‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লেখেন ও তার একটি পাপ দূর করে দেন এবং তার মর্যাদার স্তর একটি বৃদ্ধি করে দেন। অতএব তোমরা বেশী বেশী সিজদা কর’ (ইবনু মাজাহ হা/১৪২৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-২০১।)
বেশি বেশি সিজদাহ কর মানে বেশি বেশি সালাত পড়| প্রতি সালাতে প্রতি রাকাতে ২ টি করে মোট চারটি সিজদাহ!
মাটিতে হাত, হাটু, পায়ের আঙ্গুল, কপাল ও নাক ঠেকিয়ে সিজদাহ করতে হয়| রাসুল (সাঃ) সাত অঙ্গের দ্বরা সিজদাহ করতেন| দুই হাতের তালু, দুই হাটু, দুই পায়ের পাতা (আঙ্গুল), কপাল ও নাক | সিজদাহ দুটি করতে হয় |
সিজদায় অবশ্যই কপাল ও নাক দুটোই মাটিতে স্পর্শ করতেই হবে| সেই ব্যক্তির সালাত হয় না যার নাক ও কপাল মাটি স্পর্শ করে না| (দারু কুতনি, তাবরানী)
সিজদায় পায়ের গোড়ালি উর্ধ্বমুখী থাকবে, পায়ের আঙ্গুল মাটিতে লাগানো থাকবে, উরু থেকে পেট আলাদা থাকবে | (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাই)
রাসুল (সাঃ) সিজদার সময় দুই হাতের তালু কখনো কাধ বরাবর রাখতেন আবার কখনো কান বরাবর রাখতেন| (আবু দাউদ, তিরমিজি)
আমাদের সমাজে প্রচলিত পদ্ধতিতে মহিলারা শরীর লেপ্টিয়ে বিছিয়ে দেন জমিনে, দুই হাত মিলিয়ে দেন জমিনে যা স্পষ্ট হাদিস বিরোধী এবং তা পরিতাজ্য|
রাসুল (সাঃ) দুই হাত মাটিতে বিছিয়ে দিতেন না| বরং তা জমিন থেকে উপরে (বুখারী, আবু দাউদ) এবং পেটের দুই পাশ থেকে দুরে রাখতেন| (বুখারী, মুসলিম)
হাটু, পেট, হাত, মাথা এই অঙ্গগুলোর মাঝখানে এমন ফাকা থাকতে হয় যেন এই ফাকা দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা চলে যেতে পারে| (সহিহ মুসলিম)
লক্ষ্য করুন, 'তোমরা সিজদায় সোজা থাকো, তোমরা কুকুরের মত দুই হাত বিছিয়ে দিও না' (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমদ)
'তোমরা হিংস্র প্রাণীর মত হাত বিছিয়ে দিও না, দুই হাতের তালুর উপর ভর রাখো এবং দুই বাহুকে আলাদা রাখো| এভাবে করলে তোমার সকল অঙ্গ সিজদাহ করবে''| (ইবনে খুযায়মা)
অতএব, আমাদের সমাজে মহিলারা যে পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন সিজদায় তা স্পষ্ট হাদিস বিরোধী|
সিজদার জিকির বা দুআ:
১ম দুআ : তিনবার سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى 'সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা'; অর্থ: আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি| (নাসাই, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, দারু কুতনি)
২য় দুআ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম মাগফিরলি| অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র তোমার প্রশংসায় আমি রত, আমায় ক্ষমা কর| রাসুল (সাঃ) এই দুআ রুকু সিজদায় বার বার বেশি বেশি করে পাঠ করতেন (বুখারী, মুসলিম, নাসাই, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
৩য় দুআ: سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلاَئِكَةِ وَالرُّوْحِ 'সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালাইকাতিহ ওয়ার- রূহ' অর্থ আল্লাহ সত্তায় পবিত্র ও গুনাবলীতেও পবিত্র, যিনি ফেরেস্তাকুল ও জিব্রাইলের প্রতিপালক| ( মুসলিম, মিশকাত হাদিস ৮৭২ পৃঃ ৮২)
সে ব্যক্তির সালাত হয় না রুকু ও সিজদায় যার পিঠ সোজা করে না| (ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ)
সিজদায় কুরআন পড়া নিষেধ | (মুসলিম)
সিজদায় বেশি বেশি দুআ করা | 'বান্দা সিজদাহ অবস্থায় আল্লাহর বেশি নিকটবর্তী হয়; তোমরা সিজদায় বেশি বেশি করে দুআ কর' (মুসলিম)
এখানে একটু লক্ষনীয় যে সিজদায় নিজের ভাষায় বেশি বেশি দুআ করা যাবে কিনা? এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে| কেউ বলছেন যেকোনো ভাষায় দুআ করা যাবে আবার কেউ বলছেন করা যাবে না, এমন কি আরবিতেও নিজের ভাষায় দুআ করা যাবে না| কারণ সালাতে নিজের ভাষা/ কথা চলেনা | তবে আরবি না জানলে শর্ত স্বাপেক্ষে কেউ কেউ নিজেদের ভাষায় দুআ করার অনুমতি দিয়েছেন।
আমরা মনে করি, সালাতে রাসুল (সাঃ) যে দুআগুলো শিখিয়েছেন সে গুলি বেশি বেশি পড়া ভালো! হাদিসে বহু দুআ বর্ণিত হয়েছে সে সকল দুআ সিজদায় পড়া যায়। অথবা শুধু সিজদার জন্য যে দুআ আছে সেগুলোই বেশি বেশি পড়া।
দুই সিজদার মাঝখানের দুয়া,
আমাদের দেশের মানুষ নামায পড়ে “হুজুর” যেইভাবে নামায শেখায় সেইভাবে অথবা “নূরানী নামায শিক্ষা” বইয়ে যতটুকু দেওয়া আছে ঠিক ততটুকু। সহীহ হাদীস গ্রন্থগুলো বা কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক লিখিত বই-পুস্তক না পড়ার কারণে ইবাদতের ছোট-বড় অনেক জিনিসের উপর আমল করাতো দূরের কথা, এগুলোর অস্তিত্বের কথাই অনেকেই জানেনা। এমনি একটা বিষয় হলো, দুই সিজদার মাঝখানে দুয়া। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দুয়া পড়তেনঃ
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ.
উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলী রাব্বিগ ফিরলী।
অর্থঃ হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে ক্ষমা করো, হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে ক্ষমা করো।
আবু দাউদ-১/২৩১, ইবনে মাজাহ-১/১৪৮।
উপকারীতাঃ
১। আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটা আমল হলো তওবা করা বা ক্ষমা চাওয়া। বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দিনে ৭০ বা ১০০ বারের বেশি তওবা করতেন। নামাযের মধ্যে এই দুয়াটা অন্তর্ভুক্ত করে নিলে আমাদেরও তওবার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্যের আশা করা যায়।
২। অনেকে আছে, এতো দ্রুত রুকু-সিজদা করে যে দুই সিজদার মাঝখানে পিঠ ঠিকমতো সোজা করেনা। এরকম করলে নামায বাতিল হয়ে যাবে যা আল্লাহ কবুল করবেন না। দুই সিজদার মাঝখানে অর্থের দিকে লক্ষ্য করে আন্তরিকভাবে এইদুয়া পড়লে এইধরণের কোনোকিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা।
দুই সিজদার মাঝখানে অন্য আরেকটা দুয়াঃ
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ وَارْفَعْنِي.
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগ ফিরলী, ওয়ার হা’মনি, ওয়াহ দ্বীনি, ওয়ায বুরনী, ওয়া আ’ফিনী, ওয়ার যুকনী, ওয়ার ফা’নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি রহম করো, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করো, তুমি আমার জীবনের সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দাও, তুমি আমাকে নিরাপত্তা দান করো এবং তুমি আমাকে রিযিক দান করো ও আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দাও।
আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ।
দুয়াটির গুরুত্বঃ সংক্ষিপ্ত কিন্তু অর্থের দিক থেকে ব্যাপক এই দুয়ার ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনার জন্য এই একটা মাত্র দুয়াই যথেষ্ঠ!
দুইটি দুয়ার যে কোনো একটা বা দুইটা একসাথে পড়া যাবে।
রাসুল (সাঃ) বলেন, “তোমরা সেভাবে সালাত আদায় কর, যে ভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখ”। (বুখারী ১/৮৮,মিশকাত হা/৬৩১,৬৬ পৃঃ)|