©Ragib Hasan
(আইনস্টাইনকে নিয়ে গল্পের শেষ নেই। তাই আমার "বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা-৩" বইতে আবারও বলেছি আইনস্টাইনের জীবনের বেশ কয়েকটা মজার কাহিনী। বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী হিসাবে খ্যাত আইনস্টাইনকেও পিএইচডি করতে গিয়ে কী সমস্যায় পড়তে হয়েছে, সেই গল্পটা বইটি থেকে তুলে ধরছি। আইনস্টাইনও আমাদের মতই মানুষ, কেবল মেধা অসামান্য এই যা।)
মহা ঝামেলায় পড়ে গেছেন আইনস্টাইন। ১৯০১ সাল। তখনো তিনি অতটা বিখ্যাত হননি, কাজ করেন সুইস প্যাটেন্ট অফিসের কেরানি হিসাবে। পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলে লোকজন ফিরেও তাকায় না। তাই ভাবলেন, এইবার একটা পিএইচডি করে ফেলা যাক।
গেলেন প্রথমে প্রফেসর ওয়েবারের কাছে। আগ্রহ ভরে শুরুতে প্রফেসর ওয়েবারের লেকচার দেখতে গেলেন। প্রচন্ড বোরিং। খোদ আইনস্টাইনও দুই সপ্তাহ যাবার পরে আর টিকতে পারলেন না। ধুর, লেকচারে না গিয়ে সোজাসুজি থিসিস টপিক নিয়ে হাজির হই, ভাবলেন আইনস্টাইন।
প্রথমে আলোর গতি নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দিলেন। ওয়েবার সাহেব নারাজ, এটা নাকি ফালতু টপিক। এর পর গেলেন বিদ্যুৎ পরিবাহিতার উপরে কাজ করার আইডিয়া নিয়ে। এবারেও নাকচ। সব শেষে তাপ পরিবাহিতার উপরে একটা সমস্যা শোনার পরে প্রফেসর ওয়েবার নিমরাজি হলেন।
খেটেখুটে আইনস্টাইন সোজাসুজি থিসিস পেপার লিখে বসলেন। আগ্রহ ভরে পান্ডুলিপি নিয়ে হলেন হাজির ডঃ ওয়েবারের অফিসে, বাড়িয়ে দিলেন সেটা প্রফেসরের দিকে, পিএইচডি ডিগ্রিটা এবার আর ঠেকায় কে!!
--- অই, এইটা কী কাগজে লিখে আনলা? বেয়াক্কেল কোথাকার!! ফালতু ময়লা কাগজে লিখসো কেনো? আজকালকার ছেলেপেলে ...ইত্যাদি ইত্যাদি ---
রাগে ফেটে পড়েছেন প্রফেসর ওয়েবার। আইনস্টাইন নাকি ভালো মানের কাগজে না লিখে সস্তা টাইপের কাগজে লিখে এনেছেন সেটা।
--- যাও পুরাটা আবার ভালো করে দামি কাগজে লিখে নিয়ে আসো। কিপ্টামি করবানা, বুঝছো আইনস্টাইন?
বিরস বদনে বেরিয়ে এলেন আইনস্টাইন। কাগজটার দিকে তাকালেন। আবার কি লিখবেন পুরাটা ভালো কাগজে?
--- দুচ্ছাই। বলে পাণ্ডুলিপিটা ডাস্টবিনে ফেলে চলে গেলেন। ওয়েবারের অধীনে আর পিএইচডি করা হবে না, বুঝে গেছেন। কিন্তু সস্তা কাগজে লেখা সেই অমূল্য পাণ্ডুলিপিটা আর গবেষণাটাও তো গেলো হারিয়ে।
মেজাজ খারাপ করে আইনস্টাইন পিএইচডির চেষ্টা বাদ দিলেন। বছর চারেক পরে ১৯০৫ সালে, সেই অসাধারণ বছরটায় যখন আইনস্টাইন তাঁর যুগান্তকারী সব আবিষ্কার করেছিলেন, তখন তাঁর মাথায় এলো আবারও পিএইচডির চেষ্টা করার। যতো আবিষ্কারই করেন না কেনো, পিএইচডি না থাকলে পাত্তা দেয় না কেউ, তখনও।
এবার তাই গেলেন জুরিখের প্রফেসর ক্লাইনারের কাছে। আন্তঃআণবিক শক্তি তত্ত্বকে বায়বীয় পদার্থের উপরে প্রয়োগ করার জন্য লিখে ফেললেন পুরো একটা থিসিস। কিন্তু বিধি বাম -- ক্লাইনার ক্ষেপে গেলেন। বললেন, তুমি কোথাকার কোন মাতব্বর? এতো নামকরা প্রফেসর বোলৎসম্যান এর থিওরিকে উড়িয়ে দিয়েছো? যাও, রিজেক্ট।
শেষ চেষ্টা হিসাবে আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে অণু পরমাণুর গঠন নিয়ে আরেকটা গবেষণার কাজ নিয়ে গেলেন ক্লাইনারের কাছে। এবারে যদি কিছু হয়। কিন্তু ক্লাইনার বাধ সাধলেন। আবারও।
--- ২৪ পৃষ্ঠা? ২৪ পৃষ্ঠা!! এইটা কী লিখলা! মাত্র ২৪ পৃষ্ঠায় থিসিস হয় নাকি!!! যাও, আরো অনেক বড় করে লিখে আনো।
বিরস বদনে আবারও বেরিয়ে এলেন আইনস্টাইন। যা হিসাব নিকাশ করেছেন, তার সাথে আসলে আর কিছু যোগ করার নাই। কী করা যায়? ভাবলেন, ক্লাইনারের মেজাজ ভালো হলে তার পরে যাওয়া যাবে আরেকবার।
কয়েকদিন পরে আবারও গেলেন। বললেন নতুন করে থিসিস লিখে এনেছেন। আসলে সত্যি কথা হলো, একটা মাত্র নতুন বাক্য যোগ করেছেন। কিন্তু এইদিন ক্লাইনারের মেজাজ বেজায় ভালো। একই থিসিস নতুন বাক্যটা যোগ করার পরে উনার মনে ধরলো। অনুমোদন দিলেন পিএইচডির।
আইনস্টাইন এবার এই থিসিসের কাজটা পাঠালেন জার্নালে। তারা রিজেক্ট করে দিলো এক্সপেরিমেন্ট নাই বলে। সেটা যোগ করার পরে ছাপালো। কিন্তু অভিযোগ আসতে শুরু করলো, সেখানে নাকি অনেক বড় ভুল আছে। এক বন্ধুকে দিয়ে যাচাই করে আইনস্টাইনের মাথায় হাত, আসলেই অংকের হিসাবে ভুল করে ফেলেছেন। তাই সংশোধনী পাঠাতে হলো। অবশেষে অনুমোদন ও স্বীকৃতি পেলো আইনস্টাইনের সেই পিএইচডি থিসিসের গবেষণা।
আপনি আমি আমরা আইনস্টাইন নই। কিন্তু খোদ আইনস্টাইনও গবেষণায় এক লাফে সফল হননি। কাজেই একবারে না পারলে কিংবা গবেষণার গ-টাও মাথায় একবারে না ঢুকলে হতাশ হবেন না। আইনস্টাইনও হননি, তাই না?
[ছবি - আইনস্টাইনের থিসিসের প্রচ্ছদ]
এটি এবং আরো অনেক এরকম গল্প সহ আমার নতুন বইটি প্রি-অর্ডার করা যাবে এখানে
https://www.rokomari.com/…/195525/bigganider-kandokarkhana-3
আর একুশে বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীর ৪২১-৪২৬ নং স্টলে পাবেন ৬ তারিখ থেকে।
#এলোচিন্তা