চড়ুই পাখি বারোটা,
ডিম পেরেছে তেরটা।
একটা ডিম নষ্ট,
চড়ুই পাখির কষ্ট।
আমরা ছোটবেলায় চড়ুই পাখিকে নিয়ে এই কবিতাটি কতই না পড়েছি। একটা ডিম নষ্ট হওয়াতেই চড়ুইপাখির কতই না কষ্ট। কিন্তু সবগুলো চড়ুই যদি হারিয়ে যায় তাহলে কী হবে জানো? কষ্ট তখন আর চড়ুই পাখির থাকবে না। কেননা কষ্ট করার জন্য চড়ুই পাখিই যে আর থাকবে না। তখন কষ্ট হবে আমাদের মতো অন্য বেঁচে থাকা প্রাণীদের। আফগানস্তানে এরকম একটি হারিয়ে যেতে বসা চড়ুই পাখি আছে। এই চড়ুই পাখিটির নাম আফগান স্নোফিঞ্চ।
আফগান স্নোফিঞ্চ চড়ুই পরিবারভুক্ত একটি গায়ক পাখি । বাংলাদেশি চড়ুইয়ের মতোই এরাও চঞ্চল আর ছটফটে।
রিচার্ড মেইনারহ্যাজেন, বার্ডম্যান অফ ইন্ডিয়া খ্যাত বিজ্ঞানী সেলিম আলিকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৩৭ সালে স্নোফিঞ্চের এই প্রজাতির খোঁজ পান । তিনি এর বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছিলেন Montifringilla theresae. দুই বিজ্ঞানী এই বিরল প্রজাতির ফিঞ্চের সন্ধান পেয়েছিলেন সিবার পথে, জায়গাটি বামিয়ান ও কাবুলের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত ।
স্নোফিঞ্চ পাখিটি দেখতে খুবই ছোট, লম্বায় মাত্র ১৩.৫ থেকে ১৫ সে.মি, ওজন সর্বোচ্চ ২৩-৩৫ গ্রাম হতে পারে। পাখিটির ডানার বিস্তার ৮.৫-৯.৯ সে.মি এবং ঠোঁট লম্বায় ১.৩-১.৫ সে.মি হয়ে থাকে। স্ত্রী পাখিগুলো আবার পুরুষ পাখিগুলোর থেকেও ছোট হয়।
পুরুষ প্রজাতির পাখি সাধারণত বাদামি-ধূসর রঙের হয়। পাখাটির রঙ হয় সাদাটে, ঠোঁট আর চিবুকের কাছে রঙ কালো। স্ত্রী পাখিদের গায়ে বাদামি ছোপ থাকে। এই ছোপ দেখেই বলা যায় পাখিটি স্ত্রী, নাকি পুরুষ। এছাড়াও স্ত্রী পাখিদের মুখে কিছুটা ধূসর রঙ এবং ডানায় সাদা রঙের স্বল্পতা দেখা যায়। শরীরের আবরণে আবার ছোট্ট, সরু, গাঢ় দাগও থাকে। পুরুষ পাখির চোখের মনি ইটের মতো লালচে।
আফগান স্নোফিঞ্চের সঙ্গে সাদা ডানার স্নোফিঞ্চ ও মরুর স্নোফিঞ্চও দেখতে পাওয়া যায়। শাদা ডানার স্নোফিঞ্চ এর সঙ্গে এদের পার্থক্য হল এদের ডানার সাদা দাগ অপেক্ষাকৃত ছোট এবং পালক গুচ্ছ অপেক্ষাকৃত গাঢ় বাদামী। মরুর স্নোফিঞ্চের সঙ্গে এর পার্থক্য খুব কম। তাই চিনতে বেশ অসুবিধাই হয়। আফগান স্নোফিঞ্চের ঠোঁট কিছুটা ছোট। এটাই ওদের একমাত্র পার্থক্য। তাই যদি কোনো একটিকে তোমার দেখা না থাকে তাহলে ভুল হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।
যতই ছোট হোক ওদের বাসা বাঁধার আয়োজন কিন্তু কম নয়। বাসা বানানোর আগে ওরা ইঁদুর, খরগোশ বা কাঠবেড়ালির পরিত্যক্ত একটি বাসা খুঁজে বের করে। সেই বাসায় খড়কুটো, পালক, এবং অন্য প্রাণীর চুল দিয়ে বাসা বেঁধে থাকে। দক্ষিণে কিছু স্নোফিঞ্চের এরকম বাসা বানানোর বুদ্ধি আরও বেশি। শিকারির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গর্তের শেষ প্রান্তে গিয়ে বাসা বাঁধে। শিকারি ভাবে গর্তটি হয়ত খালি। তারা বুঝতেই পারে না গর্তের শেষে যে স্নোফিঞ্চ ছানা-পোনা নিয়ে বেশ একটা সংসার পেতে বসে আছে। তবে স্নোফিঞ্চের এরকম বাসা বাঁধার পেছনে বের শক্ত একটি যুক্তি আছে। তাদের ছোট্ট ছানাগুলো দৃষ্টি শক্তিহীন, ওদের যদি কেউ আক্রমণ করতে আসে ওরা কীভাবেই বা দেখবে আর কীভাবেই বা নিজেকে রক্ষা করবে। তাই তাদের এই ব্যবস্থা করতে হয়। স্নোফিঞ্চের ছানাগুলো দেখতেও খুব সুন্দর, চামড়া গোলাপি, খুব হালকা রঙের এর ছোট্ট এক গোছা পালক থাকে।
শীতকালে অনেক স্নোফিঞ্চ একসঙ্গে ঝাঁক বাঁধে। কখনও কখনও অন্য গোত্রের স্নোফিঞ্চের সাথেও এরা দল বাঁধে। অনেক বেশি তুষারপাত শুরু হলে এরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ছোট্ট এই পাখির খাবার কী জানো? মূলত ওরা শস্য খাদক, তবে ক্ষুদ্র উদ্ভিদ, ছোট ছোট পোকা মাকড় যেমন পিঁপড়া, গুবরে পোকা ইত্যাদিও এরা খেয়ে থাকে ।
আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতের উত্তর পাশের প্রায় ২৫৭৫-৩০০০ মিটার উচ্চতায় বসবাস করে স্থানীয় এই স্নোফিঞ্চ। এরা সংখ্যায় খুব কম এবং এদের গতিবিধি এই একটি অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সাধারণত এরকম কম সংখ্যক প্রাণী IUCN (International Union for Conservation of Nature)-এর বিলুপ্তির আশংকা সম্পন্ন প্রজাতির তালিকায় চলে যায়। কিন্তু আফগান স্নোফিঞ্চ পাখিটির নাম এখনও IUCN এর বিলুপ্তির আশংকা সম্পন্ন প্রজাতির তালিকায় স্থান পাইনি। আফগান সরকার নিজ উদ্যোগে আফগানিস্তানের প্রথম জাতীয় উদ্যান বন্দে-আমির জাতীয় উদ্যানে এই প্রজাতি সংরক্ষণ করেছে।
আমাদের দেশের অনেক প্রাণীও এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উচিত এইসব প্রাণীদের সম্পর্কে জানা, তাদের রক্ষার চেষ্টা করা। যেন তারা হারিয়ে যেতে না পারে।
Collected.....