নারী শক্তি এখন আর শুধু ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। অনেক আগেই নারী তার শক্তিমান সত্তার খোলস উন্মুক্ত করে বাইরের দুনিয়ায় সমান পারদর্শিতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
একটা সময় ছিল যখন নারীদের সব কাজে পদে পদে বাঁধা পরত। নারী শিক্ষা তো অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিল। বিশেষ করে এশিয়ায়ার দেশগুলোতে নারীরা শিক্ষাসহ অন্য সবকিছুতেই পিছিয়ে ছিল অনেকটাই । শুধুমাত্র হেঁশেলে রান্না আর স্বামী সংসার সামলানোই ছিল তাদের একমাত্র কাজ। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে এসেছে নারীর সমান অধিকার আর কাজের ক্ষেত্রে সুযোগ।
নারী স্বাভাবিকভাবেই যে কোন ব্যাপারে ধৈর্যশীল, সহানুভূতিশীল এবং আগ্রহী। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন নারী একজন পুরুষের তুলনায় যে কোন কাজ তাড়াতাড়ি এবং ভালোভাবে রপ্ত করতে পারে। এজন্যই এখন বিভিন্ন অফিস আদালতে নারীকে উচ্চপদেও দেখা যায়।
তারপরও প্রশ্ন আসে একজন নারী কি একজন ভাল কর্মী বা নেত্রী হতে পারে?
উত্তরটা নিঃসন্দেহে হ্যাঁ।একজন পুরুষ হয়তো অনেক সময় তার রাগ বা অহম কে বশে আনতে পারেনা বা যে কোন ব্যাপারে অপর আরেক ব্যক্তির সাথে আলোচনায় নিজের জেতার কথাটাই ভাবে। অন্যদিকে একজন নারী চিন্তা করে একটা ব্যাপারে দুজনেই কিভাবে একমত হওয়া যায় বা কিছুটা ছাড় দিতে হলেও দুজনেই কিভাবে জেতা যায়। এই অবস্থাটাকে অফিশিয়াল ভাষায় বলা যায় উয়িন উয়িন সিচুয়েশন বা উভয়পক্ষেরই জেতা যা খুব ভাল একটি সফল নেতৃত্বের গুণের মধ্যে পরে।
যেসব বিবাহিত নারী বা একজন মা বাইরে চাকরি করেন তাদের রীতিমতো দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় যে সকালের মিটিঙে সময়মত পোঁছাতে না পারলে বস হয়তো ভাববে নিশ্চই কোন পারিবারিক ঝামেলার কারণে দেরি হয়েছে। ব্যাপারটা হয়তো মিথ্যে না, সত্যিই একজন নারীকে তার পুরো সংসারটা গুছিয়ে রেখেই অফিসে আসতে হয় যাতে তার অবর্তমানে তার পরিবারের কারো কোন সমস্যায় পরতে না হয়। এক্ষেত্রে অফিসের যিনি কর্মকর্তা উনারই বুঝতে হবে এই সমস্যাটা। অফিসের নারী কর্মীটির সাথে খারাপ ব্যাবহার না করে তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। এখন সব অফিসের কাজই অনেকটা প্রযুক্তি নির্ভর। তাই যেই কাজটা ফোনে বা ইন্টারনেটে সহজেই করা সম্ভব সেটা অনলাইন মিটিং- এর মাধ্যমে করা যেতে পারে। এতে করে অফিসের কাজও থেমে থাকবে না এবং নারী কর্মীটিরও সহায়তা হবে।
আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও একজন নারী তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বা গুন যেমন তার ঝুঁকি সচেতনতা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা দ্বারা যথেষ্ট উন্নতি করতে পারে। কিন্তু অনেক সময় নারীকে আলাদা করে দেখে কাজে সমান সুযোগ দেয়া হয় না।এক্ষেত্রে পুরুষদের উচিত নারীদেরকে আলাদা না ভেবে তাদের এই গুণ গুলোকে কাজে লাগিয়ে একসাথে কাজ করা।
শিক্ষার সর্বোচ্চ সুযোগ এবং ভালো চাকরির সুযোগ পেলে একজন নারী নিঃসন্দেহে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিশেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবে। আয়ের ক্ষেত্রে যেমন আজকাল নারীরা ভালো করচে তেমনি আয় বুঝে ব্যায়ের ক্ষেত্রেও নারী এগিয়ে। আমেরিকার ইকোনমিক সংস্থার প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই একজন নারী কর্মী তার আয়ের বেশিরভাগ অংশটাই তার পরিবারে সন্তানদের পড়াশুনা, স্বাস্থ্য, ঘরের কাজে লাগে এমন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ে ব্যয় করে থাকে যা দেশের অর্থনীতিকেই আদতে মজবুত করছে। তাই পরিবারে মেয়েদের অর্থনৈতিক অবদানের কথা ভুললে চলবে না।
যেখানে বিশ্বের অনেক দেশে মেয়েরা তাদের শক্তির প্রমাণ রেখে যাচ্ছে অন্যদিকে এমন অনেক দেশে এখনও মেয়েরা প্রাথমিক সিক্ষা আর মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার অভাবে নারীর সুপ্ত প্রতিভা অবিকশিত থেকে যাচ্ছে। অশিক্ষার অভাব শুধু নারীকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে না, তার আশেপাশের দুনিয়াটাকেও অচল করে রাখে। একজন শিক্ষিত মা-ই পারে একটি শিক্ষত জাতি উপহার দিতে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত নারীশিক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করা যাবে না ততক্ষন জাতিও শিক্ষা ও কাজে পরিপূর্ণতা পাবেনা।
একজন নারীকে তার মত প্রকাশে এবং কাজের ক্ষেত্রে তার প্রাপ্য সম্মান দিলে সেই নারীই পারে পুরো বিশ্বের দৃশ্যপট বদলে দিয়ে এক ব্যাপক পরিবর্তন আনতে। শুধু নারী দিবসেরএকটি দিন-ই না, নারীকে দিতে হবে তার প্রতিদিনের কাজের স্বীকৃতি, অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার মতো পরিবেশ ।
লিখেছেন- তাহমিনা সুলতানা ছন্দা
- See more at:
http://www.priyo.com/2013/03/08/12319.html#sthash.8yF9Rrmv.dpuf