১০ মাসে ৪৪ কোটি ২০ লাখ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আজ মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছেছে নাসার ম্যাভেন নামের নভোযানটি। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসার গবেষকেরা জানিয়েছেন, নভোযানটি মঙ্গলের মাটিতে নামবে না, বরং কক্ষপথ থেকে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের তথ্য সংগ্রহ করবে। বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণার জন্য নভোযানটি বিশেষভাবে তৈরি করেছে নাসা। নাসার গবেষকেরা জানিয়েছেন, লাল রঙের গ্রহটির বায়ুমণ্ডল নিয়ে অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে মার্স অ্যাটমোসফিয়ার অ্যান্ড ভোলাটাইল ইভোলিউশন ক্রাফট বা ম্যাভেন। প্রাচীনকালে মঙ্গল উর্বর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হঠাৎ করে মঙ্গলে কীভাবে পরিবর্তন এল এই অজানা তথ্য অনুসন্ধান করবেন বিজ্ঞানীদের।
মঙ্গলের জলবায়ু, পানি বা ভবিষ্যতে এখানে বসবাস উপযোগী পরিবেশের সন্ধানে মঙ্গলের অতীত ইতিহাস খোঁজার জন্য প্রথমবারের মতো এর বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে গবেষণার জন্য ম্যাভেনকে পাঠানো হয়েছে বলেই জানিয়েছেন গবেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নাসার সদর দপ্তরে ম্যাভেনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানিয়েছেন এর প্রধান গবেষক ব্রুস জাকোস্কি। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যে মঙ্গলকে দেখতে পাই তা শীতল আর শুষ্ক। এখানে স্থিতিশীল অবস্থায় তরল পানির অস্তিত্ব থাকা দুষ্কর। কিন্তু আমরা যদি এর প্রাচীন ভূপৃষ্ঠের দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখতে পাব যে এখানে একসময় পানির প্রবাহ ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, এই গ্রহের পানি আর কার্বন ডাই-অক্সাইড কোথায় গেল?’
জাকোস্কি দাবি করেন, মঙ্গলের অজানা রহস্যের সমাধান করবে ম্যাভেন। এই নভোযানে থাকা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে নির্গত হওয়া গ্যাস বিশ্লেষণ ও পরিমাপ করবে। এখানকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও পরীক্ষা করে দেখা হবে।
অবশ্য মঙ্গলে ম্যাভেন নভোযানটি শিগগিরই এর নতুন সঙ্গী পাচ্ছে। নভোযানটির কাছাকাছি ভারতীয় একটি নভোযান খুব কম সময়ের মধ্যেই তার কার্যক্রম শুরু করবে। মঙ্গলে ‘মার্স অরবিটার মিশন’ নামে ভারত তার প্রথম মিশনটি পরিচালনা করছে। নাসার প্ল্যানেটারি সায়েন্স বিভাগের পরিচালক জিম গ্রিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত মঙ্গল গ্রহ থেকে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে পরস্পরকে সহযোগিতার আগ্রহ দেখিয়েছে।
এই দুটি নভোযানের পাশাপাশি মঙ্গলের কক্ষপথের খুব কাছে একটি ধূমকেতু দেখা যাবে শিগগিরই। গত বছর এই ধূমকেতু আবিষ্কারের পর গবেষকেরা এর নাম দিয়েছেন ‘স্লাইডিং স্প্রিং’। যদিও আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই ধূমকেতু মঙ্গল গ্রহের ৮১ হাজার মাইলের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু এই ধূমকেতুর ধূলিকণায় নভোযানের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না বলেই মনে করছেন গবেষক জাকোস্কি। এই ধূমকেতুর প্রভাবে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে কোনো প্রভাব পড়ে কি না সেটিও পর্যবেক্ষণ করবে ম্যাভেন।