নয় বছর আগের ঘটনা। লালবাগ এলাকা মাদকের ছোবলে নীল। তরুণ-তরুণীরা বিপথে যাচ্ছেন। এসব দেখে হতাশ টেবিল টেনিস খেলোয়াড় রিপন খান নিজ উদ্যোগে খুললেন টিটি একাডেমি। শুরুটা করেছিলেন ৪০ জন তরুণ ও ১২ জন তরুণীকে নিয়ে। এই কয় বছরে মহিলা খেলোয়াড় আরও বেড়ে যাওয়ার কথা, সেখানে তাঁর একাডেমিতে এখন মাত্র ছয়জন নারী।
শুধু লালবাগ টিটি একাডেমি নয়, দেশের টেবিল টেনিস অঙ্গনের প্রতীকী চিত্রই যেন এটি। মেয়েরা টেবিল টেনিসে আসছে না। খেলোয়াড়দের কথা, খেলার পরিবেশ নেই, নেই চাকরির নিশ্চয়তা। তারপর আছে নিরাপত্তার অভাব, পরিবারের সমর্থন না-থাকা। সব মিলিয়েই খেলাটির ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে মেয়েরা। আর তাই গত কয়েক মৌসুমে টিটি লিগে মহিলা দল গড়তে হিমশিম খাচ্ছেন ক্লাব কর্মকর্তারা। তাঁদের আক্ষেপ, ‘ভালো খেলোয়াড় নেই।’ আবাহনী ছাড়া অন্য ক্লাবগুলো দল গড়েছে মোটামুটি মানের। একসময়ের ঐতিহ্যবাহী বিমান এ মৌসুমে দলই গড়েনি। জাতীয় দলের পরিচিত মুখ মৌমিতা আলম (রুমি), সোনম সুলতানা (সোমা) ছাড়া প্রথম সারির কেউই বর্তমানে খেলায় নেই। ঘরকন্নায় ব্যস্ত জাতীয় দলের সালেহা পারভীন, জয়তী দত্ত। বয়স কমিয়ে খেলার দায়ে রহিমা আক্তারকে নিষিদ্ধ করেছে ফেডারেশন। তিন বছর পর খেলায় ফিরেছেন নুসরাত সুলতানা (লোপা)।
তিন মৌসুম ধরে মহিলা লিগে অংশ নিচ্ছে ছয়টি করে দল। এবার বেড়েছে একটি। তবে এর পেছনে অন্য একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। নির্বাচনে কাউন্সিলরশিপ পেতেই এভাবে দল গড়া! মহিলা লিগে অংশ নেওয়া সেরা পাঁচ ক্লাব একজন করে কাউন্সিলর পাবে। পাললিক গ্রুপের ম্যানেজার তাজউদ্দিন বললেন, ‘কাউন্সিলরশিপ পেতে কোনো ক্লাব একাধিক দলও গড়েছে।’
একাধিক দল গড়লেও ভালো মানের খেলোয়াড়ের অভাবটাই বেশি দেখেন ঢাকা উইমেন্স ক্লাবের নুসরাত, ‘ভালো খেলোয়াড় কোথায়? নতুন কেউ আসতে চায় না।’ টেবিল টেনিসের সাবেক তারকা ও বর্তমান অস্থায়ী কমিটির সহসভাপতি জোবেরা রহমানও (লিনু) আক্ষেপ করেন, ‘আমাদের সময় ছিল মেয়েদের টিটির স্বর্ণযুগ। আমাদের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা এখন বেশি পাচ্ছে মেয়েরা। সেই তুলনায় অনেক ভালো হওয়ার কথা ছিল অবস্থা। কিন্তু হয়নি।’