২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনায় নতুন চেহারায় ময়মনসিংহ!

Author Topic: ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনায় নতুন চেহারায় ময়মনসিংহ!  (Read 1211 times)

Offline Tofazzal.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 314
  • Test
    • View Profile
নতুন চেহারা পেতে যাচ্ছে ময়মনসিংহ নগরী। ঘিঞ্জি, যানজট ও জলজটমুক্ত নগরীর তকমা মুছে পরিকল্পিত, পরিচ্ছন্ন, আলোকিত ও সবুজ নগরী হিসেবে ময়মনসিংহকে গড়ে তুলতে নেওয়া হয়েছে ২০ বছর মেয়াদের মহাপরিকল্পনা।

সে অনুযায়ী কাজ হলে ব্যাপক ভিত্তিক উন্নয়নের ধারায় বদলে যাবে ময়মনসিংহ। দেশের অন্যতম মডেল নগরের পাশাপাশি হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার সুন্দর বাসযোগ্য নগরগুলোর একটি। তিলোত্তমা ময়মনসিংহের ভিশন শুধু কথায় নয়, প্রমাণ হবে বাস্তবেও।

সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিপিএমপি-২) এবং নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় ময়মনসিংহ স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (এমএসডিপি) নামে একটি সংস্থা ২০১১ সালে এই মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের কাজ শুরু করে। চলতি বছরের এ মাসে মাস্টার প্ল্যানের বিষয়ে মতামত ও গণশুনানির আয়োজন করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্ট্রাকচার প্ল্যান, আরবান এরিয়া প্ল্যান এবং ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান- এ তিন ধাপে মাস্টার প্ল্যানটি তৈরি করা হয়। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ও উদ্যমী আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইকরামুল হক টিটুর বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতা আর নগরবীদদের ভাবনা-চিন্তার মিশেলে প্রণয়ন করা হয়েছে এ মহাপরিকল্পনা।

আগামী ২০ বছরে ময়মনসিংহের অবস্থা কী হতে পারে কিংবা এখানকার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এ মহাপরিকল্পনা একটি গাইড লাইন হিসেবে কাজ করবে বলে মত নগর পরিকল্পনাবিদদের।

তাদের ভাষ্য, ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীর ২১টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি সদর উপজেলার ভাবখালী, চর ঈশ্বরদিয়া, দাপুনিয়া, ঘাগড়াসহ ১০টি ইউনিয়ন নতুন করে যোগ হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই মোট ২৯২ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়েই সাজানো হয়েছে এ মহাপরিকল্পনা।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, পরিকল্পনায় নগরের যানজট নিরসনে আধুনিক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা, অত্যাধুনিক রেলওয়ে স্টেশন ও বিমানবন্দর নির্মাণ, ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারের চায়না মোড় ও মিল ঘাট এলাকাকে শিল্পাঞ্চল, শম্ভুগঞ্জকে আঞ্চলিক ট্রেড সেন্টারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকার কাছের নতুন এ নগরকে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে দীর্ঘ মেয়াদী এ মহাপরিকল্পনায়।

এদিকে, ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ময়মনসিংহ। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) জরিপ মতে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সীমান্তঘেঁষা ডাউকি ফল্ট লাইন থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে থাকা এ নগরীকে ভূমিকম্প সহনীয় ও বিশ্বের সর্বাধুনিক সুবিধাসংবলিত বাসযোগ্য সবুজ নগরী গড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে ঘর-বাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ করতে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভূমিকম্প হলে স্কেপ রোড চিহ্নিত করা হয়েছে।

এজন্য নগর পরিকল্পনাবিদরা অনুধাবন করেছেন অত্যাধুনিক আরও একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের। তাদের গড়া এ মাস্টার প্ল্যান সম্প্রতি এশিয়ান টাউনস্ক্যাপ জুরিস অ্যাওয়ার্ডও লাভ করেছে।

এ মহাপরিকল্পনা বিষয়ে এখানকার বাসিন্দা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা নতুন আশার আলো দেখছেন। মতামত ও গণশুনানি শেষে এ মাস্টার প্ল্যানটি দ্রুত সময়ের মধ্যেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রায় পৌনে পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েই উন্নয়নের তেমন ছোঁয়া না লাগা নগরকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে উদ্যোগ নেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. ইকরামুল হক টিটু। তার হাত ধরেই ২০ বছর মেয়াদী এ মহাপরিকল্পনা।

এ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ ড. কে. জেড হোসেন তৌফিক বাংলানিউজকে বলেন, মহাপরিকল্পনায় অবকাঠামো ও ভূমি ব্যবহার ঠাঁই পেয়েছে। নগর ও আশপাশের ১০টি ইউনিয়নের কোথায় ব্রিজ, রাস্তাঘাট ও কালভার্ট হবে এবং কৃষি জমিকে কিভাবে সুরক্ষা করা যাবে তার আদ্যোপান্ত রয়েছে এ প্ল্যানে।

ময়মনসিংহ স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (এমএসডিপি) ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সুন্দর বাসযোগ্য নগর। চলতি মাসে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসেফিক আর্বান ফোরামের আলোচনা সভায় বিশ্বের ৫৬টি দেশকে এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, বলেন- প্রণয়ণকৃত মহাপরিকল্পনার এ প্রকল্প পরিচালক।

পৌরসভার মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু এ মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, পরিকল্পিত ও সবুজ শহর ময়মনসিংহ বাস্তবায়নে ২০ বছর মেয়াদী এ মহাপরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে এটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যুক্ত রয়েছে। ফলে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দ্রুত এ প্ল্যান বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়া, দাতাগোষ্ঠী ও সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া এবং নাগরিকদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এ প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হলে সুন্দর, পরিকল্পিত, পরিচ্ছন্ন ও ঝুঁকিমুক্ত ময়মনসিংহ গড়ে তোলা সম্ভব, বলেন মেয়র টিটু।
Muhammad Tofazzal Hosain
Lecturer, Natural Sciences
Daffodil International University