গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়ে দোয়েল ল্যাপটপ বাজারজাতকরণ শুরু হলেও পরে ছয় মাসেও ১০ হাজার টাকার ল্যাপটপ উৎপাদন করতেই পারেনি টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস)।
অথচ টেশিসের প্রচার হয়েছে ১০ হাজার টাকাতেই ল্যাপটপ। সম্প্রতি সাড়ে ১০ হাজার টাকা মূল্যের দুই হাজার ল্যাপটপ সংযোজন করা হলেও তার ৫০টিও বিক্রি হয়নি। গত বুধবার টেশিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সায়ীদ খান বলেন, প্রাইমারি মডেলের ল্যাপটপ উৎপাদনে যেতে তাদের কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ক্রেতাদের আগ্রহও অনেক কম বলে জানান তিনি।
প্রথম দফায় সাড়ে ১৩ হাজার টাকার বেসিক মডেল এবং সাড়ে ২৬ হাজার টাকার অ্যাডভান্স মডেলের ল্যাপটপ সংযোজন করে টেশিস। প্রতিটি গ্রুপে পাঁচ হাজার করে ল্যাপটপ সংযোজন করা হয়। এর মধ্যে এক বছরে ১৫ হাজার ল্যাপটপ বিক্রি হয়েছে বলে জানান আবু সায়ীদ খান। সূত্র জানিয়েছে, এই ১৫ হাজারের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীই নিয়েছে ৭ হাজার ল্যাপটপ। ফলে বাইরের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি এক বছরে মাত্র ৮ হাজার।
অথচ প্রথম থেকেই ১০ হাজার টাকা মূল্যের প্রাইমারি মডেলের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়। টেশিসকে সহায়তা দেওয়া সফটওয়্যার কোম্পানি গণনা চেয়েছিল অ্যানড্রয়েড সফটওয়্যার দিয়ে প্রাইমারি মডেলের ল্যাপটপ বাজারে দিতে। পরে তাদের চাওয়া অনুসারে মূলত মোবাইল ফোনের ব্যবহার উপযোগী অ্যানড্রয়েড সফটওয়্যার দিয়েই বাজারে ছাড়া হয়েছে এ ল্যাপটপ। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, অ্যানড্রয়েড সফটওয়্যারের কারণেই চলছে না প্রাইমারি মডেলের ল্যাপটপ। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেন, অ্যানড্রয়েড সফটওয়্যার ল্যাপটপে দেওয়ায় গেমস খেলা ছাড়া আর কোনো কাজই এতে হয় না। প্রথম থেকেই এ খবরটি চেপে রাখে টেশিস কর্তৃপক্ষ।
স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সাড়ে চার হাজার ল্যাপটপের কেসিং দুই মাস পড়ে থাকার পর গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড়িয়ে আনে টেশিস কর্তৃপক্ষ। হার্ডডিক্স ছাড়াই চীন থেকে আমদানি করা হয় ওই চার হাজার ল্যাপটপের যন্ত্রাংশ। একেকটি হার্ডডিক্সের মূল্য ধরা হয়েছিল সাড়ে ৭৮ ডলার। চট্টগ্রামের এমপি শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল কারিম শারুন চীন থেকে এ যন্ত্রাংশ আমদানি করেন। পরে তার প্রচেষ্টায় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সেগুলো নয় কোটি টাকা খরচ করে ছাড়িয়ে আনে টেশিস কর্তৃপক্ষ। এ কারণেই ল্যাপটপের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
জানা গেছে, ১০ হাজার টাকার প্রাইমারি মডেলের ল্যাপটপ সাড়ে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া অ্যাডভান্স মডেলের মূল্য আগে ২৬ হাজার রাখা হলেও এখন তা সাড়ে ২৮ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। তবে টাকা না থাকায় এখন উৎপাদন করতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন টেশিসের একাধিক কর্মকর্তা।
সূত্র: সমকাল