ইউক্রেনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হেভিওয়েট বক্সার ভ্লাদিমির ক্লিচকো। হাতের মতো মুখও ভালোই চলে তাঁর। প্রমাণ রইল এই প্রশ্নোত্তরেই
জীবিকার জন্য আপনি অনেক দশাসই মানুষকেই ঘুষি মারেন। তাঁরাও আপনাকে আঘাত করেন। মার খেতে কি আপনার খারাপ লাগে না?
আমি মার খেতে পছন্দ করি না। আর কেইবা পছন্দ করে? খুব বেশি মার খেলে সম্ভবত এ খেলাটাই আমি খেলতাম না। ৬০টি লড়াইয়ের মধ্যে আমি তিনটিতে হেরেছি। এ কারণে আমার ভাই (আরেক হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন) ভিতালি ও আমার সমালোচনাও হয়েছে। লড়াইগুলো একপেশে হওয়ার কারণে সে সব নাকি ছিল বোরিং।
মাইক টাইসন বলেছেন, আপনাদের মধ্যে তেমন আবেগ নেই!
আমার মনে হয়, মাইক টাইসন ঠিকই বলেছেন। আমরা কার্যকর। কেননা লড়াই করার সময় আবেগ জাগুক আর কমুক; সুপ্ত থাকুক আর প্রকাশিতই হোক—তা আপনাকে সাফল্য এনে দেবে না। আমরা এভাবেই লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। নিজের সুনাম ধরে রাখার জন্য আমি এভাবেই খেলে যাব।
রিংয়ের ভ্লাদিমির ক্লিচকোর চেয়ে রিংয়ের বাইরের ভ্লাদিমির কিচকো কতটা আলাদা? বেশি আক্রমণাত্মক হওয়ার জন্য কি আপনাকে বাড়তি চেষ্টা করতে হয়?
আমি এটাকে একজন অভিনেতার সঙ্গে তুলনা করব। রিংয়ে নামার আগে ৫-৬ সপ্তাহের মতো প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কাটিয়ে আমি নিজেকে রিংয়ের ওই চরিত্রটার জন্য তৈরি করি। আমার কাছে আক্রমণাত্মক মনোভাব মানেই আবেগ। আর আবেগ থাকা মানে পরিকল্পনা থেকে ছিটকে যাওয়া। আর সেটা হলে আপনি লড়াইয়ে হারবেনই। এখানে আপনাকে নিষ্ঠুর হতে হবে। পরিকল্পনাটা ঠিকঠাকমতো কাজে লাগাতে হবে। আবেগের মতো বিষয়গুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
আপনার ভাইয়ের লড়াই দেখার অনুভূতি কেমন?
আমি এটাকে ঘৃণা করি। আমি যখন লড়াই করি, আমার ভাই কতটা উদ্বিগ্ন থাকে, এটা আমি কল্পনাও করতে পারি না। আমি রিংয়ে থাকার সময় মিনিটে আমার হূৎস্পন্দন হয় সম্ভবত ৫০-৬০ বার, কিন্তু আমার ভাই যখন রিংয়ে থাকে তখন এটি হয়ে যায় ১৫০-এর মতো।
আপনার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আপনাকে লড়াইয়ে নামাতে কী করতে হবে?
এটা করাতে পারার মতো যথেষ্ট অর্থ নেই এই পৃথিবীতে। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করব, আপনার মায়ের হূৎপিণ্ডের মূল্য কত।
বক্সিং সম্পর্কে যারা নিরুৎসাহী, তাদের কাছে খেলাটার আবেদন কীভাবে তুলে ধরতে চান?
আপনি কি বক্সিং পছন্দ করেন না? একটি ম্যাচ দেখতে আসুন। দেখবেন, শুরুতে আপনার মধ্যে কিছুটা লজ্জা কাজ করছে। কিন্তু পরক্ষণেই আপনি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াবেন এবং চিৎকার করতে থাকবেন ‘তাঁকে মার, তাঁকে মার’ বলে। আপনি কি জানেন, একজন পুরুষ কেন বক্সিং করেন? স্রেফ নারীদের মন জয় করতে পুরুষেরা বক্সিং করেন।
যেসব জায়গায় লোকজন মারামারি করতে পছন্দ করে, সেসব জায়গা কি আপনি এড়িয়ে চলেন?
আপনি এমন একটি বিষয় উত্থাপন করেছেন, যা আমার জীবনকে প্রভাবিত করছে। আমি পানশালায় যেতে পছন্দ করি না। কেননা আমি মদ্যপায়ী নই। তা ছাড়া এই জায়গাগুলোতে সব সময়ই এমন কিছু লোক থাকে যারা কিছুটা মাতাল। রিংয়ের বাইরে আমি কখনোই কারও সঙ্গে মারামারি করিনি।
কখনোই না?
আচ্ছা, ঠিক আছে। হ্যাঁ, আমি এমন একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম যার সঙ্গে কিনা আমার স্কুলবন্ধুর প্রেম ছিল। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে একবার বেধেছিল। কিন্তু এটা ঘটেছিল আমাদের সেই শৈশবে। তবে সেই লড়াইয়ে কে জিতেছিল তা আমি আপনাকে বলব না। ওই ঘটনার পর আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন, ঘুষির চেয়েও মানুষের কথা অনেক কঠিন হতে পারে।
আপনার বাবা তো সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তাই না?
তিনি চাকরি করতেন। আমার ভাইয়ের জন্ম কিরগিজস্তানে। আমার জন্ম কাজাখস্তানে। এরপর আমরা চেক প্রজাতন্ত্রে চলে যাই। ১৯৮৫ থেকে আমাদের ঠিকানা কিয়েভ। ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে চেরনোবিল দুর্ঘটনা ঘটে। উদ্ধারকাজে যে দলটিকে পাঠানো হয়েছিল তারা ছিল সেনাবাহিনীর সদস্য। বেশির ভাগ সময়ই তাঁদের অপ্রস্তুত অবস্থায় কাজ করতে হয়েছে। এ কারণে তাঁদের অনেকের প্রাণহানি ঘটেছিল। দুর্ভাগ্যবশত তাঁদের মধ্যে আমার বাবাও ছিলেন। ৬৪ বছর পর্যন্ত টিকে ছিলেন তিনি, তবে শেষের কয়েকটি বছর তাঁকে খুবই ভুগতে হয়েছে।
কিয়েভের একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনার পিএইচডি আছে। আপনার গবেষণার বিষয় সম্পর্কে কিছু বলুন...
এটা ছিল ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সী অ্যাথলেটদের একটা ব্যাপার শেখানো নিয়ে। এই বয়সে শরীরে যেহেতু পরিবর্তন আসতে থাকে, তাই এ সময়ে কতটুকু ট্রেনিং করানো উচিত, এটা বিবেচনায় নিতেই হবে। প্রথম সাফল্যের দেখা পাওয়ার আগে মানুষের জীবনে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময়।
আপনার বক্সিং-পরবর্তী ক্যারিয়ার নিয়ে আমি কি কোনো পরামর্শ দিতে পারি? যেমন ধরুন—সিনেমার খলনায়ক। বলুন তো ‘গুডবাই, মিস্টার বন্ড’।
আমি বরং বলতে পছন্দ করব, ‘আমি ফিরে আসব’।