নিষ্ঠা,একাগ্রতা ও কঠিন পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি। দারিদ্র মানুষকে কখনো কোন কাজ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনা। কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতার কথা মনে পড়ছে।
হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান,
তুমি মোরে দানীয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান।
জীবনে কষ্ট না থাকলে বড় হওয়া যায়না। দারিদ্রের কশাঘাতে যিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিলেন, তিনি হলেন ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের উজ্জ্বলতম এক ব্যক্তিত্ব অচ্যুত সামন্ত। মানুষের মহান কর্ম কখনো জাতি ধর্ম মানেনা। সেবাই ধর্ম। অচ্যুত সামন্ত মানবতার জয়গান গেয়েছেন। তিনি কখনো নিজের কথা ভাবেননি। একক চেষ্টায় তিনি গড়েছেন বিশ্বমানের কলিঙ্গ ইন্ষ্টিটিউট অব ইন্ডাষ্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কে, আই, আইটি) এবং কলিঙ্গ ইন্ষ্টিটিউট অব সোশাল সায়েন্স (কে, আই, এস, এস)। দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিনামুল্যে শিক্ষার আলো বিতরন করে চলেছে রাজ্যের হাজার দরিদ্র আদিবাসী শিশুর মধ্যে। উড়িষ্যার মত রাজ্যে যে অসাধারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় তিনি তৈরি করেছেন সেটি না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
অচ্যুত সামন্তের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ এ জানুয়ারি উড়িষ্যায়। ট্রেন দুর্ঘটনায় বাবার অকাল মৃত্যুর পর চরম অর্থকষ্টে পড়ে তাদের পরিবার। তিনি টিউশানি করে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে উড়িষ্যার উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস. সি ডিগ্রী নেন রসায়নে। পরে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী সম্পন্ন করেন সমাজ বিজ্ঞানে।
১৯৯২ সালে মাত্র ১২ জন ছাত্র নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন কলিঙ্গ ইন্ষ্টিটিউট অব ইন্ডাষ্ট্রিয়াল টেকনোলজি। পুঁজি ছিল মাত্র পাঁচ হাজার রুপি। সেটি এখন বিশ্বমানের পূ্র্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। সব চেয়ে কম সময়ে পূ্র্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পাওয়ার সুবাদে লিমকা বুক অফ রেকর্ডস্ এ নাম উঠেছে। ১৫ বর্গ-কিলোমিটার জুড়ে স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয়। কলিঙ্গ ইন্ষ্টিটিউট অব ইন্ডাষ্ট্রিয়াল টেকনোলজির আছে নিজস্ব হাসপাতাল, পূ্র্ণাঙ্গ ষ্টেডিয়াম ও ট্রেনের নিজস্ব অগ্রিম টিকিটের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজারের ও বেশি। ডিগ্রী প্রদান করা হয় ১০০ টির বেশি বিষয়ে। ১৯৯৩ সালে অচ্যুত সামন্ত প্রতিষ্ঠা করেন কে, আই, এস, এস। উড়িষ্যার আদিবাসী এবং দরিদ্র শিশুরা কেজি টু পিজি বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া আর পড়াশুনার সুযোগ পায় এই প্রতিষ্ঠানে। কে, আই, এস, এস এ ও এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজারের ও বেশি। টাইমস্ অফ ইন্ডিয়ার বিচারে ‘আইকন অব ওডিশা’ নির্বাচিত হন অচ্যুত সামন্ত। সর্ব ভারতে সব চেয়ে কম বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হওয়ার রেকর্ড অচ্যুত সামন্তর দখলে। ২০১২ সালে পেয়েছেন জওহর লাল নেহেরু পুরস্কার। সমাজ সেবায় অবদানের জন্য তিনি ভারত ছাড়াও স্বীকৃতি পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, কম্বোডিয়া, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, চেক রিপাবলিক সহ বহু দেশ থেকে তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য অতি সম্প্রতি তাঁকে বাংলাদেশের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডিলিট উপাধি দেওয়া হয়।
বিলাসবহুল জীবন তাঁকে কখনো স্পর্শ করেনি। অতি সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করেন তিনি। লোভ লালসা কখনো তাঁকে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। তিনি দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচতে শিখেছেন। এটা থেকে প্রমান হচ্ছে যে সৃষ্টিকর্তা মানুষের সৎ মনবাঞ্ছা পূরণ করে দেন এবং শ্রমের যোগ্য মর্যাদা দান করেন। এ সম্পর্কে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস্ এর একটা পরিষ্কার বক্তব্য আছে। তিনি বলেছেন,
“If you are born poor, it is not your fault. However, if you die poor, it is your fault.”
ডঃ অচ্যুত সামন্ত চেয়েছেন উড়িষ্যা রাজ্যে আর কেউ যেন দরিদ্র হয়ে মৃত্যুবরণ না করে। সেই ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি এগিয়ে এসেছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, কষ্টকর জীবন হল সৃষ্টিকর্তার পুরস্কার।
তিনি দরিদ্র হয়ে বুঝতে পারলেন দরিদ্রতার কি অসীম যন্ত্রণা। সেই আলোকেই গরীবদের জন্য যা যা করণীয় মন প্রান ঢেলে দিয়ে তা তিনি করলেন। উড়িষ্যার এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের অসামান্য অর্জন থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উৎসাহিত হোক এটাই আমাদের কাম্য।
The links of related topic is shared here :
http://www.achyutasamanta.com/news.html#Daffodilhttp://www.readersdigest.co.in/kiss-of-lifehttp://archive.prothom-alo.com/detail/news/255074[/size]