বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরুর পর আঙুলের ছাপসহ তথ্য না মেলায় এখন পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৬ লাখ সিমের নিবন্ধন করা সম্ভব হয়নি। সিম নিবন্ধনের বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তৈরি করা এক অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত আঙুলের ছাপ পদ্ধতিতে মোট ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার সিম সফলভাবে নিবন্ধিত হয়েছে, যা বর্তমানে চালু থাকা মোট ১৩ কোটি ৮ লাখ সিমের ৪৮ শতাংশ। আর আঙুলের ছাপ না মেলাসহ জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকা, সার্ভারের ত্রুটিসহ বেশ কয়েকটি কারণে নিবন্ধন সফল হয়নি ১ কোটি ৬ লাখ ৬০ হাজার সিমের।
নিবন্ধন সফল না হওয়া সিমের বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে এক কোটি নিবন্ধন সফল হয়নি তাঁরা প্রকৃত মুঠোফোন ব্যবহারকারী। আসল না হলে তাঁরা সিম নিবন্ধনের জন্য আসতেন না। তাঁদের ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পাশাপাশি অন্যান্য বৈধ পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৬২ লাখ ৮০ হাজার গ্রাহকের আঙুলের ছাপ না মেলায় সিম নিবন্ধন সফল হয়নি। পরিচয়পত্র পাওয়া না যাওয়ায় সফল হয়নি আরও ৩৪ লাখ ৯০ হাজার সিমের নিবন্ধন। এ ছাড়া সার্ভারে ত্রুটির কারণে ৩ লাখ ৯০ হাজার ও অন্যান্য কারণে আরও ৪ লাখ ৩০ হাজার সিমের নিবন্ধন সফল হয়নি।
আঙুলের ছাপ না মেলায় যাঁদের সিম নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি, তাঁদের বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এমন ব্যবহারকারী গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। সারা দেশে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় অণুবিভাগের (এনআইডি) পাঁচ শতাধিক স্থানীয় কার্যালয় আছে। তাদের সেখানে যোগাযোগ করে পরিচয়পত্রে থাকা ত্রুটি দূর করতে হবে। এতে ব্যবহারকারীরা ভবিষ্যতের জন্য উপকৃত হবেন।
নিবন্ধন সফল ও অসফল মিলিয়ে এ সময়ে মোট ৭ কোটি ৪০ লাখ সিম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সে হিসাবে নিবন্ধন সফল হয়েছে ৮৬ শতাংশ সিমের, আর নিবন্ধনের জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ১৪ শতাংশ সিম। বায়োমেট্রিক পদ্ধতির সিম নিবন্ধনপ্রক্রিয়া গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর চালু করা হয়। নতুন ও পুরোনো সব সিম ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এ পদ্ধতিতে নিবন্ধন করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, মাঝে কিছুটা ভাটা পড়লেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনপ্রক্রিয়াকে আদালত বৈধ ঘোষণার পর নিবন্ধন করতে গ্রাহকের আগ্রহ এখন আবার বেড়েছে। ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট এ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনকে বৈধ বলে রায় দেন।
বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আঙুলের ছাপ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে গ্রামীণফোন। আর সবার পেছনে আছে সরকারি অপারেটর টেলিটক। ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত গ্রামীণফোনের ৩ কোটি ২৩ লাখ সিম সফলভাবে নিবন্ধিত হয়েছে। এ সময়ে টেলিটকের মাত্র ২ লাখ ৬ হাজার সিম সফলভাবে নিবন্ধিত হয়েছে, যা অপারেটরটির চালু থাকা ৪২ লাখ সিমের ৫ শতাংশ।
তবে সিম নিবন্ধন সফল হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলালিংক। অপারেটরটির মোট ১ কোটি ৭৫ লাখ সিম এখন পর্যন্ত সফলভাবে নিবন্ধিত হয়েছে। এ সময়ে বাংলালিংকে মোট ১ কোটি ৮৬ লাখ সিম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলালিংকের ৯৪ শতাংশ সিম সফলভাবে নিবন্ধিত হয়েছে।
অন্যান্য অপারেটরদের মধ্যে রবি আজিয়াটার ৯৭ লাখ, এয়ারটেলের ৩৬ লাখ ও সিটিসেলের ৪৫ হাজার সিম সফলভাবে নিবন্ধিত হয়েছে। বাংলালিংক ছাড়া সব অপারেটরের সিম নিবন্ধনে সফলতার হার ৯০ শতাংশের কম।