Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - Badshah Mamun

Pages: 1 ... 131 132 [133] 134
1981
বিশ্বের সবচেয়ে খর্বকায় নারী
ভারতের শিক্ষার্থী জ্যোতি আমগে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতির নারীর খেতাব পেয়েছেন। তাঁর উচ্চতা ৬২ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার (দুই ফুট সাত ইঞ্চি)। গতকাল শুক্রবার গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এ কথা নিশ্চিত করেছে।
নাগপুরে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ১৮তম জন্মদিন উদ্যাপনের পর আমগেকে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বকায় নারীর খেতাব দেওয়া হয়। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের বিচারক রব মলয় বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের উপস্থিতিতে চিকিৎসক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমগের উচ্চতা তিনবার মেপেছেন। তবে সামান্য তারতম্য হওয়ায় আমরা গড় উচ্চতাকেই গ্রহণ করেছি।’

সবচেয়ে খর্বাকৃতির নারী নির্বাচিত হওয়ার পর আমগেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ দেওয়া হয়। এ সময় তাঁর বাবা কিষান ও মা রঞ্জনা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী লাল শাড়ি পরা আমগে বলেন, ‘সনদ পেয়ে আমি খুব আনন্দিত।’ রব মলয় বলেন, ‘এটি প্রতীকী রেকর্ড।’
আমগের উচ্চতা চার মাসের কন্যাসন্তানদের গড় উচ্চতার সমান। তিনি বলিউডের অভিনেত্রী হতে চান বলে তাঁর বাবা জানিয়েছেন।
এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বকায় নারীর খেতাব ছিল ব্রিজেত জর্ডানের। তাঁর বাড়ি যুক্তরাজ্যের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে। জর্ডানের উচ্চতা ৬৯ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার। এএফপি।
Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-17/news/209391

1982
জুলাই, ১৯৭১: বাল্টিমোর অবরোধ,
পাকিস্তানি জাহাজ হটাও,
আলীম আজিজ .
১৯৭১ সাল, পূর্ব পাকিস্তানে নির্বিচারে গণহত্যা চলছে। সেই গণহত্যায় ব্যবহূত হচ্ছে মার্কিন সমরাস্ত্র। এ সময়েই খবর এল বাল্টিমোর বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মা আসছে যুদ্ধবিমানসহ অন্যান্য মার্কিন অস্ত্রের চালান নিতে। মার্কিন সরকারের এই অন্যায় ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বরতার প্রতিবাদে বাল্টিমোরের একদল নারী-পুরুষ সিদ্ধান্ত নিলেন পদ্মায় কোনো অস্ত্র উঠবে না। শুরু হলো পদ্মা অবরোধ আন্দোলন।

কিছু করতে চাই
জুন মাসজুড়ে পত্রিকার পাতায় ছাপা হচ্ছিল ভয়াবহ সব ছবি: হাজার হাজার বাঙালি প্রাণভয়ে পালিয়ে আসছে ভারতে, সহায়-সম্বলহীন দুর্বল অভুক্ত মানুষের দীর্ঘ কাফেলা। তাদের একেকজনের চোখেমুখে আতঙ্ক, দিশেহারা দৃষ্টি। খবর আসছিল পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে।
১৯৭১ সালের গ্রীষ্মের ওই সময় পশ্চিম ফিলাডেলফিয়ার কিছু শান্তিকামী মানুষ একত্র হয়েছে ফিলাডেলফিয়া লাইফ সেন্টারে অহিংস আন্দোলনের ওপর প্রশিক্ষণ ও আলোচনার জন্য; আয়োজক কোয়েকার ফাউন্ডেশন, এটা ঈশ্বরবিশ্বাসী শান্তিকামী কিছু মানুষের সংগঠন।
ওই সভারই একজন সদস্য রিচার্ড টেলর, যিনি বিভিন্ন কারণে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর একটি প্রতিদিনের মিডিয়ার খবর আর তাঁর বন্ধু বিল ময়ার। টেলরের মতো ময়ারও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। বিল ময়ার গিয়েছিলেন মিলাওয়াকির এক শান্তি আলোচনায়, সেখানে দেখা পুরোনো বন্ধু ডিক মারের সঙ্গে। তাঁর কাছ থেকেই ময়ার জানতে পারেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দিচ্ছে। তিনি সাক্ষী হিসেবে হাজির করেছেন পাকিস্তানি এক শান্তিকর্মী একবাল আহমেদকে। একবাল বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছেন: যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা শুধু সমর্থনেই সীমাবদ্ধ নেই। তারা সমরাস্ত্রসহ অন্য সব রকম সাহায্যই পাঠাচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের খুনি সরকারকে।
বিল কৌতূহল থেকেই ডিক মারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র পাকিস্তানে যাচ্ছে কীভাবে?’
‘জাহাজে?’ জবাব এসেছিল।
বিল ময়ার আগপিছ না ভেবেই বলেছিলেন, ‘ওই জাহাজ কোনোভাবে আটকে দেওয়া যায় না?’
ডিক উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ যায় তো...জাহাজগুলো তো ইস্ট কোস্টের বন্দরেই আসছে। তোমার কিছু একটা করা উচিত।’ এই ভাবনাই ক্রমাগত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল বিল ময়ারকে।
সে কারণেই কোয়েকারের ২২ জুনের সভায় হাজির করা হয় ওইদিন টাইম-এ টেড জুলকের লেখা একটি প্রতিবেদন, তাতে বলা হয়েছে: যদিও আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, মার্চে পাকিস্তানের দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তানি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে আসছে অস্ত্রের চালান নিতে...
মার্কিন সরকারের সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে পাকিস্তানি সামরিক সরকার, এটা অনুধাবন করার পর থেকেই সদস্যদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ট্যাক্সের টাকা ব্যবহার হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ হত্যায়। ‘আমাদের যুদ্ধবিমান, ট্যাংক আর বন্দুক-গোলবারুদ ব্যবহার করে মারা হচ্ছে শত শত নিরীহ মানুষকে। আমাদের বুলেট ব্যবহার করা হচ্ছে নির্বাচনে বিজয়ী একটি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।’
‘আমাদের এখন কী করা উচিত?’ কেউ একজন প্রশ্ন করেছিলেন। ‘হারবারে মাইন পেতে রাখব।’
বিল ময়ার চিন্তাভাবনা না করেই বলেছিলেন, ‘মাইন নয়, জাহাজ অবরোধ করতে হবে। তবে সেটা আমাদের অহিংস নীতিও বজায় রেখে।’
এভাবেই সমুদ্রতীরের এক শহরে হাজার মাইল দূরের নিদারুণ কষ্টে থাকা পূর্ববঙ্গের মানুষের জন্য নিজের দেশের সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পরিকল্পনা করে ফিলাডেলফিয়ার একদল শান্তিকামী মানুষ।

ফ্রেন্ডস অব বেঙ্গল
সুলতানা ক্রিপেনডরফ যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। জার্মান বংশোদ্ভূত স্বামী ক্লাউস কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট। তাঁদের প্রথম সন্তান কাইহান—কিন্তু তিন মাস ধরে এই পরিবারের সুখ-শান্তি সব হারাম হয়ে গেছে। বাঙালি মেয়ে সুলতানার পুরো পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবাই থাকে পূর্ববঙ্গে। আর প্রতিদিন মিডিয়া খবর দিচ্ছে, পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে সেখানে, বাবা-মায়ের চিন্তায়, দেশের চিন্তায় সুস্থির হতে পারছেন না সুলতানা। পড়াশোনা বাদ পড়েছে, ছোট্ট শিশুপুত্র কাইহানের দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে না, তাঁর অস্থির সময় কাটছে টেলিফোনের সামনে। একের পর এক ফোন করছেন, যদি কোনো সাহায্য মেলে। ফোন করেছেন বিভিন্ন পিস গ্রুপকে, রাজনীতিতে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনকে, উইমেন্স স্ট্রাইক ফর পিস, দ্য উইমেন ইন্টারন্যাশনাল লিগ অব পিস অ্যান্ড ফ্রিডম—কাউকে বাদ রাখেননি। সবাই সমবেদনা জানিয়েছে। কিন্তু তারা ব্যস্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যাঁদের অনেকেই দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছেন, তাঁদের কাছেও সাহায্য চেয়েছেন, চিঠি লিখেছেন, কিন্তু তাঁরাও কেউ জড়াতে চাননি।
শেষ পর্যন্ত এপ্রিলের শেষাশেষি, অনেক চেষ্টায় বাঙালি ও মার্কিনদের ছোট একটা দলকে একত্র করে গঠন করা হলো ‘ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল’।
এই দলের কারোরই এর আগে এ ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। তাই দলটি শেষ পর্যন্ত ভালোমতো কাজ করবে কিনা এই নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। কিন্তু সুলতানা ও অন্যান্য বাঙালি এবং মার্কিনদের আন্তরিক চেষ্টায় ধীরে ধীরে সংগঠনটি শক্তি অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে নানা রকম কর্মকাণ্ড চালাতে শুরু করে, ফিলাডেলফিয়ার বাইরেও যোগাযোগ হতে থাকে বাংলাদেশের প্রতি সমব্যথিদের সঙ্গে।
২২ জুন টাইমের রিপোর্ট থেকেই যখন জানা গেল: ‘এস এস পদ্মা’ নামে একটি পাকিস্তানি জাহাজ বাল্টিমোর বন্দরে অস্ত্র বোঝাই করবে।
ফলে ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল এবং ফিলাডেলফিয়ার কোয়েকার সংগঠন একত্র হয়ে সিদ্ধান্ত নিল:‘পদ্মা’য় অস্ত্রের চালান ঠেকানোর চেষ্টা চালাবে তারা।
ড. উইলিয়াম গ্রিনাউ জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে কলেরা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি পেন্টাগনের একটি গোপন সূত্র থেকে জানতে পারেন, শুধু পদ্মা নয় একাধিক পাকিস্তানি জাহাজ অস্ত্রের চালান গ্রহণ করতে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে রয়েছে। এর একটি কিংবা দুটি আসছে ইস্ট কোস্টের বন্দরগুলোতে। এ খবর পাওয়ামাত্র গ্রিনাউ দেখা করেন টাইম-এর সাংবাদিক ট্যাড জুলের সঙ্গে। তারই ফল ২২ জুন টাইম-এর রিপোর্ট। জুল লেখেন: নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে। গ্রিনাইয়ের সূত্র ব্যবহার করেই...টাইম-এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ট্যাড পদ্মা নামের পাকিস্তানের জাহাজের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। বলা হয়, পদ্মায় যুদ্ধবিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ ও সামরিক যানের যন্ত্রাংশ এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করা হবে।

কোয়েকারের কজন কীর্তিমান
কোয়েকার সদস্যদের শুরুর দিকে আন্দোলনে খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল যোগ দেওয়ার পর, সুলতানার মুখে পূর্ব পাকিস্তানে নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নের কাহিনি শুনে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়ে যায়। প্রথম দিকের ৩০-৪০ জন দলের সদস্য সংখ্যা এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২০০ জনের ওপরে। এদের একজন রিচার্ড টেলরের পুরোনো বন্ধু জ্যাক প্যাটারসন—বাল্টিমোরের আমেরিকান ফ্রেন্ডস সোসাইটির বাল্টিমোর শাখার সভাপতি—পত্রিকা-ম্যাগাজিন পড়ে এরই মধ্যে পাকিস্তানযুদ্ধের অনেক খবরই তিনি জেনেছেন। এসেছেন অ্যালেক্স কক্স—লাল চুলের এক টেক্সান, ফিলাডেলফিয়া স্কুল কাউন্সেলর, সদ্য ন্যাশনাল এডুকেশন কনভেনশন শেষ করে ফিরেছেন। ‘আমাদের ট্যাক্সের টাকায় মিলিটারি সাহায্য যাচ্ছে পাকিস্তানে। এটা আমার মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ অনুভূতি তৈরি করে...জাহাজ আটকানোর পরিকল্পনাটা আমার কাছে নাটকীয় মনে হলেও এই ঘটনা থেকে মার্কিন জনগণ প্রতিবাদের কথা জানতে পারবে।’ বাল্টিমোর সানকে বলেছিলেন।
ফিলাডেলফিয়া শহরতলির এক গোলাঘরের কর্মচারী ওয়েন লাউজার। ২৩ বছর বয়সী এই শান্তিকর্মী এর আগেও ১৯৬৯ সালে ক্লিভল্যান্ড থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত যুদ্ধবিরোধী এক পদযাত্রায় অংশ নিয়ে প্রতিবাদলিপি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে। ওয়েনই প্রথম প্রস্তাব করেন জাহাজ প্রতিরোধে ক্যানো (ছোট আকারের নৌকা) ব্যবহার করার। ওয়েন নিজেও একজন দক্ষ ক্যানো-চালক।
স্যালি উইলোবি বড় হয়েছেন কোয়েকার শান্তিকর্মীবেষ্টিত পরিবারে। তাঁর বাবা জর্জ উইলোবি ও মা লিলিয়ান গান্ধীবাদে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। ২৪ বছর বয়সী স্যালি মাত্র কিউবায় নৌকা চালিয়ে যুদ্ধবিরোধী এক শান্তি অভিযাত্রা শেষ করে ফিরেছেন। পাকিস্তানি জাহাজ হটানোর পরিকল্পনায় তিনিও রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠেন।
কোয়েকারের আরেক সদস্য ফিলাডেলফিয়া স্কুলের স্টাফ পারসন মাল স্কট আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তার পুরো পরিবার নিয়ে।

পদ্মা নিয়ে ধূম্রজাল
বাল্টিমোর সান-এ ছোট্ট একটা সংবাদ ছাপা হয় বিজনেস পাতায়: বুধবার, পদ্মা ভিড়বে বাল্টিমোরে, ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সি।
১১ জুলাই বাল্টিমোর হারবারে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদকারীরা মিছিল নিয়ে হাজির হন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনের সামনে, বন্দরে। আন্দোলনের এই সময়ে একেকজন সদস্য দিনে ১৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেছেন। কর্মীরা শুধু আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তাঁরা লিফলেট, প্ল্যাকার্ড-সাইন তৈরি; প্রেস রিলিজ, টিভি স্টেশনে খবর পাঠানোর মতো কাজও করেছেন।
পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মার ভেড়ার কথা ছিল বন্দরের ৮ নম্বর পিয়ারের কভিংটনে। কিন্তু ১৩ জুলাইয়েও পদ্মার দেখা নেই। ‘এক শ একটা গুজব ছড়াচ্ছে চারদিকে’, বিল ময়ার লেখেন তাঁর জার্নালে, ‘লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ভাবছে, পদ্মা কোথায়?’
অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ, পদ্মার এজেন্ট ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সি—কেউ পদ্মা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয়। মুখে সবাই কলুপ এঁটে বসে আছে যেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, পদ্মা আদৌ বাল্টিমোরে আসবে কি না, তারই নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে পদ্মার আগের যাত্রায় জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়ে বাল্টিমোরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, এমন কয়েকজন বাঙালি নাবিকও যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে। তাঁরা জড়ো হয়েছেন বন্দরের হকিন্স পয়েন্টে। পদ্মা বন্দরে ঢুকলে তাঁরাই সবার আগে দেখতে পাবেন। দেখামাত্র খবর ছড়িয়ে দেওয়া হবে অন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে।
সর্বশেষ বন্দরের বে পাইলট জানান, পদ্মা বন্দরে ভিড়বে ১৪ জুলাই, বুধবার।

শেষ কথা
১৪ জুলাই সকালে ৮ নম্বর পিয়ার অভিমুখী যাত্রা শুরু হলো আন্দোলনকারীদের। শুরুতে দলটা ছোট থাকলেও দেখতে দেখতে জমায়েত দুশর কাছাকাছি চলে গেল। খবর পেয়ে হাজির হয়েছে টিভি ক্রু, বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক আর পুলিশ। জাহাজের কোনো কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ পিছপা হবে না। বার্তা খুব স্পষ্ট, কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, পদ্মার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তাদেরও নৈতিক সায় আছে। নেতৃত্বে রিচার্ড টেলর, ছোট ছোট নৌকা ক্যানো আর কায়াক নিয়ে নেমে পড়ল তাঁরা: ওয়েন লাউজার আর মাল স্কট ৮ নম্বর পিয়ারের কাছাকাছি গিয়ে দেখে, সেখানে আগেই আরও তিনটি কায়াক নিয়ে পৌঁছে গেছে স্যালি উইলোবি, স্টেফানি হলিম্যান আর অ্যালেক্স কক্স। কিন্তু পদ্মার কোনো দেখা নেই তখনো। ফলে ক্যানো আর কায়াকের ৮ নম্বর পিয়ার অভিমুখী এই অবরোধযাত্রা পরিণত হলো নিছক এক মহড়ায়। উপকূল থেকে ওয়াকিটকিতে বিল মারে জানাল, পাকা খবর জানা গেছে, পদ্মা বন্দরে ভিড়বে রাতে। কাজেই সবাই স্টোনি হাউসে ফিরে এল। নৌকাগুলো যেকোনো মুহূর্তে পানিতে নামার উপযোগী করে তৈরি রাখা হলো।
সন্ধ্যা ছটায় যখন সাপার গরম করা হচ্ছিল, তখনই ফোন বেজে উঠল, পদ্মা হারবারে ঢুকেছে।
এর পরের ঘটনা: ক্যানো আর কায়াকে চেপে বিশাল আকৃতির পদ্মার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে গ্রেপ্তার হলো—রিচার্ড টেলর, মাল স্কট, স্যালি উইলোবি, স্টেফানি হলিম্যান, ওয়েন লাউজারসহ মোট সাতজন। যদিও এক রাতের বেশি জেলে কাটাতে হলো না তাঁদের। এরপর দ্রুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল। বন্দরের মাল ওঠানো-নামানোর কাজে নিয়োজিত লংসোরম্যান অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর পদ্মায় কোনো কারগো ওঠা-নামায় তাদের শ্রমিক অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিল।
ফিলাডেলফিয়ার এই অহিংস আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকার অন্যত্রও। পদ্মার মতো সামরিক সরঞ্জাম না ভরেই আরও পাকিস্তানি জাহাজকে ফিরে যেতে হয় নিউইর্য়ক থেকে সুটলাজ, ফিলাডেলফিয়া সিটি হারবার থেকে আল-আহমাদি জাহাজকে। আন্দোলন পৌঁছে যায় হোয়াইট হাউসের দোরগোড়া পর্যন্ত। সেখানে শান্তিকামী মানুুষ ভারতে বাঙালিদের শরণার্থী শিবিরের আদলে গড়ে তোলে প্রতিবাদ ক্যাম্প।
সূত্র: রিচার্ড টেলরের ব্লকেড গ্রন্থ, ৫ ডিসেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে নেওয়া স্যালি উইলোবির সাক্ষাৎকার

Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-09/news/207249

1983
মফস্বলে দেশসেরা বিদ্যালয়!
মজিবর রহমান খান,
ঠাকুরগাঁও

আমাদের দেশে শহর বা শহরতলির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোই দেশসেরা হবে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরাই হবে সেরা মেধাবী—এটা যেন ধরেই নেওয়া হয়। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে। সেই ব্যতিক্রমী একটি বিদ্যালয় হলো ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
২০০৮ সালে দেশসেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে বিদ্যালয়টি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর স্থানীয়দের চেষ্টার ফসল এই অর্জন।
বিদ্যালয়ে এক দিন: সম্প্রতি এক সকালে বিদ্যালয়ের চত্বরে ঢুকতেই নজর কাড়ে বিদ্যালয় মাঠের ঝকঝকে পরিবেশ। পতাকা দণ্ডে পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। পাশেই স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় সাজানো হরেক রকম ফুলগাছের টব।
বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষগুলোর নাম রাখা হয়েছে বিভিন্ন মনীষীর নামে। কক্ষের দেয়ালে তাঁদের ছবিও আঁকা। ছবির পাশে মনীষীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী। মনীষীদের মধ্যে আছেন জাতীয় নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, ভাষাশহীদ বরকত, রফিক, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কবি সুফিয়া কামাল, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, পল্লিকবি জসীমউদ্দীন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। শিশুদের ছোট থেকেই দেশের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য আঁকা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিষয়ক নানা ছবি। রয়েছে মনীষীদের বাণী।
বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ কম্পিউটার ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে রয়েছে তিনটি কম্পিউটার। তৃতীয় শ্রেণী থেকেই এখানে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে ই-বুকের মাধ্যমে গণিত বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছিলেন সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা আক্তার। ‘আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করতে নিয়মিত মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয়। এতে অমনোযোগী শিক্ষার্থীদেরও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।’ জানালেন তিনি।
বিদ্যালয়ের কার্যালয় কক্ষটি সাজানো বিভিন্ন স্মারক ও পুরস্কার দিয়ে। তিনটি আলমারিতে শিশুমানস বই ও শিক্ষা উপকরণ। দেয়ালে সেঁটে দেওয়া তথ্যবোর্ড। সেখানে দেওয়া তথ্যমতে, বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী ৮৩৭ জন। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় ২০১০ সাল পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ের ২৩৯ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে। ২০১০ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ১৪২ জন শিশু অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে।
বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকসহ ছয়টি শ্রেণীতে মোট ১১টি শাখা। প্রতিটি শাখায় ন্যূনতম ৫০ জন শিক্ষার্থী। সবগুলো শাখায় আছে একজন করে ক্যাপ্টেন। শিক্ষার্থীদের খাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি ক্যানটিন। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষেই আছে পানি খাওয়ার ব্যবস্থা।

প্রতিষ্ঠাকালের কথা: ১৯৩০ সালের দিকে রানীশংকৈলের পালপাড়া গ্রামের চন্দ্র হরিপাল নিজ বাড়িতে একটি পাঠশালা খোলেন। নাম দেন ‘চন্দ্র হরির পাঠশালা’। তাঁর মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যায় পাঠশালাটি। ১৯৩৫ সালে ওই গ্রামের সহোদর চিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ রক্ষিত ও সুরেন্দ্রনাথ রক্ষিতের দান করা এক একর পাঁচ শতক জমিতে বিদ্যালয় করা হয়। তবে নাম দেওয়া হয় রানীশংকৈল প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯২ সালে উপজেলার মডেল বিদ্যালয় করা হয়।
বদলের শুরু: বিদ্যালয়ের বয়োজ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা রেবা রানী রায় জানালেন, ১৯৯২ সালে বর্তমান প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার যোগ দেন। তখন বিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে তাঁর মন খারাপ হয়ে যেত। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ নেই, মাঠের নোংরা আবর্জনার দুর্গন্ধ। একদিন স্কুলের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ডেকে প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘বিদ্যালয়টি কার?’ উত্তরে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে বলল, ‘আমাদের’। তিনি জানতে চাইলেন, তাহলে বিদ্যালয়ের মাঠ এত নোংরা কেন? এরপর প্রধান শিক্ষক নিজেই বললেন, ‘আজ আমরা মাঠের মাত্র চার হাত জায়গা পরিষ্কার করব।’ এই বলে তিনি মাঠ পরিষ্কার শুরু করলেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই। সেই শুরু বিদ্যালয়ের বদলে যাওয়া।
এরপর প্রধান শিক্ষক এলাকার সুধীজনদের নিয়ে বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা চাইলেন। সেদিনই সুধী সমাজের সহায়তায় বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়। পরে সবার সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয় দুটি শ্রেণীকক্ষ। প্রধান শিক্ষকের পরিকল্পনায় শিক্ষকেরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাড়ি পরিদর্শন করে কথা বলেন অভিভাবকদের সঙ্গে। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ‘মা’ সমাবেশ শুরু হলো। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ বাস্তবায়িত হলো বিদ্যালয়ে। উপজেলার সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে সর্বজনীন একটি কমিটি করা হলো। সবার সহযোগিতায় শিক্ষার চমৎকার পরিবেশ নিশ্চিত হলো, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়ে গেল, ফলও ভালো হতে থাকল।
অন্য বিদ্যালয় থেকে আলাদা: বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে কল্যাণ সমিতি ও শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি।
২০০৮ সালে প্রতিটি অভিভাবকের কাছ থেকে মাথাপিছু অতিরিক্ত দুই টাকা করে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কল্যাণ সমিতির তহবিল। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের জমিতে ভাড়া দেওয়া চারটি দোকান থেকে ভাড়া ও প্রতি মাসে কিছু অনুদান এই তহবিলে জমা হয়। সেই তহবিল থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। ওই তহবিল থেকে চলতি মাসে ১৩৩ জন শিক্ষার্থীকে নতুন পোশাক ও একজনকে চিকিৎসা-সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দরিদ্রদের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে বই-খাতা ও কলম।
বিদ্যালয়ে কম্পিউটার, শরীরচর্চা ও নাচ-গানের জন্য তিন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাখা হয়েছে নৈশপ্রহরী, অফিস সহকারী ও দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য রাতে আড়াই ঘণ্টা পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আছে জেনারেটর। রাতে অতিরিক্ত চারজন শিক্ষক এই শিক্ষার্থীদের পড়ান। এসব খরচ মেটানো হয় কল্যাণ তহবিল থেকেই।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খোঁজখবর নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের মুঠোফোন নম্বর বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। উপস্থিতি বাড়াতে পরীক্ষায় উপস্থিতির ওপর সংরক্ষিত রাখা হয়েছে ৫০ নম্বর।
বিদ্যালয়ের অর্জন: রানীশংকৈল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উকিল চন্দ্র রায় জানান, ২০০৮ সালে রানীশংকৈল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দেশের সেরা বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বিদ্যালয়টি ২০১০ সালে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ক্যাটাগরিতে রংপুর বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করে।
শিক্ষার্থীদের কথা: চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া জান্নাতি বলে, ‘বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষকদের ব্যবহার সব সময় আমাদের আকৃষ্ট করে। পড়া না বুঝলে স্যার-আপারা কখনোই বিরক্ত বোধ করেন না, বারবার বুঝিয়ে দেন।’ পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রাফি তোরাব বলে, ‘আমি ঠাকুরগাঁও শহর ছেড়ে এখানে পড়তে এসেছি। বিদ্যালয়টি ভালো বলে বাবা আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।’
প্রধান শিক্ষক যা বলেন: প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার এই সাফল্য সম্পর্কে বলেন, ‘নিজের কাজটুকু সব সময় যত্ন দিয়ে করতে হয়। একজন মানুষের পেশা ও নেশার মধ্যে সমন্বয় না থাকলে ভালো কিছু করতে পারে না। আমি পেশাকে নেশা হিসেবে নিয়েছি। আর এত সাড়া দিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার সুধীজন। সবার সহায়তায় এ সাফল্য।’
তাঁদের কথা: বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সইদুল হক বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি গর্বিত। যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই বিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষা ধরে রাখতে চাই।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম তৌফিকুজ্জামান বলেন, ‘বিদ্যালয়টি সারা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-17/news/209411

1984
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো
নির্মলেন্দু গুণ

একটি কবিতা লেখা হবে, তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’

এই শিশু-পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু-পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে,
ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হূদয় মাঠখানি?

জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত
কালো হাত। তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ...।

হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু-পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর।
না পার্ক না ফুলের বাগান, ...এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখণ্ড আকাশ যে রকম, সে রকম দিগন্তপ্লাবিত
ধু-ধু মাঠ ছিল দুর্বাদলে ঢাকা, সবুজের সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু-ধু মাঠের সবুজে।

কপালে, কবজিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক;
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক।
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে
আর তোমাদের মতো শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে।

একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্য কী ব্যাকুল
প্রতীক্ষা মানুষের: ‘কখন আসবে কবি?’
‘কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।

তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হূদয়ে লাগিল দোলা,
জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা।
কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর
অমর কবিতাখানি:
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।
চাষাভুষার কাব্য (১৯৮১) থেকে

Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-15/news/141513

1985

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একাত্তরের প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দিবসই রক্তের অক্ষরে লেখা। তার পরও কোনো কোনো তারিখ ত্যাগে, আত্মদানে ও গৌরবের মহিমায় হয়ে ওঠে সমুজ্জ্বল। একটি তারিখ পরিণত হয় সংগ্রামের প্রতীকে, শ্রদ্ধা ও বিজয়ের অবিনাশী স্মারকে।
একাত্তরের এ রকমই ১০টি তারিখ নিয়ে প্রথম আলোর স্বাধীনতা দিবস সংখ্যাটি সাজানো হয়েছে—
৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ;
২৬ মার্চ, স্বাধীনতা ঘোষণা;
১৭ এপ্রিল, মুজিবনগর সরকার গঠন;
১১ জুলাই, সেক্টর কমান্ডারদের বৈঠক;
১ আগস্ট, দ্যকনসার্ট ফর বাংলাদেশ;
৩ ডিসেম্বর, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ;
৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি;
৪-১৫ ডিসেম্বর, জাতিসংঘে বাংলাদেশ-বিতর্ক;
১৪ ডিসেম্বর, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং
১৬ ডিসেম্বর, চূড়ান্ত বিজয়।
একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে ভৌগোলিক সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বজনীন রূপ নিয়েছিল, কোনো কোনো তারিখে তাও প্রতীকায়িত হয়েছে। শোক ও বীরত্বগাথায় ঋদ্ধ এ দিনগুলো আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কেবল ইতিহাসের সাক্ষ্য নয়, ভবিষ্যতের পথচলায় নিত্যপ্রেরণা হিসেবেও।
আমরা উদ্যাপন করছি স্বাধীনতার ৪০ বছর। সুন্দর, আলোকিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এখন আমাদের সামনে পরিবর্তনের সংগ্রাম। আমাদের বদলে দেওয়ার, বদলে যাওয়ার সংগ্রামে পথচলার প্রেরণা জোগাবে একাত্তরের এই দিনগুলো।
মতিউর রহমান
Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-15/news/141507

1986
Heritage/Culture / Districts of Bangladesh
« on: December 15, 2011, 04:43:01 PM »
Dear all,

We all are Bangladeshi. We have 64 districts in our country.
We should know the detail of every district.
In this purpose this address can help us : http://en.wikipedia.org/wiki/Districts_of_Bangladesh

1987
Heritage/Culture / Country Profile of Bangladesh
« on: December 15, 2011, 02:12:27 PM »
Dear all,

Bangladesh is our motherland. So we have to a clear concept about our country.

So to get clear concept we can get help from this link : http://www.bdgateway.org/country_profile.php#bdmap

1988
Fresh Graduate / Re: What Not to Say During a Job Interview
« on: December 15, 2011, 01:19:22 PM »
Fresh candidates may often get nervous while facing a job interview. I think these tips will help the freshers to get a good idea on his/her interview.

1989
মৃত্যুর আগে কেউই জানে না জীবনের মূল্য ও পরিণতি। কিন্তু শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা জেনেছিলেন। চিঠিটা পড়ুন:

‘‘প্রিয় আব্বাজান! টেকেরঘাট হইতে
তাং-৩০/৭/৭১
আমার সালাম নিবেন। আশা করি খোদার কৃপায় ভালই আছেন। বাড়ির সকলের কাছে আমার শ্রেণীমত সালাম ও স্নেহ রইলো। বর্তমানে যুদ্ধে আছি। আলীরাজা, মাহতাব, রওশন, রুনু, ফুলমিয়া, ইব্রাহিম সকলেই একত্রে আছি। দেশের জন্য আমরা সকলেই জান কোরবান করিয়াছি। আমাদের জন্য ও দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য দোয়া করবেন। আমি জীবনকে তুচ্ছ মনে করি, কারণ দেশ স্বাধীন না হইলে জীবনের কোন মূল্য থাকিবে না। তাই যুদ্ধকে জীবনের পাথেয় হিসাবে নিলাম।
আমার অনুপস্থিতিতে মাকে কষ্ট দিলে আমি আপনাদের ক্ষমা করিব না। পাগলের সব জ্বালা সহ্য করিতে হইবে। চাচা-মামাদের ও বড় ভাইদের নিকট আমার ছালাম। বড় ভাইকে চাকুরীতে যোগ দিতে নিষেধ করিবেন। জীবনের চেয়ে চাকুরী বড় নয়। দাদুকে দোয়া করিতে বলিবেন। মৃত্যুর মুখে আছি। যে কোন সময় মৃত্যু হইতে পারে এবং মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছি। দোয়া করিবেন মৃত্যু হইলেও যেন দেশ স্বাধীন হয়। তখন দেখবেন লাখ লাখ ছেলে বাংলার বুকে পুত্র হারাকে বাবা বলে ডাকবে। এই ডাকের অপেক্ষায় থাকুন। আর আমার জন্য চিন্তার কোন কারণ নাই। আপনার দুই মেয়েকে পুরুষের মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। তবেই আপনার সকল সাধ মিটে যাবে।
দেশবাসী! স্বাধীন বাংলা কায়েমের জন্য দোয়া কর। মীরজাফরী করিও না, কারণ মুক্তিফৌজ তোমাদেরকে মাফ করিবে না এবং এই বাংলায় তোমাদের জায়গা দেবে না।
সালাম! দেশবাসী সালাম!
ইতি, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ৩০-৭-৭১ ইং’’

এর আট দিন পর কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র সিরাজ সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের যুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে জয়ী হন; কিন্তু সেটাই ছিল তাঁর শেষ যুদ্ধ। জয়ের উচ্ছ্বাসে স্লোগান দিতে গিয়ে অসাবধানে পজিশন ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েন, ঠিক তখনই পলায়মান শত্রুর ‘কাভারিং ফায়ারের’ একটি বুলেট এসে লাগল তাঁর চোখে। চিকিৎসার জন্য মিত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে ভারতে নেওয়ার পথেই শেষ নিঃশ্বাস নির্গত হয়। সন্ধ্যায় খাসিয়া পাহাড়ের কোলে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’-এর কাছাকাছি টেকেরঘাটে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। পরাধীন দেশের মাটি তিনি পাননি, কিন্তু স্বাধীনতার পরও কেন এক শহীদ বীরপ্রতীককে পড়ে থাকতে হবে সীমান্তের ওপারের নো ম্যান্স ল্যান্ডে?
প্রাণের চেয়ে বড় দান আর হয় না। তবে সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মনে করতেন, প্রাণের চেয়ে বড় দান আছে, তা হলো দেশভক্তি। সিরাজ দেশের জন্য প্রাণ ও ভক্তি দুটোই দিয়েছিলেন। তাই তো বলতে পারেন, ‘আমি জীবনকে তুচ্ছ মনে করি, কারণ দেশ স্বাধীন না হইলে জীবনের কোন মূল্য থাকিবে না। তাই যুদ্ধকে জীবনের পাথেয় হিসাবে নিলাম।’ সে সময় তাঁরা আত্মদানের মতো বিমূর্ত ভাষা বলতেন না, বলতেন ‘জান কোরবান’ করার কথা।
ছোট্ট একটি চিঠি, কিন্তু কেবল নিষ্ঠার শুদ্ধতাতেই নয়, নীতির শক্তিতেও অসামান্য। একাত্তরের চিঠির বেশির ভাগ চিঠিই মাকে সম্বোধন করা (প্রথমা প্রকাশন, ২০০৯)। সেই মা কেবল ব্যক্তিগত মা নন, যোদ্ধা ছেলে নিজে যেমন দেশের সন্তান হয়ে ওঠে, তেমনি জননীকেও ভাবে দেশমাতৃকার আদলে। ১৯ নভেম্বর, ১৯৭১ ‘যুদ্ধখানা হইতে তোমার পোলা’ নুরুল হক মাকে লেখেন, ‘আমার মা, আশা করি ভালোই আছ। কিন্তু আমি ভালো নাই। তোমায় ছাড়া কীভাবে ভালো থাকি! তোমার কথা শুধু মনে হয়। আমরা ১৭ জন। তার মধ্যে ছয়জন মারা গেছে, তবু যুদ্ধ চালাচ্ছি। শুধু তোমার কথা মনে হয়, তুমি বলেছিলে, “খোকা মোরে দেশটা স্বাধীন আইনা দে,’’ তাই আমি পিছুপা হই নাই, হবো না, দেশটাকে স্বাধীন করবই। রাত শেষে সকাল হইব, নতুন সূর্য উঠব, নতুন একটা বাংলাদেশ হইব...।’ জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে দেশমাতা আর জন্মদায়িনী যখন একাকার, তখন মায়ের ছেলেরাও অনায়াসে দেশের ছেলে হয়ে যায়।
কিন্তু সিরাজ মাকে সম্বোধন করে লিখতে পারেননি, কারণ মা ‘পাগল’। যোদ্ধা পুত্র তাই বাবাকে সম্বোধন করে লেখেন। তাতেও তাঁর উদ্বেল হূদয় তৃপ্ত হয় না; চিঠিটার শেষে তিনি দেশবাসীকেই ডাকেন:
‘দেশবাসী! স্বাধীন বাংলা কায়েমের জন্য দোয়া কর। মীরজাফরী করিও না, কারণ মুক্তিফৌজ তোমাদেরকে মাফ করিবে না এবং এই বাংলায় তোমাদের জায়গা দেবে না।’
পরিবারের দায়িত্ব হিসেবে বাবাকে যা বলেন, তা অসাধারণ।
‘আমার অনুপস্থিতিতে মাকে কষ্ট দিলে আমি আপনাদের ক্ষমা করিব না। পাগলের সব জ্বালা সহ্য করিতে হইবে।’
ভাইয়ের নিরাপত্তা নিয়ে এক বাক্যের উদ্বেগের পরই বোনদের বিষয়ে বলেন, ‘আপনার দুই মেয়েকে পুরুষের মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। তবেই আপনার সকল সাধ মিটে যাবে।’
একাত্তরের চেতনার দলিল ইতিহাসে যত না, তার থেকে বেশি মিলবে মুক্তিযোদ্ধাদের এসব চিঠিতে। চিঠিটা তিনি শেষ করেন জাতির প্রতি ডাক দিয়ে:
‘দেশবাসী! স্বাধীন বাংলা কায়েমের জন্য দোয়া কর। মীরজাফরী করিও না, কারণ মুক্তিফৌজ তোমাদেরকে মাফ করিবে না এবং এই বাংলায় তোমাদের জায়গা দেবে না।’
পরিবার ও দেশের জন্য তাঁর এই নির্দেশনার মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশের সত্যিকার মুক্তির শর্ত নিহিত ছিল। কিন্তু একাত্তরের পরের ইতিহাস সেই সব নির্দেশনা অমান্য করারই ইতিহাস।
যে ‘যুদ্ধকে জীবনের পাথেয় করে’ নিয়েছিলেন সিরাজরা, সেই যুদ্ধ পেরিয়ে তাঁরা আসতে পারেননি বর্তমানে। কিন্তু তাঁদের কৃতকর্ম, তাঁদের স্মৃতি ও চিঠির অস্তিত্ব এক নিত্য বর্তমানে। যখনই পড়ি এই চিঠিগুলো, মনে ভাসে বাংকারে শায়িত, অথবা অন্ধকারে নদী পেরোনো অথবা প্রশিক্ষণ শিবিরের তাঁবুতে রাত জাগা কোনো যুবকের ছবি। জীবিতের ক্ষয় আছে, শহীদেরা অক্ষয়, তাঁদের বয়স কখনো বাড়ে না। একাত্তরের চল্লিশ বছর পরও তাঁরা যুবকই রয়ে যান আমাদের মনে।
দেশটা বধ্যভূমিময়। আজকের তরুণ, যে মাটিতেই পা রাখো, জানবে আশপাশে কোথাও নিশ্চয়ই আছে কোনো না কোনো শহীদের গায়েবি কবর। তাই মাটির দিকে তাকিয়ো, জানিয়ো তোমার বা তোমার চেয়ে কম বয়সী কারও রক্ত-অস্থি-মাংস-চক্ষু সেই মাটিতে মিশে আছে। এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে এই ভাবনা আমাকে থরথর করে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। মনে হলো, ওখানে যে শুয়ে আছে, সে তো আমার চেয়েও কম বয়সী! একাত্তরের জাতকেরা এখন স্বাধীনতার সমান কিংবা কিছু বেশি বয়সী। তাদের মনেও নিশ্চয়ই এই অনুভূতি জাগে, কবরে শায়িত তাদের বাবা তাদের চেয়ে কত ছোট! কেবল বয়স পেরোনোর যোগ্যতাতেই আমরা এগিয়ে, কিন্তু তাদের সমান অবদান রাখার সুযোগ আমাদের কি হবে! আমাদের সময়ের তরুণেরা কি পারবে মুক্তিযুদ্ধের ফেলে আসা রণাঙ্গনে, মাটিচাপা বধ্যভূমিগুলোতে, লাখ লাখ ধর্ষিতার পিঠের নিচের অন্ধকার বাংলাদেশে, গোপন বন্দিশালায়, এক কোটি শরণার্থীর দেশত্যাগের মর্মান্তিক যাত্রাপথে, আহত-পর্যুদস্ত মুক্তিযোদ্ধা আর ভুক্তভোগীদের স্মৃতির মণিকোঠায় কোনো দিন পৌঁছাতে? যেখানে যন্ত্রণার শিখা অনির্বাণ জ্বলে। যে জীবন একাত্তরের, তার সঙ্গে কি আমাদের হবে দেখা?
যদি দেখা হয়, যদি জানা হয়, তাহলে তারা প্রশ্ন করবে, মেহনতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হকের ‘রাত শেষে সকাল হইব, নতুন সূর্য উঠব, নতুন একটা বাংলাদেশ হইব...’ এই বিশ্বাস কেন ব্যর্থ হয়েছে? শহীদ সিরাজের আকাঙ্ক্ষা মতো কেন বাংলাদেশের মেয়েরা পুরুষের সমান শিক্ষা ও অধিকার পায়নি? হত্যা, ধর্ষণ, শোষণ-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিতেও কেন হত্যা-ধর্ষণ, শোষণ-লুণ্ঠন কমিয়ে আনা যায়নি? কেন মীরজাফররা এখনো বাংলার মাটিতে প্রতাপের সঙ্গে বিরাজ করছে? কেন শিশুরাষ্ট্র বাংলাদেশ রূপকথার পিটারপ্যানের মতো শিশুই রয়ে গেল; আর পরিণত হলো না। হিসাব মেলে না। একাত্তরের অসম্পূর্ণ হিসাব মেলানোর দায় আজকের তরুণদের সামনে।
প্রয়াত সেক্টর কমান্ডার বীরোত্তম কর্নেল (অব.) নুরুজ্জামানকে একদিন টিভিতে দেখি। দেশের ভেতরে যুদ্ধ থেকে ফিরে শরণার্থী-শিবিরে এক অন্ধ বৃদ্ধকে পেয়েছিলেন। বৃদ্ধটির সন্তান যুদ্ধে গেছে। অনেক দিন নিখবর। কমান্ডারকে কাছে পেয়ে তাঁর সে কী উচ্ছ্বাস। তিনি কর্নেলের হাত ছুঁলেন, চোখ ছুঁলেন। তারপর সেই স্পর্শ নিজের দৃষ্টিহীন চোখে মাখিয়ে নিয়ে বললেন, ‘বাবা, তোমার এই হাত যুদ্ধ করেছে, তোমার চোখ দেশের মাটি-গাছ-পাখি দেখেছে। বাবা, আমি চোখে দেখি না। তুমি তো দেশ থেকে এসেছ, তুমি বলো আমার দেশ কি এখনো তেমন সবুজ, আমার মাটি কি এখনো তেমন সজল? এখনো কি সেখানে পাখিরা ডাকে?’ অন্ধ বৃদ্ধ সন্তানের জন্য কাঁদেননি, কেঁদেছিলেন বিধ্বস্ত দেশের শোকে? ঘটনার ৩৬ বছর পর সেই কথা বলতে বলতে বৃদ্ধ কর্নেলের গাল ভেসে যাচ্ছিল অশ্রুতে। তিনি ফোঁপাচ্ছিলেন। একাত্তরের চিঠিগুলো পড়ে তেমন দমকানো কান্না আসে। অশ্রুও কখনো কখনো ক্ষারের মতো কাজ করে। আমাদের জাতীয় আত্মার ময়লা ধুতে এমন ক্ষার এখন অনেক প্রয়োজন।
ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক।
farukwasif@yahoo.com
Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-14/news/208556

1990
Positive Bangladesh / Success and Failure of Bangladesh
« on: December 13, 2011, 02:58:39 PM »
 S. Akbar Zaidi

The country which was considered to be a basket case in 1971, is today offering a mirror to others on how developing countries can become a development state and is being referred to as the `development surprise` of the 21st century.

At the same time, it has also ensured that democracy is developing as a strong and permanent alternative to military rule, under which it has had many years of painful repression.

That this overwhelmingly Muslim country is also constitutionally and increasingly in practice politically secular is also a lesson for other Muslim majoritarian countries to emulate. The Supreme Court struck down a 31-year-old constitutional amendment and restored the country to its founding status as a secular republic, banning the writings of some radical Islamic ideologues.

The country which in the mid-1960s was heralded as a role model for other developing countries, where the international press had praised its military-led development model no end, stating that it might just reach the levels of development achieved only by the United States, has just appeared as the world`s 10th most failed, or failing, state. On the course towards reaching this rather ignominious distinction, this country has also been called “the most dangerous place in the world”, and a “rogue state with a nuclear arsenal”.

In the world of development achievements and democratic and secular credentials, it is Bangladesh today which offers a rather sad comment on Pakistan`s numerous failed promises. Bangladesh is one of the six countries in Asia and Africa which has been feted for its progress towards achieving its Millennium Development Goals, a set of targets that seek to eradicate extreme poverty and boost health, education and the status of women worldwide by 2015.

It has also halved its birth rate over the last few decades, happily giving up its title of the sixth most populous country to Pakistan. And despite the fanfare of having a larger number of women parliamentarians, it is Bangladesh which has far greater gender parity than does Pakistan, and women`s rights are better ensured in the former than in the latter.

Moreover, Bangladesh`s economy has grown at nearly six per cent a year over the past three years, despite the global downturn and high fuel and food prices which Pakistani finance officials cite as reasons for Pakistan`s failure. Furthermore, Bangladesh`s exports of garments worth $12.3bn last year, make it the fourth in the world behind China, the European Union and Turkey, leaving behind cotton-producing and exporting Pakistan.

Bangladesh gave the model of microfinance to the rest of the world and the man behind this received the Nobel Prize based on work undertaken at home for alleviating poverty. The fact that he was celebrated as a national hero differs sharply from the public and official treatment meted out to Pakistan`s Nobel laureate who was forced to do all his work abroad, in exile-like conditions, and never acknowledged as a son of Pakistan`s soil. Even in terms of diverse identities and religious tolerance, Pakistan can learn from the traditions of its former province. Economist

In a list of 167 countries listed by the magazine in its `Index of Democracy`, Bangladesh moved up the table from being 91st in 2008 to 83rd in 2010, while Pakistan also moved up, but from 108th to 104th. And despite being a democracy in 2010 and one of the two democracies on this list, Pakistan is 10th in the `Failed States Index`, and is part of a group that includes Somalia, Chad, Sudan, Zimbabwe and, of course, Afghanistan. One can dispute such a caricature for being politically motivated, however, this does require far greater and honest reflection.

Bangladesh as East Pakistan was probably a greater disaster created by the British than the one left behind and still unresolved in Kashmir. This was a union which the West Pakistani elite eventually forced and exploited. It should not have been, and it took 25 years for the Bangladeshi people to free themselves from the worst forms of West Pakistani repression — cultural, linguistic, economic, political and, of course, military.

Clearly, Bangladesh is not the only country which offers possible lessons for Pakistan, and the former is not devoid of a whole host of afflictions typical of developing countries. The argument being emphasized here is one of relative progress and possibilities. Clearly, at the moment Bangladesh seems to offer more of either than does Pakistan. And rather than fantasize about becoming another Turkey or Malaysia, as Pakistan`s elite is so fond of doing, perhaps it would be instructive to look closer home, and at small initial steps rather than grand, unachievable schemes.

In many ironic ways, it is Bangladesh which has become Jinnah`s Pakistan — democratic, developmental, liberal, secular — while Pakistan has become his worst nightmare — intolerant, authoritarian, illiberal and fundamentalist.

The West Pakistani elite which lived off the resources of East Pakistan for 25 years and was happy to see the basket case East Pakistan become Bangladesh, needs to seriously come to terms with its continuing hubris and past. The least that the civilian and military Pakistani elite can do is to seek forgiveness for the crimes committed four decades ago, and to begin to learn how basket cases and failed states can become successful democratic, developmental and secular states.

Source : http://positivebangladesh.wordpress.com/2011/04/12/success-and-failure-of-bangladesh/
 

1991
স্বাধীনতার নির্মম গণহত্যার স্মৃতিবহ ঠাকুরগাঁও রানীশংকৈলের খুনিয়া দিঘি
আবদুল লতিফ লিটু,
 ঠাকুরগাঁও

স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকহানাদারদের বর্বরতার এক করুণ, রোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারী ইতিহাস সৃষ্টিকারী বহুল আলোচিত 'খুনিয়া দিঘি' বধ্যভূমির কথা মনে হলে আজও গা শিহরে উঠে। কারও মতে ৫ সহস্রাধিক, কারও মতে দশ সহস্রাধিক আবার কারও কারও মতে হাজার হাজার বাঙালিকে ওই খুনিয়া দিঘির পাড়ে গুলি করে অথবা বেয়নেটের খোঁচায় হত্যা করেছে নরপশুরা। লাশগুলো ওই পানা পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং সিংহভাগই দিঘির পাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়। যেদিন দলে দলে বাঙালি ধরে আনা হতো সেদিন তাদের সোজা করে লাইনে দাঁড় করিয়ে এক বা দুই গুলিতেই হত্যা করা হতো খুনিয়া দিঘির পাড়ে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর নির্মম গণহত্যার নিষ্ঠুরতম ইতিহাস ধারণ করে আছে এ খুনিয়া দিঘি।


রানীশংকৈলের মালদুয়ার এস্টেটের জমিদার (তদানীন্তন) টংকনাথ চৌধুরীর জমিদার বাড়িটিতে পাকহানাদার বাহিনী তাদের হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেছিল। সেখান থেকে রানীশংকৈলের উত্তরগাঁও, পদগমপুর, রাউথনগর, হরিপুরের চৌরাঙ্গী, যাদুরানী, ভাতৃড়িয়া, মশালগাঁওসহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ডিফেন্স জোরদার করার জন্য পাকবাহিনীর সদস্যরা, পীরগঞ্জের গোদাগাড়ী, শিয়ালগাজী, পীরগঞ্জ কলেজ, হরিপুরের যাদুরানী ও তালদিঘিতে পৃথক অগ্রবর্তী ঘাঁটি স্থাপন করেছিল। ঠাকুরগাঁও বিডিআর ক্যাম্প (তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প) ও রানীশংকৈল জমিদার বাড়ি হেড কোয়ার্টার থেকে পীরগঞ্জ, রানীশংকৈলে ও হরিপুর থানার বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত পাকসেনারা। গেরিলা মুক্তিসেনা এবং সম্মুখ যোদ্ধাদের চৌকস আক্রমণে পাকবাহিনীর সদস্যরা স্বীয় অগ্রবর্তী ঘাঁটি ও প্রতিরক্ষা ব্যুহ সামাল দিতে যখন বেসামাল ঠিক সেই সময়ে মেজর তাজ ওরফে 'পাগল মেজর' নামক রক্ত পিপাসু নরপশুকে রানীশংকৈল হেড কোয়ার্টারে পাঠানো হয়। কথিত আছে, ওই পাগল মেজরের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ছিল বাঙালির তাজা রক্ত। জনশ্রুতি রয়েছে, ওই পাগল মেজর প্রতিদিন সকালে অন্তত একজন বাঙালিকে হত্যা না করে সকালে নাশতা খেত না। পাক হানাদারদের নির্মমতা এবং হাজারও বাঙালির রক্তে রাঙানো খুনিয়া দিঘির স্মৃতি অম্লান করে রাখার তাগিদে ১৯৭২ সালে এ দিঘির পাড়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও খুনিয়া দিঘি বধ্যভূমিতে একটি পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা যায়নি। বর্তমানে এ স্তম্ভটির যত্রতত্র ভেঙে যাচ্ছে-গোড়া থেকে মাটি সরে গেছে। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে খুনিয়া দিঘিকে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
Source : http://www.bd-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=Visa&pub_no=584&cat_id=1&menu_id=3&news_type_id=1&index=3

1992
আমিনুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, বক্ষব্যাধি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ

পাখির মতো চঞ্চল ছিল বুলবুলের জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে পাখির হঠা ৎ কী হলো। নেশা তাকে পেল। শিরাপথে নেশা নেয়। দিন দিন শুকায়। একদিন দেখা দিল কাশি। ওষুধপথ্য, অ্যান্টিবায়োটিক, কোনো কিছুই ধরে না। পরে পরীক্ষা করে জানা গেল, তার রক্তে বইছে এইচআইভি জীবাণু। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো সঙ্গে যোগ দিয়েছে যক্ষ্মা বা টিবি রোগ। এই এইচআইভি ও যক্ষ্মার দ্বৈত সংক্রমণে সে এখন কাহিল। দুই দানবে পর্যুদস্তু এক হাড়কঙ্কাল মানুষ। যক্ষ্মা ছাড়াও এইচআইভি বা এইডসে ফুসফুসের আরও কিছু রোগ বেশি বেশি চড়াও হয় রোগীর শরীরে। মোটা দাগে এগুলো হলো—
 নিউমোনিয়া
 নিউমোসিস্টিস ইনফেকশন
 ফুসফুসের ফাঙ্গাস রোগ বা ছত্রাক সংক্রমণ
 ফুসফুসে পানি জমা ইত্যাদি।
অনেক সময় দেখা যায়, রোগী ফুসফুসের সমস্যা যেমন শ্বাসকষ্ট, কফ-কাশি নিয়েই প্রথম চিকি ৎসকের কাছে ধরনা দেয়। পরে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে সাপ। বের হয়ে আসে রোগের পেছনে কলকাঠি নাড়তে থাকা অন্য এক রোগ—এইচআইভি বা এইডস! শরীরে এইডস হয়ে গেলে মানবদেহ সংক্রমণপ্রবণ হয়ে পড়ে অর্থা ৎ খুব সহজেই নানাবিধ জীবাণু তাকে কাবু করে ফেলে। এমনকি স্বাভাবিক অবস্থায় যেসব জীবাণু শরীরের অন্যান্য কোষের সঙ্গে সহাবস্থান করে তারাই এইডস রোগীদের দেহে মরণছোবল হানার সক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। এ আঘাত হানার অন্যতম প্রধান স্থান আমাদের ফুসফুস।

টিবি-এইচআইভি
বিশ্বব্যাপী এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ একই সঙ্গে যক্ষ্মাতেও আক্রান্ত। এ যক্ষ্মা ফুসফুসে বা ফুসফুসবহির্ভূত অন্যান্য অঙ্গেও হতে পারে। টিবি-যক্ষ্মা মূলত অনুন্নত তৃতীয় বিশ্বের রোগ হলেও এইচআইভি বা এইডসের কারণে এর বিশ্বায়ন ঘটছে। পৃথিবীজুড়ে এখন যৌথ টিবি-এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ মিলিয়ন, যা নিরন্তর ধরাছোঁয়াহীন গতিতে বাড়ছে। কোনো কোনো দেশে প্রতি তিনজন টিবি রোগীর একজন একই সঙ্গে এইচআইভিতেও আক্রান্ত। যক্ষ্মা সংক্রমণ ও যক্ষ্মারোগ দুটি ভিন্ন জিনিস। স্বাভাবিক অবস্থায় যক্ষ্মা জীবাণুর সংস্পর্শে এলেও বহু বছর ধরে বা সারা জীবনেও যক্ষ্মারোগ নাও হতে পারে। এইচআইভির বেলায় ঘটনা কিন্তু ভিন্ন। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বলে যক্ষ্মা জীবাণুর সঙ্গ পেলেই তা যক্ষ্মারোগে রূপ নেয় অতিদ্রুত। তা ছাড়া এইডস রোগীদের দেহে কোথাও যক্ষ্মা হলে তা অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ার প্রবণতা, সুপ্ত কোনো টিবির হঠা ৎ অগ্ন্যু ৎপাতের মতো জেগে ওঠা, নতুন বংশের কোনো জীবাণু দ্বারা পুনরায় আক্রান্ত হওয়া, ফুসফুস ছাড়াও অন্যান্য স্থানকে টার্গেট করা—সবকিছুই বেশি বেশি এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে।

লক্ষণাদি
জ্বর, ব্যাখ্যাতীত কারণে ওজন কমে যাওয়া, সঙ্গে রাতের বেলা ঘামানো যক্ষ্মার মূল লক্ষণ। ফুসফুসের যক্ষ্মা হলে কফ-কাশি থাকে, কখনো রক্তও যেতে পারে কাশির সঙ্গে। ফুসফুসের বাইরে অন্য কোথাও যক্ষ্মা হলে তার লক্ষণ আক্রান্ত স্থান অনুযায়ী দেখা দেবে। নিউমোনিয়ার চিকি ৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক আর ধরছে না—তখনই সন্দেহ করতে হবে এ যক্ষ্মা বা টিবিকেই।

রোগ নির্ণয়
এইচআইভি-আক্রান্তদের যক্ষ্মা শনাক্ত করাও বেশ কঠিন। কফে টিবি জীবাণু পরীক্ষা যক্ষ্মারোগ ধরার সর্বোত্তম উপায়। কিন্তু এদের কফে সাধারণত টিবির জীবাণু পাওয়া যায় না। বুকের এক্স-রেতে যা পাওয়া যায়, তা ঠিক টিবির মতো নয়, একেবারেই বেমানান অন্য রকম আবছায়া। কখনো বা আবার এক্স-রেতে কিছুই পাওয়া যায় না।
শিরাপথে নেশা ও অনিরাপদ যৌনসম্পর্ক পরিত্যাগ করে এইচআইভি প্রতিরোধ ও পরাজিত করতে না পারলে অদূর ভব্যিষতে এইডসের সঙ্গে এই টিবি, এমডিআর বা এক্সডিআর টিবি মানবজীবনের ওপর ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দেবে, সংকটে পড়বে তিলে তিলে গড়ে ওঠা বিশ্বসভ্যতা।

Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-11-30/news/204976

1993
Be Alert /  ইচ্ছেমতো ওষুধ নয়
« on: December 12, 2011, 02:24:29 PM »
এ বি এম আবদুল্লাহ,
ডিন, মেডিসিন অনুষদ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

অসুখ হলে ওষুধ খেতে হয়—সবাই জানি, কিন্তু সঠিক নিয়মে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অনুভব করি না। ওষুধ খেতে আমরা যতটা ত ৎপর, ওষুধ খাওয়ার নিয়ম মানতে ততটাই উদাসীন। আমাদের এ অবহেলা জীবনরক্ষাকারী ওষুধকে করে তুলতে পারে জীবনবিনাশী বিষ।
ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই যে অনিয়মটা করি তা হলো চিকি ৎসকের পরামর্শ না নেওয়া। আমরা নিজেরাই নিজেদের চিকি ৎসা করি, কখনো আত্মীয়, কখনো বন্ধুর পরামর্শ নিই, কখনো চিকি ৎসকের চেয়ে ওষুধ বিক্রেতার ওপর বেশি নির্ভর করি। ‘অমুক ওষুধে তমুক ভালো হয়েছিল, তাই আমিও ভালো হব’—এমন চিন্তাই আমাদের মধ্যে কাজ করে। অথচ লক্ষণ এক হলেই অসুখ এক হবে, এমন কোনো কথা নেই। আবার একই রোগে একই ওষুধের মাত্রা রোগীভেদে ভিন্ন হতে পারে। শুধু অসুখে নয়, ওষুধ সহজলভ্য হওয়ায় সুখেও আমরা অন্যের পরামর্শে ওষুধ খাই। মোটা হওয়ার জন্য স্টেরয়েড বা শক্তি বাড়ানোর জন্য ভিটামিন খাই যেন ভাতের চেয়ে বেশি। এসবের মারাত্মক, কখনো জীবনবিনাশী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
যদিও বা কখনো (বাধ্য হয়ে) চিকি ৎসকের পরামর্শ নিই, ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকি ৎসকের বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধ মানি কম। সময়মতো ওষুধ খাওয়া, খাওয়ার আগে না পরে তা বুঝে খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা—এসব আমরা খেয়াল রাখি না। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজের ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি উদাসীন থাকি। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া। ‘জ্বর ভালো হয়ে গেছে, অ্যান্টিবায়োটিক আর কী দরকার’ ভেবে নিজেরাই ওষুধ বন্ধ করে দিই। আবার অন্যদিকে কয়েক দিনে জ্বর ভালো না হলে ‘ওষুধ ঠিক নাই’ ভেবে তা বন্ধ করে দিই এবং অন্য চিকি ৎসকের কাছে নতুন ওষুধের প্রত্যাশায় যাই। যেসব অসুখে দীর্ঘদিন বা আজীবন ওষুধ খেতে হয়, সেখানে আমরা অসুখ নিয়ন্ত্রণে এলেই তা বন্ধ করে দিই, বুঝতে চাই না যে রোগ ভালো হয়নি, নিয়ন্ত্রণে আছে কেবল। একসময় লোকমুখে ‘ক্যানসারের ওষুধ’ শুনে বাতের ওষুধ বন্ধ করার ঘটনা প্রচুর হয়েছে। ওষুধ শুরুর মতো বন্ধ করার সময়ও আমরা নিয়ম মানি না। যেসব ওষুধ হঠা ৎ বন্ধ করা যায় না, তা নিজেরাই হঠা ৎ বন্ধ করে দিই।
ওষুধ নিয়ে এ অনাচারে কী ক্ষতি হতে পারে? প্রথম কথা, যে রোগের জন্য ওষুধ সেবন করা তার উপশম হবে না, বরং খারাপ হতে পারে। ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর আবির্ভাব এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার জীবাণুর বিরুদ্ধে এদের অকার্যকর করে দিচ্ছে। সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে যে রোগ শুরুতেই ভালো করা যেত, ভুল ব্যবহারের কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না, নতুন দামি ওষুধ দরকার হচ্ছে, কখনো তাতেও কাজ হচ্ছে না। বিশেষভাবে বলা যায় যক্ষ্মার কথা, যেখানে কমপক্ষে ছয় মাস ওষুধ খেতে হয়, অথচ অনেকেই কয়েক মাস খেয়ে ‘ভালো হয়ে গেছি’ মনে করে তা বন্ধ করে দেয়। ফলে তা মারাত্মক মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবিতে পরিণত হয়, যা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন। আর্থিক দিকটাও বিবেচনা করা জরুরি। যে চিকি ৎসা এখন সুলভে হচ্ছে, অবিবেচকের মতো ওষুধ খেলে বা না খেলে পরে ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে।
শুধু জীবাণু সংক্রমণ নয়, হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অসুখেও ‘মাঝেমধ্যে ওষুধের ব্যবহার’ উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে।
নিয়মিত ওষুধ খেলেও যদি সেবনবিধি না মানা হয়, তবে অনেক ওষুধই অকার্যকর হয়ে যায়। খালিপেটে খাওয়ার ওষুধ ভরা পেটে খেলে তা না খাওয়ার মতোই হবে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই এক ওষুধ অন্য ওষুধের উপস্থিতিতে কাজ করে না। অজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে এসব ওষুধ একত্রে খেলে লাভ তো হবেই না, বরং ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
মনের মতো ওষুধ খাওয়ার আরেক সমস্যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। একজন চিকি ৎসক ভালোমতোই জানেন কোন ওষুধের কী সমস্যা, আর তাই তা কাকে দেওয়া যাবে, কাকে যাবে না। নিজে থেকে ওষুধ খেলে এসব বিবেচনা সম্ভব না, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা বেশি। ব্যথার ওষুধ খেয়ে পেট ফুটো হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। মোটা হওয়ার জন্য স্টেরয়েড খেয়ে অনেকেই মারাত্মক কুশিং সিনড্রোমে আক্রান্ত হন, যা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। বলে রাখা ভালো, চিকি ৎসকের পরামর্শ ছাড়া হঠা ৎ ওষুধ বন্ধ করেও অনেকে বিপদে পড়েন, বিশেষ করে স্টেরয়েড হঠা ৎ বন্ধ করলে এডিসনিয়ান ক্রাইসিস হতে পারে, যা থেকে রোগী মারাও যেতে পারে।
সাধারণ ওষুধ, যার অনেকগুলো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায়, বিশেষ অবস্থায় তাও হতে পারে ক্ষতিকর। আমরা অনেকেই জানি না যে ভিটামিন ‘এ’ বা কৃমির ওষুধের মতো সাধারণ ওষুধ গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করে। লিভারের রোগীর জন্য প্যারাসিটামলের মতো ওষুধ হতে পারে ক্ষতির কারণ।
এ অবস্থার জন্য দায়ী আমরা সবাই। রোগী যেমন চিকি ৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাহুল্য ভাবছেন, চিকি ৎসকও তেমনি রোগীকে সঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন না, আর কর্তৃপক্ষ হয়ে আছে উদাসীন।

ছবিটি প্রতীকী। চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রোগীদের যা মেনে চলা উচিত তা হলো—
 শুধু চিকি ৎসক পরামর্শ দিলেই ওষুধ সেবন করা যাবে।
 বিশেষ অবস্থায় (যেমন গর্ভাবস্থা, লিভারের রোগ ইত্যাদি) সাধারণ ওষুধ, যা প্রেসক্রিপশন ছাড়া পাওয়া যায়, তাও চিকি ৎসকের পরামর্শেই ব্যবহার করতে হবে।
 শুধু ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে ওষুধ কেনা উচিত। কেনার সময় তার মেয়াদ দেখে নিতে হবে।
 চিকি ৎসক ওষুধ খাওয়ার যে নিয়ম বলে দেবেন (কতটুকু ওষুধ, কতক্ষণ পরপর, কত দিন, খাবার আগে না পরে ইত্যাদি), সে অনুযায়ী তা সেবন করতে হবে। প্রয়োজনে তা লিখে রাখুন বা মনে রাখতে অন্যের সাহায্য নিন। নিজে থেকে ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা যাবে না।
 নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। সুস্থতা বোধ করলেও কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে। কোনো সমস্যা হলে চিকি ৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
 একই সঙ্গে অ্যালোপ্যাথিক ও অন্যান্য পদ্ধতির চিকি ৎসা চালালে তা চিকি ৎসককে জানানো উচিত।
 ওষুধ সব সময় আলো থেকে দূরে, ঠান্ডা, শুষ্ক স্থানে, শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
 ব্যবহারের সময় ওষুধ ভালো আছে কি না দেখে নিন। নাম ও মাত্রাটা আবার খেয়াল করুন।
 অনেক সময় দোকানিরা প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ না দিয়ে শুধু বিক্রি করার জন্য অন্য কোম্পানির অন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন, বলেন, ‘একই ওষুধ।’ এ ক্ষেত্রে রোগীদের সতর্ক থাকা উচিত এবং প্রেসক্রিপশনে যে ওষুধ লেখা, তা-ই কেনা উচিত।
এ ছাড়া চিকি ৎসকেরও এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের কর্তব্য—
 রোগীকে রোগ এবং ওষুধ সম্পর্কে জানান।
 ওষুধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানান।
 নিজে থেকে বন্ধ করলে কী ক্ষতি হতে পারে জানান। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে দ্রুত চিকি ৎসককে জানানোর পরামর্শ দিন।
 কখন ও কীভাবে ওষুধ বন্ধ করা যাবে জানান।
 নিয়মিত ও নিয়মমতো ওষুধ খেতে উ ৎসাহিত করুন।
 রোগীর খরচের দিকটা মাথায় রাখুন। অযথা অতিরিক্ত দামি ওষুধ নেহাত প্রয়োজন না হলে বা জীবন রক্ষাকারী না হলে না লেখাই ভালো।
 প্রেসক্রিপশনে অসুখের পূর্ণ নাম, ওষুধের নাম, মাত্রা, খাওয়ার নিয়ম, কত দিন খেতে হবে ইত্যাদি স্পষ্টাক্ষরে সুন্দরভাবে লেখা উচিত।
এর সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ বিক্রেতার কর্তব্য প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি করা, শুধ ব্যবসায়িক স্বার্থে যেনতেনভাবে যেকোনো ওষুধ বিক্রি না করা। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা, দোকানে ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ এবং সার্বিক তত্ত্বাবধান করা।
ওষুধের অপব্যবহার, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্স থেকে নিজেদের এবং ভবিষ্য ৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-11-30/news/204975

1994
সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্কগুলো মানুষকে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলছে। ফেসবুকে আমাদের অনেকেরই বন্ধুর সংখ্যা হয়তো হাজারও ছাড়িয়ে গেছে। তবে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষের মস্তিষ্ক ১৫০ জনের বেশি বন্ধুর সঙ্গে ভালো ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে পারে না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবিন ডানবার গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। ডেইলি মেইলের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডানবারের গবেষণায় পাওয়া গেছে, একজন মানুষ ১৫০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে পারে না।

ডানবার বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সময় অনেকেই বলেছে তাদের অনেক বন্ধু রয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেক বন্ধুদের তারা চেনে না।’
তিনি সমাজ ও বাণিজ্যিক বিশ্বের ওপর গবেষণা করে দেখেছেন পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং ভাববিনিময়ের জন্য ১৫০ জন খুবই অনুকূল। আফ্রিকা ও আমেরিকান আদিবাসীদের মধ্যেও এ বিষয়টি দেখা গেছে।
ডানবারের গবেষণার ফলাফল নিয়ে এখন অনেক আলোচনা হচ্ছে। কারণ, সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্কে বর্তমানে অনেকের অনেক বন্ধু আছে। সে বন্ধুরা আসলে কেমন বন্ধু? খুব ঘনিষ্ঠ নাকি শুধু নামে বন্ধু?

1995
বেশ কিছু ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা। সেসব ওয়েবসাইটের কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।

www.liberationwarmuseum.org
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যের জন্য প্রথমেই বলতে হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কথা। ঠিক জাদুঘরের মতোই নানা তথ্যে সাজানো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজস্ব এই ওয়েবসাইট। বেশ সমৃদ্ধ এই সাইটে অনেক কিছুর সঙ্গে আছে ‘দিস মান্থ ইন ১৯৭১’ বিভাগটি। আরও আছে বেশ কিছু দুর্লভ ছবি, যা আমাদের নিয়ে যায় একাত্তরের সেই দিনগুলোতে।

www.virtualbangladesh.com
এই সাইটে রয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অসংখ্য স্থিরচিত্র, স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণাপত্র, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বইসহ প্রয়োজনীয় ওয়েব ঠিকানা।

www.sectorcommandersforum.org
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাইট এটি। এতে যে কেউ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী কার্মকাণ্ড-বিষয়ক বিবরণ ও তথ্য সংযুক্ত করতে পারবেন। সাইটটিতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার স্থিরচিত্র, অডিও-ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতক দালালদের তালিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কাটিং ইত্যাদি।

http://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Liberation_War
সবচেয়ে সমৃদ্ধ অনলাইন বিশ্বকোষের এই পৃষ্ঠায় গেলেই পাওয়া যাবে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, ইতিহাস-রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি, বইপত্রে মুক্তিযুদ্ধ বিভাগের মধ্যে নানা রকম তথ্য। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার জন্য একটি উইকি-ভিত্তিক ওয়েবসাইট রয়েছে। ঠিকানা: http://muktijuddho.wikia.com। বর্তমানে এখানে ৬৪টি নিবন্ধ রয়েছে।

www.genocidebangladesh.org
একাত্তরের গণহত্যার আর্কাইভ এটি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার ওপর তৈরি ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে বেশ সমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইট। এতে যে কেউ চাইলে মুক্তিযুদ্ধের ওপর করা ওয়েবভিত্তিক কাজ জমা দিয়ে সাইটটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবেন।

www.muktadhara.net
গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরেকটি চমৎকার ওয়েবসাইট এটি। সাইটটির www.muktadhara.net/page35.html ঠিকানায় পাবেন একাত্তরের গণহত্যার তথ্য ও ছবি, ঘটনাবলি, ভিডিও, মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যাবিষয়ক ওয়েবসাইটের সংযুক্তি, প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার ছাড়াও অনেক কিছু।

www.icsforum.org
আন্তর্জাতিক ক্রাইম স্ট্র্যাটেজি ফোরামের এই ওয়েবসাইটে একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে এখানে একটি ই-লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছে।

www.warcriminalsbd.org
যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে এই ওয়েবসাইট। একাত্তরের ঘাতক দালালদের নির্মূল করতে কাজ করছে www.secularvoiceofbangladesh.org সাইট।

www.shadhinbangla-betar.org
এখানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিকদের তালিকাসহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে।

www.dristipat.org
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই সাইটটি।
 সাজিদুল হক
Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-12/news/207300

Pages: 1 ... 131 132 [133] 134