বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাবে সুন্দরবন

Author Topic: বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাবে সুন্দরবন  (Read 1277 times)

Offline faruque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 655
    • View Profile
বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাবে সুন্দরবন



ঢাকা, ৩০ নভেম্বর- ‘অসামান্য এবং বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ বিপন্ন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে ইউনেসকো। বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল ও বন-সংলগ্ন এলাকায় দূষণকারী শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে এ আশঙ্কা করছে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র।
জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো সরকারকে চিঠি দিয়ে বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় এই বনের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হলে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাবে সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবন নাম লেখাবে ‘বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের’ তালিকায়।

ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিশন থেকে সুন্দরবনের ভেতরে পশুর নদ দিয়ে নৌপথ চালুর ব্যাপারেও আপত্তি তোলা হয়েছে। সরকারের পশুর নদ খননের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ইউনেসকো বলেছে, এই তিনটি তৎপরতা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি করবে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং নৌপথ চালুর ফলে সুন্দরবনের পাশে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দূষণকারী শিল্পকারখানা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ইউনেসকো সরকারকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। সুন্দরবন রক্ষায় কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করে ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছে ইউনেসকো। বিদ্যুৎকেন্দ্র, নৌপথ, শিল্পকারখানা স্থাপন এবং নদী খননের ফলে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে উল্লেখ করে তা বন্ধে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি। তারা বলেছে, সুন্দরবনের পাশে এমন কোনো তৎপরতা চালাতে দেওয়া উচিত হবে না, যার ফলে সুন্দরবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।

গত ১১ জুলাই ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের পরিচালক কিশোর রাও স্বাক্ষরিত সুন্দরবনসংক্রান্ত একটি চিঠি ইউনেসকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে দেওয়া হয়। এরপর ১৮ জুলাই রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ ইউনেসকো কমিশনের কাছে বিষয়টি অবগত করে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি সুন্দরবনের সম্ভাব্য ক্ষতির ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব নিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন।
জানতে চাইলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ধরনের কোনো চিঠি তাঁর কাছে আসেনি। মন্ত্রণালয় থেকেও তাঁকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে সুন্দরবন রক্ষায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় আগের মতো ভবিষ্যতেও কাজ করে যাবে।

ইউনেসকোর চিঠিতে বলা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ব ঐতিহ্য আছে, এমন দেশগুলোকে প্রতিবছর বিশ্ব ঐতিহ্যের সংরক্ষণ পরিস্থিতি তুলে ধরে ইউনেসকোতে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউনেসকোর কাছে সুন্দরবন সংরক্ষণ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা থাকলেও বাংলাদেশ তা দেয়নি। পরে ৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জে্যষ্ঠ সহকারী সচিব জিল্লুর রহমান ‘সুন্দরবন সংরক্ষণ বিষয়ে’ একটি চিঠি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানিকে দেয়। চিঠিতে ইউনেসকোর কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি জানোনো হয়। গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ ইউনেসকো জাতীয় কমিশনের সচিব মনজুর হোসেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের কাছে আরেকটি চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানান। এর আগে গত জুনে কাতারের দোহায় ইউনেসকোর বার্ষিক সাধারণ সভায় সুন্দরবনের সংরক্ষণ বিষয়ে আলোচনা হয়। গত মাসে ওই সভার কার্যবিবরণী ইউনেসকো তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এতে বলা হয়,, পশুর নদীর পাশে এবং মংলা বন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কয়লাভিত্তিক যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হচ্ছে, তা সম্পর্কে ওয়াল্ড হেরিটেজ সেন্টার বিস্তারিত তথ্য জানতে চায়।

ইউনেসকোর কার্যবিবরণীতে বলা হয়, শুধু রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রই প্রধান সমস্যা নয়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের পাশে রামপালের উজানে আরও মারাত্মক দূষণকারী শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা রাখছে। রামপাল প্রকল্পের পাশে আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে ইউনেসকো সরকারের কাছে গত ১১ এপ্রিল তথ্য জানতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ-জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করেছে। এই তিনটি দিক থেকেই সুন্দরবন রক্ষায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ফলে সাংবিধানিক কারণে ইউনেসকোর উদ্বেগের বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে ইউনেসকোর মূল্যায়ন তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা এবং বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে ধোঁয়া এবং ছাই বের হবে, তা বনের জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি করবে। এ ছাড়া কয়লা পরিবহনের সময়ও তার সুন্দরবনের বায়ু এবং পানিকে দূষিত করবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়লা পরিবহনের জন্য যে বড় আকৃতির জাহাজ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচল করবে, তা বনের দুই পাড়ে ভাঙন সৃষ্টি করবে। বিশ্বের অন্যতম মহাবিপন্ন বা বিলুপ্তির পথে থাকা বেঙ্গল টাইগারের বসতি সুন্দরবনের পশুর নদীতে আরেক মহাবিপন্ন প্রাণী ডলফিন ও বাটাগুড় বাস্কা কচ্ছপ থাকে। আরও রয়েছে সুন্দরবনের ভোঁদড়, স্থানীয় মাছ ও অন্যান্য বিপন্ন প্রাণী। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলে এসব প্রাণী আরও দ্রুত বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা রামসার কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের ব্যাপারে উদ্বেগ জানায়। তারা সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এ ব্যাপারে সরকারের কাছে তথ্য চায়।

- See more at: http://www.deshebideshe.com/news/details/43596#sthash.oTInNMlR.dpuf

Offline fahad.faisal

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 734
  • Believe in Hard Work and Sincerity.
    • View Profile
Thanks a lot for the informative post. We need to raise the concern for such issues.
Fahad Faisal
Department of CSE