151
Islam & Science / তাওয়াক্কুল, আল্লাহর উপর ভরসা
« on: June 13, 2013, 09:14:30 AM »
তাওয়াক্কুল আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো,আল্লাহর ওপর নির্ভরতা,আল্লাহর কাছে নিজেকে সোপর্দ করা এবং তারই ওপর ভরসা করা। ঈমানদার মানুষের একটি বড় গুণ হচ্ছে, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা। সব কাজের ক্ষেত্রেই আল্লাহর ওপর নির্ভরতা অর্থাৎ চূড়ান্ত ফয়সালার ক্ষমতা যে আল্লাহর হাতে, তা মনেপ্রাণে স্বীকার করাই হচ্ছে, আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করা। আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলা যায়, একজন ঈমানদার ব্যক্তি, ভালো ও কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করবে এবং ফলাফলের জন্য আল্লাহতাআলার উপর ভরসা করবে ও তাঁর প্রতি দৃঢ় আস্থা রাখবে। আর এর মধ্যেই রয়েছে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ।
আল্লাহর ওপর ভরসার নানা পর্যায় রয়েছে। অনেকেই কেবল মুখে আল্লাহর ওপর নির্ভর করার কথা বলেন। আবার কেউ কেউ সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা করেন। আল্লাহর ওপর নির্ভরতার ক্ষেত্রে কারো কারো মনে দ্বিধা-সন্দেহ ও উদ্বেগও কাজ করে। এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাওয়াক্কুল নয়। আল্লাহর ওপর সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাওয়াক্কুলকে মায়ের প্রতি শিশুর নির্ভরশীলতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যেমন- একটি শিশু শুধু তার মাকেই একান্ত আপন বলে জানে, মায়ের ওপরই সে ভরসা করে, তার যত আবদার মায়ের কাছেই। সে কখনোই মা থেকে আলাদা হয় না। মায়ের অনুপস্থিতিতে কোনো বিপদ ঘটলে শিশুর মনে প্রথমেই যে বিষয়টি আসে এবং যে শব্দটি মুখে উচ্চারিত হয়, তাহলো- মা। কারণ শিশু তার মাকেই একমাত্র আশ্রয়স্থল বলে জানে। তাওয়াক্কুলের সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে- মানুষের জীবনের সব কিছুর শৃঙ্খলা বিধানকারী হিসেবে আল্লাহকে স্বীকার করে নেয়া। এভাবেই আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে মানুষের মাঝে কাজের শক্তি ও স্পৃহা সৃষ্টি হয় এবং চিন্তাগত প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। পার্থিব ভয়-ভীতির অবসান ঘটে। কারণ ঈমানদার ব্যক্তির শতভাগ বিশ্বাস হলো- আল্লাহই হচ্ছে শক্তির একমাত্র উৎস।
নবী-রাসূলরা ছিলেন আল্লাহর ওপর নির্ভরতার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আদর্শ। হজরত ইব্রাহিম (আ.)’কে আগুনে নিক্ষেপের ঘটনা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। মূর্তি ভাঙার পর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেয় জালিম রাজা নমরুদ। এ পরিস্থিতিতে হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেন এবং একমাত্র আল্লাহকেই স্মরণ করতে থাকেন। আর আগুন হজরত ইব্রাহিম (আ.)-র জন্য ফুলের বাগানে পরিণত হয়। আল্লাহর ওপর নির্ভর করাটা মানুষের জন্য এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বারবারই তার অনুসারীদেরকে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করার কথা বলেছেন। সবাইকে তিনি এ জন্য উৎসাহিত করেছেন। ইমাম জাফর সাদেক (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন, যেখানে তাওয়াক্কুল থাকে, সেখানে সম্মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায়। অন্যভাবে বলা যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, সে সম্মান ও প্রাচুর্য্যের অধিকারী হয়।
তবে তাওয়াক্কুল বস্তুবাদীদের জন্য একটি অভাবনীয় বিষয়। কাজ-কর্ম সম্পন্ন করার পর ফলাফলপ্রাপ্তির জন্য আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে, এটা বস্তুবাদীদের কাছে বোধগম্য নয়। চর্মচক্ষু দিয়ে যে আল্লাহকে দেখা যায় না, তাকেই সব ক্ষমতার উৎস হিসেবে মেনে নিতে হবে- এমন বক্তব্য বস্তুবাদীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো- অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাসই ঈমানদারদের জীবনের চলিকাশক্তি। আর এ কারণেই তাওয়াক্কুলের ফজিলতও সীমাহীন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’
তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী ব্যক্তি কখনো হতাশ হয় না। আশা ভঙ্গ হলে মুষড়ে পড়ে না। বিপদ-মুসীবত, যুদ্ধ-সংকটে ঘাবড়ে যায় না। যে কোনো দুর্বিপাক, দুর্যোগ, সঙ্কট ও বিপদ-মুসীবতে আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রাখে। জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নের যে ঝড়ই উঠুক না কেনো, ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এ ধরনের মানুষ সব সময়ই ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী।
রাসুলুল্লাহ (সা.)’র পুরো জীবনকাল এবং তার পরিবারের সবার জীবন ছিল আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। খোদাদ্রোহীদের অত্যাচার-নির্যাতনে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য মোকাবিলায় এবং অনুসারীদের অভিযোগ-অনুযোগে সর্বাবস্থায় তিনি তাওয়াক্কুলকে একমাত্র অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আত-ত্বালাকের ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ সম্পন্ন করে দেবেন, তিনি সব কিছুর একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।'
আসলে তাওয়াক্কুল হলো, মহান আল্লাহর দ্বায়িত্বাধীন হওয়ার সর্বোত্তম উপায়। এ প্রসঙ্গে ইরানের বিখ্যাত লেখক ও চিন্তাবিদ ড. হোসেইন এলাহি কুমশেয়ির একটি দোয়া এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি তার কিমিয়া বা পরশমনি শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, ‘আমি শক্তিহীন এক পরগাছা। আমার নিজের কোনো শেকড় নেই। কোনো গাছকে অবলম্বন না করে গজিয়ে ওঠার ও পল্লবিত হওয়ার ক্ষমতাও আমার নেই। কিন্তু হে আল্লাহ, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার সঙ্গে নিজেকে জড়াই ও আপনার ওপর তাওয়াক্কুল করি, ততক্ষণ আমার ভেতর কোনো ভয়-ভীতি থাকে না।’
আল্লাহর ওপর ভরসার নানা পর্যায় রয়েছে। অনেকেই কেবল মুখে আল্লাহর ওপর নির্ভর করার কথা বলেন। আবার কেউ কেউ সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা করেন। আল্লাহর ওপর নির্ভরতার ক্ষেত্রে কারো কারো মনে দ্বিধা-সন্দেহ ও উদ্বেগও কাজ করে। এগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাওয়াক্কুল নয়। আল্লাহর ওপর সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাওয়াক্কুলকে মায়ের প্রতি শিশুর নির্ভরশীলতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যেমন- একটি শিশু শুধু তার মাকেই একান্ত আপন বলে জানে, মায়ের ওপরই সে ভরসা করে, তার যত আবদার মায়ের কাছেই। সে কখনোই মা থেকে আলাদা হয় না। মায়ের অনুপস্থিতিতে কোনো বিপদ ঘটলে শিশুর মনে প্রথমেই যে বিষয়টি আসে এবং যে শব্দটি মুখে উচ্চারিত হয়, তাহলো- মা। কারণ শিশু তার মাকেই একমাত্র আশ্রয়স্থল বলে জানে। তাওয়াক্কুলের সর্বোচ্চ পর্যায় হচ্ছে- মানুষের জীবনের সব কিছুর শৃঙ্খলা বিধানকারী হিসেবে আল্লাহকে স্বীকার করে নেয়া। এভাবেই আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে মানুষের মাঝে কাজের শক্তি ও স্পৃহা সৃষ্টি হয় এবং চিন্তাগত প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। পার্থিব ভয়-ভীতির অবসান ঘটে। কারণ ঈমানদার ব্যক্তির শতভাগ বিশ্বাস হলো- আল্লাহই হচ্ছে শক্তির একমাত্র উৎস।
নবী-রাসূলরা ছিলেন আল্লাহর ওপর নির্ভরতার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আদর্শ। হজরত ইব্রাহিম (আ.)’কে আগুনে নিক্ষেপের ঘটনা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। মূর্তি ভাঙার পর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেয় জালিম রাজা নমরুদ। এ পরিস্থিতিতে হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেন এবং একমাত্র আল্লাহকেই স্মরণ করতে থাকেন। আর আগুন হজরত ইব্রাহিম (আ.)-র জন্য ফুলের বাগানে পরিণত হয়। আল্লাহর ওপর নির্ভর করাটা মানুষের জন্য এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বারবারই তার অনুসারীদেরকে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করার কথা বলেছেন। সবাইকে তিনি এ জন্য উৎসাহিত করেছেন। ইমাম জাফর সাদেক (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন, যেখানে তাওয়াক্কুল থাকে, সেখানে সম্মান-মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায়। অন্যভাবে বলা যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, সে সম্মান ও প্রাচুর্য্যের অধিকারী হয়।
তবে তাওয়াক্কুল বস্তুবাদীদের জন্য একটি অভাবনীয় বিষয়। কাজ-কর্ম সম্পন্ন করার পর ফলাফলপ্রাপ্তির জন্য আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে, এটা বস্তুবাদীদের কাছে বোধগম্য নয়। চর্মচক্ষু দিয়ে যে আল্লাহকে দেখা যায় না, তাকেই সব ক্ষমতার উৎস হিসেবে মেনে নিতে হবে- এমন বক্তব্য বস্তুবাদীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো- অদৃশ্যের ওপর বিশ্বাসই ঈমানদারদের জীবনের চলিকাশক্তি। আর এ কারণেই তাওয়াক্কুলের ফজিলতও সীমাহীন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’
তাওয়াক্কুলের নীতি অবলম্বনকারী ব্যক্তি কখনো হতাশ হয় না। আশা ভঙ্গ হলে মুষড়ে পড়ে না। বিপদ-মুসীবত, যুদ্ধ-সংকটে ঘাবড়ে যায় না। যে কোনো দুর্বিপাক, দুর্যোগ, সঙ্কট ও বিপদ-মুসীবতে আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা রাখে। জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়নের যে ঝড়ই উঠুক না কেনো, ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এ ধরনের মানুষ সব সময়ই ভবিষ্যতের বিষয়ে আশাবাদী।
রাসুলুল্লাহ (সা.)’র পুরো জীবনকাল এবং তার পরিবারের সবার জীবন ছিল আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। খোদাদ্রোহীদের অত্যাচার-নির্যাতনে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য মোকাবিলায় এবং অনুসারীদের অভিযোগ-অনুযোগে সর্বাবস্থায় তিনি তাওয়াক্কুলকে একমাত্র অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আত-ত্বালাকের ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ সম্পন্ন করে দেবেন, তিনি সব কিছুর একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।'
আসলে তাওয়াক্কুল হলো, মহান আল্লাহর দ্বায়িত্বাধীন হওয়ার সর্বোত্তম উপায়। এ প্রসঙ্গে ইরানের বিখ্যাত লেখক ও চিন্তাবিদ ড. হোসেইন এলাহি কুমশেয়ির একটি দোয়া এখানে তুলে ধরা যেতে পারে। তিনি তার কিমিয়া বা পরশমনি শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, ‘আমি শক্তিহীন এক পরগাছা। আমার নিজের কোনো শেকড় নেই। কোনো গাছকে অবলম্বন না করে গজিয়ে ওঠার ও পল্লবিত হওয়ার ক্ষমতাও আমার নেই। কিন্তু হে আল্লাহ, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার সঙ্গে নিজেকে জড়াই ও আপনার ওপর তাওয়াক্কুল করি, ততক্ষণ আমার ভেতর কোনো ভয়-ভীতি থাকে না।’