মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ উল আযহা। এই ঈদে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ত্যাগের মহিমা প্রকাশ পায়। গরীব ও অসহায় মানুষের মাঝে মাংস বিতরণের পর প্রায় সব পরিবারেই পোলাও মাংস রান্না করা হয়। এসময় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে রান্নার পদ্ধতির দিকে। গরু কিংবা খাসীর মাংসে অতিরিক্ত চর্বি থাকে। রান্নার জন্য মাংস বাছাই করার সময় সেই অতিরিক্ত চর্বি ফেলে দিতে হবে। যেসব মাংসের রোয়াতেই চর্বি বেশি থাকে; সেই সব মাংস অল্প তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। আবার সব চর্বিই ফেলে দেয়া যাবেনা, তাহলে মাংস ঠিকমত সিদ্ধ হবেনা। মাংস সুসিদ্ধ হওয়ার জন্যও কিছু চর্বির দরকার আছে। মাংসের প্রধান উপাদানগুলো হলো প্রোটিন, ফ্যাট, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও ডি। মাংস খেলে প্রোটিন এবং আয়রনের চাহিদা যেমন মিটবে তেমনি কিছু ভিটামিনের ঘাটতিও পূরণ হবে। তবে আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে খাওয়াটা অতিরিক্ত না হয়। আমাদের খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে ফ্যাট অর্থাৎ চর্বি থেকে সব চেয়ে বেশি পরিমানে ক্যালরি আসে। আর এসব ক্যালরি যদি খরচ না হয়, তবে তা ফ্যাট আকারেই আমাদের দেহে জমা হতে থাকে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা পরবর্তীতে ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হার্ট এর রোগ সহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারন হয়ে দাঁড়ায়। ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ্য ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ মেনে চলা ভালো। আমরা অনেক সময় ভাবি যে সারা বছর তো আর বেশী খাওয়া হয়না,তাহলে কোরবানির ঈদে একটু বেশী খেলেও সমস্যা নাই। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। খাবার সব সময়ই খেতে হবে পরিমানমত। যেকোনো উৎসবে পার্বণে আমাদের ঘরে পোলাও কোরমা রান্না হয়। এসব তৈলাক্ত খাবার খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর মাঝে ক্যালরিও থাকে বেশি। কেউ কেউ এই মুখরোচক খাবারগুলো এত বেশী খেয়ে ফেলেন যে একদিনে তার যে পরিমান ক্যালোরি খাওয়া দরকার; একবেলাতেই তার চেয়ে অনেক বেশী খেয়ে ফেলেন। কিন্তু মূলত এসব খাবার খেতে হবে পরিমানে কম । পোলাও যেহেতু তেল বা ঘি দিয়ে রান্না হয় তাই এর ক্যালরিমূল্য বেশী; একারনে খেতে হবে ভাতের তুলনায় কম। আর মাংস খাওয়ার সময় চর্বির অংশ বাদ দিয়ে খেতে হবে, তানাহলে শরীরে মেদ জমে যাবে। এ সময় অবশ্যই শাকসবজি, মিক্সড সালাদ এবং ফ্রুট খেতে হবে। সেই সাথে প্রচুর পানি পান করতে হবে। একটানা অনেকদিন মাংস না খেয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের খাবারের অন্তর্ভুক্তি থাকা ভালো। অনেকেই ঈদের সময় মাংস দিয়ে নানা রকম রেসিপি তৈরি করে খেতে পছন্দ করেন। তাদের জন্য পরামর্শ হল যে পরিমান ক্যালোরি গ্রহন করছেন তা পরিশ্রম বা এক্সারসাইজের মাধ্যমে খরচ করে ফেলতে হবে। নয়ত অতিরিক্ত ফ্যাট আপনার দেহে জমে আপনার স্বাভাবিক ওজনকে যেমন বাড়িয়ে দিবে; তেমনি নানা রকমের রোগবালাইয়ের আক্রমনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেও করবে ব্যাহত । তাই পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন; সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুন।
মুনমুন হক
https://shar.es/17aOpS