নবজাতকের জ্বর

Author Topic: নবজাতকের জ্বর  (Read 1447 times)

Offline tasnuva

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 344
    • View Profile
নবজাতকের জ্বর
« on: November 16, 2013, 02:09:26 PM »
জ্বর একটা উপসর্গ, এটা নিজে কোনও রোগ নয়৷ উল্লে­খ্য যে, ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে ঘন ঘন জ্বর হয়৷ জ্বর হলো একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা শিশুকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে৷ তবে জ্বর যে কারণেই হোক জ্বরের চিকিৎসা করা প্রয়োজন৷ পাশাপাশি প্রয়োজন শিশুর সঠিক যত্ন৷

তাপমাত্রা পরিমাপ: সঠিক সময়ে তাপমাত্রা মাপুন শরীরের তাপমাত্রা সারাদিন ওঠা-নামা করে৷ তাপমাত্রা সাধারণভাবে শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার শুরুতে সবচেয়ে বেশি থাকে, আর সবচেয়ে কম থাকে সকাল বেলা৷ কিন্তু বিভিন্ন অসুখে জ্বরের ওঠা-নামা বিভিন্ন রকম৷ তাই জ্বরের এই ওঠা-নামা লক্ষ্য করে সঠিক সময়ে তাপমাত্রা মাপা খুবই জরুরি৷ ব্যায়াম করলে এবং গরম খাবার খেলে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটতে পারে৷ তাই বাচ্চা গরম দুধ বা পানীয় পান করে থাকলে তার ৩০ মিনিট পর তাপমাত্রা পরিমাপ করবেন৷ |

ঠিক পদ্ধতিতে তাপমাত্রা মাপুন -  শিশুর তাপমাত্রা সবচেয়ে ঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় পায়ুপথের থার্মোমিটারের (রেক্টাল থার্মোমিটার) সাহায্যে৷ এটা মুখের থার্মোমিটারের (ওরাল থার্মোমিটার) চেয়ে ছোট এবং এর বাল্ক বেশি পুরু৷ প্রথমে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে এটাকে পিচ্ছিল করে নেবেন, তারপর থার্মোমিটারটা ধীরে ধীরে পায়ুপথে ঢোকাবেন, লক্ষ রাখবেন দেড় ইঞ্চির বেশি যেন না ঢোকে৷ আর এটা আস্তে করে কমপক্ষে তিন মিনিট ধরে রাখবেন৷ এটা করার সময় শিশুকে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে অথবা আপনার কোলের মধ্যে নিয়ে ডায়াপার পাল্টানোর পজিশনে এটা করতে পারেন৷ সহজে যাতে ঢোকে সেজন্য শিশুর পা দুটো উঁচু করে ধরতে পারেন৷ অথবা, আপনি শিশুকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে তারপর থার্মোমিটার ঢোকাতে পারেন৷

বড় বাচ্চাদের মুখে অথবা বগলে মাপুন - যদি শিশুর বয়স চার বা পাঁচ বছর হয়, তা হলে মুখের থার্মোমিটারের (ওরাল থার্মোমিটার) সাহায্যে তার মুখে তাপমাত্রা মাপতে পারেন৷ এক্ষেত্রে বাচ্চার জিভের নিচে ওরাল থার্মোমিটারটি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে রাখতে হবে৷ ডিজিটাল থার্মোমিটারগুলোতে দ্রুত ও ঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপা যায় এবং এগুলো কাচপারদ থার্মোমিটারের চেয়ে কিছুটা নিরাপদও৷ কিন্তু এগুলো খুব দামি৷ এছাড়া শিশুর তাপমাত্রা বগলের নিচেও মাপা যায়৷ এক্ষেত্রে বাচ্চার বগলের নিচে থার্মোমিটারটি কমপক্ষে দুই মিনিট ধরে রাখতে হবে৷
পরিমাপ যাচাই করুন- ঌ৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রাকে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা হয়৷ যদি আপনার শিশুর তাপমাত্রা পায়ুপথে ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, বগলে ঌঌ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়, অথবা মুখে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয় তা হলে বুঝবেন আপনার শিশুর জ্বর হয়েছে৷
 

জ্বর কমানো
শিশুর যে কোন অসুখে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন৷ শিশুর জ্বর কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ান৷

স্পঞ্জ বাথ করান
শিশুকে স্বাভাবিক পানি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্পঞ্জ বাথ করাবেন৷ পানি শরীর থেকে বাষ্পীভূত হয়ে যাবার সময় শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে যার ফলে জ্বর কমে যায়৷কখনও বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করবেন না কারণ এতে শিশুর কাঁপুনি ওঠে কাঁপুনি প্রকৃতপক্ষে শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে যার ফলে স্পঞ্জ বাথের পুরো উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হয়ে যাবে৷

শিশুকে প্রচুর পরিমাণ তরল খাওয়ান
জ্বর হলে শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, ফলে তার শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল ক্ষয় হয়৷ যদি তার ডায়রিয়া থাকে তা হলে আরও বেশি তরল ক্ষয় হয়৷ সুতরাং নিশ্চিত করবেন আপনার শিশু যেন এসময়ে তরল পান করে৷ শিশুকে ঠাণ্ডা তরল পান করাবেন, গরম নয়, আর তাকে একবারে অনেক পান না করিয়ে, অল্প করে ঘন ঘন দেবেন৷

এ সময়ে শিশুর খাবারে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে পারেন, শিশুকে সুপ, জাউ ও হালুয়া খাওয়াবেন৷ যে সব শিশু বুকের দুধ খায়, তাদের নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়াবেন, এতে শরীরে তরলের অভাব পূরণ হবে৷ যদি শিশুর জ্বরের সাথে ২৪ ঘণ্টার বেশি ডায়রিয়া থাকে তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং খাবার স্যালাইন খাওয়াবেন৷

শিশুকে হালকা পোশাক পরান
শিশুকে লেপ, কাঁথা, তোষক ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাবে, এর ফলে জ্বরের অবনতি ঘটবে৷ তাই আপনার শিশুকে হালকা পোশাক পরাবেন, এবং ঘুমানোর সময় একটা পাতলা কম্বল বা চাদর দিয়ে শরীর ঢেকে দেবেন৷শিশুকে পছন্দমত খেতে দিন
জ্বর হলে শিশুরা খেতে চায় না৷ যদি শিশু জ্বরের সময় খেতে না চায়, তাকে খাবার জন্য বেশি জোরাজুরি করবেন না৷ যদি আপনার শিশু নির্দিষ্ট কোন খাবার খেতে চায়, তাকে সেই খাবার খেতে দেবেন৷

শিশুকে ঘরে রাখুন
শিশুর যতদিন জ্বর থাকে, তখন তাকে বাইরে বেড়াতে না দিয়ে ঘরে রাখা সবচেয়ে ভাল৷ শিশুর তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবার ২৪ ঘণ্টা পর তাকে স্কুলে যেতে দিতে পারেন৷ তবে অনেক ক্ষেত্রে জ্বর চলে যাবার পরও সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়৷
 

জ্বর থেকে শিশুর বিভিন্ন জটিলতা

জ্বর থেকে শিশুর খিঁচুনি
খিঁচুনি রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে৷ তবে শিশুর সাধারণত যে কারণে খিঁচুনি হয়ে থাকে তা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা  বৃদ্ধি পাওয়া৷ আর জ্বরের কারণে যে খিঁচুনি হয় সেটাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ফেব্রাইল কনভালশন (Febrileconvulsion)জ্বরের কারণে খিঁচুনি সাধারণত ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের হয়ে থাকে৷ সাধারণত জ্বর হয়ে খিঁচুনি শিশুর দু বছর বয়সের মধ্যেই বেশি দেখা যায়৷ এ ক্ষেত্রে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের ওপরে থাকবে৷ খিঁচুনির সময়কাল কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত হতে পারে৷ অনেকের ১০ মিনিট পর্যন্তু থাকতে পারে, যদি দ্রুত চিকিৎসা করা না হয়৷
জ্বর থেকে শিশুর খিঁচুনির লক্ষণ-

১. শিশুর হাত-পা ও ঘাড় শক্ত হবে৷
২. শরীরে ঝাঁকুনি দেবে
৩. চোখ ওপরে নেবে বা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে৷
৪. শরীর বেঁকে যাবে৷
৫. শ্বাস কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হতে পারে৷ 
৬. মুখ দিয়ে ফেনা বা লালা পড়বে৷
৭.  শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে৷ ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট অথবা বেশিও হতে পারে৷


জ্বর থেকে শিশুর খিঁচুনি হলে কি করবেন

 

দেরি না করে শিশুকে হাসপাতাল বা নিকটবর্তী© শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন৷ বাসায় রেখে অযথা সময় নষ্ট করলে শিশুর সমূহ ক্ষতি হতে পারে এমনকি শিশুর মৃত্যুও হতে পারে৷   শিশুর মাথা একদিকে কাত করে রাখবেন৷
    *  শিশুর মুখের লালা মুছে দেবেন৷
    *  শিশুর জিভে যেন কামড় না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখবেন৷
    *  জ্বরের কোনও ডুস বা সাপোজিটরি থাকলে তা দেবেন৷
    *  জ্বর বেশি হলে পানি দিয়ে স্পঞ্জিং করবেন৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিতে হবে খিঁচুনি কমানোর ওষুধ দেওয়ার জন্য৷এ ধরনের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হয়৷ কেননা বাসায় যত্নের অভাবে বা অসতর্কতার কারণে আবার খিঁচুনি হতে পারে৷ আর বারবার খিঁচুনি হলে শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়৷ কাজেই প্রথম ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত।

 

পরীক্ষা
শিশুর জ্বরের কারণ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে৷ প্রথম অবস্থায় রক্তের এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করা৷ বারবার খিঁচুনি হলে পিঠের মেরুদণ্ড অংশের পানি নিয়ে পরীক্ষা (এলপি করে সিএসএফ অ্যানালাইসিস করা, মেনিনজাইটিস হয়েছে কি না জানার জন্য) করতে হবে৷ এ ছাড়া এপিলেপসি বা মৃগীরোগ কি না তা জানার জন্য ইইজি করা৷

 

পরামর্শ
জ্বর থেকে শিশুর একবার খিঁচুনি হলে, এ ধরনের শিশুর পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত খিঁচুনি হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ তাই শিশুকে নিয়ে যেখানেই যাবেন সঙ্গে প্যারাসিটামল ও ডায়াজেপাম সিরাপ বা বড়ি সঙ্গে রাখবেন৷
মনে রাখবেন, আপনার অবহেলার কারণে আপনার সন্তানের মস্তিষ্কে গুরুতর ক্ষতি হতে পারে৷ ঘন ঘন খিঁচুনি  হলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধীও হতে পারে৷

তথ্যসূত্র:

দেহের যত অসুখ বিসুখ- ডা. বরেন চক্রবতী©
Tasnuva Ali
Senior Lecturer
Department of ETE
Daffodil International university