শীতে কি বাত রোগ হয়, নাকি শীতের কারণেও বাত রোগ হয়? আসলে কোনোটিই ঠিক না, রোগীর ব্যথা শীতে বাড়ে। এটা কোনো রোগ নয়, এটা বিভিন্ন রোগের উপসর্গ মাত্র। গরমকালে বাতের ব্যথার তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। শীতকালে অনেক সময় জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং জোড়া বা বাতের ব্যথা মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পায়। বয়স্ক লোকজন, বিশেষ করে যারা প্রদাহ আর্থ্রাইটিস, রিওমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন তাঁদের কষ্ট বহুলাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া পেশি, লিগামেন্ট, হাড় ও স্নায়ুর ব্যথা তীব্ররূপ ধারণ করে।
কারা বেশি আক্রান্ত হয়
শীতকালে ঘাড়, কোমর ও হাঁটুর ব্যথা বেশি বাড়ে। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব মহিলা ও পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষ বয়সজনিত শরীরের জয়েন্টের সমস্যা বা সন্ধিস্থলের ব্যথায় ভুগে থাকেন। আমাদের দেশে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগ লোক ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে যেসব সন্ধিস্থল শরীরের ওজন বহন করে এবং অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ঘাড়, কোমর, কাঁধ বা শোল্ডার জয়েন্ট এবং হাঁটু ব্যথার রোগী সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।
যে কারণে বাড়ে
শীতকালে স্বাভাবিক নড়াচড়া কম হয়। ফলে জোড়া জমে যায় এবং ব্যথার উদ্রেক করে। শীতের প্রকোপে শরীরের রক্তনালির খিঁচুনি ও সংকচিত হলে জোড়া, পেশি ও হাড়ে রক্ত চলাচল কমে যায় এবং ব্যথা বেড়ে যায়। শীতকালে স্নায়ুর সহ্যক্ষমতাও কম থাকে। এ কারণে ব্যথার অনুভূতি বেড়ে যায়।
যাক রণীয়
গরম কাপড় পরিধান করে শীত থেকে জোড়াকে রক্ষা করতে হবে। হালকা ব্যায়াম জোড়া ব্যথা উপশমে মোক্ষম ভূমিকা পালন করে। ব্যথা বেশি হলে ৭ দিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেবেন। কুসুম গরম পানির সেঁক (ময়েস্ট হিট) আর্থ্রাইটিসের ব্যথার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক অবস্থায় (বসা, দাঁড়ানো) আক্রান্ত জোড়াকে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না। ফোম ও জাজিমে না শুয়ে উঁচু শক্ত সমান বিছানায় শোবেন। বিছানায় শোয়া ও ওঠার সময় যেকোনো একদিকে কাত হয়ে হাতের ওপর ভর দিয়ে শোবেন ও উঠবেন।
গরম কাপড় পরিধান করে শীত থেকে জোড়াকে রক্ষা করতে হবে। হালকা ব্যায়াম জোড়া ব্যথা উপশমে মোক্ষম ভূমিকা পালন করে। ব্যথা বেশি হলে ৭ দিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেবেন
মেরুদণ্ড ও ঘাড় নিচু করে কোনো কাজ করবেন না। নিচু জিনিস যেমন: পিঁড়ি, মোড়া বা ফ্লোরে না বসে চেয়ারে পিঠ সাপোর্ট দিয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে বসবেন। মাথায় বা হাতে ভারী বোঝা নেওয়া যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা কম করতে হবে। প্রয়োজনে হাতে স্টিক, পায়ে কুশনযুক্ত জুতা এবং গোড়ালি, হাঁটু, কোমর, ঘাড়, কাঁধ, কনুই ও কবজিতে সাপোর্ট বা ব্রেচ ব্যবহার করতে হবে। রান্না করতে হলে দাঁড়িয়ে বা চেয়ারে বসে রান্না করুন। হিলযুক্ত জুতা ব্যবহার করবেন না, তার বদলে নরম জুতা বেছে নিন। ব্যথা তীব্র হলে টয়লেটে উঁচু কমোড ব্যবহারের চেষ্টা করুন। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসের অন্যান্য ওষুধ খেতে হবে। শীতকালে উপযুক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথার তীব্রতা কমে আসে। সতেজ শাকসবজি ও ফলমূল ব্যথা নিরাময়ে খুবই উপকারী।
Collected ---