হিংসা-বিদ্বেষ মুনাফিকের স্বভাব

Author Topic: হিংসা-বিদ্বেষ মুনাফিকের স্বভাব  (Read 1360 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
হিংসা মানুষের অন্তরের দুরারোগ্য ব্যাধি। যা সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে সমাজে নানা ফেতনা ফ্যাঁসাদ সৃষ্টি করে। সর্বোপরি তা সমাজের সম্প্রীতির ভিত নষ্ট করে দেয়। হিংসা-বিদ্বেষের ফলে মানুষ কারো বিরুদ্ধে কুচক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এমনকি সম্পর্কচ্ছেদ করতেও দ্বিধা করে না। তাই যতক্ষণ মানুষের অন্তর বিদ্বেষমুক্ত না হয় ততক্ষণ তার কর্মও অন্যায়মুক্ত হয় না। হিংসা-বিদ্বেষ সমাজে অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচার ছড়ায়। হিংসার কারণে সমাজের মানুষ অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পাপ করে ইবলিস। সেটা ছিল হিংসার কারণে। ইবলিসকে বলা হলো আদম (আ.)-কে সম্মানের সিজদা দিতে। আদম (আ.)-এর উচ্চ মর্যাদা দেখে ইবলিস হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং তাকে সিজদা করতে অস্বীকার করে। ফলে সে জান্নাত থেকে চিরদিনের জন্য বিতাড়িত হয়। অনুরূপভাবে আদম-পুত্র কাবীল তার ভাই হাবীলকে হত্যা করে হিংসার বশবর্তী হয়ে। হাবীল ছিল পরহেযগার ও মুত্তাকী। সে আল্লাহর ভালোবাসায় তার সবচেয়ে ভালো দুম্বাটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে। কাবীল তার ক্ষেতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ফসলের একটা অংশ আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি দেয়। আল্লাহতায়ালা কাবীলের কোরবানি কবুল না করে হাবীলেরটা কবুল করেন এবং আসমান থেকে আগুন এসে তা উঠিয়ে নেয়। এতে কাবীল হিংসায় জ্বলে ওঠে এবং হাবীলকে হত্যা করে। পরবর্তীকালে ইহুদিরা বিদ্বেষী হয়ে ওঠে মুসলমানদের ওপর এ হিংসায় যে, শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন মুসলমানদের মধ্যে আগমন করল। তাদের ধারণা ছিল, শেষ নবী তাদের মধ্য থেকে আগমন করবে। শেষ নবী তাদের মধ্য থেকে আগমন না করার হিংসায় তারা বহু মুসলমানকে ঈমান আনার পরও কাফের বানাতে চেষ্টা করেছে। কোরআনে কারীমে বলা হয়েছে, ‘আহলে কিতাবদের অনেকে চায় ঈমান আনার পর তোমাদেরকে কুফরীতে ফিরিয়ে নিতে, তাদের নিকট সত্য প্রকাশ হওয়ার পরও, শুধু বিদ্বেষবশত তারা এ অপকর্ম করে’ (সূরা বাকারা-১০৯)। দেখা যাচ্ছে, যুগে যুগে মানুষ হিংসার কারণেই অপরাধ প্রবণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কর না, ষড়যন্ত্র কর না ও সম্পর্ক ছিন্ন কর না। বরং তোমরা আল্লাহতায়ালার বান্দা হিসেবে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’হিংসা-বিদ্বেষ মুনাফিকের চরিত্র। কোনো মুমিন অন্য মুমিনের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রাখতে পারে না। এটি মুনাফিকদের একটি বদ স্বভাব। মুনাফিকদের হিংসা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে তাতে তারা অসন্তুষ্ট হয় আর যদি তোমাদের কোনো অকল্যাণ হয় তাতে তারা আনন্দিত হয়’। (সূরা আল ইমরান-১২০)। এই দুটি স্বভাবের মধ্যে মুমিনের গুণ হলো সে সর্বদা মানুষের কল্যাণ চাইবে, শুভ কামনা করবে। অন্যের অকল্যাণ কামনা করে কখনো মুমিন হওয়া যায় না। হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে অন্যের জন্য সেই বস্তুই ভালো না বাসবে যে বস্তু সে নিজের জন্য ভালোবাসে’। কারণ মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সূরা হুজরাতের ১০নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। আর সত্যিকার অর্থে ভাই ভাইয়ের জন্য এমন বস্তু কামনা করতে পারে না যা সে নিজের জন্য অপছন্দ করে। অপরদিকে মুনাফিকের স্বভাব হলো, সে সর্বদা অন্যের অকল্যাণ চায়। অন্যের কোনো ভালো দেখলেই সে অস্বস্তি বোধ করে। আর এটাকেই হাদিসের পরিভাষায় হিংসা বলা হয়েছে। ‘আল্লাহতায়ালা অন্যকে যে নেয়ামত দান করেছেন তার প্রতি হিংসা করা এবং উক্ত নেয়ামত ধ্বংস কমনা করা’ এরই নাম হাসাদ বা হিংসা। সুতরাং বুঝা গেল হিংসার সাথে নেফাকের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। হিংসার সবচেয়ে বড় শাস্তি হলো, হিংসুক ক্রমান্বয়ে মুনাফিক হয়ে যায়। আর মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের সর্বনি¤œ স্তরে। কোরআনে কারীমে বলা হয়েছে, ‘মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের সর্বনি¤œ স্তরে এবং তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাওয়া যাবে না’। (সূরা নিসা-১৪৫)