সারাদিন হলের ক্যান্টিনে কাজ করা এক ডাইনিং বয় আশরাফুল (১০)। সকাল-বিকেল ক্যান্টিনের কাজ শেষে ৫শ মিটার হেঁটে সন্ধ্যায় বই-খাতা হাতে ছুটে চলা। কাজ আর দরিদ্রতা দমাতে পারেনি ওর পড়াশুনার অদম্য ইচ্ছাকে।
পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া এ ছাত্রের দেখাদেখি পড়াশনার দিকে ধাবিত হয়েছে রফিক, শাহীন, বাবু, শাকিলরা। ওরা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন বয়। আবার দূরবর্তী চর এলাকার শাকিব, সোহাগদের মতো অনেক এতিম খেটে খাওয়া শিশুরাও সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন শিক্ষার আলো পাচ্ছে।
পেটের দায়ে খেটে খাওয়া এমন অসংখ্য এতিম, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অবস্থিত কে বি নৈশ্য বিদ্যালয়। ঝরে পড়া অসংখ্য কোমলমতি শিশুদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার উপকরণ এবং পোশাক দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে বিদ্যালয়টি।
বাকৃবি শিক্ষক সমিতির তত্ত্বাবধায়নে ও শিশু-কিশোর কাউন্সিলের সভাপতির ব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংলগ্ন অবহেলিত ঝরে পড়া শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছাড়াতে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নৈশ্য বিদ্যালয়টি। কে বি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটিতে রাতের বেলা শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে লেখাপড়া করছে তারা। স্কুলটির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই দিন মজুর বা শ্রমিকের সন্তান। অনেকের মা-বাবা নেই। কেউবা কাজ করে শিক্ষকদের বাসায়। এসব কর্মজীবী শিশুরা সারাদিন কাজের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এখানে পড়াশুনা করে।
বিগত ৩ বছর তারা পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধার স্বাক্ষরও রেখেছে। তাই দরিদ্র শিশুদের অভিভাবকদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও বিনা খরচে পড়াশুনা মাধ্যমে ওদের আলোর পথ দেখাতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।
নৈশ্য বিদ্যালয়টির বর্তমানে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. শংকর কুমার রাহা জানান, নৈশ্য বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করে আসছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যেন কোনো শিশু ঝরে না পরে, প্রতিটি শিশুই যেন অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ পায় এটা নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষক কর্তকর্তাদের মাধ্যমে এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিভিন্ন সময় শিক্ষা উপকরণ ও বস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।
নৈশ্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র শ্রেষ্ঠ জানান, শিক্ষক সমিতির সহায়তায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর সংলগ্ন এলাকাগুলোর দারিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার উপকরণ দিয়ে যাচ্ছি। এসব শিশুরা পিএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধার স্বাক্ষরও রেখে চলছে। তবে বিদ্যালয়টিতে বাৎসরিক মাত্র বিশ হাজার টাকা বাজেট থাকায় এসব শিশুদের মেধা বিকাশের পর্যাপ্ত উপকরণ আমরা সববরাহ করতে পারি না। বিদ্যালয়টিতে নেই কোনো পায়খানা বা খাবার পানির টিউবওয়েল। এছাড়া শিক্ষদের বেতন না থাকায় এখানে কেউ শিক্ষকতা করতে চায় না।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান জানান, বিনা খরচে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশুনায় সর্বদা পাশে ছিল শিক্ষক সমিতি। অবহেলিত সেইসব শিশুর পড়াশুনার জন্য যা যা করা দরকার আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বৃত্তবানদের এসব পথশিশুদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, নৈশ্য বিদ্যালয়টিতে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়। প্রতি শ্রেণীতে একজন করে মোট ৫ জন ছাত্র শিক্ষক-শিক্ষিকা বিদ্যালয়টিতে কর্মরত রয়েছে। অবহেলিত ঝরে পড়া শিশুদের আলোর পথ দেখানো এসব শিক্ষকরা প্রতি মাসে নামমাত্র বেতন দিয়ে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
Collected ......বাংলামেইল২৪ডটকম