শিরক সম্পর্কে মোটামুটি সবাই জানেন যে-- শিরক হল সবচাইতে বড় পাপ। শিরক অবস্থায় মারা গেলে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে। তাই শিরক সম্পর্কে সতর্ক-সাবধান থাকা খুব জরুরী। গোপন শিরক হ’ল যা বাহ্যিকভাবে দেখা যায় না। উক্ত শিরক সাধারণতঃ নিয়ত বা সংকল্পের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর তা হ’ল, রিয়া বা লোক দেখানো আমল করা।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বের হয়ে আমাদের নিকটে আসলেন। এমতাবস্থায় আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তখন রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জালের চেয়েও অধিক ভয়ংকর কিছুর সংবাদ দিব?
আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হ’ল,ﺍﻟﺸِّﺮْﻙُ ﺍﻟْﺨَﻔِﻰُّ ‘গোপন শিরক’। কোন ব্যক্তি ছালাতে দাঁড়ালে যখন অন্য ব্যক্তি তার ছালাতের দিকে লক্ষ্য করে, তখন সে আরও সুন্দরভাবে ছালাত আদায় করে’ (মুসনাদে আহমাদ হা/১১২৭০; ইবনু মাজাহ হা/৪২০৪; মিশকাত হা/৫৩৩৩)। অতএব লোক দেখানো প্রত্যেকটি আমলই গোপন শিরক। যেমন কেউ যুবক বয়সে-ই দাড়ি রাখেছে কিন্তু কিছুদিন পর মানুষ তার প্রশংসা শুরু করল, তখন সে আরো প্রশংসা পাওয়ার জন্য দাড়ির পাশাপাশি আরো কিছু আমল শুরু করল যাতে মানুষ তাকে বাহবা দেয়।
আবার কোন মেয়ে হিযাব পরিধান শুরু করল স্বামী, বাবা, বন্ধু বা পরিচিত জনের নিকট প্রশংসা পাওয়ার জন্য। অনেকেই অনেক মজলিশে হাজার হাজার টাকা দান করে তার খ্যাতির জন্য, অনেকে ভাল ডাক্তার হয়ে বিনা মূল্যে মানুষের চিকিৎসা করতে চায় খ্যাতির জন্য অথবা লোকে তাকে দয়ালু বলুক এজন্য। এমন সকল আমল-ই যা আল্লাহ্-র সন্তুষ্টির জন্য করা হয় না বরং মানুষকে দেখানোর জন্য করা হয়, অথবা আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি মানুষকে দেখানোর জন্য করা হয়--- দুটাই শিরক!!!!! যা থেকে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
এছাড়া কথার মাধ্যমে উক্ত শিরক হয়ে থাকে। যা ব্যক্তির অগোচরে তার নিয়তের মধ্যে ঢুকে পরে। যেমনঃ ইবনু আববাস (রাঃ) উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেমন কেউ বলল, আল্লাহর কসম এবং হে অমুক! তোমার ও আমার জীবনের কসম। অথবা বলল, যদি এই কুকুরটা না থাক, তাহ’লে আমাদের কাছে চোর আসত। অথবা কেউ কাউকে বলল, যা আল্লাহ চান ও আপনি চান। অথবা যদি আল্লাহ না থাকতেন ও অমুক না থাকত। তিনি বলেন, তুমি তোমার কথায় ‘অমুক’-কে যোগ করো না। কেননা এগুলি সবই শিরক। হাদীছে এসেছে,
একদিন জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূল (ছাঃ)- কে বলল, যদি আল্লাহ চান ও আপনি চান। উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে শরীক করছ? (আহমাদ, আদাবুল মুফরাদ হা/৭৮৩; ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ২২)।
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল উছায়মীন বলেন, ব্যক্তির বিশ্বাস অনুযায়ী এগুলি বড় অথবা ছোট শিরকে পরিণত হয়। (আল- ক্বাওলুল মুফীদ ২/৩২৩)।
অতএব এগুলি থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আর এজন্য নিজের নিয়াতকে সহিহ করতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে, এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। ছোট-বড় সকল প্রকার শিরক থেকে বাঁচার জন্য রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে দুয়া শিখিয়েছেন---
- ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﺃَﻥْ ﺃُﺷْﺮِﻙَ ﺑِﻚَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻭَﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻙَ ﻟِﻤَﺎ ﻻَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ
(হে আল্লাহ! জেনেশুনে তোমার সাথে শিরক করা থেকে আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং অজ্ঞতাবশে শিরক করা থেকে আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি’। (আল আদাবুল মুফরাদ হা/৭১৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৩১,)
সংগৃহীত