আক্কেল দাঁতের সমস্যা ও সমাধান!
মানুষের মুখে ওপর ও নিচের চোয়ালে মোট ৪টি আক্কেল দাঁত থাকে। এগুলোর নাম তৃতীয় মোলার দাঁত। এগুলো দাঁতের সারিতে পেছনের দাঁত। স্বাভাবিকভাবে আক্কেল দাঁতের সংখ্যা যদিও ৪টি, কারো কারো ক্ষেত্রে এ দাঁতের অনুপস্থিতিও দেখা যায়। কারো বেলায় ৪টির বেশি আক্কেল দাঁত দেখা যেতে পারে। তবে তা বিরল। কারো আক্কেল দাঁত মাড়ি ও হাড়ের ভেতর লুকানো অবস্থায় থাকে। তা মুখের ভেতরে বেরিয়ে আসে না। এক্স-রে করে এসব আক্কেল দাঁতের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়। সাধারণত ১৬ থেকে ২৩ বছর বয়সের মধ্যে আক্কেল দাঁত উঠতে শুরু করে। সময়ের কিছুটা হেরফেরও হতে পারে।
লক্ষণ : অনেকের আক্কেল দাঁত ওঠে ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই। কারো পুরোপুরি না উঠে আংশিকভাবে ওঠে। এ ক্ষেত্রে আংশিক গজানো আক্কেল দাঁতের চারপাশে জীবাণু সংক্রমণ ও প্রদাহ হতে পারে। আংশিক গজানো আক্কেল দাঁতের ওপরিভাগ মাড়ির একটি আবরণে ঢাকা থাকে। এটির নাম ‘অপারকুলাম’। এটির নিচে আটকে থাকে ডেন্টাল প্ল্যাক। সেখানে বিস্তার লাভ করে ব্যাকটেরিয়া। দেখা দেয় সংক্রমণ ও প্রদাহ। এ অবস্থার নাম ‘পেরিকরোনাইটিস’। এ সমস্যা দেখা দিলে আক্কেল দাঁতের ওপরিভাগের মাড়ি লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, কামড় দিলে ব্যথা হওয়া, দুর্গন্ধের সৃষ্টি হওয়া, কখনো পুঁজ বেরিয়ে আসা সমস্যা দেখা দিতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে আশপাশের মাড়িতে, এমনকি চোয়ালে পুঁজ জমে যেতে পারে। এতে মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে, জ্বর আসতে পারে, ফুলে যেতে পারে চোয়ালের নিচের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি।
সমস্যা হলে কী করানো উচিত ?
□ আক্কেল দাঁতের যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে শুরুতেই একটি এক্স-রে করানো প্রয়োজন।
□ এক্স-রে তে দাঁতটির আকৃতি ও অবস্থান ভালোভাবে দেখে চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হয়।
□ আক্কেল দাঁতের সমস্যার ধরন বুঝে বেশিরভাগ সময়েই দাঁতটি ফেলে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
অসহ্য আক্কেল দাঁতের ব্যাথা কমাতে তাৎক্ষনিক ভাবে কি করবেন?
□ দাঁতে ব্যাথা হলেই তো ডেন্টিস্টের কাছে দৌড়ে যাওয়া যায়না। তাই সাময়িক ভাবে আক্কেল দাঁতের ব্যাথা দূর করতে একগ্লাস কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে নিন তারপর সেই পানি দিয়ে কুলি করুন।
□ দিনে অন্তত ৩/৪ বার এইভাবে করুন। সাধারণত হালকা গরম লবণ-পানি দিয়ে কুলকুচি ও সাধারন ব্যাথার ঔষধই ব্যাথা কমাতে যথেষ্ট।
□ একটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় ডাক্তারের পরমার্শ ছাড়া কোনো আন্টিবায়োটিক জাতীয়
ঔষুধ সেবন না করাই উত্তম|
আক্কেল দাঁত তুললে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হয় কি?
□ আক্কেল দাঁত তুলে ফেললে ভবিষ্যতে খেতে বা কথা বলতে কোন সমস্যা হয়না।
□ চোখ বা ব্রেইনের গুরুতর কোনো সমস্যা হয় না |
□ তবে মনে রাখা উচিত যে, “আক্কেল দাঁত তোলা” একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ন অপারেশন।
দাঁতের রোগ হলে তার চিকিৎসা না করালে তা থেকে তো ব্যাথা হবেই। আর যদি দাঁতের যত্ন না নেন, দাঁত মজবুত রাখতে প্রয়োজনীয় খাবার না খান, দাঁতের যে কোন বিষয়ে অবহেলা করেন তাহলে দাঁতের সমস্যা তো হবেই। আর সাথে দাঁতের অসহ্য ব্যাথা তো আছেই কিন্তু আক্কেল দাঁত এর ব্যাথা সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা আছে। এই ব্যাথা যে কী কষ্টদায়ক তা যাদের আক্কেল দাঁত উঠেছে তারাই বলতে পারবেন।
■ প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করে ঘুমাতে যান। সকালের নাস্তার পরে আবার দাঁত ব্রাশ করুন।
■ দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য না বুঝলে পরে আফসোস করতে হবে।
লেখক : ডেন্টাল স্পেশালিস্ট
তায়েফ ডেন্টাল হাসপাতাল
সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়