ম্যাচে নামার আগে দুই দল দুই রকম মেজাজে। সুপার টেনের তিন ম্যাচেই জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল উৎসবের মেজাজে। আফগানিস্তানের সেখানে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা—কিছু একটা করে দেখাতে হবে! তিন ম্যাচেই হেরে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচটাতে নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে চেয়েছিল আফগানরা। সেটাই করে দেখালেন নজিবউল্লাহ-হামজারা, নাগপুরে কাল রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ক্যারিবীয়দের হারিয়ে দিয়েছেন ৬ রানে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের ছোট্ট ইতিহাসে এরই মধ্যে অনেক রূপকথার জন্ম দিয়েছে আফগানিস্তান। কিন্তু আফগান-রূপকথার সঙ্গে ক্রিকেট-বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দিতে, তাদের উন্নতির বার্তাটা আরও ছড়িয়ে দিতে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে কিছু করতে হতো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কী দুর্দান্তভাবেই না সেটি করে দেখাল স্টানিকজাইয়ের দল!
পুঁজিটা খুব বড় ছিল না। গেইল নেই, কিন্তু ফ্লেচার-ব্রাভো-স্যামিদের সামনেও ১২৪ আর কোনো লক্ষ্য হলো! সেটিকেই কেমন ‘এভারেস্টসম’ বানিয়ে দিলেন আফগান বোলাররা, ক্যারিবীয়দের আটকে দিয়েছেন ১১৭ রানে। আমির হামজা সবচেয়ে বেশি ‘কিপ্টেমি’ করেছেন, ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৯ রান, উইকেট একটি। সঙ্গে অন্য বোলারদেরও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দাঁড়িয়েছিল ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে এসেছে মাত্র ৩৪ রান। এর মধ্যে আবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা আন্দ্রে ফ্লেচারও ব্যথা পেয়ে উঠে গেছেন।
চতুর্থ উইকেটে ৪১ রানের জুটি গড়ে দিনেশ রামদিন ও ডোয়াইন ব্রাভো চেষ্টা করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসকে পথে ফেরানোর। তবে দুজনই ব্যাট করেছেন ওয়ানডে গতিতে। তার চেয়েও বড় অপরাধ—থিতু হয়ে আউট হয়ে গেছেন। রামদিন করেছেন ২৪ বলে ১৮ রান, ব্রাভো ২৯ বলে ২৮। নবম ব্যাটসম্যান কার্লোস ব্রাফেটের ৮ বলে ১৩ রানের ইনিংসটা শেষ ওভারে শুধু রোমাঞ্চই ছড়িয়েছে, জয় আর এনে দিতে পারেনি।
এর আগে আফগানদের ব্যাটিংয়ে শুরুটা অবশ্য প্রত্যাশিত হয়নি। টুর্নামেন্টজুড়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদের ২৪ রানের ইনিংসে প্রতিশ্রুতি ছিল, কিন্তু সেটিকে দুর্দান্ত কিছুতে পরিণতি দিতে পারেননি। ১৪ ওভার পর্যন্ত রান আসছিল ওভারপ্রতি চারের একটু ওপরে। শেষ পর্যন্ত আফগানদের ইনিংসে যে ১২৩ রান হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বড় অবদান নজিবউল্লাহ জাদরানের। ৪০ বলে ৪৮ রানের জন্য ম্যাচসেরাও হয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
নজিবউল্লাহর তৃপ্তি আরও বাড়বে এ কারণেই যে তাঁর ইনিংসেই এই প্রথম কোনো সত্যিকারের ‘বড়’ দলকে হারাল আফগানিস্তান। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ? দুর্দান্ত খেলছিল দলটি, সেমিফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের পর মেতেও উঠেছিল উৎসবে। সেটি একটু তেতো করে দিলেন আফগানরা।