Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - mdashraful.eee

Pages: 1 2 [3]
31
প্রথম কথা : আল্লাহ তাআলা মাকে সন্তানের মাদরাসা বানিয়েছেন। মায়ের কোল সন্তানের মাদরাসা। তাবলীগের বড় মুরুব্বী হাজী আব্দুল মুকীত রাহ.-এর জামাতা প্রফেসর ড. আনওয়ারুল করীম সাহেব একবার হযরতজী এনামুল হাসান ছাহেব রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলেন, হুযুর! এখন এত মাদরাসা, দ্বীনী তালীমের এত সুযোগ-সুবিধা, এরপরও নতুন প্রজন্ম খারাপ কেন, ওদের মধ্যে ভালো কম কেন? সাহাবায়ে কেরামের যামানায়, তাবেঈ-তাবে তাবেঈর যামানায় তো এত মাদরাসা ছিল না, তবু সেই যামানার সবাই ভাল, সব ছেলে ভাল। এখন কেন খারাপ? এত মাদরাসা সত্ত্বেও কেন ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ভালোর সংখ্যা কম?  সম্ভবত হযরতজী বললেন, আরে! তখন মাদরাসা ছিল বেশী এখন মাদরাসা কম! এখন তো তুমি ছয়/সাত বছর বয়সে সন্তানকে মাদরাসায় পাঠাও, ভর্তি করাও। সে এক মাদরাসায় পড়ে, যতক্ষণ মাদরাসায় থাকে ততক্ষণ শুধু মাদরাসা। আর আগে সন্তান যেদিন ভূমিষ্ঠ হত সেদিন থেকে প্রতিটি মুহূর্তই হতো তার মাদরাসা, প্রতিটি কোলই ছিল তার একেকটি মাদরাসা। মায়ের কোলে আছে তো মাদরাসায় আছে। বোনের কোলে আছে তো আরেক মাদরাসায় আছে। ভাই কোলে নিয়েছে তো সে মাদরাসাতেই আছে। তখন সন্তান দুনিয়াতে আসার পর যার কোলে যাক যে দিকে তাকাক, যার হাতে যাক যে দিকে বের হোক- সবখানে মাদরাসা আর মাদরাসা। অর্থাৎ সে যেখানেই যাবে যার কাছেই থাকবে সে দ্বীনদার পাবে, দ্বীনী পরিবেশ পাবে। যে বোনের কোলে আছে, সে বোন মিথ্যা বলে না, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। ভায়ের কোলে গেল তো ভাই-ও ভদ্র ছেলে, নামাযী, কারো গীবত-শেকায়েত করে না। বাবা এসেছেন, তার কোলে গেল, তিনিও ভাল, তার কামাই হালাল, দুনিয়ার পিছে পড়ে নামায ছাড়েন না। ধন-সম্পদ গড়ার জন্য হারামে লিপ্ত হন না। তার মানে, সন্তান যার কোলে যাচ্ছে যার কাছে যাচ্ছে মাদরাসায় যাচ্ছে! আর এখন? কোথায় সেই মাদরাসা?

সন্তান যেখানে যাবে যার কোলে থাকবে, সেখানেই যদি আগের মত মাদরাসা হতো, তাহলে তো ভাল ছিল। কিন্তু তা যদি না হয়, অন্তত প্রত্যেক সন্তানের প্রথম কোলটি যেন হয় মাদরাসা। যিনি এ সন্তানকে ধারণ করছেন, বহন করছেন দশ মাস দশ দিন, তাঁর আখলাক যদি ভাল হয়, তাঁর মধ্যে যদি দ্বীন-ঈমান থাকে, নামায থাকে কুরআন থাকে, ভাল ব্যবহার থাকে, তবে সন্তানের উপর এর প্রভাব পড়বেই পড়বে। প্রত্যেক নারীকে বুঝতে হবে, আপনার ব্যক্তি-সত্তাই আপনার সন্তানের মাদরাসা। আপনিই আপনার সন্তানের প্রথম মাদরাসা। আপনি ভাল সন্তান ভাল, আপনি খারাপ সন্তান খারাপ। হয়ত বলবেন, মা অনে-ক ভাল, সন্তান খারাপ- এমনও তো দেখা যায়! আসলে এমনটা খুব কম হয়। হলেও পরে ঠিক হয়ে যায়। আরেক কথা হল, মা যে অনেক ভাল, আমরা তাঁর বাহ্যিক অবস্থা দেখে সুধারণা করছি। কিন্তু মার তো নিজের হিসাব নিজে নেওয়া দরকার, আমি কতটুকু ভাল। নিশ্চই আমার কোনো ত্রুটি আছে, মানুষ জানে না, কিন্তু আল্লাহ জানেন। আমাকে আমার সেই ত্রুটি সংশোধন করতে হবে।

আমরা ছেলে-মেয়েদের শাসন করি কথা দিয়ে, হাত দিয়ে। বেশি ভাল হলে হয়ত হাত ব্যবহার করি না, শুধু কথা দিয়ে শাসন করি। কিন্তু সন্তানের শাসন-পদ্ধতি কি শুধু হাত আর মুখ ব্যবহার? বকাঝকা করা আর লাঠি হাতে নেওয়া? আসলে এভাবে শাসন হয় না। মূলত সন্তান শাসনের প্রথম কথা হল আমি ভাল হওয়া, এক নম্বরে আমি ভাল হওয়া। আমার আমল-আখলাক, আমার আচার-ব্যবহার, চিন্তা-চেতনা ভাল হওয়া। বাপের রোজগার হালাল হওয়া। এ হল সন্তান শাসনের মৌলিক কথা। মা-বোনদের প্রতি নসীহত, আপনারা স্মরণ রাখবেন, আপনারা হলেন সন্তানের প্রথম মাদরাসা। প্রথম থেকেই মাদরাসা। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন সন্তান আপনার কাছ থেকে শিখতে থাকবে। কাজেই আপনারা আপনাদের যতœ নিন।

দ্বিতীয় কথা : সময়ের অপচয়। এটা গুনাহ, স্বতন্ত্র গুনাহ। যদিও আমাদের সকল কাজ সময়ের সাথে বাঁধা। আমরা সময়ের উর্ধ্বে উঠে কোনো কাজ করতে পারি না। কিন্তু যদি সময়ের উর্ধ্বে উঠে কোনো গুনাহের কাজ করা যেত তবে কি ঐ গুনাহর কাজ গুনাহ হতো না? অবশ্যই হত। বোঝা গেল, গুনাহের কাজ এমনিতেই গুনাহ আর সময়ের অপচয় আলাদা গুনাহ। সময়কে কোনো কাজে না লাগানো বা হেলায় নষ্ট করা ভিন্ন একটা গুনাহ। সকল শ্রেণীর মানুষ এখন এই গুনাহে লিপ্ত। সময়-অপচয়-রোগে আমরা সবাই আক্রান্ত। আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার ধারণা, মহিলাদের মধ্যে এ সমস্যাটা বেশি।

32
EEE / শুকনো ফুলের ব্যথা!
« on: July 25, 2018, 10:06:16 AM »
ঝরে যাওয়া ফুলের প্রতি এ কেমন অবজ্ঞা! কেমন অকৃতজ্ঞতা!! যখন বাগানের ফুল ছিলাম, পাপড়ি-মেলা তাজা ফুল, তখন তো ভালোবাসতে! অন্তত ভালোবাসার কথা বলতে!! একটু সুবাস-সান্নিধ্যের জন্য ছুটে আসতে!!!

সুবাস দিতে কার্পণ্য করেছি?!

যখন ডাল থেকে ছিঁড়ে ফুলদানিতে সাজাতে চাইলে, ব্যথা পেলাম, তবু অস্বীকার করিনি। তোমার ঘরে বসে তোমাকে সুবাস দিয়েছি। যখন শুকিয়ে গেলাম, ফুলদানি থেকেও ছুঁড়ে ফেললে! হায়রে নিষ্ঠুর!! হায়রে অকৃতজ্ঞ!!

আমি শুকনো ফুল, মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছি, ভাবছো আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে! নাহ, এখনো পারি তোমাকে সুবাস দিতে, যদি একটু কৃতজ্ঞ থাকো। কৃতজ্ঞতা এখনো ফুল ফোটায়, গোলাব, বেলি, শিউলি, সব রকম ফুল।

বিশ্বাস হলো না! তাহলে যা বলেছি সব ভুল। দয়া করে ভুলে যাও শুকনো ফুলের ভুল। ১[1]

আবু তাহের মেছবাহ

 


[1] ১. রুচিশীল সাহিত্য-সাধকের চিন্তা হয়ে থাকে খুবই উন্নত, গভীর ও সুদূর প্রসারী। তিনি উপলব্ধি করেন নির্বাক জড়বস্তুর অভিব্যক্তি এবং তাতে আপ্লুত হন। কখনো অন্যকেও আপ্লুত করেন। ঠিক যেমনটি কবি বলেছেন-

خدا اگر دل فطرت شناس دے تجهكو + سكوت لالہ وگل سے كلام پيدا كر

অর্থ : খোদা যদি তোমায় দান করেন প্রকৃতি-বৎসল হৃদয়

তবেই বুঝবে লালা ও গোলাবের ভাষাহীন বাণী।

 

মাদরাসাতুল মদীনাহ হযরতপুর প্রাঙ্গণে আছে ছোট্ট একটি শিউলি ফুলগাছ। অবিরাম অসংখ্য ফুল দ্বারা যা গোটা পরিবেশকে সুবাসিত করে রেখেছে। ফুল তো সবাই দেখে এবং তার সৌন্দর্য উপভোগ করে, কিন্তু তা থেকে নিত্যনতুন উপলব্ধি গ্রহণ তাওফীকপ্রাপ্ত মানুষের কাজ। উপরের সংক্ষিপ্ত লেখায় এ ধরনেরই এক ভিন্নধর্মী উপলব্ধির সাথে আমাদের পরিচিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন। সুস্থতা ও নিরাপত্তার সাথে নেক ও দীর্ঘ হায়াত দান করুন। আমীন।

এ লেখা থেকে গ্রহণ করার মতো অনেক কিছুই আছে। তবে প্রথমেই আমার মনে যে দুটি বিষয় এসেছে তা এখানে তুলে ধরছি।

এক. সবকিছুর মধ্যেই সবর ও কোমলতা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। কিন্তু অনেক সময় আমাদের অভ্যাস হল, দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর কোনো বস্তু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে তা নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে ফেলি। কোনো কিছু পুরনো হয়ে গেলে বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে সাধারণত তার ব্যবহারের সমাপ্তি ঘটাতেই হয়। কিন্তু তা হওয়া চাই কোমলভাবে, কৃতজ্ঞতা ও কৃতার্থতার সাথে। যখন কোনো সাথীকে পুরোনো কলমটা নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে মারতে দেখি তখন খুব কষ্ট হয়। এটা হয়তো হাদীসে শেখানো স্থিরতা ও গাম্ভীর্যের পরিপন্থী। হাদীসে দস্তরখানা উঠানোর সময় নিম্নোক্ত দুআর তালকীন করা হয়েছে-

اَلْحَمْدُ لِلهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ، غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا .

এই দুআর মধ্যে غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا অংশের প্রতিটি বাক্য থেকে উপরোক্ত শিক্ষাই পাওয়া যাচ্ছে।

দুই. যার জীবন ফুলসম তাঁর কাছ থেকে গ্রহণ অব্যহত রাখা উচিত।

ফুলের মতো যার জীবন তার উপরও বিভিন্ন পরিস্থিতি আসতে পারে। এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে। তখন এমন হওয়া উচিত নয় যে, সসম্মানে সমাহিত করেই তার সাথে সব সম্পর্ক শেষ। বরং তাঁর ফুল থেকে আমরা যে সুবাসিত হচ্ছি তার শুকরিয়াস্বরূপ তাঁর জন্য ইস্তিগফার ও ঈসালে সওয়াবের ধারা চালু রাখা। আর ফুলের যে সুবাস তিনি সদকায়ে জারিয়ারূপে রেখে গেছেন তা থেকেও ইস্তেফাদা অব্যাহত রাখা উচিত।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর প্রতিটি নিআমত কাজে লাগানোর এবং নিআমতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাওফীক দান করুন। ফুলের যথাযোগ্য মর্যাদা দান এবং ফুলের মতো জীবন অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। আমীন। আরো একবার আরজ করছি-

جزاك الله خيراً يا أبا محمد

(মুহাম্মাদ আবদুল মালেক)

33
অল্পেতুষ্টি মানে আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দিয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা। যা পেলাম, যদ্দুর হয়েছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট আলহামদু লিল্লাহ-আল্লাহ্র শোকর। তো এই অল্পতে তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহ্র শোকর আদায় করা- এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা গুণ। একজন মুমিনের মধ্যে এই গুণটা থাকা দরকার। কিন্তু এই অল্পেতুষ্টির ক্ষেত্রটা কী?

 হাদীসের শিক্ষা হল- তুমি জাগতিক বিষয়ে অল্পতে তুষ্ট হয়ে আলহামদু লিল্লাহ বল-শোকর আদায় কর; বাকি সময়টা বেশি বেশি দ্বীন-ঈমানের কাজে ব্যয় কর। তারপরও নিষেধ করা হয়নি; ঠিক আছে, জাগতিক ব্যস্ততা বাড়াও। নিষেধ করা হয়নি যে, জাগতিক ব্যস্ততা তোমাকে একেবারে এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; ছাড় আছে। কিন্তু এই ছাড়ের মানে কি ফরয নামায ছেড়ে দিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দিব, ফরয রোযাতে অবহেলা করব? এই ছাড়ের মানে কি হালাল-হারামের তারতম্য রাখব না? আল্লাহ তো অনেক ছাড় দিয়েছেন। আল্লাহ্র সেই ছাড় গ্রহণ করে আমাকে আল্লাহ্র শোকর আদায় করতে হবে। সেই শোকর কীভাবে? দুনিয়ার ক্ষেত্রে অল্পেতুষ্টির পরে শোকর আর দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে শোকর আদায় করে ক্ষান্ত হব না; বরং অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে থাকব। আরো অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে থাকব। এটা হল হাদীসের শিক্ষা।

এ বিষয়টি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। এর পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটা হাদীস, আপনারা শুনেছেন-

انْظُرُوا إِلى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ، وَلَا تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ، فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ.

তোমাদের চেয়ে যারা গরীব-দুঃখী তাদেরকে দেখো তোমাদের চেয়ে যারা সুখী-সচ্ছল তাদেরকে নয়। এটা হবে তোমাদের জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত নিআমতের শোকরগোযারির পক্ষে অধিক সহায়ক ও সম্ভাবনাপূর্ণ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৬৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫১৩

জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে তুলনামূলকভাবে যার অবস্থা নি¤œমানের তার দিকে তাকাও আর দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে তোমার চেয়ে যার অবস্থা উন্নত তার দিকে তাকাও। জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে দুর্বল যে তার দিকে তাকাও, তাহলে আল্লাহ্র শোকর আদায় করতে পারবে- আমার তো যাক তাও একটা ঘর আছে আরেকজনের তো ঘর নেই, কোনোরকম একটা ছাপরা করে আছে। তোমার চাইতে জাগতিক দিক থেকে দুর্বল, বৈষয়িক দিক থেকে দুর্বল তার দিকে তাকাও যে, আল্লাহ তো তার থেকে আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। এরকম তো সবাই খুঁজে পাবে- তার চেয়ে আরো নি¤œমানের অবস্থা, দুর্বল অবস্থা- কে খুঁজে পাবে না বলুন? নিজের থেকে দুর্বলের দিকে তাকাও, তাকে একটু সাহায্য করতে পার কি না। দেখ আর আল্লাহ্র শোকর আদায় কর; আল্লাহ আমাকে ভালো রেখেছেন-

الحَمْدُ لِلهِ الّذِي عَافَانِي مِمّا ابْتَلاَكَ بِهِ، وَفَضّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً.

সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তোমাকে যে বিষয়ে আক্রান্ত করেছেন আমাকে তা থেকে নিরাপদ রেখেছেন আর তাঁর সব মাখলুকের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৩১

আল্লাহ তোমাকে ভালো রেখেছেন তো আল্লাহ্র শোকর আদায় কর। আর দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে যারা তোমার চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে তাদের দিকে তাকাও- সে তাহাজ্জুদের জন্য নিয়মিত ওঠে, আমি তো মাসে একবার দুইবার জাগি, আর না হয় শুয়েই থাকি; কোনোরকম ফরযে যাই, ফজরের জামাতে শরীক হই। তো এখন আমি ফযরের নামায পড়ি, কিন্তু মসজিদের জামাতে আসি না; আমি খোশ! কেন? বলে, আরে কতজন তো ফজরের নামাযের জন্য ওঠেই না। ঐ আটটা-নয়টার দিকে যখন ওঠে, গোসল করে ফজরের কাযা আদায় করলে করল বা না করেই অফিসে রওয়ানা হয়ে গেল। যার যেই কাজ, কর্মস্থলে চলে গেল, ফযরের নামায বাদ!

এখন বলে, সে তো ফজরের নামাযই  ছেড়ে দিল। আমি তো পড়ি, সময়মতো সূর্য ওঠার আগে আগে ফযরের নামায পড়ি। এজন্য আমি খোশ্। কেন? আমি অন্যদের দিকে তাকাচ্ছি, ঈমান আমলের দিক থেকে আমার চেয়ে যে দুর্বল অবস্থায় আছে তার দিকে তাকাচ্ছি। ও তো ফজর পড়েই না, আমি পড়ি। সেজন্য আমি খোশ! আমি চিন্তা করি না যে, আরে আমার পাশেই তো মসজিদ, মসজিদে যে দুই কাতার মুসল্লি এরা সবাই তো ফজরের নামায জামাতে পড়ছে, আমি তো জামাতে যাচ্ছি না, মসজিদে যাচ্ছি না, জামাতে পড়ছি না; আমার অবস্থা তো তাদের চেয়ে খারাপ, আমাকে আরো ভালো হতে হবে। আমি তো শুধু মাগরিবের নামায মসজিদে জামাতে পড়ি, বাকি চার ওয়াক্ত পড়ি না। অন্যরা তো দেখি পাঁচ ওয়াক্ত পড়ে, আমি তো তাদের থেকে পেছনে পড়ে আছি; আমাকে অগ্রসর হতে হবে।

তো দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে নিজের চেয়ে ভালো যারা, ওদের দিকে তাকাও, তাহলে তোমার মধ্যে একটু অনুশোচনা আসবে- আহা! আমি তো পেছনে পড়ে আছি, আমাকে অগ্রসর হতে হবে। জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে  দুর্বল যারা ওদের দিকে তাকাও- আমাকে তো আল্লাহ ওদের চেয়ে ভালো রেখেছেন, আলহামদু লিল্লাহ-আল্লাহ্র শোকর।রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে বলে দিয়েছেন, যদি তুমি জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে ভালো যে তার দিকে তাকাও তুমি নিআমতের শোকর আদায় করতে পারবে না। আহা! ওর তো গুলশানে বাড়ী আছে, আমার গুলশানে বাড়ী নেই। ধানম-িতে আছে বহুত বড় সুন্দর বাড়ী, তাও শোকর আসে না; কেন? গুলশানে নেই। এজন্য শোকর আসে না। এটা অন্যায়। আল্লাহ্র শোকর আদায় করা উচিত, যা আল্লাহ দিয়েছেন এটার উপর আল্লাহ্র শোকর আদায় করা। যা নিআমত আমি অর্জন করেছি তা আল্লাহ্র দান। একথা মনে রাখতে হবে পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে কোন্ সূত্রে আমি সম্পদ হাসিল করেছি? অবৈধ পন্থায় যদি কোনো কিছু হাসিল করে থাকি ওটা শুধরিয়ে নেওয়া, পাক করে ফেলা।

أَرْبَعٌ إِذَا كُنّ فِيكَ فَلَا عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدّنْيَا: حِفْظُ أَمَانَةٍ، وَصِدْقُ حَدِيثٍ، وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ، وَعِفّةٌ فِي طُعْمَةٍ.

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটা সিফাত, চারটা গুণ যদি তোমার মধ্যে থাকে, তাহলে কী আছে, কী নেই এটা নিয়ে আর পেরেশান হওয়ার দরকার নেই :

১. আমানত রক্ষা করা। খিয়ানত না করা।

২. সত্য বলা; সত্য কথা বলব, মিথ্যা বলব না।

৩. আখলাক সুন্দর, চরিত্র পবিত্র হওয়া এবং ব্যবহার সুন্দর হওয়া।

৪. খাবার হালাল হওয়া। রিযিকটা হালাল হওয়া। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৬৬৫২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪৪৬৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৮৭৬)

তো চারটা গুণ অর্জন করতে হবে। কী কী?

১. حِفْظُ أَمَانَةٍ আমানত রক্ষা করা। যে কোনো ধরনের খেয়ানত, দুর্নীতি, ভেজাল এবং ধোঁকা সবকিছু থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

২. صِدْقُ حَدِيثٍ সত্য বলা, মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা।

৩. حُسْنُ خَلِيقَةٍ ভালো ব্যবহার এবং দিলের উত্তম অবস্থা। আরবী خليقة বা خلق শব্দের মধ্যে দুইটা দিক আছে :

ক. দিলের অবস্থা ভালো থাকা; দিলের যেই ব্যাধিগুলো আছে সেগুলো থেকে দিলকে পাক করা। দুনিয়ার মুহাব্বত, দুনিয়ার মোহ, এটা একটা আত্মিক রোগ, আত্মিক ব্যাধি। কিব্র-অহংকার, উজ্ব, উজ্ব মানে নিজের সবকিছু নিজের কাছে ভালো লাগে, অপরের কোনোটাই ভালো লাগে না। নিজেরটাই সবচেয়ে ভালো; আমার কাছে আমার কথা সুন্দর, চাল-চলন সুন্দর, আমার সবকিছু সুন্দর। অপরের কোনোটাই ভালো লাগে না। এটা ব্যাধি, রোগ। এইসমস্ত অন্তরের রোগগুলো থেকে অন্তর পাক-সাফ থাকা এটাকে বলে حُسْنُ خَلِيقَةٍ।

খ. আর মানুষের সাথে কথা-বার্তা, চাল-চলন, উঠা-বসা এগুলো ভালো করা। সবার সাথে, রিক্সাওয়ালা ভাইয়ের সাথে, বাসের হেলপারের সাথে, তোমার ঘরের যে খাদেম আছে, কাজের লোক আছে তাদের সাথে ভালো ব্যাবহার করা আর নিজের স্ত্রী-সন্তান সবার সাথে তো বটেই। আমরা অনেক সময় করি কী, বাইরের লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার করি, আমার বসের সাথে আমি ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু আমার অধীনের যারা, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি না। বাইরে ভালো ব্যবহার করি, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু ঘরে গেলে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে সুন্দর করে কথা বলি না, ধমকের সুরে কথা বলি।  এটা অন্যায়।

তো حُسْنُ خَلِيقَةٍ -এর মধ্যে এই দুইটা বিষয় শামিল।

৪. عِفّةٌ فِي طُعْمَةٍ তোমার রিযিক হালাল হতে হবে। বাসস্থান, তোমার খাবার, এই যে লোকমা যাচ্ছে, এই লোকমাটার সাথে ইবাদতের সম্পর্ক আছে। এটা হালাল হতে হবে।

তো চারটা জিনিস- আমানত রক্ষা করা, খেয়ানত  থেকে বেঁচে থাকা, সত্য বলা, আখলাক ভালো হওয়া, চরিত্র ভালো হওয়া, মানুষের সাথে আচার-ব্যবহার ভালো হওয়া, আর রিযিক হালাল হওয়া, পানাহার-বাসস্থান হালাল হওয়া। এগুলোতে যদি আমার মধ্যে ত্রুটি থাকে, আমার রিযিক যদি সন্দেহযুক্ত হয়ে থাকে, হারামের সাথে মিশে গিয়ে থাকে তাহলে হবে না।

আর একটা কথা বলেই শেষ করছি, শুরুতে যে বললাম অল্পেতুষ্টির কথা, সে বিষয়ে আরেকটি কথা-

আল্লাহ হজে¦র তাওফীক দিয়েছেন। এখন মুখে দাড়ি এসে গেছে, নামায ঠিকমতো আদায় করছি, অনেক আমল ঠিক হয়ে গেছে বা তাবলীগের চিল্লায় গেলাম, চিল্লা থেকে আসার পর অনেক কিছু সংশোধন হয়ে গেছে বা কোনো আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্যে গেলাম ওখান থেকে আমার মাঝে বড় পরিবর্তন এসে গেছে- এটা খুশির বিষয় না? খুশির বিষয়, আল্লাহ্র শোকর আদায় করার বিষয়। এসকল পরিবর্তন তো আমার মাঝে এসেছে, কিন্তু পিছনের কাফফারা আদায় করি না। পিছনের ভুলগুলোর, পেছনের জিন্দেগীর কাফফারা আদায় করি না। পিছনের জিন্দেগীর কাফফারা কী? কারো হক নষ্ট করেছি, এটা আদায় করি। বোনদের হক দেইনি, এখন বোনদের মিরাছ দিয়ে দেই। অনেক পাওনাদার আছে, ওদের পাওনা আদায় করিনি, ওরা চাইতে চাইতে বিরক্ত হয়ে চুপ করে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে দেই।

তো পিছনের যামানার কাফফারা করা এটা খুব জরুরি। যদি এটা না করি তাহলে এটা তো কঠিন ধরনের অল্পেতুষ্টি হয়ে গেল, (অন্যায়ের উপর তুষ্টি) যেটা একেবারে গুনাহ, পাপ। আল্লাহ আমার মধ্যে পরিবর্তন এনেছেন এই পরিবর্তনের হক আদায় করতে হবে আমাকে। এই পরিবর্তনের হক এবং এর শোকর হল পিছনের জিন্দেগীর যা যা কাফফারা সম্ভব আমার দ্বারা তা আদায় করা।

কাউকে খামোখা অন্যায়ভাবে থাপ্পর মেরেছি, খুব ধমক দিয়ে কথা বলেছি, গালি দিয়েছি, এখন গিয়ে ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাই তার কাছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিজেদের পিছনের জিন্দেগীর কাফফারা আদায় করার তাওফীক নসীব করুন, শুধরাবার তাওফীক নসীব করুন। দুনিয়ার বিষয়ে অল্পেতুষ্টির গুণ দান করুন; আখেরাতের বিষয়ে আরো আগে বাড়ার তাওফীক দিন।

وآخر دعوانا أن الحمد الله رب العالمين.

34
মুক্তি ও স্বাধীনতার চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা। মানুষ মুক্তি চায়, মুক্ত ও স্বাধীন থাকতে চায়। পরাধীনতার শৃঙ্খলে তার প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে। মানুষের স্বভাবের এই মুক্তিপ্রিয়তা একটি প্রয়োজনীয় প্রেরণা। এটি কল্যাণকর হতে পারে, যদি তা সঠিক ক্ষেত্রে, সঠিক লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। তদ্রƒপ এই প্রেরণাই হয়ে উঠতে পারে মানুষের ব্যক্তি-জীবন ও সমাজ-জীবনে অনিষ্ট-অকল্যাণের কারণ, যদি এর অপব্যবহার বা ভুল ব্যবহার হয়। অর্থাৎ মানুষের সকল প্রেরণার মতো এই প্রেরণাও একটি শক্তি, যার সঠিক ব্যবহার মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করে।

ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াতের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মানবীয় যোগ্যতা ও প্রেরণাসমূহের সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের নির্দেশনা। পরিভাষায় একে বলা হয় ‘হিদায়া’ (পথনির্দেশ, সুপথে পরিচালনা)। কুরআনে কারীমের প্রথম দুই সূরায় ‘হিদায়া’ প্রসঙ্গটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। প্রথম সূরা- সূরাতুল ফাতিহায় তা এসেছে বান্দার প্রার্থনারূপে-

اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَ.

‘আমাদের সরল পথে পরিচালিত করুন।’

আর দ্বিতীয় সূরা- সূরাতুল বাকারার শুরুতেই তা এসেছে নির্দেশনারূপে। বান্দাকে জানানো হয়েছে-

ذٰلِكَ الْكِتٰبُ لَا رَیْبَ  فِیْهِ  هُدًی لِّلْمُتَّقِیْنَ.

‘এই সেই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই, এটি মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত।’

বস্তুত ‘হেদায়েত’ই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, যা দ্বারা তার সকল যোগ্যতা ও প্রেরণার যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। বলাই বাহুল্য যে, যেকোনো শক্তির যথার্থ ব্যবহারই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হয়।

এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে সফররত দুটি কাফেলা। একটি গন্তব্যের দিকে সঠিক পথে চলছে আর একটি চলছে ভুল পথে। উভয় কাফেলা পথ চলছে এবং তাদের চলার শক্তি ব্যবহার করছে। কিন্তু উভয় কাফেলার পরিণাম এক নয়।

যে কাফেলা সঠিক পথে চলছে, তার ব্যবহৃত শক্তি তাকে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে আর যে কাফেলা ভুল পথে চলছে সে তো গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছেই না; বরং গন্তব্য থেকে বহু দূরে সরে যাচ্ছে। একারণে শুধু শক্তি যথেষ্ট নয়, শক্তির যথার্থ ব্যবহারও জরুরি। মানবের অন্তর্নিহিত শক্তিসমূহের কাক্সিক্ষত ফল লাভের জন্য ‘হেদায়েত’ ও নির্ভুল নির্দেশনা তাই অপরিহার্য। মানবস্বভাবের মুক্তি ও স্বাধীনতার যে প্রেরণা এরও সঠিক বিকাশ ঘটে আল্লাহ-প্রদত্ত হেদায়েতের মাধ্যমে।

মুক্তিকামী মানব-স্বভাবের সাথে ইসলামী দাওয়াত কত সামঞ্জস্যপূর্ণ! মানুষও মুক্তি পেতে চায়, ইসলামও এসেছে মুক্তি দেয়ার জন্য। ইসলাম মানুষকে পরিচিত করে মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রকৃত সংজ্ঞা ও ক্ষেত্রসমূহের সাথে। ফলে ইসলামী জ্ঞানে আলোকিত হৃদয় ও মস্তিষ্ক কখনো এই ক্ষেত্রে প্রতারিত হয় না। জীবন ও জগতে পরাধীনতার ক্ষেত্রগুলো তার সামনে স্পষ্ট থাকে। মুক্তি ও স্বাধীনতার উপায় সম্পর্কেও সে থাকে ওয়াকিফহাল।

ইসলামী দাওয়াতের এক দায়ী হযরত রিবয়ী ইবনে আমের রা.-এর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ইসলামী দাওয়াতের এই মর্মবাণী। পারস্য-সেনাপতি রুস্তমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন- ‘আমরা এই ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছি, মানুষকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে এক আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত করার জন্য; পৃথিবীর সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি দিয়ে পৃথিবীর প্রশস্ততার দিকে নিয়ে আসার জন্য এবং সকল ধর্ম ও মতবাদের যুলুম-অবিচার থেকে মুক্ত করে ইসলামের সাম্য ও সুবিচারের ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্য।’

ইসলামের এই প্রাজ্ঞ দায়ী, আল্লাহর পথের এই মুজাহিদের কণ্ঠে উচ্চারিত এই বাক্যগুলোতে যেমন ধ্বনিত হয়েছে ইসলামী দাওয়াতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তেমনি নির্দেশিত হয়েছে মানুষের দাসত্ব ও মুক্তির ক্ষেত্রগুলোও।

আর তা উচ্চারিত হয়েছিল তৎকালীন বিশ্বের এক ‘সুসভ্য’ পরাশক্তির মহাক্ষমতাধর সেনাপতির সম্মুখে। অর্থাৎ তৎকালীন বিশ্বে শক্তি-সভ্যতায় অনন্য জাতিটি দাসত্বের যে ডাণ্ডা-বেড়িতে বন্দী-জীবন যাপন করছিল তার প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করছিল মুসলিম বাহিনীর এই মহান দায়ী ও মুজাহিদের উচ্চারণ।

সেই দাসত্বের প্রধান শিরোনাম হচ্ছে, সৃষ্টির উপাসনা। মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ। গোটা বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা তিনি। মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য আর পৃথিবীর সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের প্রয়োজন পূরণের জন্য; মানুষেরই কল্যাণার্থে। অথচ যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ, অসংখ্য জাতি-গোষ্ঠী সৃষ্টির উপাসনায় লিপ্ত হয়েছে। অসংখ্য কল্পিত দেব-দেবীর উপাসনা ও প্রভুত্বের শৃঙ্খলে নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ করেছে। ইসলাম এসেছে মানবজাতিকে এই পৌত্তলিকতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য।

মনুষ্যসমাজেও একশ্রেণির মানুষ প্রভুর আসনে সমাসীন হয়েছে; শক্তি, ক্ষমতা, নানাবিধ কুসংস্কার ও মতাদর্শের ভিত্তিতে এরা উঠে যায় সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। পক্ষান্তরে মানুষের বৃহত্তর শ্রেণিটি নেমে আসে দাসের পর্যায়ে, বঞ্চিত হয় যুক্তিসঙ্গত অধিকার থেকেও। মনুষ্যসমাজের এই দাস-প্রভুর সমীকরণ সমাজে অন্যায়-অবিচারের বিস্তার ঘটায়। মানুষের জান-প্রাণ, অর্থ-সম্পদ, ইজ্জত-আব্রুকে অনিরাপদ করে তোলে। বাহ্যত এই মানুষগুলো মুক্ত-স্বাধীন হলেও এরা বাস করে ভয় ও আতঙ্ক, অবিচার ও বঞ্চনার যিন্দানখানায়। ইসলাম মানুষে-মানুষে প্রভু-ভৃত্যের এই সংস্কৃতি নির্মূল করেছে। তার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা- সকল মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। তিনিই একমাত্র রব, প্রভু ও পরওয়ারদেগার। তাঁরই আদেশ পালনে সবাই বাধ্য। তাঁর বিধানে কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। আইন ও অধিকারের এই সাম্যই তো মুক্তি ও স্বাধীনতা।

বন্দিত্বের আরেক বিস্তৃত ও ভয়াবহ রূপ হচ্ছে, নানা অহেতুক রীতি-নীতিতে ভারাক্রান্ত জীবন। মানুষ যখন জীবন ও কর্মে আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগ করে তখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সে বন্দি হয়ে পড়ে অসংখ্য মনগড়া বিধি-নিষেধের নিগড়ে। যে জীবনে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভরসার অবলম্বন নেই সেই জীবনে সংশয় ও অস্থিরতার কোনো শেষ নেই। তেমনি জীবনের বিস্তৃত অঙ্গনে- শিক্ষা-দীক্ষা, বিয়ে-শাদি, দাম্পত্য, সামাজিক মান-মর্যাদা, আয়-ব্যয় ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে এমন সব রীতি-নীতি ও নিয়ম-কানুনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, বাস্তবে যেগুলোর কোনোই অর্থ নেই। এ যেন এক স্বেচ্ছাবন্দিত্ব। সমাজের প্রচলিত ধারা ও ব্যবস্থাই এই অপ্রয়োজনীয় ভার বহনে মানুষকে বাধ্য করে।

বন্দিত্বের আরেক রূপ হচ্ছে, মানবরচিত নানা মতবাদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়া? যুগে যুগে কত মতবাদ রচিত হয়েছে আর বিলুপ্ত হয়েছে কে তার হিসাব রাখে? আসমানী ধর্মসমূহের যে বিকৃত রূপ সে-ও তো এক অর্থে মানবরচিত মতবাদ। ধর্মের পাদ্রি-পুরোহিতেরা মূল ধর্ম-ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে তদস্থলে নানা মনগড়া চিন্তা ও বিশ্বাসের বাধ্যবাধকতা, বিভিন্ন আরোপিত রীতি-নীতি পালনের আবশ্যকতা ঘোষণা করেছে, যার ভার মানবজাতিকে বহন করে যেতে হচ্ছে। এইসব আরোপিত রীতি ও বিশ্বাসের কারণে যুগে যুগে কত যে মানুষের প্রাণহানী, সম্পদহানী ও সম্মানহানী ঘটেছে তার খবর কে রাখে? যুগে যুগে বিপ্লবের বার্তা নিয়ে একেক মতবাদের উদ্ভব ঘটেছে আর লক্ষ-কোটি আদমসন্তানের মেধা-শ্রম-আয়ু এর প্রচার-প্রতিষ্ঠায় শেষ হয়ে গিয়েছে। কিছুকাল পর এর অসারতা প্রমাণিত ও প্রকাশিত হওয়ার পর লোকেরা আরেক মতবাদের  পেছনে পঙ্গপালের মত ছুটে গিয়েছে। এই যে বন্দিত্ব ও দাসত্ব এর কি কোনো জবাব আছে?

মানুষ তো চিরজীবী নয়, তার আয়ুও লক্ষ বছরের নয়। প্রত্যেক মানুষকে নিজ নিজ বিশ্বাস ও কর্ম নিয়েই জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাহলে বিভ্রান্তির এত চোরাগলিতে ঘুরে মরার অবকাশ মানুষের জীবনে কোথায়?

এই সকল প্রকারের বন্দিত্বের শৃঙ্খল থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যই ইসলামের আবির্ভাব। মানুষের কর্তব্য, স্বাধীনতা ও পরাধীনতার স্বরূপ সঠিকভাবে উপলব্ধি করে মুক্তির পথের পথিক হওয়া।

আল্লাহ তাআলার মহা অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদের ঈমানের সম্পদ দান করেছেন, ইসলামের মাধ্যমে আমাদের দান করেছেন এক যথার্থ বিশ্বাস-ব্যবস্থা ও ইবাদত-ব্যবস্থা, যা সবরকমের ভ্রান্তি, বিচ্যুতি ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত। ইসলামের কল্যাণেই আমরা লাভ করেছি এক সাম্য ও সুবিচারভিত্তিক সমাজ-ব্যবস্থা, এক যথার্থ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা।

এই মহা নিআমতের  মূল্যায়ন ও শোকরগোযারি আমাদের কর্তব্য। আর আমাদের ব্যক্তি-জীবন, পারিবারিক-জীবন, সমাজ-জীবন ও রাষ্ট্রীয়-জীবন যে অশান্তি-অস্থিরতা, অনাচার-অরাজকতা, অবক্ষয়-উচ্ছৃঙ্খলায় ভারাক্রান্ত; এর কারণ- ইসলামের জীবন-ব্যবস্থা ত্যাগ করে অনৈসলামিক জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ। ফলে মুসলিম হয়েও আমরা যাপন করে চলেছি এক বন্দী-জীবন।

আমাদের কর্তব্য, আবারো ইসলামের দিকে ফিরে আসা। পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলামে দাখিল হওয়া। তাহলেই আমরা আবার মুক্ত হব, স্বাধীন হব।

36
EEE / A Night Greater than One Thousand Months
« on: June 03, 2018, 12:24:17 PM »
Laylatul Qadr, the Night of Power, is the most blessed night of the entire year. Its significance and glory has been described and discussed in the Holy Qur’an itself, as well as in numerous traditions. Can we imagine its full import and can we comprehend its full glory? The Holy Qur’an asks, “And what will make you comprehend what the grand night is?” (97:2) The night is loftier in importance and weightier in blessings than one thousand months! It’s the night of determination of our destinies, and the night when the Holy Qur’an was revealed. It’s a night of power, of glory, and of blessings.

Some of the salient features of this great night are discussed as follows:

Revelation of Holy Qur’an

The verse from Sura Qadr, “Surely We revealed it on the grand night,” (97:1) and another from Sura Baqara, “The month of Ramadan is that in which the Qur’an was revealed, a guidance to men and clear proofs of the guidance and the distinction…” (2:185) together signify to us that the Qur’an was revealed on the Laylatul Qadr. Was the Qur’an revealed all at once on this night? Or it was revealed in gradual time periods extending over 23 years of the Holy Prophet’s (peace be upon him and his progeny) prophethood?

The scholars of Qur’anic exegesis tell us that the holy Qur’an was revealed in two ways: it was revealed on this great night upon the Holy Prophet’s sacred heart, and it was also gradually revealed over a period of 23 years during his prophethood.

The month of Ramadan makes the heart of believers pliant and conducive to accept any guidance. Fasting opens our hearts for acceptance of divine guidance, thus this month is like the spring season of the Qur’an. Just as barren land which is not capable of growing any vegetation becomes fertile in spring when life-giving rains fall on it, so is the effect of Ramadan on our hearts. The Night of Power is the epitome of guidance and blessings, as this night carries the significance of being bestowed with Holy Qur’an.

Determination of Destinies

This is the night when destinies are set, as stated in the Qur’an: “Surely We revealed it on a blessed night – surely We are ever warning – Therein every wise affair is made distinct”(44:3-4). There are many traditions which inform us that on this night, our affairs are set for the whole year.

It is worth noting here from the commentary of Aqa Mahdi Puya: “On the Night of Power, the divine wisdom determines the solution of all spiritual pursuits man decides to undertake; therefore the Holy Prophet has advised the believers to pray and seek Allah’s mercy throughout this night…Imam Ali (peace be upon him) said: ‘People wrongly imagine that destiny is abiding and fate is certain. If it were so, the idea of reward and penalty becomes meaningless, promise and threat a hoax. Allah, the most praised, has given man freedom of thought and action.’

The freedom of action is conditioned by the laws made by Allah to govern the universe. No one can break them. Imam Ali said: ‘While standing, if you want to lift one of your legs you can, and you are free to lift the second leg also – but as soon as your second leg leaves the ground you will fall down, because you have broken the law Allah has so precisely put in operation.”

 

Some Other Related Points About this Great Night

Which night is the Night of Power?


There are different views on which night of the month of Ramadan is the Night of Power. There have been supporters for the1st, 17th, 19th, 21st, 23rd, 27th, or 29th night of the month of Ramadan. There are traditions that Holy Prophet would stay busy with prayers and worship especially during the last ten nights, thus there is more emphasis on those nights. Most of the traditions from the Ahlul Bayt (peace be upon them) point out the 23rd night as the Night of Power, while most of the traditions in Ahlus Sunnah consider the 27th night as Laylatul Qadr.

 

Why is Laylatul Qadr hidden?


Scholars say that the philosophy behind hiding the Night is so that we pay importance to all the nights of Ramadan and thereby get the maximum spiritual benefit from them.

 

Is there only one Night of Power in all the regions of the world?


We are aware of the fact that the lunar calendar dates are different in different parts of the world. Taking that into consideration, will there be multiple Nights of Power in regions where the dates are different? The answer to this is that the night and day alternate with the revolution of the earth on its axis. So the Night of Power will start from one point and will continue to move over the regions where night is falling. In this way it would be a whole rotation of one night covering each region of the earth.

In conclusion is the following supplication from Sahifa Sajjadiyya:

 

And praise belongs to God who
showed favour to us through His religion,
singled us out for His creed,
and directed us onto the roads of His beneficence,
in order that through His kindness we might travel upon them
to His good pleasure,
a praise which He will accept from us
and through which He will be pleased with us!

And praise belongs to God who appointed among those roads His month,
the month of Ramadan,
the month of fasting,
the month of submission,
the month of purity,
the month of putting to test,
the month of standing in prayer,
in which the Qur’an was sent down as guidance to the people,
and as clear signs of the Guidance and the Separator!

Then He made one of its nights surpass the nights
of a thousand months
and named it the Night of Decree;
in it the angels and the Spirit descend
by the leave of their Lord upon every command,
a peace constant in blessings
until the rising of the dawn
upon whomsoever He will of His servants
according to the decision He has made firm.

O God,
bless Muhammad and his Household,
inspire us
with knowledge of its excellence,
veneration of its inviolability,
and caution against what Thou hast forbidden within it,
and help us to fast in it
by our restraining our limbs
from acts of disobedience toward Thee
and our employing them
in that which pleases Thee,
so that we lend not our ears to idle talk
and hurry not with our eyes to diversion,
we stretch not our hands toward the forbidden
and stride not with our feet toward the prohibited,
our bellies hold only what Thou hast made lawful
and our tongues speak only what Thou
hast exemplified,
we undertake nothing but what brings close to
Thy reward
and pursue nothing but what protects from
Thy punishment!
Then rid all of that from the false show of the false showers
and the fame seeking of the fame seekers,
lest we associate therein anything with Thee
or seek therein any object of desire but Thee!

37

১। তাক্বওয়া
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। [সূরা তালাক(৬৫): ২-৩]

২। তাওয়াক্কুল
“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।“ [সূরা তালাক(৬৫): ৩]

৩। দান-সদকা
কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? [সূরা বাক্বারাহ(২): ২৪৫]

৪। কৃতজ্ঞতা
আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন’। [সূরা ইবরাহিম(১৪): ৭]

৫। ইস্তিগফার
“অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দিবেন, তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।“ [সূরা নূহ(৭১): ১০-১২]

৬। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে কামনা করে যে তার রিযিক বৃদ্ধি পাক এবং জীবন দীর্ঘায়িত হোক, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে।“ [সহীহ বুখারী]

38
১. তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান হলো ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে। আবিষ্কারের নেশা থাকতে হবে। যে পথে কেউ যায় নি, সে পথে চলতে হবে। অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস থাকতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর সফল হতে হবে। এগুলোই হলো সবচেয়ে মহৎ গুণ। এভাবেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে এটাই আমার বার্তা।

২. জীবন এবং সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ট শিক্ষক।জীবন শিখায় সময়কে ভালভাবে ব্যবহার করতে, সময় শিখায় জীবনের মূল্য দিতে।

৩. আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুপ্রতীম। যারা স্বপ্ন দেখে ও সে মতো কাজ করে, তাদের কাছেই সেরাটা ধরা দেয়।

৪. বৃষ্টির সময় প্রত্যেক পাখিই কোথাও না কোথাও আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু ঈগল মেঘের উপর দিয়ে উড়ে বৃষ্টিকে এড়িয়ে যায়।

৫. স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে। আর স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন হল সেটাই যেটা পুরণের প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।

৬. প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো :
আমি সেরা
আমি করতে পারি
সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে
আমি জয়ী
আজ দিনটা আমার

৭. শিক্ষাবিদদের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধানী, সৃষ্টিশীল, উদ্যোগী ও নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া, যাতে তারা আদর্শ মডেল হতে পারে।

৮. যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, এ ক্ষেত্রে তিনজন মানুষ পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন : বাবা, মা এবং শিক্ষক।

৯. যে অন্যদের জানে সে শিক্ষিত, কিন্তু জ্ঞানী হল সেই ব্যক্তি যে নিজেকে জানে। জ্ঞান ছাড়া শিক্ষা কোন কাজে আসেনা।

@ ড. আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম

39
খুব ছোট্ট এক ছেলে প্রচন্ড রাগী ছিলো।
সে খুব সামান্য কারণেই রেগে যেত ।
তার বাবা তাকে একটা পেরেক ভর্তি ব্যাগ দিল
এবং বললো যে, যতবার তুমি রেগে
যাবে ততবার একটা করে পেরেক আমাদের
বাগানের কাঠের বেড়াতে লাগিয়ে আসবে ।
প্রথমদিনেই ছেলেটিকে বাগানে
গিয়ে ৩৭ টি পেরেক মারতে হলো ।
পরের কয়েক সপ্তাহে ছেলেটি তার রাগকে
কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আনতে পারলো
তাই প্রতিদিন কাঠে নতুন পেরেকের
সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমে এলো।
সে বুঝতে পারলো হাতুড়ী দিয়ে কাঠের বেড়ায়
পেরেক বসানোর চেয়ে তার রাগকে
নিয়ন্ত্রন করা অনেক বেশি সহজ।
শেষ পর্যন্ত সেই দিনটি এলো যেদিন তাকে একটি
পেরেকও মারতে হলো না।
সে তার বাবাকে এই কথা জানালো।
তারা বাবা তাকে বললো ,
এখন তুমি যেসব দিনে তোমার রাগকে পুরোপুরি
নিয়ন্ত্রন করতে পারবে সেসব দিনে একটি
একটি করে পেরেক খুলে ফেলো।
অনেক দিন চলে গেল এবং ছেলেটি একদিন তার
বাবাকে জানালো যে সব পেরেকই
সে খুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
তার বাবা এবার তাকে নিয়ে বাগানে গেল এবং
কাঠের বেড়াটি দেখিয়ে বললো,
'তুমি খুব ভালভাবে তোমার কাজ সম্পন্ন করেছো
, এখন তুমি তোমার রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারো
কিন্তু দেখো, প্রতিটা কাঠে পেরেকের গর্তগুলো
এখনো রয়ে গিয়েছে। কাঠের বেড়াটি কখনো
আগের অবস্থায় ফিরে যাবে না।
যখন তুমি কাউকে রেগে গিয়ে কিছু বলো
তখন তার মনে তুমি যেন একটি পেরেক ঠুকলে
পরবর্তিতে যদি তুমি তোমার কথা ফিরিয়েও নাও
তখনও তার মনে ঠিক এমন একটা আচড় থেকে
যায়। তাই নিজের রাগতে নিয়ন্ত্রন করতে শেখো।
মানসিক ক্ষত অনেক সময় শারীরিক ক্ষতের
চেয়েও অনেক বেশি ভয়ংকর।

40
ঈমানদার অন্যের সাথেও প্রতারণা করে না, নিজেও প্রতারিত হয় না। অন্যের সাথে প্রতারণা না করা সাধুতা ও দিয়ানতদারির পরিচয় আর প্রতারিত না হওয়া সচেতনতা ও দূরদর্শিতার পরিচয়। মুমিনকে যেমন দিয়ানতদার হতে হয় তেমনি বুদ্ধিমান ও দূরদর্শীও হতে হয়। চারপাশের ঘটনাবলীর যথার্থ বিশ্লেষণে ও সঠিক করণীয় নির্ধারণে বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতার বিকল্প নেই। শিরোনাম থেকেই আজকের আলোচনা শুরু করছি। সাম্প্রতিক কয়েকটি বিষয় নিয়ে পাঠকের সাথে একটু আলোচনা করতে চাই। মনে হচ্ছে সবগুলো বিষয়েই কথাটি প্রযোজ্য। প্রথমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম)-কে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা নিয়েই একটু বলি। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল রাষ্ট্রটি যে একটি অবৈধ ও চাপিয়ে দেয়া রাষ্ট্র এটা একটা স্বীকৃত বিষয়। যুগযুগ ধরে যারা এই ভূখণ্ডের অধিবাসী তাদেরকে চরম জুলুম-অত্যাচারের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত করে সেই জায়গায় ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা আছে। সেই দিকে যাব না। শুধু এইটুকু বলি, ১০৯৯ সালে ক্রুসেডারদের ফিলিস্তীন অঞ্চল জবরদখল করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে হাজার হাজার মুসলমানকে কতল করার পর মাত্র ৮৮ বছরের মাথায় ১১৮৭ সালে হিততীন যুদ্ধের পরপরই সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ূবী এই ভূখণ্ডকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন। এরপর ১৯১৭ সালের ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির ছত্রছায়ায় পুনরায় এই অঞ্চল অধিকৃত হওয়ার পর ১০০ বছরেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে মুসলিমবিশে^ আরেকজন সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর আবির্ভাব এখনো ঘটেনি। আর একারণেই ট্রাম্পের মত লোকেরা তাদের কাজগুলো নির্বিঘ্নে করে যেতে সক্ষম হচ্ছেন। খোলা চোখে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প এই কাজটি সম্পন্ন করেছে; কিন্তু সচেতন লোকেরা জানেন যে, এটা ১৯৯৬ সালেই পাশ হওয়া বিল। তবে এইটুকু কথা ঐ বিলে ছিল যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইলে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি রাখতে পারবেন। এই বিল পাশ হওয়ার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা তা ছ’মাস ছ’মাস করে মুলতবি করে আসছিলেন আর নির্বাচনের সময় ঘোষিত কথা অনুযায়ী ট্রাম্প তা কার্যকর করলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প তা কার্যকর করার জন্য বর্তমান সময়টিকে উপযুক্ত সময় কেন মনে করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদেরকে মুসলিম বিশে^র নেতৃবৃন্দের অবস্থা একটু দেখতে হবে। সৌদি আরব, আমিরাত, মিসর প্রভৃতি আরব দেশগুলোর অবস্থা লক্ষ্য করলেই উত্তর বের হয়ে আসবে। বিশেষত সৌদি আরবের অবস্থা থেকে স্পষ্ট যে, সৌদি এখন আঞ্চলিক পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এতে দোষের কিছু ছিল না, যদি আমেরিকার হাতিয়ার হিসেবে না হয়ে স্বতন্ত্র পরাশক্তি হিসেবে গড়ে উঠত। বিশ্ব শান্তির নামে আমেরিকার সাথে সখ্য, প্রথম দিন থেকেই প্রকাশ্যে মুসলিম-বিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সবার আগে সংবর্ধনা প্রদান এবং তাকে পাশে নিয়ে সৌদি বাদশাহর তলোয়ার হাতে নাচগান- সবই গোটা মুসলিম বিশ্বকে লজ্জায় ফেলেছে। এরই সাথে বাতাসে ভাসছে ট্রাম্পের জামাতা কুশনারের সাথে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানের সখ্যের সংবাদও। মূলত এই সব বিষয়ই ট্রাম্পকে সুযোগ করে দিয়েছে- আলকুদসকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দেওয়ার। শাহ ফয়সাল থাকলে কি এমনটা সম্ভব হত! আরো লজ্জার ব্যাপার হচ্ছে, এ সম্পর্কে ওআইসির বৈঠক হয়েছে ইস্তাম্বুলে। বৈঠকটি জেদ্দায় হতে পারল না কেন? খাদিমে হারামাইন কি তৃতীয় হারামের খাদিম ও মুহাফিয নন? ওআইসির ঐ বৈঠকে দূরের দেশের রাষ্ট্রপতি- প্রধানমন্ত্রীরা যেতে পারলেন, কিন্তু সৌদি, আরব আমিরাত ও মিসর থেকে গেলেন সাধারণ মন্ত্রীগণ। কাজেই আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে; অন্যদের আগ্রাসনের সাথে খবরদার হতে হবে মুসলমানদের বর্তমান নেতৃত্বের ব্যাপারেও। কারণ মুমিন যেমন অন্যের সাথে প্রতারণা করে না, তেমনি প্রতারিতও হয় না। । দুই। সম্প্রতি ৬ ডিসেম্বর আইসিটি বিষয়ক মেলা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭-এর উদ্বোধন হয়। এতে অন্যতম ‘প্রধান আকর্ষণ’ বানানো হয়েছিল সোফিয়া নামক একটি রোবটকে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ নামে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে তাকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল। সাংবাদিকদের তথ্য অনুযায়ী এর জন্য রাষ্ট্রকে ব্যয় করতে হয়েছে ১২ কোটি টাকা। এই রোবটের তথ্য অনলাইনে দেখার পর যে অনুভূতি জেগেছে, দরসে ছেলেদের সাথে সেগুলো আলোচনা করেছি। সে কথাগুলোই পাঠকের সাথেও ভাগাভাগি করছি। সংবাদে দেখা যাচ্ছে, হল ভর্তি অতিথি-দর্শক একটি রোবটের কিছু যান্ত্রিক কথাবার্তা নিয়ে ব্যাপক মাতামাতি করেছেন। মিডিয়াতেও দেখা গেছে, ব্যাপারটিকে ব্যাপকভাবে আকর্ষণীয় করে তোলার প্রচেষ্টা। ফলে মানুষকেও উল্লসিত দেখা গেল। একটি রোবট নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নাতনীর নামে তার নাম- সে কথাও বলেছে। সবাই খুব উল্লসিত। একই রোবট সৌদি আরবও ঘুরে এসেছে। পাঠক জেনেছেন, সৌদি আরব প্রথমবারের মতো এই রোবটকে নাগরিকত্বও দিয়েছে। তা নিয়ে অনেকে হাসাহাসিও করেছেন। এদিকে যুবরাজ বিন সালমানের ঘোষিত ভিশন ২০৩০-এ যে সিটির কথা বলা হয়েছে তাতেও নাকি থাকবে হাজার হাজার রোবট। সেটি হবে একটি রোবট-সিটি! এই যে রোবট নিয়ে মাতামাতি, এ নিয়ে যে কথাগুলো বলতে চাই তার আগে বলে নিচ্ছি, মানব-উন্নয়ন ও মানুষের সেবায় প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহারের আমরা বিরোধী নই। প্রযুক্তি আল্লাহ তাআলার নিআমত। মানুষ আল্লাহ-প্রদত্ত বিদ্যা-বুদ্ধি ব্যবহার করে কিছু নতুন উপায় উদ্ভাবন করবে- এ তো আল্লাহর অসংখ্য দানেরই এক ক্ষুদ্র অংশ। আল্লাহ তাআলা তো এই গোটা বিশ^ জগৎকে মানুষের জন্যই সৃষ্টি করেছেন- خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِی الْاَرْضِ جَمِیْعًا পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যদি নিজের দিকে তাকায় এবং তার চারপাশের প্রকৃতি, উদ্ভিদজগৎ, প্রাণীজগৎ ও আল্লাহর বিচিত্র সৃষ্টির দিকে তাকায় তাহলে যেমন নিজের ক্ষুদ্রতা বুঝতে পারবে তেমনি বুঝতে পারবে যাকে সে নিজের কর্ম মনে করছে তারও ক্ষুদ্রতা। অন্যদিকে মুসলমান যদি নিজের সমৃদ্ধ অতীতের দিকে তাকায় তাহলেও দেখতে পাবে আবিষ্কারে ও উদ্ভাবনে তারাই ছিল বিশ্বের পথিকৃত। কাজেই নিত্য-নতুন আবিষ্কার এবং এর যথার্থ ব্যবহার কখনোই মুসলমানের কাছে অনভিপ্রেত নয়। এই ভূমিকাটুকুর পর আলোচ্য বিষয়ে যে কথা বলতে চাই তা হচ্ছে : এক. এটি কি এত মাতামাতির মতো ব্যাপার? রোবট তো অনেক আগে থেকেই আছে এবং বিশে^র বিভিন্ন দেশে রোবট অনেক কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে। কে না জানে এখনকার পুঁজিবাদী বিশ্বে প্রত্যেক পণ্য-নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নানাভাবে তার পণ্যের প্রচার করে থাকে। পুঁজিবাদী স্বার্থেই তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা মাতামাতির পরিবেশ তৈরি করে। হংকংয়ের যে কোম্পানিটি এই রোবট উৎপাদন করছে তারা আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্য এর নাম দিচ্ছে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’। এটাও তো নতুন কিছু নয়। প্রশ্ন হচ্ছে সফটওয়্যারগুলো আসলে কী? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই তো। তো বিশেষভাবে এটাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলে প্রচার-প্রচারণার উদ্দেশ্য যে কী তা বোধ হয় এতক্ষণে পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। দুই. দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, রোবটটি মেয়ের সাজে কেন? তাহলে এখানে উদ্দেশ্য কি প্রযুক্তি, না মানুষকে আকর্ষণ করা। শুধু প্রযুক্তির দিক থেকে দেখলে এটি কি খুব আকর্ষণীয়? নেতা, সাংবাদিকদের সাথে মাপা মাপা কথা- এতে আশ্চর্যের কী আছে? সম্ভবত ৭১ টেলিভিশনের এক সাংবাদিক বেখেয়ালে পূর্ব নির্ধারিত প্রশ্নের বাইরে কিছু প্রশ্ন করতেই রোবটের ‘বুদ্ধিমত্তা’র পরিচয় প্রকাশিত হয়ে গেল। দেখা গেল সে আর উত্তর দিতে পারছে না। কাজেই হুজুগে না মেতে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করা উচিত। মানুষ তো প্রাচীন কাল থেকেই মূর্তি বানিয়ে আসছে। আর এখন ইমেজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে যে কোনো নেতা-নেত্রীরও অবয়ব তৈরি করা সম্ভব। আর রোবটের কথা বলা, তো কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে, যখন ... প্রযুক্তির এইসব আয়োজন-অনুষ্ঠান চলছে তখন রাজধানীতে আরেকটি মেলা চলছিল, পাখি মেলা। একেক পাখির একেক বুলি- ‘অতিথি এসেছে, পিড়ি দাও’ এমন কত বুলি! পয়সাওয়ালারা অনেক দাম দিয়ে কথা বলা পাখি কিনে বাড়ি ফিরেছে। যাইহোক, রেডিও, টেপরেকর্ডারের পর সিডি, ভিসিডি, অডিও, ভিডিওর এত সহজলভ্য প্রযুক্তি-উপকরণের যুগে এই রোবট নিয়ে এত মাতামাতি, রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচের কী অর্থ থাকতে পারে? ওই যে বহু বছর আগে থেকে কল সেন্টারের যন্ত্রগুলো শুধু একটি নম্বর পেয়েই গ্রাহকের একাউন্টের হরেকরকম তথ্য শুনিয়ে আসছে- তা কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নয়? মুসলিম দেশগুলোর বাস্তব সমস্যা ও প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে দেশে দেশে বিন সালমানেরা হুজুগ সৃষ্টির জন্য এবং ক্ষমতার মসনদকে নির্বিঘ্ন রাখতে যা কিছুই করুক এতে প্রতারিত হওয়া মোটেই উচিত নয়। উম্মাহর যুবসমাজের কর্তব্য নিজেদের পরিচয় ও উম্মাহর বাস্তব সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করা। তিন. তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশটি একটি শ্রমঘন দেশ। এদেশে শ্রমিক সহজলভ্য বলেই শিল্পপতিরা সাশ্রয়ী মূল্যে শ্রম কিনতে পারছেন। ভবিষ্যতে যদি শ্রমের বাজার রোবট দখল করে তাহলে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবন-জীবিকার কী উপায় হবে? আর যদি বলেন, শিক্ষিত লোকদের কাজগুলোও রোবট করবে তবে ভবিষ্যত-শিক্ষিত সমাজ এবং বর্তমানে লক্ষ শিক্ষিত বেকারদের কী হবে? একশ্রেণির প্রযুক্তি ব্যবসায়ী মানব জাতিকে কোন্ পথে নিয়ে চলছে? আরেকটি আশঙ্কাও কেউ কেউ ব্যক্ত করেছেন। আর তা হচ্ছে মানবহত্যাকারী রোবট! আমরা এ নিয়ে বিশদে যেতে চাই না। প্রযুক্তিবিদেরাই বিষয়টি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারবেন। ক্ষমতাবানেরা নিজেদের স্বার্থ-হাসিলের জন্য প্রযুক্তির এই অপব্যবহারের পথে অগ্রসর হলে মানবজীবনের শান্তি-স্বস্তি-নিরাপত্তার কী হাশর হবে তা কি কেউ বলতে পারে? আর প্রযুক্তি কি সবসময় নিয়ন্ত্রণে থাকে? ব্যাপকভাবে বিশ্ব জুড়ে হ্যাকিংয়ের ব্যাপারটি শোনা যায়। কাজেই আমাদের কর্তব্য, প্রতারিত না হওয়া। । তিন। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস এদেশে আসার আগে থেকেই মিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় প্রচার-প্রচারণা আরম্ভ হয়েছিল। প্রথমে আবহটা ছিল, রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে পোপ ফ্রান্সিসের আগমন; কিন্তু পরে বাস্তবে যা দেখা গেল তা হচ্ছে, তিনি টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে গেলেনই না; ঢাকায় কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে আসা হল ‘সমবেদনা গ্রহণ’-এর জন্য। বাংলাদেশে এসে তাকে দেখা গেল প্রধানত খ্রিস্টধর্মীয় যাজকের অভিষেক-অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বাংলাদেশে যেহেতু আইনগতভাবে যে কোনো ধর্মের লোকেরাই বসবাস করতে পারেন তাই কোনো ধর্মের প্রধান ব্যক্তি অতিথি হয়ে আসতেই পারেন, কিন্তু বিষয়টি গণমাধ্যমে যেভাবে প্রচারিত ও উপস্থাপিত হয়েছে, বিশেষত সরকারি টেলিভিশন যেভাবে লাইভ প্রচার করেছে তাকে বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কী বলা যায়? নিজস্ব ধর্মীয় কাজে যিনি এসেছেন তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে ‘মানবদরদী’ হিসেবে! এইসব প্রচার-প্রচারণায় মেতে ব্যাপকভাবে মুসলিমেরাও খ্রিস্টধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। এটা যে ধর্মীয় ও সাধারণ বোধ-বুদ্ধি- কোনো বিচারেই বৈধ ও সমীচীন হয়নি তা কি দলীল-প্রমাণ দিয়ে বলার প্রয়োজন আছে? যারা অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে অতি উৎসাহের সাথে সব ধর্মের লোকদের অংশগ্রহণের কথা বলেন তারা কি মসজিদে হারামের ইমামদের আগমনে, মুসলমানদের ঈদ, কুরবানী ও অন্যান্য ধর্মীয় বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষ্প্রভ থাকেন না? আচ্ছা, ওইসব অনুষ্ঠানে কি কোনো ভিনধর্মীকে মুসলমানদের ইবাদতে যোগ দিতে দেখা যায়? আমরা অন্যান্য ধর্মের লোকদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিরোধী নই, তবে একেতো সেটাও হতে হবে ইসলামের বিধি বিধান অনুসারে, দ্বিতীয়ত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নামে অন্য ধর্মের ধর্মীয় পর্ব-উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ মুসলমানের নেই। একজন ঈমানদার মুসলমান কীভাবে কুফর ও শিরক সম্পর্কে উদাসীন হতে পারে? কুফর-শিরক এবং এর সকল লক্ষণ ও নিদর্শনের প্রতি অবশ্যই ঈমানদারের অন্তরে ঘৃণা থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নামে কুফর-শিরক সম্পর্কেও উদাসীনতা ও নিজ আদর্শ বিসর্জনের কোনো সুযোগ নেই। হযরত ওমর রা.-এর ঐ হাদীস তো আমাদের অনেকেরই জানা আছে। তিনি তাওরাতের একটি কপি পেয়ে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে এসেছিলেন এবং পড়তে আরম্ভ করেছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা মোবারকে চরম অসন্তুষ্টির ছাপ ফুটে উঠল। হঠাৎ তা লক্ষ করে ওমর রা. সঙ্গে সঙ্গে তা পড়া বন্ধ করে দিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন- أَمُتَهَوِّكُونَ فِيهَا يَا ابْنَ الْخَطّابِ، وَالّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيّةً، لَا تَسْأَلُوهُمْ عَنْ شَيْءٍ فَيُخْبِرُوكُمْ بِحَقٍّ فَتُكَذِّبُوا بِهِ،أَوْ بِبَاطِلٍ فَتُصَدِّقُوا بِهِ، وَالّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنّ مُوسَى كَانَ حَيّا، مَا وَسِعَهُ إِلّا أَنْ يَتّبِعَنِي. হে খাত্তাবের বেটা! তোমরা কি এ বিষয়ে সংশয়ী?! ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! আমি তো তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন নিয়ে এসেছি শুভ্র-সমুজ্জ্বলরূপে। ওদেরকে কোনো বিষয় জিজ্ঞেস করো না। হতে পারে ওরা কোনো হক কথা বলবে কিন্তু তোমরা তা অস্বীকার করবে অথবা কোনো নাহক কথা বলবে আর তোমরা তা কবুল করবে। ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মূসা যদি জীবিত হতেন তাহলে তাঁরও আমার অনুসরণ ছাড়া অন্য কোনো অবকাশ থাকত না। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫১৫৬ মুসলমানকে নিজের দ্বীন ও ঈমান সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন ও সংবেদনশীল থাকতে হবে। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ জাতীয় কথায় বিভ্রান্ত ও প্রতারিত হওয়া মুমিনের শান নয়। এজাতীয় দর্শনে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার নানা নজির আমাদের সামনে আছে। মনে পড়ছে আজানগাছি নামক পশ্চিমবঙ্গের এক ভদ্রলোকের কথা। তার ভক্তরা বছরে একবার প্রেসক্লাবে জমা হয়ে আন্তধর্মীয় অনুষ্ঠান করত। ওখানে সাধারণত দেখা যেত বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকে। বিভিন্ন ধর্মের লোকেরাও হয়ত কিছু থাকত। অতি সম্প্রতি ভারতেও তোলপাড় হয়ে গেল তথাকথিত সর্বধর্মীয় চেতনাবাদী গুরমিত সিংয়ের নানা কর্মকা- নিয়ে। একই কা- এবার দেখা গেল ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় নেতা পোপের আগমনকে কেন্দ্র করে। শুধু খ্রিস্টানের একান্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে সাধারণ অবুঝ মুসলমানদের সে মুখীই করা হয়নি বরং একটি তথাকথিত সর্বধর্মীয় প্রার্থনা-সভাও করে ফেলা হয়েছে, যাতে অংশগ্রহণ করেছেন কোনো কোনো মুসলিম ধর্মীয় ব্যক্তিরাও। আমাদের মনে হয় না এটা পোপের কাজ; বরং এ দেশীয় কিছু অতি উৎসাহী লোক, যারা নিজেদেরকে ‘অতি উদার’ ‘অতি অসাম্প্রদায়িক’ বলে দেশে-বিদেশে যাহির করতে ইচ্ছুক, সম্ভবত তথাকথিত আন্তধর্মীয় প্রার্থনার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন। যার যা উদ্দেশ্যই থাকুক, মুসলমানদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। মিডিয়ার কল্যাণে এহেন ঈমান পরিপন্থী ঘটনা গোটা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছে, যার দ্বারা দেশে-বিদেশে সরল ও স্বল্পশিক্ষিত মুসলিমদের বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ এই কর্মটিকে আদর্শ ও অনুসরণীয় মনে করে নিজের দ্বীন-ঈমানকে হুমকির মুখেও ফেলতে পারে। কাজেই এখানেও সেই কথা বলেই শেষ করছি, যা শিরোনামে বলেছি; মুমিন যেমন অন্যের সাথে প্রতারণা করতে পারে না, তেমনি প্রতারিতও হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দ্বীন ও ঈমান রক্ষা করে চলার তাওফীক দান করুন- আমীন।

41
বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আসছে শা‘বান ও রমযান। বর্তমান সংখ্যাটি শা‘বান-রমযান যৌথ সংখ্যা। রমাযানুল মুবারকের নাম আমাদের মন-মানসে এক নতুন অনুভূতি জাগ্রত করে। স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতার অনুভূতি। এই মাসটি একটি মহিমান্বিত মাস, যার ফযীলত ও মর্যাদা কুরআন মাজীদে উল্লেখিত হয়েছে। এই মাস মুমিনের নব চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার মাস। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অন্বেষণে অগ্রণী হওয়ার মাস। স্বয়ং আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হতেন। তাঁর সাহাবীগণকেও ইবাদত-বন্দেগীতে অগ্রসর হতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তাই মুমিনের কাছে এই মাস আলাদা মহিমা ও তাৎপর্য নিয়ে আগমন করে। মুমিনের কর্তব্য, ইবাদত-বন্দেগীতে অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি চাল-চলন, আচার-আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি সবক্ষেত্রে একটি আদর্শিক ছাপ রাখার চেষ্টা করা।

প্রতি রমযানেই নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির একটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। যদিও অনেক বিত্তশালী মুসলিম এ মাসে প্রচুর দান করে থাকেন, অনেকে যাকাত দিয়ে থাকেন, দুস্থ-অসহায়ের খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন, রোযাদারদের ইফতার করিয়ে থাকেন, কিন্তু এইসব নেক আমল ও জনকল্যাণমূলক কাজ চাপা পড়ে যায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কাছে। একারণে মুসলিম ব্যবসায়ীদের কর্তব্য, কিছুটা ক্ষতি স্বীকার করে হলেও রমাযানুল মুবারকে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা। এতে যেমন মুসলমানদের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হবে তেমনি মানবসেবারও ছওয়াব পাওয়া যাবে।

রমাযানুল মুবারককে উপলক্ষ করে আমাদের সমাজে যদি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে সেটি হবে অতি সুখের ব্যাপার। ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়াদি- সুদ, ঘুষ, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ইভটিজিং, মাদকের ব্যবহার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়া উচিত। রমাযানুল মুবারকের ভাবমর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের প্রচারমাধ্যমগুলো যদি এইসব অনাচার নির্মূলে সংকল্পবদ্ধ হয় তাহলে সুফল আসতে পারে। এই ইতিবাচক ও জাতিগঠনমূলক কর্মকা-ের পরিবর্তে গোটা রমযান মাস জুড়েই অব্যাহত থাকে অশ্লীল বিনোদনমূলক প্রচার ও সম্প্রচার । বিশেষত ঈদ-বিনোদনের নামে নাটক-সিনেমার যে সয়লাব এদেশের মিডিয়াগুলোতে বয়ে যায় তাতে যেকোনো সচেতন মুসলিমেরই মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার কথা। সস্তা বিনোদনের স্থলে মিডিয়াকে জাতি ও চরিত্রগঠনে কাজে লাগানো আমাদের কর্তব্য। মাহে রমযানের ভাবমর্যাদা ও মুসলিমমানসে এর প্রভাবকে সফলভাবে কাজে লাগানো গেলে এপথে অনেকদূর অগ্রসর হওয়া সম্ভব।

এই পবিত্র মাসের বিশেষ ফরয ইবাদত হচ্ছে সওম। ঈমানের পর যে চারটি বিষয়কে ইসলামের রোকন বলা হয়েছে সওম তার অন্যতম। কাজেই যার উপর সওম ফরয এমন প্রত্যেকের কর্তব্য, যতেœর সাথে এই ফরয ইবাদতটি আদায় করা। ইসলামে ফরয ইবাদত-আমলের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি, এর মাধ্যমেই অর্জিত হয় আল্লাহ্র সবচেয়ে বেশি নৈকট্য। কাজেই নফল ইবাদত-আমলে কিছু ত্রুটি হলেও ফরয-ওয়াজিবে ত্রুটি হওয়া উচিত নয়; বরং গুরুত্বের সাথে তা পালন করা উচিত। একইসাথে কর্তা ব্যক্তিদের দায়িত্ব রোযাদার কর্মীর কাজের ভার কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করা। এটি যেমন এক রোযাদার বান্দার উপর অনুগ্রহ তেমনি একটি ফরয ইবাদত আদায়ের ক্ষেত্রে সহযোগিতা। পাশাপাশি তা ফরয আদায়ে উৎসাহিত করারও একটি উপায়।

যারা রোযা রাখেন তাদের জন্যেও রয়েছে উন্নতির সুযোগ। কারণ পানাহার ও স্ত্রী-মিলন থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি রোযাদারের কর্তব্য, সব রকমের অন্যায়-অনাচার থেকেও বেঁচে থাকা। কটূক্তি-ঝগড়া-বিবাদ ও অশোভন উচ্চারণ থেকেও বেঁচে থাকা। হাদীস শরীফে আছে, ‘যখন তোমাদের রোযার দিন আসে তখন তোমরা অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং চিৎকার-চেঁচামেচি থেকে বিরত থাকবে। কেউ যদি ঝগড়া-বিবাদে প্রবৃত্ত হয় তাহলে বলবে, আমি রোযাদার।’ কাজেই রোযাদারের রোযার পূর্ণতা সাধনের জন্য সবরকমের অন্যায়-অশোভন কাজ থেকে বিরত থাকাও কর্তব্য। বলা বাহুল্য, মুমিন যদি একমাস এভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখার চেষ্টা করে, ইনশাআল্লাহ তার স্বভাব-চরিত্রে, কথা ও কাজে পরিবর্তন সাধিত হবে। এভাবেই রোযা মানবজীবনে শুদ্ধি ও পরিশুদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে।

মাহে রমযানের আরেক বিশেষ ইবাদত তারাবী। গোটা মুসলিম জাহানে তারাবীর নামায অত্যন্ত আগ্রহ-উদ্দীপনার সাথে আদায় হয়ে থাকে। তারাবী অতি বরকতময় সুন্নত। আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক যামানা থেকেই তারাবী মাহে রমযানের অতি ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। ঐকান্তিকতা ও একনিষ্ঠতার সাথে এই  ইবাদতে মশগুল থাকা কাম্য। কোনো কোনো জায়গায় তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক হতে  শোনা যায়। কোনো কোনো মহল থেকে নানা প্রকারের লিফলেট ইত্যাদিও বিতরণ হয়। এই সকল কর্মকা- খুবই অশোভন ও অনুচিত। এ সংক্রান্ত বিচ্ছিন্ন মতামতের অসারতা প্রমাণ করে গবেষক আলেমগণ দলীলভিত্তিক পর্যাপ্ত আলোচনা করেছেন। কাজেই সাধারণ মুসলমানের কর্তব্য, কল্যাণ-অন্বেষার এই মাসে অর্থহীন বিবাদ-বিতর্কে না জড়ানো। আলিমগণের নির্দেশনা অনুসারে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকা। কেউ বিতর্ক করতে এলে তাকে বলে দেওয়া যে, বিষয়টি আলিমদের সাথে আলোচনা করুন।

তারাবীর নামাযের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ের রেওয়াজও ক্রমবর্ধমান। আর তা হচ্ছে মেয়েদের মসজিদের জামাতে শামিল হওয়া। এই প্রবণতাকে উৎসাহিত করার উপায় নেই। কারণ একে তো মেয়েদের জন্য নিজ ঘরে নামায পড়াই কাম্য, যা সহীহ হাদীস-আছার দ্বারা প্রমাণিত, তাছাড়া নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণির মাঝেই প্রকৃত দ্বীনদারীর ক্রমাবনতি বিষয়টিকে আরো নাযুক করে দিয়েছে। একারণে উম্মাহ্র ফকীহ-মুজতাহিদগণের কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত অনুসারে মেয়েরা যদি নিজ গৃহে নামায আদায়ে সম্মত হন তাহলে সেটিই তাদের জন্য অধিকতর পুণ্য ও কল্যাণের বিষয় হতে পারে।

মাহে রমযান ঈমান ও ইহতিসাবের ক্ষেত্রে অগ্রসরতার মাস। ঈমান মানে বিশ্বাস, আর ইহতিসাবের মর্মার্থ প্রত্যাশা। এই মাসের সকল ইবাদত-আমলে ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস ও প্রত্যাশার প্রেরণা জাগরূক রাখা কর্তব্য। হাদীস শরীফে এ মাসের সিয়াম-কিয়ামে ঈমান ও ইহতিসাবের চেতনা জাগ্রত রাখার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে রমযানের রোযা রাখে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে রমযানের রাতে আল্লাহ্র ইবাদতে দাঁড়ায় তারও পেছনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। তাই রমযান মাস ঈমানী চেতনায় অগ্রগামী হওয়ার মাস। আল্লাহ তাআলা যা যা সংবাদ দিয়েছেন সকল সংবাদে দৃঢ় বিশ্বাস, যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার গভীর প্রত্যাশা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। এই বিশ্বাস ও প্রত্যাশাই আল্লাহ্র ইচ্ছায় মুমিনকে পরিচালিত করে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির পথে। আমল ও ইবাদতকে করে তোলে সার্থক ও প্রাণবন্ত। অধিকারী করে দুনিয়া-আখেরাতের সৌভাগ্য  ও প্রাপ্তির। এই একমাসের অনুশীলনের মাধ্যমে মুমিনের  গোটা জীবনটি হয়ে উঠতে পারে ঈমান ও ইহতিসাবের জীবন; বিশ্বাস ও প্রত্যাশায় আলোকিত জীবন।

রমাযানুল মুবারকের শেষ দশ দিন আরও বরকতময়। এই দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভাবনা। তাই এসময়টা সর্বোচ্চ আগ্রহ নিয়ে ইবাদতে মশগুল থাকা কাম্য ছিল। অথচ এখন আমাদের সমাজে চালু হয়েছে ঈদশপিংয়ের সংস্কৃতি, যার চক্করে পড়ে অনেক দ্বীনদার মানুষেরও দশকের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যায়। অন্তত দ্বীনদার মানুষের এই ক্ষতিকর রেওয়াজ  থেকে বেরিয়ে আসা কর্তব্য।

এই মহিমাপূর্ণ মাসের জন্য আমাদের আরো কর্তব্য একটু আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া। এই প্রস্তুতি চেতনাগত, বিশ্বাসগত ও ব্যবস্থাপনাগত। মুমিন যখন ভালো কাজের সংকল্প করে এবং আল্লাহ্র উপর ভরসা করে অগ্রসর হয় আল্লাহ তাআলা তার জন্য পথ খুলে দেন। শা‘বান থেকেই ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিতে থাকা যায়। আর ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা‘বান’ অর্থাৎ চৌদ্দ শা‘বান দিবাগত রাতে  (শবে বরাতে) সুন্নাহসম্মত পন্থায় ইবাদত-বন্দেগীও আল্লাহ্র নৈকট্য ও ক্ষমার এক বড় উপায়। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দান করেন এবং মুশরিক ও শত্রুতা পোষণকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। কাজেই এ রাতের কদরদানী কর্তব্য।

এ রাতকে ঘিরেও আমাদের সমাজে রয়েছে নানা প্রান্তিকতা। কেউ এ রাতকে শবে কদরের চেয়েও বেশি ফযীলতের মনে করে। এটা ভুল। কেউ নানা রকমের রসম-রেওয়াজে লিপ্ত হয়। এটাও বর্জনীয়। অন্যদিকে কেউ কেউ এ রাতের আলাদা গুরুত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। এটাও প্রান্তিকতা। এই সকল প্রকারের প্রান্তিকতা থেকে বেঁচে এই রাতে সাধ্যমত ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকা ভালো ও কাম্য।

মাহে রমযান আমাদের সবার জীবনে মোবারক হোক। ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসুক। আমাদের ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবন থেকে সকল আবিলতা দূর হয়ে যাক। আমাদের চিন্তা-ভাবনা মন-মানস, কর্ম ও আচরণ উজ্জ্বল হয়ে উঠুক মাহে রমযানের শিক্ষায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করুন ও কবুল করুন- আমীন।

42
The students of Permanent Campus of the Department of Electrical & Electronic Engineering (EEE) of Daffodil International University (DIU) undertook an industrial tour on November 3, 2017 to Ashulia 44.75MW Power Station of Summit Power Ltd(SPL), the first independent power producer (IPP) in Bangladesh. The tour was organized for the students of Power System Protection course and arranged by the course teacher Mr. Md. Ashraful Haque, Senior Lecturer, Department of EEE in order to introduce the students with the power station operation and maintenance concepts.


43
রিয়েক্টর শীতলীকরণঃ
১। রিয়েক্টর শীতলীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পানি শুষ্ক মৌসূমে নেই। সরকার যে লেইক করার কথা বলছে সেটা স্রেফ মিথ্যা আর টেকনিক্যালিও প্রায় অসম্ভব। পদ্মা বছরে ১ থেকে ১,৫ লাখ মেট্রিকটন বালি পরিবহণ করে আনে, ফলে মূল রিভার বেডে বা তার পাশে রিয়েক্টর শীতলীকরণের মত লেইক করা প্রায় অসম্ভব। মনে রাখতে হবে শুষ্ক মৌসুমে বন্ধু রাষ্ট্র পদ্মায় সর্বচ্চ ৫৫০০ কিউসেক (মাত্র) পানি দিয়েছে বিগত ২ বছর! এমতাবস্থায় স্বাভাবিক সময়ে রয়েক্টর শীতলীকরণে কিভাবে প্রতি মিনিটে ৬৩০০০ গ্যালন পানি শুষ্ক মৌসুমে সরবারহ করা হবে এই প্রশ্নের কোন সুস্পষ্ট উত্তর নেই! তবে ইমার্জেন্সিতে প্রতি মিনিটে ১ লাখ গ্যালনের বেশি পরিমাণ পানির প্রয়োজন হবে।


রিয়েক্টরের মানঃ
২। ভিভিইয়ার-১২০০ রিয়েক্টর রাশিয়ার হিসেবে লেটেস্ট, কিন্তু আন্তর্জাতিক হিসেবে এটা তৃতীয় প্রজন্মের, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ৫ম প্রজন্মের রিয়েক্টর নিয়ে হাজির। রাশার টেকনোলজির অবস্থা নাজুক, সেখানে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কার্ভ খুবই স্লো। ভারতে এই রিয়েক্টর নিয়ে সমালোচনা হয়েছে এবং পরিবর্তে নতুন রিয়েক্টর বসানোর কথা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা এরকম কিছু করবে কিনা, এই দাবী সরকার বা আণবিক শক্তি কমিশন করেছে? নাকি তারা রাশান ঋণে পুরানো রাশান প্রযুক্তি প্রকল্প করে কিছু মারতে পারলেই সন্তুষ্ট? যেহেতু আনুমানিক ২০১৯-২০২০ এর দিকে রিয়েক্টর বসানো হবে, তাই ২০১৩ বা এর পূর্বের তৃতীয় প্রজন্মের রিয়েক্টর অগ্রহণযোগ্য।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ
৩। আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থা বর্জ্য নিয়ে কাজ করে না। বর্জ্য ম্যানেজমেন্ট তাদের সদস্য দেশের রিস্পন্সিবিলিটি। রাশিয়া পরিষ্কার বলেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তাদের দায়িত্ব নয়, যদিও সরকার এটা নিয়ে মিথ্যা বলেছিল প্রথম দিকে। বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন যায়গা নেই।

বিএইসির সাবেক চেয়ারম্যান এম এ কাইউম বলেন, দেশের সবাই একটি নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চায়। এ জন্য তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়ার ফেরত নেওয়ার বিষয়টির সুরাহা হওয়া দরকার। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সই হওয়া চুক্তিতে এ বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে কী আছে, তা দেশের মানুষ এখন পর্যন্ত জানে না। তিনি বলেন, কোনো দেশে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করার জন্য যে রকম জনবল থাকা প্রয়োজন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তা নেই। রূপপুর প্রকল্পকে সামনে রেখে জনবল তৈরির যে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, তা-ও সন্তোষজনক নয়। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ৩০ বছর কাজ করে অবসর নেওয়া বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন। তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ হিমশিম খাচ্ছে। তাই বর্জ্য ফিরিয়ে নিতে রাজি না হলে কোনো দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা উচিত নয়।

একটি গোল্টেবিল আলোচনায় পারমাণবিক দুর্ঘটনার দায় নেওয়া সম্পর্কে ড আবদুল মতিন বলেন, রূপপুরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আশপাশের ৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার এলাকা থেকে সব মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে। তাঁদের দীর্ঘ সময়ের জন্য অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হবে। কোনো বিবেচনায়ই বলা যায় না যে বাংলাদেশের এই সামর্থ্য আছে। তিনি বলেন, পারমাণবিক দুর্ঘটনার জন্য নির্মাণকারীদেরও দায়িত্ব নিতে হবে—এমন একটি আইন ভারত করেছে। এ রকম একটি সুরক্ষা আইন বাংলাদেশেরও করা উচিত।

কষ্ট মডেলঃ
৪। কষ্ট মডেল ভারতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ খরুচে, এটা আরেকটা খুললাম খুল্লা দুর্নীতির যোগ করছে দেশের লুটেরা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন মডেলে।

উল্লেখ্য, ভারতের তামিলনাড়ুর কুদনকুলম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নতুন দুটি ইউনিট (তৃতীয় ও চতুর্থ) স্থাপনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়বে তিন হাজার মার্কিন ডলার। রূপপুর প্রকল্পে এই খরচ পড়ছে সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার।

মোট ২৪০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের জন্য সই করা চুক্তিতে আমাদের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি মার্কিন ডলার। এর বাইরে আমরা ইতিমধ্যে ৫৫০ মিলিয়ন (৫৫ কোটি) ডলার ব্যয় করে ফেলেছি। এটা যুক্ত করলে হবে ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার। এ থেকে যদি আমরা প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য ব্যয় হিসাব করি, তাহলে রূপপুর কেন্দ্রের জন্য তা দাঁড়ায় সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার। [রূপপুর প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ৩২ হাজার কোটি টাকা ছিল, যা বেড়ে ১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে (ডব্লিউএনআইএসআর, ২০১৭)]। লাগামছাড়া খরচ আর নির্মাণের দীর্ঘসূত্রতায় শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের মোট ব্যয় কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কেউ জানে না। বলা প্রয়োজন, শত কোটি করে উপর্যুপরি ব্যয় বৃদ্ধি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের একটি খুব চেনা ও রাজনৈতিক ভাবে মোটিভেটেড দুর্বিত্তপনা, এখানে হাজার কোটি করেও একাধিক প্রকল্পে শুধু ব্যয় বাড়ার নজির স্থাপিত হয়েছে সাম্প্রতিক বছরে। সুতরাং রুপপুরেও খরচ প্রাক্কলন থেকে বাড়বে।

অফনোট,
পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অফিসের নিন্ম মান স্টীল স্ট্রাকচার ঝড়ে উপড়ে গেছে! যারা একটা ভবন করার হেডোম দেখাতে পারে নাই চুরি ছাড়া, তারা দুর্ঘটনা ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে এবং সেটা নিরাপদে মেইন্টেইন করবে, এইটা বড়ই ভারী আশা!

পুনশ্চ, একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন মডেল নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এটার জন্য বাংলাদেশের স্থান, পানি, জনমিতিক পরিবেশ উপযুক্ত কিনা! আমাদের সেই কারিগরি সক্ষমতা আছে কিনা! নির্মাণ উত্তর প্রাক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে কিনা! সবগুলো উত্তরে "হ্যাঁ" বলার যেখানে অবকাশ নেই, সেখানে একটি পারমাণবিক প্রকল্প হতে পারে না!

Pages: 1 2 [3]