাকাম ইবনুল আ‘রাজ (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নিকট এলাম। এ সময় তিনি মাসজিদুল হারামে তার চাদরে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। আমি তাকে আশূরার ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন তুমি মুহাররমের নতুন চাঁদ দেখবে, তখন থেকে গণনা করতে থাকবে। এভাবে যখন নবম দিন আসবে তখন ছিয়াম অবস্থায় ভোর করবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মুহাম্মাদ (ছাঃ) কি এভাবে ছিয়াম রাখতেন? তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ) এভাবেই ছিয়াম রাখতেন’।

আশূরার ছিয়ামের হুকুম :

আশূরার ছিয়াম পালন করা সুন্নাত। হুমাইদ ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, যে বছর মু‘আবিয়া (রাঃ) হজ্জ করেন, সে বছর আশূরার দিনে (মসজিদে নববীর) মিম্বরে তিনি (রাবী) তাঁকে বলতে শুনেছেন যে,

يَا أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ هَذَا يَوْمُ عَاشُورَاءَ وَلَمْ يَكْتُبْ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ وَأَنَا صَائِمٌ فَمَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيُفْطِرْ-

‘হে মদীনাবাসীগণ! তোমাদের আলিমগণ কোথায়? আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আজকে আশূরার দিন, আল্লাহ তা‘আলা এর ছিয়াম তোমাদের উপর ফরয করেননি বটে, তবে আমি ছিয়াম পালন করছি। যার ইচ্ছা সে ছিয়াম পালন করুক, যার ইচ্ছা সে পালন না করুক’।

আশূরার ছিয়ামের ফযীলত :

১. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ দিনের ছিয়ামকে বেশী প্রাধান্য দিতেন। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلاَّ هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ-

আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে আশূরার দিনের ছিয়ামের উপরে অন্য কোন দিনের ছিয়ামকে প্রাধান্য দিতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রামাযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখিনি)’।

ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَمْ يَكُنْ يَتَوَخَّى فَضْلَ يَوْمٍ عَلَى يَوْمٍ بَعْدَ رَمَضَانَ إِلا يَوْمَ عَاشُورَاءَ،

‘নবী করীম (ছাঃ) রামাযানের ছিয়ামের পর আশূরার দিন ছাড়া কোন দিনকে অন্য দিন অপেক্ষা মাহাত্ম্যপূর্ণ মনে করতেন না’।

২. এক বছরের গুনাহের কাফফারা : আশূরার ছিয়াম পূর্ববর্তী এক বছরের ছগীরা গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

صَوْمُ يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ إِنِّي أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ

আর আশূরার ছিয়াম, আমি আশা করি (এর বিনিময়) বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করা হবে’। অন্য শব্দে এসেছে,

 يُكَفِّرُ السَّنَةَ المَاضِيَةَ

বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করবেন’।

৩. আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

 مَنْ وَسَّعَ عَلى عِيَالِه فِي النَّفَقَةِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِه. قَالَ سُفْيَانُ: إِنَّا قَدْ جَرَبْنَاهُ فَوَجَدْنَاهُ كَذلِكَ

যে ব্যক্তি আশূরার দিন নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য উদার হস্তে খরচ করবে আল্লাহ তা‘আলা সারা বছর উদারহস্তে তাকে দান করবেন। সুফিয়ান ছাওরী বলেন, আমরা এর পরীক্ষা করেছি এবং কথার সত্যতার প্রমাণ পেয়েছি’।
 
আশূরার ছিয়াম কতদিন?

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কায় ও মদীনায় প্রথম দিকে মুহাররম মাসে এক দিন ছিয়াম পালন করতেন। পরবর্তীতে ইহুদীদের বিরোধিতা করার জন্য ৯ তারিখসহ দুই দিন ছিয়াম পালনের আশা প্রকাশ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) যখন নিজে আশূরার দিন ছিয়াম রাখলেন এবং আমাদেরকেও এ ছিয়াম পালনের নির্দেশ দেন, তখন লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ইহুদী ও খৃষ্টানরা এ দিনটিকে সম্মান করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,

فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ صُمْنَا يَوْمَ التَّاسِعِ ‏فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم

‘আগামী বছর আসলে আমরা নবম দিনেও ছিয়াম পালন করব। কিন্তু আগামী বছর না আসতেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করেন’। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

صُومُوا التَّاسِعَ وَالْعَاشِرَ وَخَالِفُوا الْيَهُودَ

তোমরা ৯ ও ১০ তারীখে ছিয়াম রাখ এবং ইহুদীদের বৈপরীত্য কর’। সুতরাং মুহাররমের দু’টি ছিয়াম পালন করা উত্তম। এক্ষেত্রে দশ তারিখের আগের দিন বা পরের দিন ছিয়াম রাখা যেতে পারে।

ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

صُوموا يومَ عاشوراءَ وخالِفوا فيه اليهودَ صوموا قبلَهُ يومًا وبعده يومًا

‘তোমরা আশূরার ছিয়াম পালন কর এবং ইহুদীদের বিরোধিতা কর। তোমরা আশূরার আগের দিন অথবা পরের দিন ছিয়াম পালন কর’।

163
কুরবানীর মাসায়েল

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব।

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ হল।

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

নেসাবের মেয়াদ

মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

কুরবানীর সময়

মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫

নাবালেগের কুরবানী

মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

মুসাফিরের জন্য কুরবানী

মাসআলা : ৫.  যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫

নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম

মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২

কুরবানী করতে না পারলে

মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ১০.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে

মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : ১২.  উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

নর ও মাদা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা


মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬
এক পশুতে শরীকের সংখ্যা

মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮

সাত শরীকের কুরবানী

মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

কুরবানীর উত্তম পশু

মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।-মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

খোড়া পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে

মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮

অন্ধ পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে

মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭

গর্ভবতী পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০

পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে

মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা

মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫

বন্ধ্যা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা

মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪

জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে

মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪

কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া

মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০

কুরবানীর পশুর দুধ পান করা

মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর
কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭,
রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে

মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার
স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১

কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে

মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২

কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা

মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান
১৭/২৭০

কুরবানীর গোশত বণ্টন

মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১

মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া

মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।

জবাইয়ের অস্ত্র

মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা

মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু

নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

অন্য পশুর সামনে জবাই করা

মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না দেওয়া।

কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া

মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে

মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব  হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯

পাগল পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২

নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া

মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪

ঋণ করে কুরবানী করা

মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।

হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী


মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা

মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯

কোন দিন কুরবানী করা উত্তম

মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী

মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩

জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী

মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা

মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে

মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা

মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত

মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪

কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে

মাসআলা : ৬৪. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯

কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া

মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯

কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা

মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি

মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ৬৮.  ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

মোরগ কুরবানী করা 

মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০

164
শিশুদের-নৈতিক শিক্ষা ও অনুশীলনে করণীয়

আজকের শিশুরাই যেহেতু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, কাজেই তাদের সুস্থ-সবল প্রাণবন্ত দেহ ও ফুলের মতো পবিত্র জীবন গঠনে নৈতিক শিক্ষা ও অনুশীলন বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান লাভ করা অতীব জরুরি।

আমরা জানি, শিক্ষা মূলত দুই প্রকার- ১. সাধারণ শিক্ষা ও ২. ধর্মীয় শিক্ষা। যে শিক্ষা অর্জনে মানুষের জাগতিক উন্নতি ও কল্যাণ সাধিত হয়- তাকে সাধারণ শিক্ষা বলে।

আর ধর্মীয় মানুষের মাঝে উন্নত নৈতিকতা ও মানবতাবোধ জাগ্রত করে। সেই সঙ্গে জাগতিক এবং পারলৌকিক জীবনে শান্তি আনয়ন করে।

সুতরাং মানুষের মতো মানুষ হতে হলে, উভয় জ্ঞানের প্রয়োজন। যাবতীয় পরিস্থিতি আর প্রশ্নের জবাব দিতে পারে জ্ঞানীরাই। জীবন সায়াহ্নে পুরস্কৃত হয় জ্ঞানীরা। প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে জ্ঞানীরা। তাইতো হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জ্ঞানীর ঘুম মুর্খের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। ’

অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মুসলমানকে অর্জিত জ্ঞান ও আমল এবং অর্জিত জ্ঞানের অনুশীলন বিষয়ক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে। সবাইকেই এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। 

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, যেহেতু দুনিয়ার কৃতকর্মের ভিত্তিতে আখেরাতের ফলাফল নিশ্চিত করা হবে, কাজেই প্রতিটি শিশুর-সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ উভয় শিক্ষার্জনের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করলে নিজে যেমন উপকৃত হওয়া যায়- তেমনি পরিবার, বংশ, জাতি ও দেশের এমনকি বিশ্বের মানুষ লাভবান হন। 

শিশুদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে এর অন্যতম হলো-

সালাম বিনিময়, সম্বোধন, কুশলাদি বিনিময় করে কথা বলা। 

দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া মুখস্থকরণ ও অনুশীলন। বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার ও আদবের অনুশীলন। 

তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানার্জন। অপবিত্রতা থেকে নিরাপদে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পবিত্রতা অর্জন করা। কথা বলা, বসা, চলাফেরার আদব রক্ষা করা। পিতা-মাতা, শিক্ষক-গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা। কোমল ব্যবহার ও হাসিমুখে কথা বলার অভ্যাস। সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও কাজের লোকের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। 

নিয়মিত ক্লাসের পাঠ সম্পন্ন করা। নিয়মিত নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে তোলা। বিশেষকরে মসজিদে যেয়ে জামাতে নামাজের বিষয়ে উৎসাহী করা। নামাজে পাঠকৃত আয়াতসমূহ মুখস্থ করা। নিয়মিত খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা। 

সম্ভব হলে প্রতিদিন কোরআনে কারিম অর্থসহ পাঠ করা, টিভিতে ভালো অনুষ্ঠান দেখা ও পত্র-পত্রিকা পাঠ করা। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক জ্ঞানার্জন করা। 

শিশুদের যেসব মন্দ অভ্যাস সম্পর্কে জানাতে হবে সেগুলো হলো- মিথ্যা বলা, অহংকার করা, রাগ করা, অহেতুক বায়না ধরা, ঘৃণা করা, হিংসা করা, সন্দেহ করা, গীবত করা, চোগলখুরি করা, অশ্লীল কথা ও গালি-গালাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, প্রতারণা করা, উপহাস করা, অন্যকে মন্দ নামে ডাকা, ছোটদের সঙ্গে খেলার ছলে মিথ্যা বলা ও ভয় দেখানো, অশ্লীল ছবি দেখা, অশ্লীল বই বা ম্যাগাজিন পড়া, খারাপ বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে থাকা। 

যাবতীয় নেশাদ্রব্য পরিহার করা। খোলা ছাদে খেলাধুলা করা বা ঘুড়ি উড়ানো। তাড়াহুড়া করা। ক্লাসে বিলম্বে উপস্থিত হওয়া ও নামাজে উদাসীনতা দেখানো। 

এছাড়াও শিশুদের যা জানা প্রয়োজন, সেগুলো হলো- তওবা- গোনাহ ধ্বংস করে। শিরক-ঈমান ধ্বংস করে। দীন- গোমরাহি ধ্বংস করে। রাগ-বুদ্ধি ধ্বংস করে। অহংকার- জ্ঞান ধ্বংস করে। মিথ্যা-আস্থা ধ্বংস করে। চিন্তা- জীবন ধ্বংস করে। পরনিন্দা- আমল ধ্বংস করে। ন্যায় বিচার- জুলুম ধ্বংস করে। সদকা- বালা মসিবত ধ্বংস করে। নেশা- শরীর ধ্বংস করে। অশ্লীলতা- চরিত্র ধ্বংস করে।

শিশুদের মনে শিক্ষা জীবনের শুরু এ বিষয়গুলো শিখিয়ে দিতে পারলে তার জীবন সুন্দরের পথে পরিচালিত হবে। তার মেধা-মনন গড়ে উঠবে শালীনভাবে। 


 

165
কুরবানীর ফজিলত,করণীয় ও বর্জনীয়ঃ

আমরা যে কুরবানী করি তা হযরত ইবরাহীম (আ.) থেকে প্রাপ্ত প্রিয় জিনিস আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করার নমূনা। এজন্য আল-হাদীসে কুরবানীকে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সুন্নাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত আছে,

وعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الْأَضَاحِيُّ؟ قَالَ سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ! قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ حَسَنَةٌ قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ! قَالَ بِكُلِّ شَعْرَةٍ مِنْ الصُّوفِ حَسَنَةٌ”  رواه أحمد والترمذي وابن ماجه

“হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এর সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) কুরবানী কী? উত্তরে নবীজি ইরশাদ করলেন, কুরবানী তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ.) এর সুন্নাত, তারা বললেন এতে আমাদের কী ফজিলত? নবীজি বললেন প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা বললেন, ছুফ এর জন্যও কি? নবীজি জবাব দিলেন, ছুফ (অধিক পশম বিশিষ্ট পশু) এর জন্য নেকী রয়েছে।” (সূনান ইবনে মাজাহ)

কুরবানীর ফযীলত:

(ক) কুরবানী দাতা নবী ইব্রাহীম (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.)- এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন।

(খ) পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কুরবানী দাতা আল্লাহ রাববুল ‘আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :-

لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧ الحج: ٣٧

আল্লাহর নিকট পৌছায় না উহার গোশত এবং রক্ত, বরং পৌছায় তোমাদের তাক্বওয়া। এ ভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়নদেরকে। [সূরা হজ্জ্ব:৩৭]।

কুরবানীর দিনে সবচেয়ে প্রিয় কাজ পশু কুরবানী করা। কুরবানীর পশুর রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। এ সম্পর্কে আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

 عَنْ عَائِشَةَ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ قَالَ : مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلاً أَحَبَّ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ، مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ ، وَإِنَّهُ لَتَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، بِقُرُونِهَا ، وَأَظْلاَفِهَا ، وَأَشْعَارِهَا ، وَإِنَّ الدَّمَ ، لَيَقَعُ مِنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ ، بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الأَرْضِ ، فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا.

“হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোন আমল আল্লাহর কাছে নেই। ঐ ব্যক্তি কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর, পশমসমূহ নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কুরবানীর রক্ত জমিনে পতিত হবার পূর্বেই তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। অতএব, তোমরা কুরবানির দ্বারা নিজেদের নফসকে পবিত্র কর।” (সূনান ইবনে মাজাহ)

আল-কুরআনের এ আয়াত ও হাদীসের মাধ্যমে জানা যায়, পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কুরবানীদাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন করেন। এবং পশু কুরবানী করার বারাকা হিসেবে যে পশু যবেহ করা হয় তার গায়ের পশম সমপরিমান বা তার পাঁচগুন সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ : بِكُلِّ شَعَرَةٍ ، حَسَنَةٌ قَالُوا : فَالصُّوفُ ؟ يَا رَسُولَ اللهِ ، قَالَ : بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ ، حَسَنَةٌ

“সাহাবীরা বললেন এতে আমাদের কী ফজিলত? নবীজি বললেন প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব। তারা বললেন, ছুফ এর জন্যও কি? নবীজি জবাব দিলেন, ছুফ (অধিক পশম বিশিষ্ট পশু) এর জন্য নেকী রয়েছে।” (সূনান ইবনে মাজাহ)

(গ) পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কুরবাণীর গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কুরবানী না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কুরবানী আদায় হবে না। কুরবানীর ফজীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলোর উপর আল্লাহ আমাদের  আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

কুরবানী বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলি:

কুরবানী করা আল্লাহর এক ইবাদত। আর কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা এ কথা প্রমাণিত যে, কোন নেক আমল, সালেহ বা ভাল হয় না, কিংবা গৃহীত ও নৈকট্যদানকারী হয় না; যতক্ষণ না তাতে প্রাথমিকভাবে ( যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত) দু‘টি শর্ত পূরণ হয়েছে:

প্রথমত: ‘ইখলাস’, অর্থাৎ তা যেন খাটি আল্লাহরই উদ্দেশ্যে হয়। তা না হলে তা আল্লাহর নিকটে কবূল হবে না। যেমন কাবীলের নিকট থেকে কুরবানী কবুল করা হয়নি এবং তার কারণ স্বরূপ হাবীল বলেছিলেন,

إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلۡمُتَّقِينَ ٢٧المائ‍دة: ٢٧

অর্থাৎ ‘আল্লাহ তো মুত্তাক্বী (পরহেযগার ও সংযমী)দের কুরবানীই কবূল করে থাকেন। [ সূরা মায়িদা (৫):২৭]।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧ الحج: ٣٧

অর্থাৎ, ‘আল্লাহর কাছে ওগুলোর (কুরবানীর পশুর) না গোশত পৌঁছে, আর না রক্ত পৌঁছে বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পার এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন, কাজেই সৎকর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। [সূরা হাজ্জ (২২):৩৭]

দ্বিতীয়ত : তা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর নির্দেশিত বিধি-বিধান অনুযায়ী হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অর্থাৎ, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। [সূরা কাহফ:১১০]।

সুতরাং যারা কেবল বেশী করে গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী দেয় অথবা লোক সমাজে নাম কুড়াবার উদ্দেশ্যে মোটা-তাজা অতিরিক্ত মূল্যের পশু ক্রয় করে এবং তা প্রদর্শন ও প্রচার করে থাকে তাদের কুরবানী যে ইবাদত নয়- তা বলাই বাহুল্য। গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্য থাকে বলেই লোকে একই মূল্যের একটি পূর্ণ পশু কুরবানী না করে একটি ভাগ দিয়ে থাকে। ফলে, একটি ছাগল দিলে দু‘দিনেই শেষ হয়ে যাবে। লোকেরা ছেলে-মেয়েরা খাবে, আর আমার ছেলে-মেয়েরা তাকিয়ে ও দেখবে? উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট।

তবে, বাহ্যিকভাবে কুরবানী শুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে:

(১) এমন পশু দ্বারা কুরবানী দিতে হবে যা শরীয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। অর্থাৎ কুরবানীর পশু যেন সেই শ্রেণী বা বয়সের হয় যে শ্রেনী ও বয়স শরীয়ত নির্ধারিত করেছে। সেগুলো হলো উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা। এগুলোকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আন‘আম।’ যেমন এরশাদ হয়েছে-

وَلِكُلِّ أُمَّةٖ جَعَلۡنَا مَنسَكٗا لِّيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۗ الحج: ٣٤

আমি প্রত্যেক সম্প্রদাযের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ [সূরা হজ্জ্ব(২২):৩৪]

হাদিসে এসেছে-

عن جابر رضى الله عنه قال:قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «لا تذبحوا إلا مسنة إلا أن تعسر عليكم فتذبحوا جذعة من الضأن

‘তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কুরবানী করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কুরবানী করতে পার।’ [মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬৩]।

আর আল্লাহর রাসূল (সা.) উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য লোক জন্তু কুরবানী করেননি ও কুরবানী করতে বলেননি। তাই কুরবানী শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে। ইমাম মালিক (রহ.) এর মতে কুরবানীর জন্য সর্বোত্তম জন্তু হলো শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম (সা.) এ ধরনের দুম্বা কুরবানী করেছেন বলে সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে। অধিকাংশ উলামাদের মতে, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কুরবানীর পশু হলো উট, অতঃপর গরু, তারপর মেষ (ভেড়া), তারপর ছাগল। আবার নর মেষ মাদী মেষ অপেক্ষা উত্তম। যেহেতু এ প্রসঙ্গে দলীল বর্ণিত হয়েছে। (আযওয়াউল বায়ান, ৫/৬৩৪)।

একটি উট ও গরু-মহিষে সাত ব্যক্তি কুরবানীর জন্য শরীক হতে পারে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩১৮) অন্য এক বর্ণনামতে, উট কুরবানীতেও দশ ব্যক্তি শরীক হতে পারে। ইমাম শাওকানী বলেন, হজ্জের কুরবানীতে দশ এবং সাধারণ কুরবানীতে সাত ব্যক্তি শরীক হওয়াটাই সঠিক। (নায়লুল আওত্বার, ৮/১২৬)

 যেমন হাদিসে এসেছে-

عن جابر رضى الله عنه أنه قال: «نحرنا بالحديبية مع النبي صلى الله عليه وسلم البدنة عن سبعة والبقرة عن سبعة »

‘আমরা হুদায়বিয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছি।’ (ইবনে মাজা-৩১৩২, হাদিসটি সহীহ)।

কিন্তু মেষ বা ছাগলে ভাগাভাগি বৈধ নয়। তবে সওয়াবে একাধিক ব্যক্তিকে শরীক করা যাবে। সুতরাং একটি পরিবারের তরফ থেকে মাত্র একটি মেষ বা ছাগল যথেষ্ট হবে। তাতে সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা যতই হোক না কেন। এ বিধানটি সফরের অবস্থায় প্রযোজ্য। গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হলো কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া।

(২) শরীয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু‘বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের। অবশ্য অসুবিধার ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী মেষ কুরবানী করা যায় । প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘দাতালো ছাড়া যবেহ করো না। তবে তা দুর্বল হলে ছয় মাসের মেষ যবেহ কর।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬৩)

কিন্তু উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, ছ‘মাস বয়সী মেষের কুরবানী সিদ্ধ হবে; তা ছাড়া অন্য পশু পাওয়া যাক অথবা না যাক। অধিকাংশ উলামাগণ ঐ হাদীসের আদেশকে ‘ইস্তিহবাব’ (উত্তম) বলে গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন যে, ঐ হাদীসের মর্মার্থ এটা নয় যে, অন্য কুরবানীর পশু পাওয়া গেলে তবেই ছ‘মাস বয়সের মেষশাবকের কুরবানী বৈধ।যেহেতু এমন অন্যান্য দলীলও রয়েছে যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঐ বয়সী মেষেরও কুরবানী বৈধ; প্রকাশ থাকে যে, যদিও কুরবানীদাতা অন্য দাতালো পশু পেয়ে থাকে। যেমন রাসূল (সা.) বলেন, ছ‘মাস বয়সী মেষশাবক উত্তম কুরবানী। (মুসনাদে আহমাদ, ২/৪৪৫; তিরমিযী)

উক্ববা বিন আমের (রা.) বলেন, (একদা) নবী (সা.) কুরবানীর পশু বিতরণ করলেন। উক্ববার ভাগে পড়ল এক ছ‘মাসের মেষ। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগে ছ‘মাসের মেষ হলো?’ প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ‘এটা দিয়েই তুমি কুরবানী কর।’ (সহীহ বুখারী , হাদীস নং ২১৭৮; সহীহ মুসলিম, ১৯৬৫)।

(৩) কুরবানীর পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে-

عن البراء بن عازب رضى الله عليه وسلم قال: « قام فينا رسول الله صلى الله وسلم فقال:أربع لا تجوز في الأضاحي العوراء البين عورها والمريضة البين مرضها والعرجاء البين ضلعها والكسيرة التي لا تنقى »

সাহাবী বারা ইবনে আযেব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন : চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানী জায়েয হবে না। অন্ধ. যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত; যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসাঈ‘র বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে। (তিরমিজি-১৫৪৬; নাসাঈ’-৪৩৭১; আবূদাউদ; হাদিসটি সহীহ)।

অতএব এ চারের কোন এক ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কুরবানী সিদ্ধ হয় না। ইবনে কুদামাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন মতভেদ আছে কিনা তা আমরা জানি না।’ (মুগনী, ১৩/৩৬৯)

ত্রুটিগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হলো:

১. স্পষ্ট কানা (এক চক্ষু অন্ধ): যে পশুর একটি চক্ষু নষ্ট হয়ে গেছে অথবা বেরিয়ে আছে । দৃষ্টিহীন হলে তো অধিক ত্রুটি হবে। তবে যে পশুটির চক্ষু সাদা হয়ে গেছে, কিন্তু নষ্ট হয়নি, সেটির কুরবানী সিদ্ধ হবে। কারণ, তা স্পষ্ট কানা নয়।

২. স্পষ্ট রোগের রোগা : যে পশুর ওপর রোগের চি‎হ্ন প্রকাশিত। যেটি চলতে অথবা খেতে পারে না; যার দরুন দুর্বলতা ও মাংসবিকৃতি হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে, চর্মরোগও একটি ত্রুটি, যার কারণে চর্বি ও মাংস খারাপ হয়ে থাকে। তেমটি স্পষ্ট ক্ষত একটি ত্রুটি,যদি তার ফলে পশুর ওপর কোন প্রভাব পড়ে থাকে। তবে, গর্ভধারণ কোন ত্রুটি নয়। তবে গর্ভপাত বা প্রসবের টিকটবর্তী পশু একপ্রকার রোগ গ্রস্থতা এবং তা একটি ত্রুটি। যেহেতু গাভীন পশুর গোশত অনেকের নিকট অরুচিকর, সেহেতু জেনেশুনে তা ক্রয় করা উচিত নয়। অবশ্য কুরবানীর জন্য নির্দিষ্ট বা ক্রয় করার পর গর্ভের কথা জানা গেলে তা কুরবানীরূপে যথেষ্ট হবে। বাচ্চা মৃত হলে যবেহ না করেই খাওয়া যাবে। কেননা, মায়ের যবে হতে সেও হালাল হয়ে যায়। (আহমাদ, আবু দাউদ , তিরিমযী, ইবনু মাজাহ, ইবনে হিববান, হাকেম, দাবা কুত্বনী, ত্বাবারীনী, সহীহুল জামে‘, হাদীস নং ৩৪৩১)।

৩. দুরারোগ্য ভগ্নপদ।

৪. দুর্বলতা ও বার্ধক্যের কারণে যার চর্বি ও মজ্জা নষ্ট অথবা শুষ্ক হয়ে গেছে।

উপরে উল্লেখিত হাদীসে মোট চারটি ত্রুটিযুক্ত পশুর কুরবানী সিদ্ধ নয় বলে বর্ণিত হয়েছে এবং বাকী অন্যান্য ত্রুটির কথা বর্ণনা করা হয়নি। কিন্তু অধিকাংশ উলামাগণের মতে, যদি ঐ ত্রুটিসমূহের অনুরূপ বা ততোধিক মন্দ ত্রুটি কোন পশুতে পাওয়া যায় তাহলে তাতেও কুরবানী সিদ্ধ হবে না; যেমন- দুই চক্ষু অন্ধ বা পা কাটা প্রভৃতি। (শরহুন নববী, ১৩/২৮)

খাত্ত্বাবী (রাহ.) বলেন, হাদীসে এ কথার দলীল রয়েছে যে, কুরবানীর পশুতে স্পষ্ট খঞ্জ।’ অতএব ঐ ত্রুটির সামান্য অংশ অস্পষ্ট হবে এবং তা মার্জনীয় ও অধর্তব্য হবে। (মাআলিমুস সুনান, ৪/১০৬)।

পক্ষান্তরে, এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কুরবানী আদায় হয় কিন্তু তা মাকরূহ বলে বিবেচিত হয়। তাই এ জাতীয় ত্রুটি থেকেও কুরবানীর পশুকে মুক্ত করা উত্তম।

যে ত্রুটিযুক্ত পশুর কুরবানী মাকরূহ হবে তা হলো:

• কান কাটা বা শিং ভাংগা :

এ ত্রুটিযুক্ত পশুর কুরবানী মাকরূহ। তবে আদায় হয়ে যাবে। কারণ, এতে মাংসের কোন ক্ষতি বা কম হয় না এবং সাধারণত এমন ত্রুটি পশুর মধ্যে বেশী পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কিন্তু যে পশুর জন্ম থেকেই শিং বা কান নেই তার দ্বারা কুরবানী মাকরূহ নয়। যেহেতু ভাঙ্গা বা কাটাতে পশুর রক্তাক্ত ও ক্লিষ্ট হয়; যা এক প্রকার রোগের মতো। কিন্তু জন্ম থেকে না থাকাটা এ ধরনের কোন রোগ নয়। অবশ্য পূর্ণাঙ্গ পশুই উত্তম।

• লেজ কাটা:

যে পশুর পূর্ণ অথবা কিছু অংশ লেজ কাটা গেছে তার কুরবানী মাকরূহ। ভেড়ার পুচ্ছে মাংসপিণ্ড কাটা থাকলে তার কুরবানী সিদ্ধ নয়। যেহেতু তা এক স্পষ্ট দাগ এবং সামান্য অংশ। অবশ্য এমন জাতের ভেড়া যার পশ্চাতে মাংসপিণ্ড হয় না তার দ্বারা কুরবানী শুদ্ধ।

• কান চিরা, দৈর্ঘ্যে চিরা, পশ্চাৎ থেকে চিরা, সম্মুখ থেকে প্রস্থে চিরা, কান ফাটা ইতাদি।

• লিঙ্গ কাটা। অবশ্য অণ্ডকোষ কাটা মাকরূহ নয়। যেহেতু খাসীর দেহ হৃষ্টপুষ্ট ও মাংস উৎকৃষ্ট হয়।

• দাঁত ভাঙ্গা ও চামড়ার কোন অংশ অগভীর কাটা বা চিরা ইত্যাদি।

(৪) যে পশুটি কুরবানী করা হবে তার উপর কুরবানী দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। অর্থাৎ কুরবানীদাতা যেন বৈধভাবে ঐ পশুর মালিক হয়। সুতরাং চুরিকৃত, আত্মসাৎ কৃত, বন্ধকী পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া, অবৈধ ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রীত পশু দ্বারা কুরবানী আদায় হবে না। একই ভাবে অবৈধ মূল্য যেমন সুদ, ঘুষ, প্রবঞ্চনা, ধোঁকা প্রভৃতির অর্থ) দ্বারা ক্রীত পশুর কুরবানী জায়েয নয়। যেহেতু কুরবানী এক ইবাদত যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয়। আর কুরবানীর পশুর মালিক হওয়ার ঐ সকল পদ্ধতি হলো পাপপূর্ণ। আর পাপ করার মাধ্যমে কোন প্রকার নৈকট্য লাভ সম্ভব নয়। বরং তাতে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত কিছু গ্রহণ করেন না।’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৫)।

কুরবানীর পশু নির্ধারণে মুসলিম সবিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত, যাতে পশু সর্বগুণে সম্পূর্ণ হয়। যেহেতু এটা আল্লাহর নিদর্শন ও তা‘যীমযোগ্য দ্বীনি প্রতিক সমূহের অন্যতম যা আত্মসংযম ও তাক্বওয়ার পরিচায়ক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ الحج
٣٢
অর্থাৎ, ‘এটিই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীর সম্মান করলে এতে তার হৃদয়ের তাক্বওয়া সঞ্জাত। [সূরা হাজ্জ:৩২]।

এতো সাধারণ দ্বীনী প্রতীকসমূহের কথা। নির্দিষ্টভাবে কুরবানীর পশু যে এক দ্বীনী প্রতীক এবং তার যত্ন করা যে আল্লাহর সম্মান ও তা‘যীম করার শামীল, সে কথা অন্য এক আয়াত আমাদেরকে নির্দেশ করে। মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ (কুরবানীর)

وَٱلۡبُدۡنَ جَعَلۡنَٰهَا لَكُم مِّن شَعَٰٓئِرِ ٱللَّهِ لَكُمۡ الحج ٣٦

উটকে তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম করেছি। [সূরা হাজ্জ:৩৬]

এখানে কুরবানী পশুর তা‘যীম হবে তা উত্তম নির্বাচনের মাধ্যমে। ইবনে আববাস (রা.) প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘কুরবানী পশুর সম্মান করার অর্থ হলো, পুষ্ট, মাংস, সুন্দর ও বড় পশু নির্বাচন করা।’ (তাফসীরু ইবনু কাসীর, ৩৬/২২৯)

রাসূল (সা.) এর যুগে মুসলিমগণ দামী পশু কুরবানীর জন্য ক্রয় করতেন, মোটা-তাজা এবং উত্তম পশু বাছাই করতেন; যার দ্বারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর তা‘যীম ঘোষণা করতেন। যা একমাত্র তাদের তাক্বওয়া, আল্লাহর প্রতি ভীতি ও ভালবাসা থেকে উদগত হতো। (ফতহুল বারী, ১০/০৯)

অবশ্য মুসলিমকে এ ক্ষেত্রে খেয়াল করা উচিত যে, মোটা-তাজা পশু কুরবানী করার উদ্দেশ্য কেবল উত্তম মাংস খাওয়া এবং আপোষে প্রতিযোগিতা করা না হয়। বরং উদ্দেশ্য আল্লাহর নিদর্শন ও ধর্মীয় এক প্রতীকের তা‘যীম এবং তার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। কালো রঙ অপেক্ষা ধূসর রঙের পশু কুরবানী উত্তম। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কালো রঙের দু‘টি কুরবানী অপেক্ষা ধূসর রঙের একটি কুরবানী আল্লাহর নিকট অধিকতর পছন্দনীয়।’ (আহমাদ, হাকিম, সিলসিলাহ সহীহাহ, হাদীস নং ১৮৬১)

সুতরাং কুরবানীর পশু ক্রয়ের সময় ত্রুটিমুক্ত দেখা ও তার বয়সের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। যেহেতু পশু যত নিখুত হবে তত আল্লাহর নিকট প্রিয় হবে, সওয়াবেও খুব বড় হবে এবং কুরবানীদাতার আন্তরিক তাক্বওয়ার পরিচায়ক হবে।

কারণ আল্লাহ বলেন:

لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمۡ لِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٧الحج: ٣٧

অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ওগুলোর (কুরবানীর পশুর) না গোশত পৌঁছে, আর না রক্ত পৌঁছে বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি ওগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পার এজন্য যে, তিনি তোমাদের সঠিক পথ দেখিয়েছেন, কাজেই সৎকর্মশীলদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। [সূরা হাজ্জ:৩৭]।


Pages: 1 ... 9 10 [11] 12 13