উচ্চ রক্তচাপ ও মানবজীবন07 Apr, 2013
প্রতি বছরের মতো এবারও 'বিশ ্বস্বাস্থ্য সংস্থা' ৭ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করবে। এ বছরের প্রতিপাদ্য 'উচ্চ রক্তচাপ'। ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মপ্রকাশের পর প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য অ্যাসেম্বলির আয়োজন করে। সে সভায়ই ঠিক করা হয় প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে এ দিবস পালন করা হবে। ১৯৫০ সালে সর্বপ্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের প্রচার কাজ গণমাধ্যমের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুস্থভাবে জীবনযাপন করার ক্ষেত্রে অনেক বড় বাধা হয়ে আবির্ভূত হয় আর যার করুণ কশাঘাতে অনেক সুন্দর জীবন নিঃশেষ হয়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় 'হাইপারটেনশন' বলে অভিহিত করা হয়। আর উচ্চ রক্তচাপের জন্য মানবদেহে নানা জতিলতা সৃষ্টি হতে পারে, ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর, মস্তিষ্কের নানা ক্ষতি হতে পারে। যদি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন অন্ধত্ব, অনিয়ন্ত্রিত হার্টবিট ও হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। আর এ কারণে আমাদের সুস্থতার জন্য সবাইকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা ওপরে উলি্লখিত উপসর্গগুলোতে ভুগে থাকেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন রিসার্চের গবেষণায় বর্তমানে জানা যায় পৃথিবীতে প্রতি তিনজনের একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। গবেষণায় আরও জানা যায়, ২০ বছর বয়সের মধ্যে প্রতি ১০ জনে একজন এবং ৫০ বছর বয়সের মধ্যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৫ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়। সমসাময়িক সময়ের গবেষণা ফলাফলে জানা যায়, আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দরিদ্রপীড়িত দেশে রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, যার ফলে দেখা যায় আফ্রিকা মহাদেশের অধিকাংশ দেশে প্রায় ৪০ ভাগের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। দৈনন্দিন জীবনে উচ্চ রক্তচাপ সংশ্লিষ্ট নানা জটিলতা এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের কিছু দিকনির্দেশনা মেনে চলা উচিত।
নির্দেশনাগুলো হলো
* অপ্রয়োজনে লবণ না খাওয়া।
* সুষম খাদ্য গ্রহণ।
* অ্যালকোহল পানে বিরত থাকা।
* নিয়মিত ব্যায়াম করা।
* স্বাস্থ্যকর শারীরিক ওজনের মধ্যে থাকা।
* ধূমপান না করা।
এ বছর বিশ্বস্বাস্থ্য দিবসের মূল অবজেক্টিভ হচ্ছে সাধারণ জনগণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও এর বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং জনসাধারণের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মাত্রা কম রাখা। আর এ উদ্দেশ্য সামনে রেখেই 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা' নিম্নবর্ণিত করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে_
* জনগণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের কারণ এবং
এ-সংক্রান্ত নানা জটিলতা সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।
* উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া।
* প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নাগরিকের বল্গাড প্রেসার মাপা এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দেশনা মানা।
* উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করার জন্য নিজেদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
* আপামর জনসাধারণের রক্তচাপ মাপার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও স্থানের ব্যবস্থা করা এবং এর পরবর্তী উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
* দেশব্যাপী জনগণকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
আমরা জানি, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আমরা এও জানি, একজন মানুষকে তার জীবনের সফলতার জন্য সুস্বাস্থ্যের বিশেষ প্রয়োজন হয়। আর এ কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আজ ২০১৩ সালে 'উচ্চ রক্তচাপ' অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন করেছে।
ডা. কাজী নওশাদ হোসেন : বিভাগীয় প্রধান, বল্গাড ব্যাংক ও ট্রান্সফিউশন সার্ভিসেস, আইসিডিডিআরবি