নমনীয়, কাগজের মতো পাতলা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যে ট্যাবলেট কম্পিউটারের অস্তিত্ব কেবল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতেই সীমাবদ্ধ ছিল; প্রযুক্তি-বিশ্বে ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকর্তাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতার কল্যাণে হয়তো শিগগিরই বাস্তবের দুনিয়ায় তার দেখা মিলতে পারে।
এমন ট্যাবলেট তৈরির পেছনে স্যামসাং, আমাজন, সনি, গুগলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই ছুটছে। এই ট্যাবলেট নাকি প্যান্টের পেছনে ভাঁজ করেও রাখা যাবে। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অ্যাপলের আইপ্যাড ট্যাবলেট বাজারে আসার পর থেকেই ট্যাবলেট কম্পিউটার তৈরিতে নাম লিখিয়েছে স্যামসাং থেকে শুরু করে গুগলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে মাইক্রোসফট। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটারকে হালকা-পাতলা, দ্রুতগতির ও শক্তিশালী প্রসেসরযুক্ত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে অলিখিত প্রতিযোগিতা। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা এই প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে যাওয়ারই আভাস দিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশেরই ধারণা, হার্ডওয়্যারনির্মাতা ও সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা মিলে নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নতুন স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট বাজারে আনতে যাচ্ছেন।
ট্যাবলেট কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের মধ্যে সমন্বয়, অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড (ওএলইডি) প্রযুক্তির ডিসপ্লে তৈরিতে কাজ করছে মাইক্রোসফট, স্যামসাংয়ের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন, ওএলইডি ডিসপ্লে হালকা-পাতলা হলেও টেকসই হবে। এ ডিসপ্লেযুক্ত ট্যাবলেট কাগজের মতো ভাঁজ করে রাখা সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল পদ্ধতি-বিষয়ক গবেষক লিন জং জানিয়েছেন, ‘টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির বাইরে এখন ভিন্ন কিছু ভাবার সময় এসেছে আমাদের। ট্যাবলেট কেন শুধু হাতেই ধরে রাখতে হবে, আর কেনই বা তা বয়ে বেড়াতে হবে আমাদের? আমরা পরিধেয় কম্পিউটার প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে পারি।’
ইতিমধ্যে গবেষকেরা পরিধেয় প্রযুক্তির গবেষণায়ও এগিয়ে গেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গুগলের পরিধেয় প্রযুক্তি চশমা। অ্যাপল ও মাইক্রোসফটও এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া রয়েছে মাইক্রোসফটের থ্রিডি ক্যামেরা প্রযুক্তি ও স্যামসাংয়ের স্বচ্ছ থ্রিডি স্মার্টফোন-হাইব্রিড ট্যাবলেট। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গবেষকেরা স্বচ্ছ টাচস্ক্রিন তৈরিতে কাজ করছেন।
আইএইচএস আইসাপ্লাইয়ের ট্যাবলেট বিশ্লেষক রোডা আলেকজান্ডার জানিয়েছেন, ‘নমনীয় ও সহজে ভাঁজ করা সম্ভব এমন ডিসপ্লে প্রথমত স্মার্টফোনের ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহূত হবে। এরপর তা চলে আসবে ট্যাবলেটে। প্রতিষ্ঠানগুলো ট্যাবলেটে এ ধরনের ডিসপ্লের নির্মাণের খরচ হিসাব করে পরীক্ষামূলকভাবে বাজারে ছাড়বে।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ও নমনীয় ডিসপ্লে-বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সঙ্গে স্যামসাং এবং রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছে মাইক্রোসফট। প্রতিকূল পরিবেশ-সহনীয়, সহজে সাড়া দিতে পারে ও সৌরশক্তি ব্যবহারে সক্ষম ‘ইলেকট্রনিক স্কিন’ নামে এক ধরনের সেন্সর তৈরি করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেনান বাও। এ সেন্সরটি আলোর স্পর্শ শনাক্ত করতে পারে, যা টাচস্ক্রিনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
গবেষক বাও জানিয়েছেন, বর্তমানে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তিতে ব্যবহূত সিলিকন উপাদানের পরিবর্তে প্লাস্টিক ব্যবহারের পক্ষপাতী প্রতিষ্ঠানগুলো।
Source: Prothom- Alo !