ঈশপের সেই গল্পটা কে না জানে! খরগোশ আর কচ্ছপ একদিন দৌড় প্রতিযোগিতায় নামল। কচ্ছপের ধীরগতির ‘সুনাম’ থাকায় খরগোশ পথে খানিকটা জিরিয়ে নিল। একসময় ঘুমিয়েও পড়ল। আর সেই সুযোগে ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি’ কচ্ছপই ছুঁয়ে ফেল টাচ লাইন। খরগোশের যখন ঘুম ভাঙল, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
গল্পের সেই কচ্ছপ কিন্তু জীবনের ম্যারাথনেও এগিয়ে। দুনিয়ার দীর্ঘজীবী প্রাণীদের তালিকায় এই কচ্ছপ আছে সেরা পাঁচের মধ্যে। গ্যালাপাগোস জায়ান্ট টরটয়েজ প্রজাতির কচ্ছপ বাঁচে গড়ে ১৯০ বছর! বেঁচে আছে এমন দীর্ঘজীবী কচ্ছপের মধ্যে সবচেয়ে বুড়োটির নাম জনাথন। সেন্ট হেলেনার এই কচ্ছপের বয়স কত জানেন? ১৮৪ বছর! আর বেসরকারি হিসাবে সবচেয়ে বেশি বয়সী কচ্ছপটির বয়স ছিল ২৫৫! ২০০৬ সালে সেটি জীবনের ম্যারাথনে ইস্তফা দিয়ে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। কিন্তু কচ্ছপ কেন এত বছর বাঁচে? প্রশ্নটা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা বিশেষজ্ঞরা। উত্তর মিলেছে, তবে এখনো রয়ে গেছে অনেক রহস্য।
গবেষকেরা দেখেছেন, দৈত্যাকার কচ্ছপের (জায়ান্ট টরটয়েজ) বিপাক প্রক্রিয়া খুব ধীরগতির। তার মানে এদের শক্তিও ক্ষয় হয় অতি ধীরে। সেই ১৯০৮ সালে জার্মান শারীরবৃত্তবিদ ম্যাক্স রাবনার প্রাণীর আয়ু নিয়ে একটা সূত্র উপস্থাপন করেছিলেন। যেখানে বলা হয়েছিল, প্রাণীর বিপাক প্রক্রিয়া যত দ্রুত, তার আয়ু তত কম। গত শতাব্দীতে এটা নিয়ে অনেক বিজ্ঞানীই মাথা ঘামিয়েছেন। অনেকেরই দাবি, এই সূত্র বা যুক্তি আমলে নেওয়ার মতো নয়। তাই এই সূত্রে আস্থা রাখেনি অনেকেই। তবে এই সূত্রের হাত ধরে ইংরেজিতে একটা প্রবাদই চালু হয়ে গেছে, ‘লাইভ ফাস্ট, ডাই ইয়াং’।
ম্যাক্স রাবনারের সূত্র অনেকে না মানলেও কিছু বিজ্ঞানী অবশ্য রাবনারের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস, প্রাণিদেহের মৌলিক কিছু উপাদান (যেগুলো কোষের মৃত্যুর জন্য দায়ী) ও স্থিতিহীন অণুর (যেগুলো শরীরে শক্তি জোগায়) সঙ্গে বিপাক প্রক্রিয়ার সম্পর্ক আছে। এই সূত্র ধরে এগোলে কচ্ছপের দীর্ঘায়ুর একটা সমাধান অবশ্য মেলে। ধীর বিপাক প্রক্রিয়ার কারণে কচ্ছপের শক্তি খরচ হয় কম। আর এ কারণে কোষের মৃত্যুর হারও যায় কমে।
এর বাইরে আরও যুক্তি আছে। কচ্ছপের সুরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী। এর খোলসের দিকে তাকালেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়। দৈত্যাকার কচ্ছপগুলোর আবাস এমন সব জায়গায়, যেখানে সাধারণত মানুষের আনাগোনা খুব কম। ফলে এদের জীবনের ঝুঁকিও নেই বললেই চলে। কেবল মানুষই নয়, অন্য কোনো প্রাণীর শিকারের তালিকায় কচ্ছপ নেই বললেই চলে! একে তো আকারে কিম্ভূতকিমাকার, তার ওপর পিঠের ওপর ওই বর্ম—এদের দেখলে ভীষণ ক্ষুধার্ত শিকারি প্রাণীও অরুচিতে ভোগে! এদিকে কারও ‘কুনজর’ নেই বলে দৈত্যাকার কচ্ছপগুলোর বংশরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তাও নেই। ব্যাপারটা যেন ‘খাওদাও ফুর্তি করো’! আরও মজার ব্যাপার হলো, প্রজননের ব্যাপারে তরুণ কচ্ছপেরাই মূল ভূমিকা রাখে। একটু বয়স হলেই প্রজনন-সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুর সাতে-পাঁচে থাকে না বুড়োরা!
এই হলো কচ্ছপের দীর্ঘায়ু হওয়ার রহস্য। তবে অনেক প্রশ্নই আছে, যেগুলোর উত্তর আজও মেলেনি। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, জীববিজ্ঞান ও বিবর্তনের কিছু একটা মারপ্যাঁচ আছে, যা দৈত্যাকার কচ্ছপের দীর্ঘায়ুর পেছনে ভূমিকা রাখছে। তবে রহস্য যা-ই থাক, কচ্ছপ এগিয়ে যাচ্ছে ‘কচ্ছপগতিতেই’!
সূত্র: লাইভসায়েন্স ও মেন্টালফ্লস
source:
http://www.prothom-alo.com/pachmisheli/article/862438/%E0%A6%95%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A6%AA-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%8F%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A6%9B%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%9A%E0%A7%87