Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - mrchawdhury

Pages: 1 2 [3] 4 5
31
রশ্ন : কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর সাথে নামাযের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘নামাযে বুকের উপর হাত রাখা সুন্নাহ। হাদীস শরীফে এই নিয়মটিই আছে। অন্য কোনো নিয়ম নেই। সহীহ বুখারীতে সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে, সহীহ ইবনে খুযায়মায় ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে এবং মুসনাদে আহমদে হুলব আতত্বয়ী রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা আছে। এছাড়া তাউস রাহ. থেকে একটি মুরসাল হাদীসে এবং হযরত আলী রা. থেকে সূরায়ে কাওসারের তাফসীরে নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধার কথা বর্ণিত হয়েছে।

‘পক্ষান্তরে নাভীর নীচে হাত বাঁধার কোনো প্রমাণ সহীহ হাদীসে নেই। এ সম্পর্কে যত হাদীস ও আছার আছে সব জয়ীফ।’

আমার বন্ধুটি একজন আলেম। আমারও উলূমুল হাদীস বিষয়ে কিছু পড়াশোনা আছে। তার সাথে আলোচনার পর আমি বিষয়টির উপর কিছু পড়াশোনাও করেছি।

নামাযে হাত বাঁধার বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা এবং উপরোক্ত বিষয়ে ইলমী সমাধান আপনাদের নিকট কামনা করছি।  আল্লাহ তাআলা আপনাদের জাযায়ে খায়ের দান করুন।

 

রাইয়ান ইবনে লুৎফুর রহমান

পল্লবী, ঢাকা-১২১৬

 

উত্তর : নামাযে হাত বাঁধা সুন্নত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বেঁধেছেন। তাঁর ডান হাত থাকত বাম হাতের কব্জির উপর। সাহাবায়ে কেরামকে এভাবেই নামায পড়ার আদেশ করা হত এবং তাঁরাও এভাবেই হাত বেঁধে নামায পড়তেন।

নামাযে হাত বাঁধা

হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর দিয়ে দুই হাত তুললেন। রাবী বলেন, দুই কান বরাবর। এরপর পরিধানের চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলেন, এরপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন ...।

عن وائل بن حجر : أنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم رفع يديه حين دخل في الصلاة كبر، وصف همام حيال أذينه، ثم التحف بثوبه، ثم وضع يده اليمنى على اليسرى ...

 

-সহীহ মুসলিম ১/১৭৩

হযরত হুলব আতত্বয়ী রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ইমাম হতেন এবং তাঁর ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه. رواه الترمذي وقال : حديث حسن.

-জামে তিরমিযী ১/৩৪; ইবনে মাজাহ ৫৯

  হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. বলেন, লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন নামাযে ডান হাত বাম বাহুর উপর রাখে।’-সহীহ বুখারী ১/১০৪

كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة. قال أبو حاتم : لا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم.

হযরত জাবির রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন নামাযরত ব্যক্তির নিকট দিয়ে গমন করছিলেন, যিনি ডান হাতের উপর বাম হাত রেখে নামায পড়ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত খুলে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫০৯০

مر رسول الله صلى الله عليه وسلم برجل وهو يصلي قد وضع يده اليسرى على اليمنى فانتزعها ووضع اليمنى على اليسرى. قال الهيثمي في مجمع الزوائد ٢/٢۷٥ : رجاله رجال الصحيح.

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘আমরা নবীগণ আদিষ্ট হয়েছি দ্রুত (সময় হওয়ামাত্র) ইফতার করতে, বিলম্বে (সময়ের শেষের দিকে) সাহরী খেতে এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে।’

سمعت نبي الله صلى الله عليه وسلم  يقول : إنا معاشر الأنبياء أمرنا بتعجيل فطرنا وتأخير سحورنا وأن نضع أيماننا على شمائلنا في الصلاة. قال الهيثمي  في مجمع الزوائد ١/ ٢۷٥: رجاله رجال الصحيح.

-সহীহ ইবনে হিববান ৩/১০১, হাদীস : ১৭৬৬; আলমুজামুল কাবীর ১১/১৫৯, হাদীস : ১১৪৮৫

হারিছ ইবনে গুতাইফ রা. বলেন, ‘আমি এটা ভুলিনি যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখতে দেখেছি, অর্থাৎ নামাযে।’

مهما رأيت نسيت لم أنس أني رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم وضع يده اليمنى على اليسرى يعني : في الصلاة.

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫৬; মুসনাদে আহমদ ৪/১০৫, হাদীস : ১৬৯৬৭-৬৮, ২২৪৯৭

মোটকথা, নামাযে হাত বেঁধে দাঁড়ানো সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এ কারণে নামাযে হাত ছেড়ে দাঁড়ানো, যা মালেকী মাযহাবের কোনো কোনো ইমাম গ্রহণ করেছেন, মূল সুন্নাহ নয়।

মালেকী মাযহাবের প্রাচীন গ্রন্থ ‘‘আলমুদাওয়ানাতুল কুবরা’’য় আছে, আবদুর রহমান ইবনুল কাসিম রাহ. ইমাম মালিক রাহ. থেকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখার বিষয়ে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ফরয নামাযে এই নিয়ম আমার জানা নেই এবং তিনি তা অপছন্দ করতেন। তবে নফল নামাযে কিয়াম যখন দীর্ঘ হয় তখন হাত বাঁধতে বাঁধা নেই।’

قال : وقال مالك في وضع اليمنى على اليسرى في الصلاة قال : لا أعرف ذلك في الفريضة وكان يكرهه، ولكن في النوافل إذا طال القيام فلا بأس بذلك يعين به نفسه.

 কিন্তু এ রেওয়ায়েত উল্লেখ করার পর সুহনূন (গ্রন্থকার) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে ওয়াহব রাহ. সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর সূত্রে একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে দেখেছেন।

قال سحنون عن ابن وهب عن سفيان الثوري عن غير واحد من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم أنهم رأوا رسول الله صلى الله عليه وسلم واضعا يده اليمنى على اليسرى في الصلاة.

-আলমুদাওয়ানাহ ১/৭৬

ইমাম মালেক রাহ.-এর অন্য অনেক শাগরিদ তাঁর থেকে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণনা করেছেন। মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত মনীষীদের অনেকেই তাঁর এই রেওয়ায়েতকেই বিশুদ্ধ ও অগ্রগণ্য বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

ইমাম মালিক রাহ.-এর ‘আলমুয়াত্তা’য় এ নিয়মই বর্ণিত হয়েছে।

‘আততাজ ওয়াল ইকলীল লিমুখতাসারিল খালীল’ কিতাবে ইমাম মালেক রাহ. থেকে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণনা করার পর ইবনে রুশদ মালেকীর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘এটিই অগ্রগণ্য ও শক্তিশালী। কারণ প্রথম যুগে মানুষকে এরই আদেশ করা হত।’

ابن رشد : وهذا هو الأظهر، لأن الناس كانوا يؤمرون به في الزمان الأول.

তদ্রূপ কাযী ইয়ায মালেকী রাহ. থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আমাদের শায়খগণ ডান হাতের পাতা বাম হাতের কব্জির উপর মুঠ করার নিয়মই গ্রহণ করেছেন।’

عياض : اختار شيوخنا قبض كف اليمنى على رسغ اليسرى.

-আততাজ ওয়াল ইকলীল, আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ আলমাওওয়াক আলমালেকী (৮৯৭ হি.) মাওয়াহিবুল জালীলের সাথে মুদ্রিত ২/২৪০

ইমাম কুরতুবী মালেকী রাহ.ও (৬৭১ হি.) হাত বাঁধার রেওয়ায়েতকে অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করে বলেন, ‘এটিই সঠিক। কারণ হযরত ওয়াইল রা. ও অন্যান্য সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান হাত বাম হাতের উপর রেখেছেন।’ -আলজামি লিআহকামিল কুরআনিল কারীম ২০/১৫০ এ প্রসঙ্গে মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত মনীষী ইমাম ইবনে আবদুল বার রাহ. (৪৬৩ হি.) শক্তিশালী আলোচনা করেছেন। তিনি হাত বাঁধার নিয়মকে শুধু অগ্রাধিকারই দেননি; বরং এর বিপরীতে ইমাম মালেক রাহ. থেকে যা কিছু বর্ণনা করা হয় তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় খন্ডনও করেছেন। তাঁর আলোচনার কিছু অংশ মূল পাঠসহ তুলে দেওয়া হল।

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে (নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ভিন্ন কিছু বর্ণিত হয়নি এবং কোনো সাহাবী এ নিয়মের বিরোধিতা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। শুধু আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের রা. সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, তিনি নামাযে হাত ছেড়ে রাখতেন, তবে এর বিপরীত কথাও তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইতিপূর্বে আমরা তাঁর বক্তব্য উল্লেখ করেছি যে, ‘সুন্নাহ হচ্ছে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।’

জুমহূর তাবেয়ীন ও মুসলিম উম্মাহর আহলুর রায় ও আহলুল আছর উভয় ঘরানার অধিকাংশ ফকীহ এই নিয়মই গ্রহণ করেছেন।’

لم تختلف الآثار عن النبي صلى الله عليه وسلم في هذا الباب ولا أعلم عن أحد من الصحابة في ذلك خلافا الاشيء روي عن ابن الزبير أنه كان يرسل يديه إذا صلى وقد روى عنه خلافه مما قدمنا ذكره عنه وذلك قوله صلى الله عليه وسلم (كذا) وضع اليمين على الشمال من السنة، وعلى هذا جمهور التابعين وأكثر فقهاء المسلمين من أهل الرأي والأثر.

-আততামহীদ ২০/৭৪-৭৫

তিনি আরো বলেন, ‘ইবনুল কাসিম ছাড়া অন্যরা ইমাম মালেক রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ফরয-নফল কোনো নামাযেই হাত বাঁধতে বাধা নেই। আর এটিই তাঁরা মদীনাবাসী শাগরিদদের বর্ণনা।’

... وقال عنه (أي عن مالك) غير ابن القاسم : لا بأس بذلك في الفريضة والنافلة، وهي رواية المدنيين عنه.

-প্রাগুক্ত

এরপর কোনো কোনো তাবেয়ী থেকে নামাযে হাত ছেড়ে রাখার যে বর্ণনা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বলেন, ‘এই হচ্ছে কতিপয় তাবেয়ীর (আমলের) কিছু বিবরণ। তবে তা (আলোচিত সুন্নাহর) খিলাফ ও বিরোধিতা নয়। কারণ তাদের কেউ (হাত বাঁধা) অপছন্দ করতেন এমনটা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও তা দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যেত না। কারণ সুন্নাহর অনুসারীদের জন্য সুন্নাহই হচ্ছে দলীল। আর যারা এর বিরোধিতা করে তাদের বিরুদ্ধেও দলীল হচ্ছে সুন্নাহ, বিশেষত যে সুন্নাহয় কোনো সাহাবীর ভিন্নমত নেই।

فهذا ما روي عن بعض التابعين في هذا الباب وليس بخلاف، لأنه لا يثبت عن واحد منهم كراهية، ولو ثبت ذلك ما كانت فيه حجة، لأن الحجة في السنة لمن اتبعها، ومن خالفها فهو محجوج بها، ولا سيما سنة لم يثبت عن واحد من الصحابة خلافها.

-প্রাগুক্ত ২০/৭৬

তিনি আরো বলেন, ‘(হাত বাধার ক্ষেত্রে) ফরয-নফলে পার্থক্য করার কোনো যুক্তি নেই, যদিও কেউ বলে থাকেন যে, হাত বাঁধার নিয়মটি নফল নামাযের ক্ষেত্রে, ফরযের ক্ষেত্রে নয়। কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত নফল নামায ঘরে আদায় করতেন। সুতরাং এটা যদি তাঁর ঘরের নামাযের নিয়ম হত তাহলে তা বর্ণনা করতেন তাঁর স্ত্রীগণ। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কিছুই বর্ণনা করেননি। যাঁরা বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন তাঁরা তাঁর নিকট রাত্রিযাপন করতেন না এবং তাঁর ঘরেও প্রবেশ করতেন না। তাঁরা তো তা-ই বর্ণনা করেছেন, যা তাঁকে করতে দেখেছেন তাঁর পিছনে ফরয নামায আদায়ের সময়।’

وكذلك لا وجه للتفرقة بين النافلة والفريضة، ولو قال قائل إن ذلك في الفريضة دون النافلة، لأن أكثر ما كان يتنفل رسول الله صلى الله عليه وسلم في بيته ليلا، ولو فعل ذلك في بيته لنقل عنه ذلك أزواجه ولم يأت عنهن في ذلك شيء، ومعلوم أن الذين رووا عنه أنه كان يضع يمينه على يساره في صلاته لم يكونوا ممن يبيت عنده، ولا يلج بيته، وإنما حكوا عنه ما رأوا منه في صلاتهم خلفه في الفرائض، والله أعلم.

-প্রাগুক্ত ২০/৭৯

হাত কোথায় বাঁধা হবে

তো এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে হাত বাঁধতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও হাত বাঁধতেন। এখন প্রশ্ন হল, কোথায় তাঁরা হাত বাঁধতেন? মৌখিক বর্ণনায় হাত বাঁধার মূল প্রসঙ্গ যত পরিষ্কারভাবে এসেছে কোথায় বাঁধতেন তা সেভাবে আসেনি। কেন আসেনি? আসার প্রয়োজন হয়নি। কারণ সবাই হাত বাঁধছেন। কোথায় বাঁধছেন তা সবার সামনেই পরিষ্কার। কাজেই তা মুখে বর্ণনা করার প্রয়োজন হয়নি। তো যে সুন্নাহ কর্মে ও অনুসরণে ব্যাপকভাবে রয়েছে তা মৌখিক বর্ণনায় সেভাবে নেই। এ ধরনের ক্ষেত্রে পরের যুগের লোকদের জন্য সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তাঁরা ঐ সময়ের কর্ম ও অনুশীলনের প্রত্যক্ষদর্শী।

নামাযে হাত বাঁধার সুন্নাহর উপর সাহাবা-তাবেয়ীন কীভাবে আমল করেছেন-এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রাহ. (২৭৯ হি.) বলেন-

والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعين ومن بعدهم، يرون أن يضع الرجل يمينه على شماله في الصلاة، ورأى بعضهم أن يضعهما فوق السرة، ورأى بعضهم أن يضعهما تحت السرة، وكل ذلك واسع عندهم.

অর্থাৎ আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন ও তাঁদের পরবর্তী মনীষীগণ এই হাদীসের উপর (ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা) আমল করেছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত এই ছিল যে, নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতে হবে। তাঁদের কেউ নাভীর উপর হাত রাখার কথা বলতেন, আর কেউ নাভীর নিচে রাখাকে (অগ্রগণ্য) মনে করতেন। (তবে) দুটো নিয়মই তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।-জামে তিরমিযী ১/৩৪

বস্ত্তত এটা হচ্ছে হাত বাঁধার হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক পদ্ধতি। সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানা থেকে এ দুটি নিয়মই চলে আসছে। পরবর্তীতে জুমহূর ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এ দুই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এভাবে উম্মাহর তাওয়ারুছ ও ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে নামাযে হাত বাঁধার যে নিয়ম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছেছে তা উল্লেখিত হাদীসসমূহেরই ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে পরবর্তী যুগে বিচ্ছিন্ন কোনো নিয়ম আবিষ্কার করে তাকে হাদীস শরীফের উপর আরোপ করা হাদীসের তাহরীফ ও অপব্যাখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

নাভীর নিচে হাত বাঁধা

উপরোক্ত দুই নিয়মের মাঝে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি রেওয়ায়েতের বিচারে অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. (২৩৮ হি.) বলেছেন, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে অধিক শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’

تحت السرة أقوى في الحديث تحت السرة أقوى في الحديث وأقرب إلى التواضع

 তাবেয়ী আবু মিজলায লাহিক ইবনে হুমাইদ রাহ. (মৃত্যু : ১০০ হি.-এর পর) নামাযে কোথায় হাত বাঁধবে-এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৩

এই রেওয়ায়েতের সনদ সহীহ।

সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই -

حدثنا يزيد بن هارون قال : أخبرنا الحجاج بن حسان قال : سمعت أبا مجلز ـ أو سألته ـ قال : قلت كيف أصنع؟ قال : يضع باطن كف يمنيه على ظاهر كف شماله ويجعلها أسفل من السرة.

বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.ও (মৃত্যু : ৯৬ হি.) এই ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬০

এই রেওয়ায়েতের সনদ হাসান। সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-

حدثنا وكيع، عن ربيع، عن أبي معشر، عن إبراهيم قال : يضع يمينه على شماله في الصلاة تحت السرة.

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশশাইবানী রাহ. (১৮৯ হি.) বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. নাভীর নিচে হাত বাঁধতেন। এরপর তিনি বলেন, ‘আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করি এবং এটিই (ইমাম) আবু হানীফার সিদ্ধান্ত।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২১

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

قال محمد : أخبرنا الربيع بن صبيح، عن أبي معشر، عن إبراهيم : أنه كان يضع يده اليمنى على يده اليسرى تحت السرة. قال محمد : وبه نأخذ وهو قول أبي حنيفة رحمه الله. (كتاب الصلاة، باب الصلاة قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى سترة)

প্রসঙ্গত আগেই বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল হচ্ছে হাত বাঁধা সংক্রান্ত মারফূ হাদীসসমূহের ব্যবহারিক রূপ। এ কারণে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান রাহ. ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ-এর সূত্রে হাত বাঁধার মরফূ হাদীস বর্ণনা করার পর এই নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।

রেওয়ায়েতটি এই-

أخبرنا أبو حنيفة، عن حماد عن إبراهيم أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يعتمد بإحدى يديه على الأخرى في الصلاة، يتواضع لله تعالى. قال محمد : ويضع بطن كفه الأيمن على رسغه الأيسر، تحت السرة، فيكون الرسغ في وسط الكف، (كتاب الأثار، كتاب الصلاة، باب الصلاة قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى سترة)

ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে এক হাতের উপর অন্য হাত বাঁধতেন। এভাবে তিনি আল্লাহর সামনে বিনীত হতেন।’

(ইমাম) মুহাম্মাদ বলেন, ‘ডান হাতের তালু বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে, নাভীর নিচে; সুতরাং কব্জি থাকবে হাতের তালুর মাঝে।’-কিতাবুল আছার, হাদীস : ১২০

খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন।

ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন, নামাযে কোথায় হাত বাঁধা হবে এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা আছে। (ইমাম) আহমদ রাহ. থেকে বর্ণিত, দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। এটি (হযরত) আলী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু মিজলায রাহ., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., (সুফিয়ান) ছাওরী রাহ., ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) রাহ. থেকে বর্ণিত।-আলমুগনী ২/১৪১

উল্লেখ্য, ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. ‘আলমুগনী’তে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. থেকে মোট তিনটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন। তবে মূল মতন অর্থাৎ ‘মুখতাসারুল খিরাকী’তে শুধু নাভীর নিচে হাত বাঁধার কথাই বলা হয়েছে।

আরবী পাঠ-ويجعلهما ويجعلهما تحت سرته

‘মুখতাসারে’র ভূমিকায় লেখক ইমাম আবুল কাসিম উমার ইবনুল হুসাইন আলখিরাকী (৩৩৪ হি.) বলেছেন, ‘আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর মাযহাব অনুসারে (শরীয়তের মাসাইল) এই কিতাবে সংকলন করেছি।’

اختصرت هذا الكتاب ليقرب على متعلمه على مذهب أبي عبد الله أحمد بن محمد بن حنبل رضي الله عنه.

-আলমুগনী ১/৭-৮

শায়খ আবুল হুসাইন ইয়াহইয়া ইবনে আবুল খায়ের রাহ. (মৃত্যু  ৫৫৮ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু ইসহাক (আলমারওয়াযী) রাহ. বলেছেন, ‘এক হাত অন্য হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।’-আলবায়ান ফী মাযাহিবিল ইমামিশ শাফেয়ী ২/১৭৫

উল্লেখ্য, ইমাম আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ. শাফেয়ী মাযহাবের একজন প্রসিদ্ধ মনীষী। ইমাম শাফেয়ী রাহ. নাভীর উপর (বুকের নিচে) হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করলেও আবু ইসহাক মারওয়াযী নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মকেই অগ্রগণ্য মনে করেছেন।

ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু হানীফা, (সুফিয়ান) ছাওরী ও ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) বলেন, ‘দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। আমাদের (শাফেয়ী মাযহাবের) মনীষীদের মধ্যে আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ.ও তা গ্রহণ করেছেন। আর ইবনুল মুনযির তা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা, (ইবরাহীম) নাখায়ী ও আবু মিজলায রাহ. থেকে।

তিনি আরো বলেন, ‘আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে দুটি রেওয়ায়েত আছে : এক. নাভীর উপর হাত বাঁধা, দুই. নাভীর নিচে হাত বাঁধা।

-আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০

উল্লেখ্য, জনৈক গবেষক একটি রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধার অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়। কারণ হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত মনীষীগণ ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করেছেন। ইবনুল মুনযির রাহ. (৩১৮ হি.) স্বয়ং ইসহাক ইবনে রাহুয়াহর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, ‘নাভীর নিচে হাত বাঁধা রেওয়ায়েতের বিচারে শক্তিশালী এবং ভক্তি ও বিনয়ের অধিক নিকটবর্তী।’

সুতরাং এখানে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর যে রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, তিনি বুকের উপর হাত বাঁধতেন ঐ রেওয়ায়েতেও তা নিশ্চিতভাবে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, তিনি বিতর নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধতেন বা বুকের নিচে।

আরবী পাঠ-

كان إسحاق يوتر بنا ... ويضع يديه على ثدييه أو تحت الثديين.

আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে, নাভীর নিচে ও নাভীর উপরে (বুকের নিচে) দু’ জায়গায় হাত বাঁধার নিয়মই সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল। তাঁরা একটিকে অগ্রগণ্য মনে করলেও কেউ অন্যটিকে অনুসরণযোগ্য মনে করতেন। তো ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. যদি নাভীর নিচে হাত বাঁধাকে অগ্রগণ্য মনে করার পর কখনো কখনো নাভীর উপরে হাত বাঁধার নিয়ম অনুসরণ করে থাকেন তাতে আশ্চর্যের কী আছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই একটি অস্পষ্ট রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে কোনো একটি বিচ্ছিন্ন মত কারো উপর আরোপ করার  অবকাশ নেই। এটি বরং আরোপকারীর দলীল-প্রমাণের দৈন্য এবং শুযূয ও বিছিন্নতাকেই প্রকটভাবে প্রকাশিত করে দেয়।

মূল আলোচনায় ফিরে আসি। এ পর্যন্ত আমরা খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস ও ফিকহের বিখ্যাত ইমামগণের ফতোয়া ও আমল লক্ষ্য করেছি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের যমানায় নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম ব্যাপকভাবে অনুসৃত হয়েছে, যা হাত বাঁধার মরফূ হাদীসমূহেরই ব্যাখ্যা ও ব্যবহারিক রূপ।

নাভীর নিচে হাত বাঁধা যেমন সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া দ্বারা প্রমাণিত তেমনি মারফূ রেওয়ায়েতের সূত্রেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।

নাভীর নিচে হাত বাঁধার মারফূ রেওয়ায়েত

১. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নীচে রেখেছেন।

সনদসহ রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-

حدثنا وكيع، عن موسى بن عمير، عن علقمة بن وائل بن حجر، عن أبيه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم  يضع يمينه على شماله في الصلاة تحت السرة.

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৫১

এই বর্ণনার সনদ সহীহ।  ইমাম কাসেম ইবনে কুতলূবুগা রাহ. (৮৭৯ হি.) বলেন-وهذا إسناد جيد এটি একটি উত্তম সনদ।-আততা’রীফু ওয়াল ইখবার রিতাখরীজি আহাদীছিল ইখতিয়ার-হাশিয়া শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা

উল্লেখ্য, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার একাধিক পান্ডুলিপিতে হাদীসটি এভাবেই অর্থাৎ ةحة السرة  (নাভীর নিচে) কথাটাসহ আছে। এর মধ্যে ইমাম মুরতাযা আযাবীদী-এর পান্ডুলিপি ও ইমাম আবিদ আসসিন্দী রাহ.-এর পান্ডুলিপি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইমাম কাসিম ইবনে কুতলূবুগা রাহ., আল্লামা আবদুল কাদির ইবনে আবু বকর আসসিদ্দীকি ও আল্লামা মুহাম্মাদ আকরাম সিন্ধীর পান্ডুলিপিতেও হাদীসটি এভাবে আছে। পক্ষান্তরে অন্য কিছু পান্ডুলিপিতে এই বর্ণনায় ةحة السرة   (নাভীর নিচে) কথাটা নেই। এ কারণে ভারতবর্ষে মুদ্রিত মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবার পুরানো সংস্করণে এই হাদীসে ةحة السرة  (নাভীর নিচে) অংশটি ছিল না। বর্তমানে মদীনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামার তাহকীক-সম্পাদনায় মুসান্নাফের যে মুদ্রণ পাঠক-গবেষকদের কাছে পৌঁছেছে তাতে হাদীসটি ةحة السرة (নাভীর নিচে) অংশসহ রয়েছে। কারণ শায়খের সামনে প্রথমোক্ত পান্ডুলিপি দুটিও ছিল। এ বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনার পর শায়খ বলেন-

ومن نقل الحديث من إحدى النسخ الأربع خ. ظ. ن. ش. التي ليست فيها هذه الجملة : معذور في عدم إثبات هذه الزيادة، ولكنه ليس معذورا في نفي ورودها، ومن نقله عن إحدى النسختين اللتين فيهما هذه الزيادة هو معذور في إثباتها، بل واجب عليه ذلك ولا يجوز لها حذفها فعلى م التنابز والتنابذ؟

উৎসাহী আলিমগণ শায়খের পূর্ণ আলোচনা মুসান্নাফের টীকায় দেখে নিতে পারেন।

উল্লেখ্য, যারা মুআম্মাল ইবনে ইসমাইলের মুনকার রেওয়ায়েত অবলীলায় গ্রহণ করেন তাদের তো এই রেওয়ায়েত গ্রহণে দ্বিধা থাকার কথা নয়। কারণ এক. এই রেওয়ায়েতের সনদ ইবনে খুযায়মার ঐ রেওয়ায়েতের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। দুই. ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে অন্য সূত্রে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতেও এর বেশ সমর্থন পাওয়া যায়। ইমাম তবারানী রাহ. হুজর আবুল আম্বাসের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর এই বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তাতে আছে, ‘তিনি তার ডান হাত বাম হাতের উপর রাখলেন এবং তা রাখলেন পেটের উপর।’

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

حدثنا أبو مسلم الكشي ثنا حجاج بن نصير ثنا شعبة عن سلمة بن كهيل قال : سمعت حجرا أبا العنبس يحدث عن وائل الحضرمي أنه صلى مع رسول الله صلى الله عليه وسلم ...، ثم وضع يده اليمنى على اليسرى وجعلها على بطنه.

-আলমুজামুল কাবীর ২২/৪৪, হাদীস : ১১০

তেমনি সুনানে দারেমী ও আলমু’জামুল কাবীর তবারানীতে আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইলের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ বর্ণিত হয়েছে, তাতে আছে, ‘তিনি ডান হাত বাম হাতের উপর কব্জির কাছে রাখলেন।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

قال الإمام الدارمي في السنن (باب وضع اليمين على الشمال في الصلاة) : أخبرنا أبو نعيم، ثنا زهير، عن أبي إسحاق، عن عبد الجبار بن وائل، عن أبيه قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع يده اليمنى على اليسرى قريبا من الرسغ. انتهى

  ورواه الطبراني بطريق عبدان بن أحمد، ثنا عمرو بن عثمان الحمصي، ثنا إسماعيل بن عياش، عن يونس بن أبي إسحاق عن أبي إسحاق به.

-সুনানে দারেমী ১/২২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/২৫, হাদীস : ৫২

এই রেওয়ায়েতগুলো সামনে রাখলে বোঝা যায়, আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর যে বিবরণ যাইদা ইবনে কুদামা বর্ণনা করেছেন, যাতে ‘ডান হাত বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর’ রাখার কথা আছে, তার অর্থ ‘বাহু বাহুর উপর’ রাখা নয়; বরং ডান হাতের পাতা এমনভাবে রাখা যে, তা বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব বুকের উপর হাত বাঁধার মতটি পর্যালোচনা করার সময় ইনশাআল্লাহ।

নাভীর নিচে হাত বাঁধার বিষয়ে জয়ীফ সনদে বর্ণিত কিছু রেওয়ায়েতও আছে। তবে রেওয়ায়েতগুলোর বিষয়বস্ত্ত উপরে বর্ণিত হাদীস, আছার ও আমলে মুতাওয়ারাছ দ্বারা সমর্থিত।

২. হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে নামাযে হাতের পাতা হাতের পাতার উপর নাভীর নিচে রাখা।’-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৬; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩৯৬৬

সনদসহ রেওয়ায়েতটির পূর্ণ আরবী পাঠ এই-

حدثنا محمد بن محبوب، حدثنا حفص بن غياث، عن عبد الرحمن بن إسحاق، عن زياد بن زيد، عن أبي جحيفة أن عليا رضي الله عنه قال : السنة وضع الكف على الكف في الصلاة تحت السرة.

 قال المزي في تحفة الأشراف ٨/٤٥٨، هذا الحديث في رواية ابي سعيد بن الأعرابي، وابن داسة وغير واحد عن أبي داود، ولم يذكره أبو القاسم.

৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘নামাযে হাতের পাতাসমূহ দ্বারা হাতের পাতাসমূহ নাভীর নীচে ধরা হবে।’

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

حدثنا مسدد، حدثنا عبد الواحد بن زياد، عن عبد الرحمن بن إسحاق الكوفي، عن سيار أبي الحكم، عن أبي وائل قال : قال أبو هريرة رضي الله عنه : أخذ الأكف على الأكف في الصلاة تحت السرة.

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৮, তাহকীক : শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ; তুহফাতুল আশরাফ, হাদীস : ১৩৪৯৪

এই দুই রেওয়ায়েতের সনদে আবদুর রহমান ইবনে ইসহাক নামক একজন রাবী আছেন। ইমাম তিরমিযী রাহ. তার সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে হাসান বলেছেন। দেখুন : জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৪৬২; আরো দেখুন : হাদীস ২৫২৭

আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে হাদীসটি (২৫২৬) বর্ণনা করার পর ইমাম তিরমিযী বলেন, কোনো কোনো মনীষী এই আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। আরবী পাঠ-

ا هذا حديث غريب وقد تكلم بعض أهل العلم في عبد الرحمن هذا من قبل حفظه وهو كوفي، وعبد الرحمن بن إسحاق القرشي مديني وهو أثبت من هذا. انتهى

উল্লেখ্য, শায়খ আলবানী রাহ.ও আবদুর রহমান ইবনে ইসহাকের সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসকে শাওয়াহেদের (অন্যান্য বর্ণনার সমর্থনের) কারণে সিলসিলাতুস সহীহায় উল্লেখ করেছেন। দেখুন : সিলসিলাতুস সহীহা হাদিস

৪. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘তিনটি বিষয় (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর) নবী-স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত: ইফতারে বিলম্ব না করা, সাহরী শেষ সময়ে খাওয়া এবং নামাযে ডান হাত বাম হাতের উপর নাভীর নিচে রাখা।’

ثلاث من أخلاق النبوة : تعجيل الأفظار، وتأخير السحور، ووضع اليد اليمنى على اليسرى في الصلاة تحت السرة.

-আলমুহাল্লা ৩/৩০; আলজাওহারুন নাকী ২/৩১

উল্লেখ্য, ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) তাঁর নামাযে হাত বাঁধার আলোচনায় নাভীর নিচে হাত বাঁধার একটি মারফূ হাদীস ও একটি আছর উল্লেখ করেছেন। তবে সেগুলোর সনদ উল্লেখ করেননি।

পক্ষান্তরে এ আলোচনায় বুকের উপর হাত বাঁধার একটি রেওয়ায়েতও উল্লেখ করেননি, না সনদসহ না সনদ ছাড়া। তদ্রূপ হাত বাঁধার নিয়ম উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব হল, নামাযী তার ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে।’

ويستحب أن يضع المصلي يده اليمنى على كوع يده اليسرى في الصلاة، في وقوفه كله فيها.

-আলমুহাল্লা ৩/২৯

সারসংক্ষেপ : নামাযে হাত বাঁধা সুন্নাহ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন। এই সুন্নাহর ব্যবহারিক রূপ খাইরুল কুরূনে কী ছিল তা সাহাবা-তাবেয়ীনের আমল ও ফতোয়া এবং সে যুগ থেকে চলে আসা ‘আমলে মুতাওয়ারাছ’ দ্বারা প্রমাণিত, যা ইবাদত-বন্দেগীর সঠিক ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান ও শক্তিশালী সূত্র। এ সূত্রে নামাযে হাত বাঁধার দু’টি নিয়ম পাওয়া যায় : নাভীর নিচে হাত বাঁধা ও নাভীর উপর (বুকের নীচে) হাত বাঁধা। দু'টো নিয়মই আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীনের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল, যা ইমাম তিরমিযী রাহ. জামে তিরমিযীতে বর্ণনা করেছেন। তবে রেওয়ায়েতের বিচারে নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মটি অগ্রগণ্য। ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ রাহ. তা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন।

খাইরুল কুরূন ও পরবর্তী যুগের হাদীস-ফিকহের বড় বড় ইমাম এই নিয়ম গ্রহণ করেছেন। এঁদের মধ্যে ইমাম ইবরাহীম নাখায়ী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম সুফিয়ান ছাওরী, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপরন্তু বেশ কিছু মরফূ হাদীসেও নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।

সুতরাং এটি নামাযে হাত বাঁধার মাসনূন তরীকা। এ সম্পর্কে দ্বিধা ও সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। 

32
‘‘নামাযে হাত বাঁধা ও নাভীর নিচে হাত বাঁধা’’ শীর্ষক লেখায় বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে হাত বাঁধার দুটো নিয়ম চলে আসছে : বুকের নীচে হাত বাঁধা ও নাভীর নীচে হাত বাঁধা। মুসলিম উম্মাহর বিখ্যাত মুজতাহিদ ইমামগণও এ দুটো নিয়ম গ্রহণ করেছেন।

নিকট অতীতে হাত বাঁধার নতুন কিছু নিয়ম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে ছিল না এবং কুরআন-সুন্নাহর প্রাজ্ঞ মনীষী ও মুজতাহিদগণের সিদ্ধান্তেও তা পাওয়া যায় না। বলাবাহুল্য, এসব নিয়ম ‘শুযুয’ ও বিচ্ছিন্নতা বলে গণ্য, যা দ্বীন ও শরীয়তের বিষয়ে সম্পূর্ণ বর্জনীয়।

কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, সম্প্রতি এইসব বিচ্যুতি ও বিচ্ছিন্নতাকেই ‘সুন্নাহ’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে এবং চরম দায়িত্বহীনতার সাথে সাধারণ মানুষের মাঝেও তা প্রচার করা হচ্ছে।

আমরা মনে করি, সাধারণ মুসলমানদেরকে দলীল-প্রমাণের শাস্ত্রীয় জটিলতার মুখোমুখি করা অনুচিত, কিন্তু এ সকল অনাচারের প্রতিরোধ ও আম মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষার জন্য এখন কিছু বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার বিকল্প নেই। যথাসম্ভব সহজ ভাষায় আমরা তা উপস্থাপনের চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হেদায়েতের উপর থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন।

নামাযে হাত বাঁধার ক্ষেত্রে যেসব শুযুয ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

শুযুয ১ : বুকের উপরের অংশে থুতনীর নিচে হাত রাখা

সমসাময়িক গায়রে মুকাল্লিদ আলিমরাও এই নিয়মকে খন্ডন করেছেন। শায়খ বকর বিন আবদুল্লাহ আবু যায়েদ ‘‘লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ’’ পুস্তিকায় আরো কিছু নতুন নিয়মের সাথে এ নিয়মটিকেও খন্ডন করেছেন। ভূমিকায় তিনি লেখেন, ‘আমরা দেখেছি, কিছু লোক কোনো শায ও বিচ্ছিন্ন মত গ্রহণ করে তার প্রচারে কিংবা কোনো দুর্বল রুখসত ও অবকাশ গ্রহণ করে তার প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োজিত করে। এদের খন্ডনের জন্য মনীষী আলিমদের এই নীতিই যথেষ্ট যে, ‘ইলমের ক্ষেত্রে কোনো বিচ্ছিন্ন মত এবং (বিধানের ক্ষেত্রে) কোনো অপ্রমাণিত অবকাশ সম্পূর্ণ বর্জনীয়।

‘কিন্তু সম্প্রতি যে দলটির উদ্ভব ঘটেছে, তাদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের প্রতিদিনের ইবাদত-বন্দেগীর ওয়াজিব-মুস্তাহাব বিষয়ে, যে ইবাদত-বন্দেগী ইসলামের মহান নিদর্শন ও প্রতীকও বটে, এমন সব ধারণার
বিস্তার ঘটছে যেগুলোর সাথে কোনো যুগে আলিমসমাজের কোনো পরিচিতি ছিল না। অতিনমনীয় ভাষায় বললে, এসব ধারণার কোনো কোনোটির সূত্র হচ্ছে বহুকাল আগের বর্জিত কিছু মত।

‘আর কোনো ধারণা পরিত্যক্ত হওয়ার জন্য তো এ-ই যথেষ্ট যে, তা সকল আলিমের মতামত থেকে বিচ্ছিন্ন।

‘ইসলামের দ্বিতীয় রোকন নামাযের ক্ষেত্রেও এমন নতুন কিছু কাজ ও অবস্থা আবিষ্কার করা হয়েছে, যার কোনোটা নামাযীকে একটা অস্বাভাবিক রূপ দান করে, অথচ আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল সম্পর্কে বলেছেন-

وما انا من المتكلفين

 ‘... এবং আমি ভনিতাকারীদের
অন্তর্ভুক্ত নই।’-সূরা সোয়াদ (৩৮) : ৮৬

‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

بعثت بالحنيفية السمحة

 ‘তেমনি তা নামাযীর মাঝে একটা উদ্যত ভঙ্গি সৃষ্টি করে, অথচ নামায হচ্ছে আপন রব ও মাবুদের সামনে বান্দার বিনয় ও অক্ষমতার অবস্থা!

‘কোনো কোনো ধারণার অর্থ দাঁড়ায়, ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত গোটা মুসলিম উম্মাহ ছিল সুন্নাহ বর্জনকারী ও সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত। অন্যভাষায়, তারা ছিল সম্মিলিতভাবে পাপী ও অপরাধী।

‘তো এই সকল ভ্রান্তির কারণ কী?

‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে সুন্নাহ বোঝার ক্ষেত্রে অতিশয়তা, আর কখনো (আরবী) ভাষার বাকরীতি ও হাদীস-ফিকহের মূলনীতি সম্পর্কে উদাসীনতা।

‘এই সকল বিভ্রান্তি হচ্ছে দলীলের বিষয়ে মূলনীতি বর্জনের এবং নামাযের স্বাভাবিক অবস্থা ও ফিকহ-খিলাফিয়াতের কিতাব থেকে বিমুখতার কুফল। অথচ ঐ সকল কিতাবে আহকাম ও বিধানের তত্ত্ব, কারণ ও বিশেষজ্ঞদের মতভিন্নতার আলোচনা থাকে। ...’-লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ পৃ. ৩-৪

বুকের উপরের অংশে গলদেশে হাত বাঁধার ‘দলীল’ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কুরআন মজীদের আয়াত-

فصل لربك وانحر

-এর তাফসীরে আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণনা করা হয়। বায়হাকী তা বর্ণনা করেছেন (২/৩১) এবং তার সূত্রে তাফসীরের বিভিন্ন কিতাবে তা বর্ণিত হয়েছে। যেমন দেখুন : আদ্দুররুল মানছূর ৮/৬৫০-৬৫১

‘এই রেওয়ায়েত সহীহ নয়। কারণ এর সনদে রওহ ইবনুল মুসাইয়াব আলকালবী নামক একজন রাবী আছেন। তার সম্পর্কে দেখুন : আলমাজরূহীন ১/২৯৯

সূরায়ে কাওসারের ঐ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে সঠিক কথা এই যে, তার অর্থও তা-ই যা নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে-

قل ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العالمين

 (বল, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহর জন্য, যিনি রাববুল আলামীন।’

অর্থাৎ ঐ আয়াতে وانحر অর্থ কুরবানী, গলদেশে হাত রাখা নয়।)

‘ইবনে জারীর এই তাফসীরকেই সঠিক বলেছেন এবং ইবনে কাছীর তা সমর্থন করেছেন। তাঁর
মন্তব্য-এটি অতি উত্তম (ব্যাখ্যা)।’-লা জাদীদা ফী আহকামিস সালাহ, বকর আবু যায়েদা পৃ. ৯

উপরে যে রেওয়ায়েতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে তার পূর্ণ আরবী পাঠ সনদসহ তুলে দেওয়া হল-

أخبرنا أبو زكريا بن أبي اسحاق، أنبأ الحسن بن يعقوب بن البخاري، انبأ يحي بن أبي طالب، انبأ زيد بن الحباب، ثنا روح بن المسيب، قال : حدثني عمرو بن مالك النكري عن أبي الجوزاء عن ابن عباس رضي الله عنهما في قول الله عز وجل "فصل لربك وانحر" قال : وضع اليمين على الشمال في الصلاة عند النحر.

-সুনানে বায়হাকী ২/৩০-৩১

রওহ ইবনুল মুসাইয়্যাব সম্পর্কে ইবনে হিববান রাহ. (৩৫৪ হি.) বলেন, ‘সে ছিকা রাবীদের সূত্রে মওযু রেওয়ায়েত বর্ণনা করে। তার থেকে বর্ণনা করা বৈধ নয়।’

يروي الموضوعات عن الثقات لا تحل الرواية عنه

-কিতাবুল মাজরূহীন

ইবনে আদী বলেন, ‘সে ছাবিত ও ইয়াযীদ আররাকাশী থেকে এমন সব রেওয়ায়েত বর্ণনা করে, যা মাহফুয নয় (সঠিক নয়)।’

يروي عن ثابت ويزيد الرقاشي أحاديث غير محفوظة

-আলকামিল ফী জুয়াফাইর রিজাল ৩/১৪৩

আরো দেখুন : মীযানুল ইতিদাল ২/৫৭; লিসানুল মীযান ২/৪৬৮

সারকথা : এই রেওয়ায়েত নির্ভরযোগ্য নয়। আর এর দ্বারা উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর করা তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আয়াতের সঠিক তাফসীর তা-ই যা ইবনে জারীর তাবারী রাহ. গ্রহণ করেছেন এবং ইবনে কাছীর যাকে ‘অতি উত্তম’ বলেছেন।

শুযুয ২ : নামাযে যিরার উপর যিরা রাখা

আরবীতে হাতের আঙুলের মাথা থেকেই কনুই পর্যন্ত অংশকে ‘যিরা’ বলে। সম্প্রতি কিছু মানুষ যিরার উপর যিরা রাখাকে সুন্নাহ মনে করেন এবং ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার উপর না রেখে ডান হাতের যিরা বাম হাতের যিরার উপর রাখেন। হাত বাঁধার ক্ষেত্রে এটাও একটা বিভ্রান্তি ও বিচ্ছিন্নতা। কোনো সহীহ হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার কথা নেই, সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগেও এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না এবং কোনো মুজতাহিদ ইমাম এই নিয়মের কথা বলেননি। যারা একে সুন্নাহ মনে করেন তারা এ বিষয় কোনো সহীহ-সরীহ নস (বিশুদ্ধ ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য) উপস্থাপন করতে পারেননি। তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হচ্ছে, দুটো সহীহ হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা।

নীচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

প্রথম হাদীস : সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত, ‘লোকদেরকে আদেশ করা হত, পুরুষ যেন তার ডান হাত বাম যিরার উপর রাখে।’

হাদীসটির আরবী পাঠ এই-

كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة. قال أبو حازم : لا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم.

-মুয়াত্তা মালিক পৃ. ৫৫ ; সহীহ বুখারী ১/১০৪

এই হাদীসে যিরার উপর যিরা রাখার কথা নেই। বাম যিরার উপর ডান হাত রাখার কথা আছে।

দ্বিতীয় হাদীস : ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের একটি পাঠ। তাতে আছে, ‘(আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও যিরার উপর রাখলেন।’

রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد

-মুসনাদে আহমদ ৩১/১৬০, হাদীস : ১৮৮৭০; সুনানে আবু দাউদ ১/৪৮৩, হাদীস : ৭২৭

এই বর্ণনাতেও বলা হয়নি ডান যিরা রেখেছেন। বলা হয়েছে, ডান হাত রেখেছেন।

এই দুই হাদীসে ডান হাত অর্থ ডান হাতের যিরা-এর কোনো প্রমাণ নেই; বরং এই ব্যাখ্যা করা হলে তা হবে এই দুই হাদীসের শায ও বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা। কারণ হাদীস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য কোনো ইমাম ও ভাষ্যকার এই ব্যাখ্যা করেননি।

উল্লেখিত পাঠটি কি ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের মূল পাঠ

ওয়াইল ইবনে হুজর রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায পড়েছেন এবং যেভাবে তাঁকে নামায পড়তে দেখেছেন তা বর্ণনা করেছেন। তাঁর এই বিবরণ বেশ কয়েকজন রাবীর সূত্রে পাওয়া যায়। যেমন : ১. আলকামা ইবনে ওয়াইল ২. আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইল। (এরা দু’জন ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর পুত্র। আবদুল জাববার ইবনে ওয়াইল তার বড় ভাই আলকামা ইবনে ওয়াইল রাহ. থেকেই পিতার বিবরণ গ্রহণ করেছেন। দেখুন : সহীহ মুসলিম ফাতহুল মুলহিম ২/৩৯) ৩. হুজর ইবনুল আম্বাস, ৪. কুলাইব ইবনে শিহাব, প্রমুখ। শেষোক্ত কুলাইব ইবনে শিহাব রাহ.-এর বর্ণনাই আমাদের আলোচ্য বিষয়।

কুলাইব ইবনে শিহাব থেকে বর্ণনা করেছেন তার পুত্র আসিম ইবনে কুলাইব রাহ.। আসিম ইবনে কুলাইব রাহ. থেকে অনেক রাবী এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন

শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ

বিশর ইনুল মুফাদ্দাল

কায়স ইবনুর রাবী

আবদুল ওয়াহিদ ইবনে যিয়াদ

খালিদ ইবনু আবদিল্লাহ

আবু ইসহাক

আবুল আহওয়াস

আবদুল্লাহ ইবনে ইদরীস

মুসা ইবনে আবী আয়েশা

আবু আওয়ানা ও

যাইদা ইবনে কুদামা প্রমুখ।

শেষোক্ত রাবী যাইদা ইবনে কুদামা-এর বর্ণনার পাঠ সকলের চেয়ে আলাদা। এ কারণে তার পাঠকে আসিম ইবনে কুলাইবের বর্ণনার মূল পাঠ সাব্যস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

এই সকল বর্ণনা সামনে রাখলে প্রতীয়মান হয়য, ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস থেকে যিরার উপর যিরার নিয়ম গ্রহণ করার অবকাশ নেই।
কারণ :

এক. আগেই বলা হয়েছে, আসিম ইবনে কুলাইব থেকে অন্যান্য ছিকা রাবী উপরোক্ত শব্দে বর্ণনা করেননি। যাইদার রেওয়ায়েতের পাঠ তাদের সবার রেওয়ায়েতের পাঠ থেকে আলাদা। সুতরাং যাইদার বর্ণনার উপর ভিত্তি করে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে, এটিই আসিম ইবনে কুলাইবের পাঠ। অর্থাৎ আসিম ইবনে কুলাইব হুবহু এই শব্দে বর্ণনা করেছেন।

দুই. আলোচিত হাদীসের মূল রাবী হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.। আসিম ইবনে কুলাইবের সূত্র ছাড়া আরো বেশ কিছু সূত্রে তাঁর বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে। সেসব রেওয়ায়েতের পাঠও যাইদার পাঠের চেয়ে আলাদা। সুতরাং তাঁর পাঠটিকেই ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর বিবরণের মূল পাঠ সাব্যস্ত করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

তিন. যাইদার পাঠটিও স্পষ্টভাবে ‘যিরার উপর যিরার’ নিয়ম নির্দেশ করে না; বরং সামান্য চিন্তা করলেই বোঝা যায়, এই পাঠের অর্থও তা-ই যা এ হাদীসের অন্য সকল পাঠ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে পূর্ণ ‘সায়িদ’ (যিরা) উদ্দেশ্য নয়। সায়িদের কিছু অংশ উদ্দেশ্য, যা কব্জি সংলগ্ন।

চার. আসিম ইবনে কুলাইবের বিবরণ বহু সনদে বর্ণিত হয়েছে। এসব বিবরণের মৌলিক পাঠ দু’ ধরনের : ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরা এবং ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা। যেসব রেওয়ায়েতে أخذ বা إمساك (ধরা) শব্দ আছে সেখানে হাত দ্বারা যে হাতের পাতা উদ্দেশ্য তা তো বলাই বাহুল্য। আর যেসব রেওয়ায়েতে وضع (রাখা) শব্দ আছে সেখানে কনুই পর্যন্ত হাত বোঝানো হয়েছে-এই দাবি যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ এর অর্থ হবে আসিম ইবনে কুলাইব রাহ. ওয়াইল ইবনে হুজরের যে বিবরণ উল্লেখ করেছেন, পরবর্তী রাবীদের বর্ণনায় শব্দগত পার্থক্যের কারণে একে দুই বিবরণ ধরে নেওয়া হয়েছে : একটি হল, ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাত ধরা। আরেকটি ডান যিরা বাম যিরার উপর বিছিয়ে রাখা!

এক্ষেত্রে সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত চিন্তা হচ্ছে, যেসব বর্ণনায় ‘ডান হাত রাখা’ আছে তারও অর্থ ডান হাতের পাতা রাখা, কনুই পর্যন্ত রাখা নয়।

পাঁচ. এটা আরো শক্তিশালী হয় যখন দেখা যায়, এ হাদীসের অসংখ্য বর্ণনার মাঝে একটি সহীহ রেওয়ায়েতেও ‘ডান হাতের যিরা’ বাম হাতের উপর রেখেছেন এমন কথা পাওয়া যায় না।

সুতরাং যিরার উপর যিরা একটা আরোপিত ব্যাখ্যা, হাদীস শরীফের সাথে যার কোনো সম্পর্ক নেই। এ কারণেই হাদীস ও ফিকহের কোনো নির্ভরযোগ্য ইমাম থেকে হাদীসের এই ব্যাখ্যা এবং হাত বাঁধার এই নিয়ম বর্ণনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়, উপরোক্ত নিয়মটি যেমন হাত বাঁধার বিচ্ছিন্ন ও নবউদ্ভাবিত একটি নিয়ম তেমনি এই নিয়ম দ্বারা হাদীস শরীফের ব্যাখ্যাও একটি শায ও বিচ্ছিন্ন ব্যাখ্যা।

ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ কী ব্যাখ্যা করেছেন

যাইদা ইবনে কুদামার এই পাঠ হাদীস ও ফিকহের প্রাচীন গ্রন্থসমূহে উদ্ধৃত হয়েছে। বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ তার অর্থ করেছেন ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর রাখা।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইবনে খুযায়মা রাহ. (৩১১ হি.) সহীহ ইবনে খুযায়মায় হাদীসের এই পাঠ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ‘যিরার উপর যিরা’র অর্থ গ্রহণ করেননি। তিনি এই হাদীসের উপর শিরোনাম দিয়েছেন-

باب وضع بطن الكف اليمنى على كف اليسرى والرسغ والساعد جميعا.

অর্থাৎ ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর রাখা। (দেখুন : সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, বাব : ৯০)

বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, নামাযে হাত এমনভাবে রাখা উচিত, যাতে ডান হাতের পাতা বাম হাতের পাতার কিছু অংশ, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশের উপর থাকে। তাঁরা ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের এই পাঠ এবং হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ইবনে কুদামা হাম্বলী রাহ. (৬২০ হি.) বলেন, (নামাযে) ডান হাত বাম হাতের কব্জি ও তৎসংলগ্ন অংশের উপর রাখা মুস্তাহাব। কারণ হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের বিবরণ দিয়েছেন এবং সে বিবরণে বলেছেন, ‘অতপর তিনি তাঁর ডান হাত রাখলেন তার বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর।’

ويستحب أن يضعهما على كوعه وما يقاربه لما روى وائل بن حجر أنه وصف صلاة النبي صلى الله عليه وسلم وقال  في وصفه : ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد.

-আলমুগনী ২/১৪১

একই কথা বলেছেন আল্লামা ইবনে কুদামা মাকদেসী রাহ. (৬৮২ হি.)। তাঁর বক্তব্যের আরবী পাঠ এই-

ويضعهما (كذا) على كوعه أو قريبا منه لما روى وائل بن حجر أنه وصف صلاة النبي صلى الله عليه وسلم وقال  في وصفه : ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد.

-আশশারহুল কাবীর (আলমুগনীর সাথে মুদ্রিত) ১/৫৪৯

ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) ‘‘শরহুল মুহাযযাব’’ গ্রন্থে (৪/৩২৭) শাফেয়ী মাযহাবের মনীষীদের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন যে, ‘সুন্নাহ হচ্ছে, তাকবীরে (তাহরীমার) পর দুই হাত নামিয়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে এবং ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া এবং কব্জি ও বাহুর কিছু অংশ ধরবে। কাফফাল বলেছেন, ডান হাতের আঙ্গুল আড়াআড়িভাবে কব্জির উপর রাখা বা বাহুর উপর ছড়িয়ে দেওয়া দুটোরই অবকাশ আছে।

এরপর বলেন, (পৃ. ৩২৯) আমাদের মনীষীগণ সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস দ্বারা এ নিয়ম প্রমাণ করেছেন। তেমনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে যে, ‘অতপর (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর ডান হাত রাখলেন বাম হাতের পাতার পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর।’

واحتج أصحابنا أصحاب بحديث أبي حازم عن سهل بن سعد قال : كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل يده اليمنى على ذراعه في الصلاة، قال أبو حازم : لا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى النبي صلى الله عليه وسلم، رواه البخاري وهذه العبارة صريحة في الرفع إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، وعن وائل بن حجر أنه رأى رسول الله صلى الله عليه وسلم رفع يديه حين دخل في الصلاة، ثم التحف بثوبه، ثم وضع يده اليمنى على اليسرى، رواه مسلم بهذا اللفظ، وعن وائل بن حجر ايضا قال : قلت لانظر إلى صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف يصلي فقام رسول الله صلى الله عليه وسلم فاستقبل القبلة فكبر فرفع يده حتى حاذى أذنيه، ثم وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد، رواه أبو داود بإسناد صحيح ... .

ইমাম আবুল ওয়ালিদ আলবাজী রাহ. (৪৯৪ হি.) হযরত সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে, ডান হাত কব্জির উপর রাখবে। কারণ ডান হাত বাম হাতের পাতার উপর রাখা যাবে না। তা রাখতে হবে বাম হাতের গোড়া ও কব্জির উপর। আর তার উপর ভর দেওয়া যাবে না। আরবী পাঠ এই-

قوله أن يضع الرجل يده اليمنى على ذراعه اليسرى، يريد أن يضعها على رسغه، لأن يده اليمنى لا يضعها على كف يده اليسرى، وإنما يقتصر بها على المعصم والكوع من يده اليسرى، ولا يعتمد عليها.

-আলমুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা ২/১৬৪

ইমাম আবুল আববাস আহমদ ইবনে উমার আলকুরতুবী রাহ. সহীহ মুসলিমে বর্ণিত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের আলোচনায় বলেন, ইবনুল মাজিশূন ইমাম মালিক রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, (নামাযী) ডান হাত দ্বারা তার বাম হাতের গোড়া ও কব্জি পেঁচিয়ে ধরবে। উপরের হাদীসটি তার দলীল। ...

আরবী পাঠ -

قوله : ثم وضع يده اليمنى على اليسرى اختلف فيه على ثلاثة أقوال : فروى مطرف وابن الماجشون عن مالك أنه قال : يقبض باليمنى على المعصم والكوع من يده اليسرى تحت صدره، تمسكا بهذا الحديث، وروى ابن القاسم : أنه يسدلهما وكره له ما تقدم، ورأى أنه من الاعتماد على اليد في الصلاة المنهي عنه في كتاب أبي داود، وروى أشهب التخيير فيهما والاباحة.

-আলমুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম ২/২১

ইবনে তাইমিয়া রাহ. ও ইবনে হাযম রাহ.

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. নামাযে হাত বাঁধার নিয়ম সম্পর্কে বলেন, ‘তাকবীর সমাপ্ত হওয়ার পর দুই হাত ছেড়ে দিবে এবং ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর এমনভাবে রাখবে যে, ডান হাত দ্বারা কব্জির গোড়ার হাড় পেঁচিয়ে ধরবে কিংবা ডান হাত কব্জির উপর এমনভাবে বিছিয়ে দিবে যে, হাতের আঙ্গুলিসমূহ যিরার দিকে (ছড়ানো) থাকে। ডান হাত যদি কব্জির ওপরের দিকে (যিরার উপর) কিংবা কব্জির  নিচে বাম পাতার উপর রাখে তবে সেটাও জায়েয।’

এরপর তিনি হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস, যাইদা ইবনে কুদামার বর্ণনা, সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীস ও হুলব রা.-এর হাদীসকে দলীল হিসেবে উদ্ধৃত করেছেন।

আলোচনার আরবী পাঠ এই-

يعني : إذا انقضى التكبير فإنه يرسل يديه ويضع يده اليمنى فوق اليسرى على الكوع، بأن يقبض الكوع باليمنى، أو يبسط اليمنى عليه، ويوجه أصابعه إلى ناحية الذراع، ولو جعل اليمنى فوق الكوع أو تحته على الكف اليسرى، جاز لما روى وائل بن حجر أنه رأى النبي  صلى الله عليه وسلم حين دخل في الصلاة، ثم التحف بثوبه ثم وضع يده اليمنى على اليسرى، رواه مسلم، وفي رواية لأحمد وأبي داود : وضع يده اليمنى على ظهر كفه اليسرى والرسغ والساعد، وعن أبي حازم عن سهل بن سعد قال : كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة، قال أبو حازم : ولا أعلمه إلا ينمى ذلك إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم. رواه أحمد والبخاري.

وعن قبيصة بن هلب عن أبيه قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يؤمنا فيأخذ شماله بيمينه، رواه أحمد وأبو داود وابن ماجه والترمذي وقال : حديث حسن، وعليه العمل عند (أكثر) أهل العلم من أصحاب النبي والتابعين ...

-শরহুল উমদা পৃ. ৬৫-৬৬

আল্লামা ইবনে হাযম রাহ. (৪৫৬ হি.) ‘‘আলমুহাল্লা’’ গ্রন্থে (৩/২৯-৩০) নামাযে হাত বাঁধার বিষয়ে বলেছেন, ‘মুস্তাহাব এই যে, নামাযী কিয়ামের হালতে তার ডান হাত বাম হাতের পাতার গোড়ায় রাখবে।’

এরপর তিনি সাহল ইবনে  সাদ রা.-এর হাদীসসহ আরো কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

আলোচনার শেষে বলেন, ‘আবু মিজলায, ইবরাহীম নাখায়ী, সায়ীদ ইবনে জুবাইর, আমর ইবনে মায়মূন, মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন, আয়্যুব ছাখতিয়ানী ও হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকেও আমরা বর্ণনা পেয়েছি যে, তাঁরাও (নামাযে) এভাবে করতেন (হাত বাঁধতেন)।

আর এটি আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমদ ও দাউদ-এর সিদ্ধান্ত। আরবী পাঠ এই-

مسألة : ويستحب أن يضع المصلي يده اليمنى على كوع يده اليسرى في الصلاة في وقوفه كله فيها ... ومن طريق مالك عن أبي حازم عن سهل بن سعد قال : كان الناس يؤمرون أن يضع الرجل اليد اليمنى على ذراعه اليسرى في الصلاة ... وروينا فعل ذلك عن أبي مجلز، وإبراهيم النخعي، وسعيد بن جبير، وعمرو بن ميمون، محمد بن سيرين، وأيوب السختياني، وحماد بن سلمة : أنهم كانوا يفعلون ذلك، وهو قول أبي حنيفة، والشافعي، وأحمد، وداود.

আল্লামা শাওকানী রাহ.ও (১২৫৫ হি.) ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের এই ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘হাদীসের অর্থ এই যে, ডান হাত বাম হাতের পাতা, কব্জি ও বাহুর উপর রাখবে। তবারানীর রেওয়ায়েতে আছে, (আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাযে তাঁর ডান হাত রাখলেন বাম হাতের পিঠের উপর কব্জির কাছে। (ইমাম) শাফেয়ী রাহ.-এর শাগরিদরা বলেছেন, ডান হাতের পাতা দ্বারা বাম হাতের পাতার গোড়া, কব্জি ও বাহুর কিছু অংশ পেঁচিয়ে ধরবে। হাদীসটি হাতের পাতা হাতের পাতার উপর রাখার বৈধতা প্রমাণ করে। এটিই অধিকাংশ মনীষীর গৃহীত নিয়ম। ...’ এরপর তিনি নামাযে হাত ছেড়ে রাখার প্রসঙ্গ আলোচনা করেন।

তার আলোচনার আরবী পাঠ এই-

والمراد أنه وضع يده اليمنى على كف يده اليسرى ورسغها وساعدها. ولفظ الطبراني : وضع يده اليمنى على ظهر اليسرى في الصلاة قريبا من الرسغ، قال أصحاب الشافعي : يقبض بكفه اليمنى كوع اليسرى وبعض رسغها وساعدها.

والحديث يدل على مشروعية وضع الكف على الكف، وإليه ذهب الجمهور ...

-নায়লুল আওতার ২/১৮১

এরপর হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে বলেন, ‘যিরার কোন অংশে ডান হাত রাখা হবে তা এ হাদীসে অস্পষ্ট। তবে আহমদ ও আবু দাউদের রেওয়ায়েতে (যাইদা ইবনে কুদামার সূত্রে ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস) যা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে পাওয়া যায়।

قوله على ذراعه اليسرى أبهم هنا موضعه من الذراع، وقد بينته رواية أحمد وأبي داود في الحديث الذي قبله

-প্রাগুক্ত ২/১৮৯

সুতরাং শাওকানী রাহ.-এর মতেও সাহল ইবনে সাদ রা.-এর হাদীসের অর্থ হাতের পাতা হাতের পাতার উপর রাখা, তবে এমনভাবে, যেন তা যিরার কিছু অংশের উপর থাকে।

সারকথা

নামাযে ‘যিরার উপর যিরা’ রাখা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগ থেকে পরবর্তী শত শত বছর এই নিয়মের কোথাও কোনো অস্তিত্ব ছিল না। নিকট অতীতে আবিষ্কৃত এই নিয়ম প্রমাণের জন্য হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. ও হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত দুটি হাদীসের যে ব্যাখ্যা করা হয় তা ভুল ব্যাখ্যা। হাদীস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য কোনো ইমাম এই ব্যাখ্যা করেননি। বস্ত্তত এই ভুল ব্যাখ্যাই হচ্ছে উপরোক্ত শায ও বিচ্ছিন্ন নিয়মটির প্রধান সূত্র।

শুযুয-৩ : বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ ও একমাত্র সুন্নাহ মনে করা।

ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে বুকের উপর হাত বাঁধার নিয়ম পাওয়া যায় না। কোনো সহীহ মরফূ হাদীসেও এই নিয়ত বর্ণিত হয়নি। মুসলিমউম্মাহর কোনো মুজতাহিদ ইমাম থেকেও নিখুঁত ও অগ্রগণ্য বর্ণনায় এই নিয়ম পাওয়া যায় না। কিছু শায ও মুনকার রেওয়ায়েত পাওয়া যায়, যেগুলো হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়। তেমনি কোনো কোনো মুজতাহিদ ইমাম থেকে পরবর্তীদের অসতর্ক কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়, যেগুলো ঐ ইমামের বিশিষ্ট শাগরিদ ও মনীষীদের বর্ণনার বিরোধী।

এ ধরনের একটি মতকে সুন্নাহ ও একমাত্র সুন্নাহ মনে করা যে মারাত্মক বিভ্রান্তি তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনা

বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব রেওয়ায়েতের সহযোগিতা নেওয়া হয় এখানে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করছি।

মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলের রেওয়ায়েত

তাঁর বিবরণ অনুযায়ী সুফিয়ান ছাওরী রাহ., আসেম ইবনে কুলাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায পড়লাম ... তিনি তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর বুকের উপর রাখলেন।

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

أخبرنا أبو طاهر، نا أبو بكر، نا أبو موسى، نا مؤمل، نا سفيان، عن عاصم بن كليب، عن أبيه، عن وائل بن حجر قال : صليت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ووضع يده اليمنى على يده اليسرى على صدره.

-সহীহ ইবনে খুযায়মা ১/২৭২, হাদীস : ৪৭৯

মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইলের পূর্ণ বিবরণ সঠিক নয়। হাদীস শাস্ত্রের নীতি অনুসারে এ বর্ণনায় على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা ‘মুনকার’। অর্থাৎ সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর বর্ণনায় তা ছিল না। মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল ভুলক্রমে তা বাড়িয়ে দিয়েছেন।

কারণ সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে এই হাদীস মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ ফিরয়াবী ও আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ রাহ.ও বর্ণনা করেছেন।

তাঁরা দু’জনই ছিকা ও শক্তিশালী রাবী। তাঁদের রেওয়ায়েতে على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা নেই। দেখুন : মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৮; আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/৩৩

রেওয়ায়েত দুটির সনদসহ আরবী পাঠ নিম্নরূপ :

قال الإمام أحمد : حدثنا عبد الله بن الوليد، حدثني سفيان، عن عاصم بن كليب عن أبيه عن وائل بن حجر قال : ... ورأيته ممسكا بيمينه على شماله في الصلاة ...

وقال الإمام الطبراني : حدثنا عبد الله بن محمد بن سعيد بن أبي مريم ثنا محمد بن يوسف الفريابي ثنا سفيان عن عاصم بن كليب عن أبيه عن وائل بن حجر قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يضع يده اليمنى على اليسرى وإذا جلس افترش رجله اليسرى ...

قال الراقم : ومحمد بن يوسف الفريابي ذكره المزي في الرواة عن الثوري وابن عيينة كلهيما إلا أنه يستظهر برواية الدارقطني أنه الثوري. ففي إتحاف المهرة 13/662 تحت حديث : سمعت النبي صلى الله عليه وسلم إذا قال غير المغضوب عليهم ولا الضالين قال آمين، يمد بها صوته : قط في الصلاة ... وعن يحي بن صاعد، عن ابن زنجوية، عن الفريابي، عن الثوري، عن سلمة، نحوه. أي عن حجر أبي العنبس عن وائل بن حجر.

وقد ذكرهما صاحب أنيس الساري 10/335 في الرواة عن الثوري. رقم الحاشية : (1)

এটা শুধু পাওয়া যায় মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল রাহ.-এর বর্ণনায়, যাঁর সম্পর্কে জারহ-তাদীলের ইমামদের সিদ্ধান্ত এই যে, তিনি সাধারণভাবে বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী হলেও রেওয়ায়েতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রচুর ভুল হয়েছে। এমনকি ইমাম বুখারী রাহ. তাকে ‘মুনকাররুল হাদীস’ বলেছেন।ইমামগণের মন্তব্য নীচে উল্লেখ করা হল-

قال البخاري : منكر الحديث، وقال أبو حاتم الرازي : صدوق شديد في السنة كثير الخطأ، يكتب حديثه، وقال أبو زرعة الرازي : في حديثه خطأ كثير، وقال ابن سعد : ثقة كثير الغلط، وقال الساجي : صدوق، كثير الخطأ وله أوهام يطول ذكرها. وقال الدارقطني : ثقة كثير الخطأ.

 দেখুন : তাহযীবুল কামাল ১৮/৫২৬; তাযীবুত তাহযীব ১০/৩৪০; মীযানুল ইতিদাল ৮৯৪৯; আলমুগনী ফী যুআফা ৬৫৪৭

শায়খ আলবানীও সিলসিলাতুয যয়ীফার অনেক জায়গায় তাঁকে জয়ীফ বলেছেন এবং তাঁর সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন।

 দেখুন : সিলসিলাতুয যয়ীফা ১/১৩১; ২/২৪৬, ৩/১৭৯; ৩/২২৭; ৪/৪৫৫ ইত্যাদি।

দ্বিতীয়ত : সুফিয়ান ছাওরী রাহ. ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর বিবরণ বর্ণনা করেছেন আসিম ইবনে কুলাইব থেকে। আসিম ইবনে কুলাইব থেকে এই হাদীস আরো বর্ণনা করেছেন :

১. শোবা ইবনুল হাজ্জাজ,

২. বিশর ইবনুল মুফাদ্দাল

৩. কায়স ইবনুর রাবী

৪. যাইদা ইবনে কুদামা

৫. আবদুল ওয়াহিদ ইবনে যিয়াদ

৬. খালিদ ইবনু আবদিল্লাহ

৭.আবু ইসহাক

৮. আবুল আহওয়াস

৯. আবদুল্লাহ ইবনে ইদরীস,

১০. মুসা ইবনে আবী আয়েশা

১১. আবু আওয়ানা প্রমুখ হাদীসের বিখ্যাত ইমাম ও ছিকা রাবীগণ। তাঁরা সকলে আসিম ইবনে কুলাইব থেকে নামাযে হাত বাঁধার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কেউ على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা বর্ণনা করেননি।

এঁদের রেওয়ায়েতগুলোর জন্য দেখুন যথাক্রমে :

১. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৯, হাদীস : ১৮৮৭৮

২. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭২৬; সুনানে নাসায়ী, কুবরা, হাদীস : ১১৮৯; মুজতাবা, হাদীস : ১২৬৫; মুসনাদে বাযযার-আলবাহরুয যাখখার, হাদীস : ৪৪৮৫; আলমু’জামুল কাবীর তবারানী ২২/৩৭

৩. আলমুজামুল কাবীর, তবারানী ২২/৩৩

৪. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৮; আলমুজামুল কাবীর ২২/৩৫

৫. মুসনাদে আহমদ ৪/৩১৬

৬. সুনানে কুবরা বায়হাকী ২/১৩১

৭. আলমুজামুল আওসাত তবারানী ২/৪২৩

৮. মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালিসী ২/৩৫৮, হাদীস : ১১১৩; আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/৩৪

৯. সহীহ ইবনে হিববান ৫/২৭১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/৩১৭

১০. মুসনাদে বাযযার আলবাহরুয যাখখার, হাদীস : ৪৪৮৯

১১. মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার বায়হাকী ৩/৫০

এ থেকে বোঝা যায়, আসিম ইবনে কুলাইব বুকের উপর হাত বাঁধার কথা বর্ণনা করেননি। তাহলে সুফিয়ান ছাওরীর সঠিক বর্ণনায় তা কীভাবে থাকতে পারে?

তো এই সকল ইমাম ও ছিকা রাবীর বর্ণনার সাথে তুলনা করলে পরিষ্কার বোঝা যায়, এ হাদীসে على صدره অংশটা মুনকার তথা অগ্রহণযোগ্য।

উল্লেখ্য, কুলাইব ইবনে শিহাব ছাড়া অন্যদের সূত্রেও ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর এই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কোনো সহীহ সনদে على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা পাওয়া যায় না।

দেখুন : বুগয়াতুল আলমায়ী ফী তাখরীজিয যায়লায়ী, নসবুর রায়াহর হাশিয়ায় ১/৩১৬

২. হুলব আতত্বয়ী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে মুসনাদে আহমদের ‘শায’ অংশ

বুকের উপর হাত বাঁধা প্রমাণ করার জন্য হুলব রা.-এর সূত্রে বর্ণিত একটি হাদীসের উদ্ধৃতিও দেওয়া হয়ে থাকে। অথচ ঐ হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় ‘বুকের উপর হাত বাঁধা’র কথা নেই। একটিমাত্র বর্ণনায় এই অতিরিক্ত কথাটি পাওয়া যায়, যা অন্য সকল বর্ণনার পরিপন্থী। রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই -

أحمد : حدثنا يحي بن سعيد عن سفيان : ثني سماك عن قبيصة بن هلب عن أبيه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم ينصرف عن يمينه وعن يساره، ورأيته ـ قال ـ يضع هذه على صدره. وصف يحي اليمنى على اليسرى فوق المفصل.

-মুসনাদে আহমদ ৫/২২৬

এই রেওয়ায়েতে দেখা যাচ্ছে, ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রাহ. এই হাদীসটি সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন। সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে এই হাদীস আরো বর্ণনা করেছেন

১. ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ

২. ইমাম আবদুর রাযযাক ইবনে হাম্মাম

৩. ইমাম আবদুর রহমান ইবনে মাহদী

৪. মুহাম্মাদ ইবনে কাছীর

৫. আবদুস সামাদ ইবনে হাসসান

৬. হুসাইন ইবনে হাফস

প্রমুখ ইমাম ও ছিকা রাবীগণ। তাঁদের কারো বর্ণনায় على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা নেই।

দেখুন যথাক্রমে : ১. মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১/৩৯০; ২. মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ২/২৪০; ৩. সুনানে দারাকুতনী ২/৩৩, হাদীস : ১১০০;
৪. আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/১৬৫; ৫. মারিফাতুস সাহাবা, আবু নুয়াইম ১৯/১৭২

৬. সুনানে কুবরা বাইহাকী ২/২৯৫

তদ্রূপ সিমাক ইবনে হারব থেকে সুফিয়ান ছাওরী রাহ. ছাড়া আরো বর্ণনা করেছেন :

১. আবুল আহওয়াস

২. হাফস ইবনু জুমাই

৩. শরীক

৪. আসবাত ইবনে নাসর

৫. শো’বা ইবনুল হাজ্জাজ

৬. যাইদা ইবনে কুদামা আলকূফী প্রমুখ রাবীগণ।

এঁদের কারো বর্ণনায় على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা নেই।

(দেখুন যথাক্রমে : ১. জামে তিরমিযী ১/৩১২, হাদীস : ২৫০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৮০৯; আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/১৬৫;
২. আলমুজামুল কাবীর তবারানী ২২/১৬৫; ৩. মুসনাদে আহমদ ৫/২২৬, হাদীস : ২১৯৬৯; ৪. আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ২২/১৬৫; ৫. ইবনে আবী আসিম ২৪৯৫-আনীসুস সারী ১০/৩৪৩; ৬. ইবনু কানি ৩/১৯৯-আনীসুস সারী ১০/৩৪৩)

এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ছিমাক ইবনে হারবের বর্ণনায় এ অংশটি ছিল না। সুতরাং সুফিয়ান ছাওরী রাহ.-এর বিশুদ্ধ বর্ণনায় তা কীভাবে থাকতে পারে?

দ্বিতীয় কথা এই যে, ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ আলকাত্তানের রেওয়ায়েত মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার বসরী-এর সূত্রে ‘‘মুখতাসারুল আহকাম’’ তূসীতেও (২/৯৭, হাদীস : ২৩৪) রয়েছে। কিন্তু ঐ কিতাবে ‘আলা সাদরিহী’ নেই।

সনসদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

أخبرنا بندار محمد بن بشار، قال : ثنا يحي وهو ابن سعيد عن سفيان، عن سماك، عن قبيصة بن الهلب عن أبيه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم ينصرف عن شقيه عن يمينه وعن يساره ويضع اليمنى على اليسرى.

তৃতীয় কথা এই যে, মুসনাদে আহমদেও বর্ণনাটি যেভাবে আছে, তা গভীরভাবে পাঠ করলে আল্লামা নীমভী রাহ. যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তা বেশ শক্তিশালী মনে হয়। তা এই যে, মুসনাদে আহমদের বর্ণনাতেও على صدره বুকের উপর কথাটা ছিল না। এটা লিপিকারের ভ্রান্তিপ্রসূত। মূল রেওয়ায়েত সম্ভবত এ রকম -

يضع هذه على هذه

শেষোক্ত هذه লিপিকরের ভ্রান্তির কারণে صدره তে পরিণত হয়ে থাকতে পারে। প্রাচীন হস্তলিখিত পান্ডুলিপিতে এ ধরনের ভ্রান্তি বিরল নয়। এসব ভ্রান্তি চিহ্নিত করার নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে হাদীসশাস্ত্রে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং মুহাদ্দিসগণ সফলভাবে তা প্রয়োগও করেছেন।

রেওয়ায়েতের বিশুদ্ধ পাঠ যদি সেটিই হয়, যা আল্লামা নীমাভী রাহ. বলেছেন তাহলে এর অর্থ হবে-‘তিনি এই হাত এই হাতের উপর রাখলেন।’ হাদীসটি বর্ণনা করার পর রাবী ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ রাহ. ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপর রেখে দেখালেন।’’

রেওয়ায়েতের শেষ বাক্যটিও এই সম্ভাবনাকে সমর্থন করে।

মোটকথা, এ রেওয়ায়েতেও على صدره বুকের উপর কথাটা ‘শায’ বা মুসাহহাফ, যা পরিত্যক্ত।

এই দুটি রেওয়ায়েত প্রমাণ হিসেবে গ্রহণের আগে আরো যে বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত তা এই যে, ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীস ও হুলব আতত্বয়ী রা.-এর হাদীস, উভয় হাদীসেরই রাবী ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রাহ.। এই দুই হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় على صدره থাকলে অবশ্যই তিনি বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ মনে করতেন এবং বুকের উপর হাত বাঁধতেন। কিন্তু তিনি হাত বাঁধতেন নাভীর নিচে, বুকের উপর নয়। দেখুন : আলমুগনী ইবনে কুদামা ২/১৪১; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৪/৩৩০

দুই. মুসনাদে আহমদের সহীহ রেওয়ায়েতে ‘‘আলা সাদরিহী’’ থাকলে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. কেন বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলেননি? তেমনি ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ, ইবনে হাযম ও দাউদ জাহেরী রাহ. থেকেও কেন বুকের উপর হাত বাঁধার নিয়ম পাওয়া যায় না?

তিন. দু’ দুটি স্পষ্ট হাদীস বিদ্যমান থাকলে মুসলিম জাহানের কোনো মুজতাহিদ ইমাম বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলবেন না তা কীভাবে সম্ভব? তবে কি বলতে হবে আল্লাহর রাসূলের হাদীস ত্যাগ করার বিষয়ে হাদীস ও ফিকহের সকল ইমাম একমত হয়ে গেছেন? (নাউযুবিল্লাহ)

৩. সূরায়ে কাউসারের তাফসীরে হযরত আলী রা. থেকে একটি বর্ণনা

হযরত আলী রা. থেকে সূরায়ে কাওছারের দ্বিতীয় আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করা হয় যে, তিনি বলেছেন, ‘ডান হাত বাম হাতের মাঝে রাখা, অতপর তা রাখা বুকের উপর।’

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

حماد بن سلمة : ثنا عاصم الجحدري، عن أبيه، عن عقبة بن صهبان قال : إن عليا رضي الله عنه قال في هذه الآية : فصل لربك وانحر، قال : وضع يده اليمنى على وسط يده اليسرى، ثم وضعهما على صدره.

-সুনানে বায়হাকী ২/৩০; আসলু ছিফাতিস সালাহ, আলবানী পৃ. ২১৭

এই রেওয়ায়েত সহীহ নয়। আল্লামা ইবনুত তুরকুমানী রাহ. (৭৪৫ হি.) বলেছেন, ‘এই রেওয়ায়েতের সনদ ও মতনে ইযতিরাব রয়েছে।’

وفي سنده ومتنه اضطراب

-আলজাওহারুন নাকী, সুনানে বায়হাকীর সাথে মুদ্রিত ২/৩০

শায়খ আলবানীও এর সনদের ইযতিরাব স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ রেওয়ায়েতের সনদের ইযতিরাব স্বীকৃত। সুতরাং এ সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন নেই। ...’

وأما الاضطراب في السند : فهو مسلم، فلا حاجة لإطالة الكلام ببيانه ...

-আসলু ছিফাতিস সালাহ, পৃ. ২২১

মতনের (বক্তব্যের) ক্ষেত্রেও ইযতিরাব স্বীকার করতে হবে কিংবা বলতে হবে, এই রেওয়ায়েতেও على صدره ‘বুকের উপর’ কথাটা শায্ ও বিচ্ছিন্ন এবং এ হাদীসের যে বর্ণনা على صدره ছাড়া সেটিই অগ্রগণ্য। কারণ এ হাদীসের কেন্দ্রীয় বর্ণনাকারী আসিম আলজাহদারী রাহ.। তার থেকে বর্ণনা করেন হাম্মাদ ইবনে সালামা ও ইয়াযীদ ইবনে আবী যিয়াদ। হাম্মাদ ইবনে সালামার বর্ণনায় ‘ইখতিলাফ’ ও ভিন্নতা পাওয়া যায়। হাম্মাদ ইবনে সালামা থেকে মিহরান, আবু সালেহ খুরাসানী ও শাইবানের বর্ণনা এবং মুসা ইবনে ইসমাইলের এক বর্ণনায় على صدره আছে। মুসা ইবনে ইসমাইলের দ্বিতীয় বর্ণনায় এবং আবদুর রহমান-এর বর্ণনায় على صدره নেই। তাদের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-

قال ابن جرير الطبري : حدثنا ابن حميد، قال : ثنا مهران، عن حماد بن سلمة، عن عاصم الجحدري، عن عقبة بن ظهير، عن أبيه، عن علي رضي الله عنه فصل لربك وانحر قال : وضع يده اليمنى على وسط ساعده اليسرى، ثم وضعهما على صدره.

وقال الطبري : حدثنا ابن حميد، قال : ثنا أبو صالح الخراساني، قال : ثنا حماد، عن عاصم الجحدري، عن أبيه، عن عقبة بن ظبيان، أن علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال في قول الله تعالى : فصل لربك وانحر، قال : وضع يده اليمنى على وسط ساعده الأيسر، ثم وضعهما على صدره.

وقال البيهقي في السنن : أخبرنا أبو بكر أحمد بن محمد بن الحارث الفقيه أنبأ أبو محمد بن حيان أبو الشيخ، ثنا أبو الحريش الكلابي، ثنا شيبان ثنا حماد بن سلمة ثنا عاصم الجحدري عن أبيه عن عقبة بن صهبان كذا قال أن عليا رضي الله عنه قال في هذه الآية فصل لربك وانحر قال : وضع يده اليمنى على وسط يده اليسرى، ثم وضعهما على صدره.

وقال البخاري في التاريخ الكبير : قال موسى : حدثنا حماد بن سلمة : سمع عاصما الجهدري عن أبيه عن عقبة بن ظبيان عن علي رضي الله عنه : فصل لربك وانحر. وضع يده اليمنى على وسط ساعده على صدره. (2911)

وقال الطبري : حدثنا ابن بشار، قال : ثنا عبد الرحمن، قال : ثنا حماد بن سلمة، عن عاصم ابن ظبيان،عن أبيه، عن علي رضي الله عنه فصل لربك وانحر قال : وضع اليد على اليد في الصلاة.

وقال الحاكم في المستدرك في تفسير سورة الكوثر: ... منهما ما حدثناه علي بن حمشاذ العدل، ثنا هشام بن علي ومحمد بن أيوب قالا : ثنا موسى بن إسماعيل، ثنا حماد بن سلمة، عن عاصم الجحدري، عن عقبة بن صهبان، عن علي رضي الله عنه فصل لربك وانحر، قال : هو وضع يمينك على شمالك في الصلاة.

-তাফসীরে তবারী (সূরাতুর কাউছার) ১২/৭২১-৭২২; আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৪৩৭; মুসতাদরাকে হাকিম ৩/৩৩৯; সুনানে বায়হাকী ২/৩০

পক্ষান্তরে ইয়াযীদ ইবনে আবী যিয়াদ থেকে ওকী ইবনুল জাররাহ, মুহাম্মাদ ইবনে রবীআ ও হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমান প্রমুখ বর্ণনা করেছেন। তাদের কারো বর্ণনায় على صدره ‘বুকের উপর’ নেই। তাদের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-

قال الطبري : حدثنا أبو كريب، قال : حدثنا وكيع، عن يزيد بن أبي زياد، عن عاصم الجحدري، عن عقبة بن ظهير، عن علي رضي الله عنه : فصل لربك وانحر. قال : وضع اليمين على الشمال في الصلاة.

وقال : حدثني عبد الرحمن بن الأسود الطفاوي، قال : ثنا محمد بن ربيعة، قال : ثني يزيد بن أبي زياد بن أبي الجعد، عن عاصم الجحدري، عن عقبة بن ظهير، عن علي رضي الله عنه في قوله تعالى فصل لربك وانحر. قال : وضع اليمين على الشمال في الصلاة.

قال البخاري في التاريخ الكبير : وقال قتيبة، عن حميد بن عبد الرحمن عن يزيد بن أبي الجعد عن عاصم الجحدري عن عقبة من أصحاب علي عن علي رضي الله عنه : وضعها على الكرسوع.

-তাফসীর তবারী (সূরাতুল কাউছার) ১২/৭২১-৭২২; আততারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৪৩৭; সুনানে বায়হাকী ২/২৯

শায়খ আলবানী মতনের (বক্তব্যের) ইযতিরাব অস্বীকার করেছেন এবং على صدره রেওয়ায়েতকে অগ্রগণ্য বলেছেন। তার এই প্রয়াস যথার্থ নয়। কারণ তিনি শুধু হাম্মাদ ইবনে সালামার রেওয়ায়েতের ইখতিলাফ ও ভিন্নতা উল্লেখ করে মুসা ইবনে ইসমাইলের বর্ণনাকে ‘গরীব’ আখ্যায়িত করেছেন। পক্ষান্তরে ওকী ইবনুল জাররাহ, মুহাম্মাদ ইবনে রবীআ ও হুমাইদ ইবনে আবদুর রহমানের সূত্রে বর্ণিত ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদের রেওয়ায়েত, যেগুলোতে على صدره নেই, সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছেন। বলাবাহুল্য, এভাবে মূল মতনের ইযতিরাবহীনতা প্রমাণ হয় না। তাহকীক ও গবেষণার ক্ষেত্রে এ জাতীয় কর্ম আপত্তিমুক্ত নয়।

হাম্মাদ ইবনে সালামা রাহ.-এর রেওয়ায়েতে على صدره ‘বুকের উপর’ কথার সমর্থনে আরেকটি রেওয়ায়েত পেশ করা হয়। কিন্তু তা সঠিক নয়। কারণ : এক. ঐ রেওয়ায়েতে على صدره ‘বুকের উপর’ শব্দই নেই। তাতে আছে فوق السرة নাভীর উপর।

দুই. ঐ রেওয়ায়েতের অগ্রগণ্য বর্ণনায় فوق السرة শব্দটিও নেই।

বর্ণনাটি এই-

গযওয়ান ইবনে জারীর আদদাববী রাহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘আলী রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন তার ডান হাত কব্জির উপর রাখতেন। কাপড় গোছানো বা শরীর চুলকানোর প্রয়োজন না হলে রুকু পর্যন্ত এভাবেই থাকতেন।’ সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

حدثنا وكيع قال : حدثنا عبد السلام بن شداد الجريري أبو طالوت، عن غزوان بن جرير الضبي، عن أبيه قال : كان علي إذا قام في الصلاة وضع يمينه على رسغه، فلا يزال كذلك حتى يركع متى ما يركع، إلا أن يصلح ثوبه أو يحك جسده.

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৩/৩২২, হাদীস : ৩৯৬১

ইমাম বায়হাকী রাহ.ও এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তার সনদে এই হাদীসের রাবী জারীর আদাদাববী রাহ. সম্পর্কে আছে যে, ‘তিনি ছিলেন হযরত আলী রা.-এর সার্বক্ষণিক সহচর।’

বায়হাকী আরো বলেন, ‘এই হাদীসের সনদ হাসান।’

বায়হাকীর বর্ণনার সনদসহ আরবী পাঠ এই-

... ثنا مسلم بن إبراهيم ثنا عبد السلام بن أبي حازم ثنا غزوان بن جرير عن أبيه أنه ـ وكان شديد اللزوم لعلي بن أبي طالب رضي الله عنه ـ قال : كان علي إذا قام إلى الصلاة فكبر ضرب بيده اليمنى على رسغه الأيسر، فلا يزال كذلك حتى يركع، إلا أن يحك جلدا أو يصلح ثوبه، ... هذا إسناد حسن.

-সুনানে কুবরা ২/২৯

ইমাম বুখারী রাহ. এই আছরটি সহীহ বুখারীতে এনেছেন। তবে সনদ উল্লেখ করেননি। তার বর্ণনার আরবী পাঠ এই-

ووضع علي رضي الله عنه كفه على رصغه الأيسر إلا أن يحك جلدا أو يصلح ثوبا. (كتاب العمل في الصلاة. باب استعانة اليد في الصلاة إذا كان من أمر الصلاة)

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. সনদসহ মূল পাঠ উদ্ধৃত করেছেন। তার আলোচনার আরবী পাঠ এই-

وكذلك رواه مسلم بن إبراهيم أحد مشائخ البخارى عن عبد السلام بن أبي حازم عن غزوان بن جرير الضبي عن أبيه ـ وكان شديد اللزوم لعلي بن أبي طالب رضي الله عنه ـ قال : كان علي إذا قام إلى الصلاة فكبر ضرب بيده اليمنى على رصغه الأيسر، فلا يزال كذلك حتى يركع، إلا أن يحك جلدا أو يصلح ثوبا، هكذا رويناه في السفينة الجرائدية من طريق السلفي بسنده إلى مسلم بن إبراهيم.

-ফাতহুল বারী ৩/৮৭

এই বর্ণনাগুলোতে হযরত আলী রা.-এর নামাযে হাত বাঁধার বিবরণ আছে। এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় :

এক. এই বিবরণ বর্ণনা করেছেন জারীর আদদাববী রাহ., যিনি ছিলেন হযরত আলী রা.-এর সার্বক্ষণিক সহচর।

উপরের নির্ভরযোগ্য একাধিক বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে, এই বিবরণে ডান হাত (ডান হাতের পাতা) বাম হাতের কব্জির উপর রাখার কথা আছে। কিন্তু فوق السرة নাভীর উপরে রাখার কথা নেই।

দুই. ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ বুখারীতে এই বর্ণনাটিই (تعليقا) উল্লেখ করেছেন। সহীহ বুখারীতে উল্লেখিত রেওয়ায়েতে فوق السرة (নাভীর উপর) শব্দ নেই।

তিন. ইমাম বায়হাকী রাহ. এই রেওয়ায়েতের, অর্থাৎ فوق السرة বিহীন রেওয়ায়েতের সনদকেই হাসান বলেছেন।

চার. এই রেওয়ায়েতের পরবর্তী বর্ণনাকারী আবদুস সালাম ইবনে আবী হাযিম থেকে একাধিক রাবী এই বিবরণ বর্ণনা করেছেন। এদের মধ্যে ইমাম ওকী ইবনুল জাররাহ ও মুসলিম ইবনে ইবরাহীম (যিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ)-এর বর্ণনায় فوق السرة ‘নাভীর উপর’ নেই। এটা শুধু পাওয়া যায় আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনায়, যিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ছিলেন না।

শুজা ইবনুল ওয়ালীদের রেওয়ায়েত সনদসহ তুলে দেওয়া হল-

حدثنا محمد بن قدامة بن أعين، عن أبي بدر، عن أبي طالوت عبد السلام، عن ابن جرير الضبي، عن أبيه قال : رأيت عليا رضي الله عنه يمسك شماله بيمينه فوق السرة،

قال المزي : هذا الحديث في رواية أبي الحسن بن العبد، وأبي سعيد بن الأعرابي وغير واحد، عن أبي داود، ولم يذكره أبو القاسم.

-সুনানে আবু দাউদ ১/৪৯৫, হাদীস : ৭৫৭; তাহকীক শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা, টীকা

তুহফাতুল আশরাফ ৭/৩৪৯, হাদীস : ১০০৩০

আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদ রাহ. ছিলেন কুফার অন্যতম আবিদ ও নেককার ব্যক্তি। তবে বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি শক্তিশালী ছিলেন না। ইমাম আবু হাতিম রাযী রাহ. তার সম্পর্কে বলেন-

ولين الحديث، شيخ ليس بالمتين، لا يحتج به، إلا أن عنده عن محمد بن عمرو أحاديث صحاح.

অর্থাৎ তিনি শক্তিশালী রাবী নন, তাঁর দ্বারা দলীল দেওয়া যায় না। তবে মুহাম্মাদ ইবনে আমরের সূত্রে তিনি কিছু সহীহ হাদীস বর্ণনা করেন। -মীযানুল ইতিদাল ২/২৪৪

আলোচিত বর্ণনাটি ঐ সহীহ বর্ণনাগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ এটা আবু তালূত আবদুস সালাম থেকে তার বর্ণনা।

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন-

صدوق ورع له أوهام

অর্থাৎ তিনি সত্যবাদী, নেককার। তবে বর্ণনায় ভুল-ভ্রান্তি আছে।-তাকরীবুত তাহযীব পৃ. ২৯৮

শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী রাহ. আবু দাউদের সূত্রে এই রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করেছেন। তবে সনদ উল্লেখ করেছেন আবু বদর-এর পর থেকে! এরপর বলেছেন, বায়হাকী এই সনদটিকে হাসান বলেছেন! ... এবং বুখারী আলী রা. থেকে তার (?) এই হাদীস দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। তার বক্তব্যের আরবী পাঠ এই-

ويشهد لرواية علي : ما أخرجه أبو داود (1/120) من طريق أبي طالوت عبد السلام عن ابن جرير الضبي عن أبيه قال : رأيت عليا رضي الله عنه يمسك شماله بيمينه على الرسغ فوق السرة، وهذا إسناد قال البيهقي (2/30) : حسن ... وقد علق البخاري حديثه هذا مطولا في صحيحه 3/55، بصيغة الجزم عن علي.

-আসলু সিফাতিস সালাহ ১/২১৭-২১৮

অথচ ইমাম বায়হাকী আবু বদর শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনা সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্য (হাসান) করেননি। করেছেন মুসলিম ইবনে ইবরাহীমের বর্ণনা সম্পর্কে, যে বর্ণনায় فوق السرة নেই।

দ্বিতীয়ত ইমাম বুখারীও সহীহ বুখারীতে শুজা ইবনুল ওয়ালীদের বর্ণনা উল্লেখ করেননি। তিনি যে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন তাতে فوق السرة  নেই।

গবেষণার ক্ষেত্রে এ জাতীয় কর্মকান্ড গ্রহণযোগ্য কি না তা পাঠক ভেবে দেখবেন।

৪.  সুলায়মান ইবনে মুসা-এর সূত্রে একটি মুরসাল রেওয়ায়েত

তাউস রাহ. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন এবং তা বুকের উপর রাখতেন।

সনদসহ রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

قال الإمام أبو داود : ثنا أبو توبة، ثنا الهيثم ـ يعني : ابن حميد، عن ثور عن سليمان بن موسى عن طاؤو‍س قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع اليمنى على يده اليسرى، ثم يشد بينهما على صدره، وهو في الصلاة.

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৭৫৯; মারাসীলে আবু দাউদ, তুহফাতুল আশরাফ, হাদীস : ১৮৮২৯

তাউস রাহ. পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ গ্রহণযোগ্য, যদিও মাঝের তিনজন রাবী সম্পর্কে কিছু আপত্তিও আছে।

এ বর্ণনার রাবী সুলায়মান ইবনে মুসা রাহ. সম্পর্কে ইমামগণ প্রশংসা করেছেন, তবে তার কিছু রেওয়ায়েত ‘মুনকার’ ছিল। এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী রাহ. তার সমালোচনা করেছেন। ইমাম আবু হাতিম রাযী তার বর্ণনায় কিছু ইযতিরাব ও ইমাম ইবনে আদী রাহ. তার ‘তাফাররুদে’র কথা উল্লেখ করেছেন। দেখুন তাহযীবুল কামাল ২৫৫৪

আরবী পাঠ এই-

قال البخاري : عنده مناكير، قال النسائي : أحد الفقهاء وليس بالقوي في الحديث، وقال أبو حاتم : محله الصدق، وفي حديثه بعض الاضطراب، ولا أعلم أحدا من أصحاب مكحول أفقه منه ولا أثبت منه، وقال ابن عدي : وسليمان بن موسى فقيه راوٍ، حدث عنه الثقات من الناس، وهو أحد علماء الشام، وقد روى أحاديث ينفرد بها يرويها، لا يرويها غيره، وهو عندي ثبت صدوق.

এছাড়া এ রেওয়ায়েত দুটি মৌলিক কারণে মা’লুল।

এক. রেওয়ায়েতটি মুরসাল এবং এর সমর্থনে অন্য সনদে বর্ণিত কোনো মারফূ হাদীস বা আছর পাওয়া যায় না। ওয়াইল ইবনে হুজর রা.-এর হাদীসের মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাইল এর বর্ণনা এবং হুলব রা. এর হাদীসের মুসনাদে আহমদের বর্ণনাকে এর সমর্থনে পেশ করা হয়, কিন্তু ইতিপূর্বে দেখানো হয়েছে যে, এ দুটো বর্ণনা শায ও মুনকার। আর শায, মুনকার রেওয়ায়েত শাহিদ (সমর্থক বর্ণনা) হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

দুই. মুসলিম জাহানের কোনো প্রসিদ্ধ ফকীহ ও মুজতাহিদ ইমাম বুকের উপর হাত বাঁধাকে সুন্নাহ বলেছেন এমনটা পাওয়া যায় না। এমনকি শাম অঞ্চলের বিখ্যাত ফকীহদের থেকেও পাওয়া যায় না। অথচ উপরোক্ত মুরসাল রেওয়ায়েতের সবকজন রাবী শাম ও শামের নিকটবর্তী অঞ্চলের এবং অধিকাংশ রাবীরই ফকীহ-পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু না শামের ফকীহগণ বুকের উপর হাত বাঁধার ফতোয়া দিয়েছেন, না শামের সাধারণ আলিমগণ এই নিয়মের সাথে পরিচিত ছিলেন। এটি এ রেওয়ায়েতের একটি ‘ইল্লত’ (ত্রুটি), যাকে পরিভাষায় ইল্লতে মান’বিয়্যাহ বা শুযূযে মানবী বলে।

উল্লেখ্য, ইমাম শাফেয়ী রাহ. সম্পর্কে কোনো কোনো কিতাবে বলা হয়েছে যে, তাঁর মাযহাব, বুকের উপা হাত বাঁধা। এই বর্ণনা সঠিক নয়। ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর মাযহাব হচ্ছে বুকের নীচে (নাভীর উপর) হাত বাঁধা।

ইমাম নববী রাহ. বলেন-

ويجعلهما تحت صدره وفوق سرته، هذا هو الصحيح المنصوص، وفيه وجه مشهور لأبي إسحاق المروزي أنه يجعلهما تحت سرته، والمذهب الأول.

-আলমাজমু শরহুল মুহাযযাব ৩/২৬৮। আরো দেখুন : আলমিনহাজ ‘আননাজমুল ওয়াহহাজ-এর সাথে মুদ্রিত’ ২/১৮০; আলমাজমূ ৩/২৬৯

সারকথা

রেওয়ায়েতসমূহের পর্যালোচনা থেকে যা পাওয়া গেল তা এই-

১. ওয়াইল ইবনে হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় على صدره নেই। কারণ সুফিয়ান ছাওরী রাহ. থেকে দু’জন শক্তিশালী রাবী আবদুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ ও মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ এবং সুফিয়ান ছাওরীর উস্তাদ আসিম ইবনে কুলাইব থেকে অন্তত ১১জন ইমাম ও ছিকা রাবী এই হাদীসের হাত বাঁধার বিবরণ বর্ণনা করেছেন। তাঁদের কারো বর্ণনায় على صدره নেই। একমাত্র মুয়াম্মাল ইবনে ইসমাঈলের বর্ণনায় এটা পাওয়া যায়, যার বর্ণনার ভুল-ভ্রান্তি সম্পর্কে জারহ-তাদীলের ইমামগণ বিশেষভাবে সাবধান করেছেন। এ কারণে হাদীসশাস্ত্রের মূলনীতি অনুযায়ী তাঁর বর্ণনার অতিরিক্ত অংশটি ‘মুনকার’ ও অগ্রহণযোগ্য।

২. হুলব রা. থেকে বর্ণিত হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনাতেও على صدره নেই। শুধু মুসনাদে আহমদে ও যেসব কিতাবে মুসনাদে আহমদের সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে সেইগুলোতেই হাদীসটি
 على صدره সহ পাওয়া যায়।

এই হাদীসের অন্যান্য বর্ণনার সাথে তুলনা করলে এমনকি মুসনাদে আহমদের বর্ণনাটিও গভীরভাবে পাঠ করলে প্রতীয়মান হয় এই হাদীসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় على صدره নেই।

৩. সূরা কাউসারের তাফসীরে হযরত আলী রা. থেকে যে রেওয়ায়েত বর্ণনা করা হয় তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। সনদ-মতন দুদিক থেকেই তা ‘মুযতারিব’। এই হাদীসের على صدره ওয়ালা রেওয়ায়েতটিকে কোনোভাবেই অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করা যায় না।

শায়খ আলবানী সনদের ইযতিরাব স্বীকার করেছেন, কিন্তু মতনের ইযতিবাব খন্ডন করতে গিয়ে এমন কিছু কাজ করেছেন, যা দুঃখজনক।

৪. সুলায়মান ইবনে মুসার সূত্রে বর্ণিত যে মুরসাল রেওয়ায়েতটি উদ্ধৃত করা হয়, তাউস রাহ. পর্যন্ত এর সনদ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হলেও তা অন্তত দুটো কারণে ‘মা’লূল’। সুতরাং তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

33
ওয়ায়েস করনীর দাঁত ভাঙার গল্প লোকমুখে খুবই প্রসিদ্ধ। ঘটনাটি নিমণরূপ- ওহুদ যুদ্ধে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানদান মোবারক শহীদ হল তখন ওয়ায়েস করনী বিষয়টি জানতে পারলেন এবং যারপরনাই ব্যাথিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা ছিল। এ ঘটনা শুনে তিনি স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি ভাবলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁত মোবারক যখন শহীদ হয়েছে তো আমার এ দাঁতের কী অর্থ! তিনি নিজের একটি দাঁত ভেঙে ফেললেন। পরক্ষণে চিন্তা করলেন, আমি যে দাঁত ভেঙেছি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হয়ত এ দাঁত ভাঙেনি অন্য দাঁত। তাই ভেবে তিনি নিজের আরেকটি দাঁত ভেঙে ফেললেন। এভাবে তিনি নিজের সবগুলো দাঁত ভেঙে ফেললেন।

নবীজীর প্রতি উম্মতের ভালবাসা প্রকাশের চূড়ান্ত নযীর হিসেবে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে এ ঘটনা বলে থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার কোনোই ভিত্তি নেই। মোল্লা আলী কারী রাহ. বলেন, এ ঘটনা প্রমাণিত নয়। (দ্র. আলমা‘দিনুল আদানী, আলবুরহানুল জালি ফী তাহকীকি ইনতিসাবিস সুফিয়্যাতি ইলা আলী, পৃ. ১৬৪-১৬৫) ওয়ায়েস  করনী (উয়াইস আলকারানী) একজন বড় মাপের তাবেয়ী ও বুযুর্গ ছিলেন। ইয়ামানের অধিবাসী ছিলেন। তিনি ৩৭ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের হওয়া সত্ত্বেও তাঁর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ তার হয়নি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা ছিল। তার বৃদ্ধা মা ছিলেন। মায়ের সাথে তিনি সদাচরণ করতেন। মায়ের সেবাযত্ন করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিনতেন। হাদীস শরীফে এসেছে, ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়ামান থেকে উয়াইস নামে এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। ইয়ামানে মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। তার শ্বেত রোগ ছিল । সে আল্লাহর কাছে দুআ করলে আল্লাহ তার রোগ ভাল করে দেন, কিন্তু তার শরীরের একটি স্থানে এক দিনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান সাদাই থেকে যায়। তোমাদের কেউ যদি তার সাক্ষাৎ পায় সে যেন তাকে নিজের জন্য ইস্তেগফার করতে বলে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৪২

ওয়ায়েস করনীর সাথে সাহাবীদের সাক্ষাতের ঘটনাও হাদীস শরীফে এসেছে। কিন্তু কোথাও এমন কিচ্ছার কথা নেই। সহীহ মুসলিমে এসেছে, ওমর রা.-এর সাথে ওয়ায়েস করনীর সাক্ষাত হলে তাকে সনাক্ত করার জন্য তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  বলে দেয়া সব আলামত জিজ্ঞাসা করেন। এ বর্ণনায় আছে ওমর রা. নবীজীর কথা অনুযায়ী তাকে নিজের জন্য ইস্তিগফার করতে বলেন, তিনি ওমর রা.-এর জন্য ইস্তিগফার করেন। পরবর্তী বছর হজ্বের মৌসুমে ওয়ায়েস করনী যে এলাকায় বসবাস করছিলেন সেখান থেকে এক ব্যক্তি এলে ওমর রা. তার (ওয়ায়েস করনীর) খোঁজ খবর নেন। (দ্র. সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৪২)

34
অনেক মানুষকে দেখা যায়, মাসবুক অবস্থায় যদি ইমামের সাথে দুই দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে মনে করে যে তার নামায বাতিল হয়ে গিয়েছে। ফলে আবার নতুন করে শুরু থেকে নামায পড়ে।

এ আমলটি ভুল। মাসআলা না জানার কারণেই হয়তো তারা এমনটি করেন। এক্ষেত্রে নিয়ম হল, দুই দিকে সালাম ফিরিয়ে ফেললেও, যদি নামায ভেঙে যায় এমন কোনো কাজ না করা হয় তাহলে উঠে যাবে এবং বাকী রাকাত আদায় করবে। শেষে সাহু সিজদা আদায় করবে।

আর একথা তো সবারই জানা যে, মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাম ফেরাবে না। বরং ইমামের দুই দিকে সালাম ফেরানো হলে উঠে বাকী রাকাত আদায় করবে।

আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে মাসআলা জেনে আমল করার তাওফীক দান করুন।

35
Natural Science / Re: Scientists find Antarctic ice is melting faster
« on: November 19, 2014, 04:34:19 PM »
Greenhouse effect.......

36
Natural Science / Re: This is how a lone rock rolls on Mars
« on: November 19, 2014, 04:32:53 PM »
I sometimes wonder what this extraterristrial discoveries are doing good to humanity!

37
So my memory should be good inshaAllah.........

38
Natural Science / Re: DNA fingerprinting pioneer honoured by Royal Society
« on: November 19, 2014, 04:30:13 PM »
so here is DNA, the double helix mystery................

39
Natural Science / Re: Scientists use stem cells to regenerate human corneas
« on: November 19, 2014, 04:28:38 PM »
alhamdulillah. good  news for the blind people.

40
Mesmerizing! Theoretical physics..........

41
Natural Science / Re: Three Dimensional Printing
« on: November 19, 2014, 04:26:07 PM »
In my grad school UT Knoxville, two researchers have already pulled out a full length two seated car from a 3D printer and drove it for a while. Engineering is always awesome indeed.

42
Hadith / Re: Six ways to earn, even after death
« on: November 19, 2014, 04:23:20 PM »
jazakallah khair. nice post.

43
Hadith / সহজ আমল অনেক সওয়াব
« on: November 19, 2014, 04:21:28 PM »
পূর্ণাঙ্গ অযু ‘অযু’ পবিত্রতা অর্জনের উপায়। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মাসনুন তরীকায় অযু করা হলে তা একটি নেক আমলও বটে। এটি অতি সহজ আমল, যা আমরা সকলেই করি এবং দিনে একাধিকবার করি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে অযুর প্রয়োজন হয়। আমরা যদি একটু খেয়াল করে মাসনূন তরীকায় এই সহজ ও প্রয়োজনীয় আমলটি সম্পাদন করি তাহলে অতি সহজে আমরা পেতে পারি অনেক বড় বড় পুরষ্কার। হাদীস হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যে কোনো ব্যক্তি অযু করে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে অযু করে অতঃপর বলে- (আরবী) তবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারবে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৫ ব্যাখ্যা এটি একটি সুসংবাদবাহী সুন্দর হাদীস। এখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযুর ফরয, সুন্নাত ও আদাবের প্রতি লক্ষ রেখে উত্তমরূপে অযু করার এবং অযুর শেষে দুআ পড়ার একটি সহজ আমলের কথা বলেছেন। যা দেহকে সজীব ও পবিত্র করে, মনে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা দান করে। এই সহজ আমলের জন্যও আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করবেন বলে সু-সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তার জন্য জান্নাতের কটি দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং সে নিজের ইচ্ছামতো যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। অন্যান্য হাদীসে অযুর আরো ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত ওসমান ইবনে আফফান রা. হতে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অযু করে এবং উত্তমরূপে অযু করে, তার শরীর থেকে, এমনকি নখের নিচ থেকেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৫ হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে আছে, নবীজী বলেছেন, মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন অযু করে, যখন সে মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে বা পানির শেষ কাতরার সঙ্গে ওই সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দু চোখ দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই হাত ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যা সে হাত দ্বারা করেছিল। যখন সে দুই পা ধৌত করে তখন পানির সঙ্গে ওই সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে সে চলেছিল। এভাবে সে গুনাহ থেকে পাকসাফ হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২৪৪ অন্য হাদীসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের সামনে হাউযে কাউসারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, মানুষ যেমন তার হাউয থেকে অন্য মানুষকে সরিয়ে দেয় তেমনি আমিও সেদিন কিছু মানুষকে সরিয়ে দিব। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, সেদিন কি আপনি আমাদের চিনতে পারবেন? নবীজী ইরশাদ করলেন, বল তো, কারো যদি হাতে ও পায়ে সফেদ চিহ্ন বিশিষ্ট কিছু ঘোড়া থাকে এবং সেগুলোকে অসংখ্য কালো রংয়ের ঘোড়ার মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে সেই ব্যক্তি কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ, পারবে। ইয়া রাসূলুল্লাহ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তেমনি তোমাদেরও এমন কিছু চিহ্ন হবে যা অন্য কোনো উম্মতের হবে না। কিয়ামতের দিন তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও অযুর কারণে ঝলমল করতে থাকবে।’-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৬-২৪৯ অবলম্বনে। অন্য একটি সহীহ হাদীসে আরো একটি সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হযরত উকবা ইবনে আমের রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোনো মুসলিম যখন সুন্দরভাবে অযু করে অতঃপর চেহারা-মন উভয়কে আল্লাহ অভিমুখী করে দণ্ডায়মান হয় এবং করে দু রাকাত নামায আদায় করে তখন তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।-সহীহ মুসলিম হাদীস ২৩৪ শিক্ষা উপরের হাদীসগুলো থেকে অযু ও আনুষঙ্গিক কয়েকটি আমলের নির্দেশ পাওয়া যায়-১. মাসনূন তরীকায় উত্তমরূপে অযু করা। ২. অযুর পর হাদীসে উল্লেখিত দুআ পাঠ করা। ৩. দু রাকাত‌ তাহিয়্যাতুল অযুর নামায পড়া। আমলগুলো খুবই সহজ কিন্তু বিনিময়ে রয়েছে বড় বড় কয়েকটি সুসংবাদ। ১. অযুর পানির সাথে গুনাহসমূহ বের হয়ে যাবে। ২. কিয়ামতের দিন অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঝলমল করবে। ৩. জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। ৪. জান্নাতের সবকটি দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। অতএব সকলের উচিত, মাসনূন তরীকায় আমলটি করে এসব পুরস্কার লাভে প্রতিযোগিতা করা।

44
Hadith / Re: শাওয়ালের ৬ রোযাঃ
« on: November 19, 2014, 03:57:02 PM »
alahamdulillah May Allah bless us with the barakah of siam fish sha'ban.

45
অনেক সময় সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতির দিকে লক্ষ্য করে কিংবা কোনো বাস্তবতা বোঝানো কঠিন মনে হলে অনেকে চুপ থাকার পথ বেছে নেন। অথবা দু’ একবার বলে চুপ হয়ে যান। এটা এ কারণে অনুচিত যে, এতে প্রকৃত বিষয় মানুষের অজানা থেকে যাবে এবং ভুল কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।

ঈদ ইসলামের শাখাগত বিষয় নয়। এটি দ্বীনের ‘শিআর’ তথা প্রতীকের অন্তর্ভুক্ত এবং এমন একটি বিষয়, যা সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের নির্ধারণ ও নির্দেশনার উপর নির্ভরশীল

 (أمر تعبدي وتوقيفي )। অর্থাৎ এটি শুধু বিবেকবুদ্ধি ও কিয়াস দ্বারা অনুধাবন করা যায় না। সরাসরি শরীয়তদাতার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট আদেশ দ্বারাই বিধিত হয়। এজন্য সুন্নতে মুতাওয়ারাসা, স্পষ্ট হাদীস ও ইজমায়ে উম্মতের বিপরীতে তৃতীয় ঈদ আবিষ্কার করা বিদআতই হবে।

আর এখন তো বিষয়টি শুধু এই নয় যে, একটি বিদআতকে সুন্নতের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সম্মিলিতভাবে উদযাপন করা হচ্ছে; বরং এটিকে বানানো হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহববতের মাপকাঠি ও প্রতীক। অথচ শরীয়ত বলে সুন্নাহর অনুসরণ, উসওয়ায়ে হাসানাহ অনুযায়ী জীবনযাপন, সুন্নতকে যিন্দা করা ও বিদআত নির্মূল করার মেহনত হচ্ছে মুহববতের মাপকাঠি ও নিদর্শন।

সাদাচোখে এটি কারো কাছে সামান্য বিষয় মনে হলেও বাস্তবে তা একটি মারাত্মক চিন্তাগত বিকৃতি। আর এই নবআবিষ্কৃত ‘ঈদ’কে জশনে জুলুস আকারে পালন করতে গিয়ে যেসব গর্হিত কাজ, আচরণ ও ভিত্তিহীন বর্ণনার আশ্রয় নেওয়া হয় সে বিষয় তো রইলই।

মনে রাখা উচিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হকসমূহ আদায় করা থেকে উদাসীন হয়ে অন্যায় পন্থায় হক আদায়ের বাহানার দ্বারা নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়া নিজের প্রতি ও গোটা উম্মতের প্রতি মারাত্মক জুলুম। আল্লাহ তাআলার নিকট দাবি নয়, আমল গ্রহণযোগ্য। বাহ্যিক চাকচিক্য নয়, অন্তরের তাকওয়াই তাঁর নিকট পৌঁছে। বিদআত নয়, শুধু সুন্নতই তাঁর নিকট বরণীয়।

একটু ভেবে দেখুন, যে নাসারাদের পথ থেকে আমরা সূরায়ে ফাতিহায় প্রতিদিন কমপক্ষে বিশবার আল্লাহ তাআলার নিকট ولا الضالين   বলে আশ্রয় প্রার্থনা করি তাদের থেকে নেওয়া রসম-রেওয়াজে কি উম্মতের কোনো কল্যাণ থাকতে পারে?

اهدنا الصراط المستقيم، صراط الذين انعمت عليهم غير المغضوب عليهم ولا الضالين

Pages: 1 2 [3] 4 5