ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথায় আজকাল অনেকেই কাবু হচ্ছেন৷ কারণ বেশির ভাগ অফিস মানেইতো কম্পিউটারের সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে যাওয়া৷ এতেই নাকি যত সমস্যা, অথচ উপায় নেই। কারণ কম্পিউটার ছাড়াতো এখন কাজ করার কথা ভাবাই যায় না৷ আর ঘাড়ে পিঠে ব্যাথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে জানা যায়, এই ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারণ হল সার্ভিকাল স্পন্ডিলোসিস।
মেরুদন্ডের ক্ষয় রোগ হল স্পন্ডিলোসিস আর মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের ক্ষয়কে বলে সার্ভিকাল স্পন্ডাইলোসিস। আমাদের মেরুদন্ড গঠিত হয় হাড়, মাংশপেশী, হাড়ের জোড়া ইত্যাদি নিয়ে।
সার্ভিক্যাল স্পন্ডিলোসিসে হল একটি বয়স বৃদ্ধিজনিত রোগ । স্পন্ডিলোসিসের পরিবর্তন শুরু হয় ৪০ বৎসর বয়সের পর থেকে যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার আগেও শুরু হয় হাড়ের ক্ষয়। পুরুষ বা মহিলা উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন৷
সাধারণত ঘাড় সামনে ঝুঁকিয়ে কাজ করতে হয় এমন সব পেশার মানুষদের এ রোগটি বেশী দেখা যায়। যেমন- শুধুমাত্র চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করে এমন এক্সিকিউটিভ, কম্পিউটারে একনাগাড়ে কাজ ইত্যাদি। ঘাড়ের ঝাঁকুনি হয় এমন পেশা যেমন নর্তকী, মোটরসাইকেল বা সাইকেলে চলাচল করতে হয় এমন পেশা ইত্যাদি। রোগীদের ঘাড়ের আঘাতের ইতিহাস থাকে অনেক ক্ষেত্রে।
রোগের উপসর্গ
এই রোগের উপসর্গ হল ঘাড়ের ব্যাথা অনেক সময় কাঁধ থেকে উপরের পিঠে, বুকে, মাথার পিছনে বা বাহু হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ঘাড় থেকে হাতে নেমে আসা স্নায়ু বা নার্ভের উপর চাপ পড়লে পুরো হাতেই ব্যথা হতে পারে।
এই রোগের সবচেয়ে মারাত্মক দিক হল যদি স্পাইনাল কর্ডের উপর চাপ পড়ে। হাত পায়ে দুর্বলতা, হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে। পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
এই রোগের আক্রান্ত হলে ঘাড় নাড়াতে গেলে ব্যথা লাগে। ডানে বায়ে ঘাড় ঘুরাতে সমস্যা হবে। ঘাড়ে স্থবিরতা লাগে বা জ্যাম মেরে ধরে থাকে। ব্যথার সঙ্গে হাতে, বাহুতে ঝিন ঝিন, সির সির্, অবশ ভাব, সূচ ফোটানোর অনুভুতি সাথে হাত দিয়ে কাজ করতে অসুবিধা।
লক্ষনঃ
ঘাড়, পিঠের উপরের অংশ এবং বাহুতে চাপ দিলে ব্যথা অনূভুত হয়। ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত হয়।
অন্যান্য পরীক্ষাঃ- রক্তের গ্লুকোজ, প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা।
বিশেষ পরীক্ষাঃ- ঘাড়ের এম আর আই, ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি।
চিকিৎসা-
১) ওষুধ- ব্যাথার ঔষধ, মাংশপেশী শিথিল করার ঔষধ, দুশ্চিন্তা কমানোর ঔষধ।
২)ফিজিওথেরাপী- ঘাড়ের টানা বা সার্ভিক্যাল ট্রাকশান, শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি, ম্যাসাজ, ট্রান্সকিঊটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক নার্ভ স্টিমুলেশান।
এক্ষেত্রে উপদেশ-
১। শক্ত সমান বিছানায় এক বালিশে চিত হয়ে ঘুমাতে হবে।
২। ঘুমানোর সময় ঘাড়ের নিচে বালিশ দিতে হবে।
৩। দরকার হলে বালিশ নিচে টেনে নামিয়ে ঘাড়ের নিচে নেবেন বা কম উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করবেন।
৪। ঘাড় সামনে ঝুঁকিয়ে বেশিক্ষণ কাজ করা যাবেনা।
৫। কাজের জায়গায় চেয়ার টেবিল এমন ভাবে রাখবেন যাতে ঘাড় সামনে না ঝুকিয়ে কাজ করতে না হয়।
৬। ব্যথা বেশি হলে ঘাড়ে হালকা গরম সেক দিতে পারেন।
৭। এসময় ঘাড়ের ব্যয়াম বেশ আরাম দেবে।
৮। সার্ভিক্যাল কলার ব্যবহার করা হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে।
বিডি প্রতিদিন/