ব্রকলি গ্রহণ প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে

Author Topic: ব্রকলি গ্রহণ প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে  (Read 836 times)

Offline Md. Alamgir Hossan

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 935
  • Test
    • View Profile
ব্রকলিকে ফুলকপির জাতভাই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ব্রকলির গুণাগুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই তেমন কোনো ভালো ধারণা নেই। সম্প্রতি ব্রকলির গুণাগুণ সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। বলা হয়, সবজিটি খাবার হিসেবে একদিকে যেমন উপাদেয়, অন্যদিকে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সহায়ক উপাদানেও সমৃদ্ধ। এই পুষ্টিসমৃদ্ধ ব্রকলিকে অন্যান্য সবুজ সবজির মতোই সালাদ বা তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অধিকহারে ক্রুসিফেরাস জাতীয় সবজি (ফুলকপি ও বাঁধাকপি এই ধরনের সবজির গোষ্ঠীভুক্ত) বিশেষত ব্রকলি গ্রহণ প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। এই জাতীয় সবজি সাধারণত অতিমাত্রায় সালফারাপেনিস সমৃদ্ধ হয়। আর সালফারাপেনিস হলো এমন একটি যৌগ—যা শরীরে এনজাইম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই উত্পাদিত এনজাইম শরীরকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, সাধারণত পুরুষরা যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সার হলো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

cancer
গবেষণায় প্রদত্ত ফলাফল থেকে জানা যায়, এই ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সালফারাপেনিসের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পক্ষে উপযুক্ত ক্ষতিকারক কোষগুলো বিনাশে এবং এগুলোর বৃদ্ধি ঠেকাতে এনজাইমটি কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা আরো বলেন, এলআইএনসি০১১১৬ হলো আইএনসি আরএনএ প্রজাতিভুক্ত এক ধরনের আরএনএ, যা মানব শরীরের কেষগুলোকে প্রস্টেট ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়। আর এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিবিত্সকরা রোগীকে সালফারাপেনের সাহায্যে চিকিত্সা করে থাকেন। অন্যভাবে বলা যায়, সালফারাপেনের মাধ্যমে আক্রান্ত কোষগুলোকে অনেকাংশেই প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি কর্তৃক পরিচালিত গবেষণাটির সহযোগী গবেষক লরা বিভার বলেন, আমাদের পরিচালিত গবেষণাটিতে আমরা আরো একটি আশাব্যঞ্জক তথ্য খুঁজে পাই। আর তা হলো— সালফারাপেন শরীরে আইএনসি আরএনএ প্রজাতিভুক্ত আরএনএকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতেও সাহায্য করে। এক কথায়, এনজাইমটি এই ধরনের আরএনএকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে দেয় না।

আলোচিত এই গবেষণা প্রতিবেদনটি দ্য জার্নাল অব নিউট্রিশনাল বায়োকেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত হয়। গবেষণা প্রতিবেদনটি পত্রিকায় প্রকাশের প্রাক্কালে গবেষকরা আরো একটি বিষয় চিহ্নিত করেন। চিহ্নিত বিষয়টি সম্পর্কে তারা বলেন, আইএনসি আরএনএ-এর প্রতিক্রিয়ার ওপর খাবারের প্রভাব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যত্সামান্যই জানা গেছে। তবে এই ব্যাপারে এখনও অনেক কিছু জানার আছে। তা ছাড়া এই গবেষণাটি থেকে আরো জানা যায়, যখন এলআইএনসি০১১১৬ কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, তখন শরীরে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলো সংগঠিত হওয়ার পথে চার স্তরে বাধাপ্রাপ্ত হয়। আর এই কারণেই মূলত আক্রান্ত কোষগুলোও ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা হারায়।

বিভার আরো বলেন, ক্রুসিফেরাস জাতীয় সবজি গ্রহণকে আমরা ক্যান্সারের প্রতিষেধক হিসেবে নয় বরং প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। তা ছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধের সঙ্গে যেহেতু এই জাতীয় সবজি গ্রহণের যোগসূত্র আছে, তাই আমাদের এই বিষয়টিকে আরো অধিকহারে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে নির্দিষ্ট পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখতে এই জাতীয় সবজি (ব্রকলি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি) গ্রহণের বিকল্প খুব কমই আছে বলে মনে হয়।

গবেষকরা আরো বলেন, উক্ত গবেষণাটি আইএনসি আরএনএ-এর কার্যক্রম সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে আমাদের বেশ সাহায্য করেছে। তা ছাড়া এ সম্পর্কে নতুন কিছু চমকপ্রদ তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। সর্বোপরি, গবেষণাটি থেকে প্রাপ্ত আইএনসি আরএনএ সংক্রান্ত ধারণাটি কেমোপ্রিভেনশন গবেষণার জন্যও নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।

অতএব, মরণব্যাধি প্রস্টেট ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে অধিকহারে ক্রুসিফেরাস জাতীয় সবজি গ্রহণ করুন। বিশেষ করে বেশি করে ব্রকলি খান। আর যাদের নিকট ব্রকলি সহজলভ্য নয়, তারা আমাদের দেশে উত্পাদিত ফুলকপি ও বাঁধাকপি খাওয়ার ওপর জোর দিন। মনে রাখবেন, সচেতন খাদ্যাভ্যাসও কিন্তু ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধিকে রুখে দিতে পারে।