শিশুর ক্যান্সার – ভীতি নয়, চাই সচেতনতা

Author Topic: শিশুর ক্যান্সার – ভীতি নয়, চাই সচেতনতা  (Read 1834 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
ক্যান্সার কেন হয়, তা জানতে হলে কোষবিভাজনের গভীরে যেতে হবে। কারণ, কোষের বিভাজন ও বৃদ্ধির ফলেই তো শরীরের বৃদ্ধি ঘটে। এই প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রিত সমন্বয় থাকে সব সময়। বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন কিছু কোষের এই সমন্বয় বিঘ্নিত হয়। ওই গুচ্ছকোষ তখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এগুলোর আকারও নির্দিষ্ট থাকে না। ফলে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয়। বড়দের মতো ক্যান্সার হতে পারে শিশুদেরও।
বড়দের ক্যান্সারের কিছু নির্দিষ্ট কারণ থাকে; যেমন, ধূমপান করলে ফুসফুস ও শ্বাসনালির ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে, আবার খাদ্যাভ্যাসের কারণে অন্ত্রের ক্যান্সার হতে পারে। কিন্তু শিশুদের ক্যান্সারের এমন সুনির্দিষ্ট বাহ্যিক কারণ নেই। কিছু ক্ষেত্রে জিনগত ত্রুটি শিশুদের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
শিশুদের ক্যান্সারের মধ্যে বেশি হয় নিউ-রোব্লাস্টোমা, কিডনির নেফ্রোব্লাস্টোমা, রেটিনার রেটিনোব্লাস্টোমা ইত্যাদি। অপেক্ষাকৃত বড় শিশুদের বেশি হয় লিউকেমিয়া, যা ব্লাড ক্যান্সার নামে পরিচিত। এ ছাড়া হজকিন্স ও নন-হজকিন্স নিম্ফোমা, বোন টিউমার ইত্যাদি ক্যান্সার হতে পারে শিশুদের।
এসব ক্যান্সারের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ শিশুর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুর্বলতা, দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ায় অরুচি, মুখ-চোখ ফেকাসে হওয়া, অনেক দিন ধরে জ্বর-যা অ্যান্টিবায়োটিকেও ভালো হয় না, হাড়ে ব্যথা, ত্বকের নিচে রক্ত জমা বা কালো হয়ে যাওয়া, নাক ও দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, মলমূত্র ও বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, পেটে চাকা অনুভব করা, যকৃৎ বড় হয়ে যাওয়া, চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া, চোখে না দেখা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।
এসব লক্ষণ দেখা গেলেই যে শিশুর ক্যান্সার হবে, তা নয়। তবে এসব ক্ষেত্রে দ্রুত শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক শিশুকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন। শিশুর ক্যান্সার ধরা পড়লেও হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা উচিত।
আজকাল অনেক ক্যান্সারই সঠিক চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। স্বভাবতই বেশির ভাগ মা-বাবা নিজের সন্তানেরও যে ক্যান্সার হতে পারে, এটি চিন্তা করতেও ভয় পান। এর ফলে অনেকেই সন্তানকে এমন সময় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান, যখন হয়তো ক্যান্সার সারা শরীরে ছড়িয়ে শেষ অবস্থায় চলে গেছে।
ক্যান্সারকে ভয় না পেয়ে প্রতিরোধ বা চিকিৎসার উদ্যোগ নিতে হবে। তাই যেসব লক্ষণের কথা বলা হলো, সেগুলো ছাড়াও শিশুর মধ্যে অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
দ্রুত রোগ শনাক্তকরণই ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার একমাত্র উপায়। যত তাড়াতাড়ি রোগ ধরা পড়বে, চিকিৎসা তত সহজ হবে-সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। তাই শিশুদের ক্যান্সার নিয়ে ভীতি বা কুসংস্কার নয়, চাই সচেতনতা।

ডা· আবু সাঈদ শিমুল
চিকিৎসা কর্মকর্তা
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০০৯